পথ

আতা স্বপন ২১ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:৪৬:৩৯অপরাহ্ন অণুগল্প ১১ মন্তব্য

১.
ডেভিড ভেবেছিল তার মেয়েটা তার মত ইশ্বর ভক্ত হবে। প্রভু যিশুর নামে সে আরধনা করবে। প্রতি রবিবার গির্জায় যাবে। না! সোহানা হয়েছে তার মা ন্যান্সির মতো। নাস্তিকবাদিদের মতো।
প্রায় সে বলতো প্রে করে কি হবে? তোমার ভাগ্য তোমার হাতের মুঠোয়। তুমি কাজ করবে । খাবার আসবে। করবেনা অভুক্ত থাকবে। শুধু শুধু জীবনের কিছু সময় ভ্রান্ত ধারনার পেছনে নষ্ট করা।
শুনে ডেভিড বলতো তুমি তোমার হাতে পেলে কোথায়? কাজ করার শক্তি পেলে কোথায়?
ন্যান্সি তখন মুখ ঝামটা দিয়ে বলতো এতো তর্ক আমি বুঝিনা । বাস্তব হলো আমি কাজ করলে আমি কিছু পাব নয়তো না্। মেয়েটা হয়েছে তার মায়ের ডুপ্লিকেট। ধর্মকর্মে মন নেই। বিশ্বাস নেই। ন্যান্সী মারা যাবার পর এই ছোট্ট মেয়টিকে সে বহু কষ্টে নিজের শিক্ষায় গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু তা হয় নি। যে মাকে মেয়ে দেখেইনি সে মায়ের সব কিছু পেয়ে বাসে আছে। বাইবেল তার কাছে গদ বাধা বাক্য সম্বলিত গ্রন্থ ছাড়া আর কিছু নয়।
বাব কি করে যে তুমি এ্ই বিরক্তিকর জিনিসটা নিয়ে পড়ে থাকো বুঝিনা! ডিসগাস্টিং!
মারে! সবাই সবকিছু বুঝেনা । যে সাধনা করে সে বুঝে। তুমি সাধনা কর।
তোমার মত বোকা সেইন্ট হতে আমি চাই না। বাবা! তুমি কি বোকা! তোমার কি একবার মনে হয় না ধর্মকর্ম হলো মানুষের অপরাধবোধ থেকে সৃষ্ট একটি ভাব। এটা অপরাধিদের সান্তনা খুজার মাধ্যম ছারা আর কিছু না। তুমি কি অপারাধী বাবা? তুমি কি অপরাধ করেছ?
এ ধরায় আমারা সবাই অপরাধী মা। আমরা সবাই পাপি। আমাদের পাপমুক্ত করতেই তো প্রভু যীশু এসেছিলেন ধরায়। আমাদের পাপ মুছতেই ক্রুসে ঝুলে মারা গেলেন তিনি। আমাদের পাপ নিয়ে তিনি আমাদের নিস্পাপ করে গেলেন।
বাবা শুন ইশ্বর বলে কিছু নেই। যদি থাকে সে তুমি নিজেই। তুমিই তোমার ইশ্বর।
তোর সাথে তর্ক করে লাভ নেইরে মা! তুই হয়েছিস তোর মায়ের মতো। ইশ্বর তোকে পথের সন্ধান দিন।

২.
গংগারাম এর আজ বড়ই দু:খের দিন। তার মা তাকে ছেড়ে চলে গেল পরাপারে। সেই ন্যাদা কালে বাপ চলে গেল তখন এই মাই তাকে আদর সোহাগ দিয়ে বড় করেছে। এ ভালে তার আর আপন জন কেউ রইলনা। শশ্মান এ বসে অশ্রুসিক্ত ঝাপসা নয়নে মাকে চিতার আগুনে দাহ হতে দেখে সে । মুখে কোন বিলাপ নেই। চাঁপা বেদনা গুলো অশ্রু হয়ে ঝড়ছে।
বয়স তার কত হবে ১৫ কি ১৬। এই বয়সে এমন অনাথ বালক কে গ্রামের লোকেরা একটু সহানুভতিতো জানাবে এটাই স্বাভাবিক। নলিনী তার দু:স্পর্কের মাসি হয়।
হ্যারে গংগা ! মা চলে গেল বলে মনখারাপ করিসনা বাছা। মায়ের বোনইতো মাসি! আমি তো তোর মাই হই সোনা!
মা! মা! চিৎকারে হাহাকার করে উঠে সে। মাসি আমার মা আর নেই গো।
না সোনা! এভাবে বলিস না। আমি আছিতো! দেখবি আমার মেয়ে পার্বতির মতো তোকেও আগলে রাখব।
মাসি মায়ের গায়ের সুবাস কি তুমি দিতে পারবে? মাসি মায়ের মুখের সে হাসি। সে শাষন। সে ঘুম পাড়ানি গান তুমি কি আমায় দিতে পারবে?
চিতার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে। মাতৃহারা অনাথ খুঁজে পায় মাসির মাঝে নতুন বাঁচার পথ। কিন্তু তবুও থেকে যায় কি যেনো অপূর্নতা।

৩.

জোস্নারাতে হাটছে সে আনমনে। আপনমনে একা একা কথা বলছে.............

অনুপম বারই আমার নাম। আমার বাবার প্রীতম বারই। আশি বছরের এক অন্ধ বৃদ্ধ। তাকে রোজ বিকেলে আমি মন্দিরে নিয়ে যাই। দেবব্রত মহারাজ মাহথেরো এর কাছে। তার পাসে বসে বাবা বৌদ্ধের প্রার্থানায় রত হন।মন্দিরের মাঝ বরাবর বিশাল বৌদ্ধ মুর্তিটি যেনো আকাশ ছুতে চায়। সেই কবে বাবা দেহত্যাগ করে স্বর্গের পথে পারি দিয়েছেন। আমার আর মন্দিরে যাওয়া হয় না।

আজ বৌদ্ধ পূর্নিমা। মন্দিরে মন্দিরে প্রার্থনা চলছে। আমি এই প্রর্থনায় নেই। আমাকে পাথরের এই মুর্তি কখনো তার ভক্ত বানাতে পারেনি। আমি প্রকৃতির পুজারী। গাছ পালা নদ নদী পাখ পাখালী আমাকে টানে। আমি তাদের সাথে মিশে যাই । প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে ভড়া পূর্ণিমায় স্নান করতে বের হয়ে পরি দূর অজানার পথে।

৪.
রুস্তম শেখের ভীষন মাথা ব্যাথা। তার চার নম্বর বিবি যয়তুন নেছা মাথায় রশুন তেলা করে মালিশ করছে। কিন্তু তার আরাম হচ্ছে না। বরং রাগ হচ্ছে প্রচন্ড। মনে মনে ভাবছে-
মাগির পাছায় যদি একটা লাথ্থি কষাইতে পারতাম মাথার দরদটা কমত।
কিন্তু তা না করে মোলায়েম গলায় বলল-
যয়তুন ! আমার জানের জান! মাথায় মালিশ করতে তোমার কত কষ্ট। আহা! আমার দরদে তোমার কত পেরেসানি। এইটা আমি আর সহ্য করতে পারতাছিনা।
এতো পিরিতের কতা শুননের মত সময় আমার নাই। কি কন সোজা কইয়া ফেলান।
মাতারী! থাবরা দিয়া তোর দাতগুলা পাউডার বানাইয়া ফেলামু। দুইডা রংগরসের কথা কইতাছি যুইত লাগেনা বুজি। দ্বারা তোগ চাইরাটার উচিৎ শিক্ষা দিমু। কাইলি আমি ঘটকের লগে কতা কইয়া পাঁচ নম্বরে ঘরে আনমু। তখন পিরিত আসনাই সব হইব তার লগে। তোরা সবগুলা থাকবি হের বান্দি হইয়া।
কথাটা বলে রুস্তমের মনে একটু শান্তী ভাব হলো। মনে হলো মাথার যন্ত্রনাটা আর নাই। পরম শান্তীতে সে ঘুমিয়ে পড়ল। আর খোয়াবে পাঁচ নম্বরের সাথে বেহেশতের পথে ছুটে চলল।

৫.
মাতৃগর্ভে ভাসছে সে। গভীর গাঢ় আঁধারে বন্দী। মুক্তির তিব্র বাসনায় সজোরে লাথি মারে। কোকিয়ে উঠে মা। তিব্র ব্যাথায় মা তরপায়। দশ মাস দশ দিন পর বন্দী প্রান খুজে পায় আলোর পথ। আনন্দে ক্রন্দন করে সুতিব্র চিৎকারে ওয়া…..ওয়া……ওয়া।

৬.
মাওলানা ফখরুদ্দিন এর খুবই আফসোস। পাড়ায় পাড়ায় মসজিদতো কম হইলা না। কিন্তু মুসল্লি নাই। এক কাতার কোন রকম হয়। মানুষ সালাত আদায় করেনা। এত লোক দোযখী হইয়া যাইতেছে। সে কিছু করতে পারে না। সবাই শয়তানের বাক্স আর তার উল্টান ছাতির তলে আশ্রয় নিছে। না কিছু একটা করা দরকার। আজমত উল্লাহ সাহেবর সাথে একটু কথা বলা দরকার। উনি এই গ্রামের চেয়ারম্যান। শয়তানের সাথে যুদ্ধ করতে হইলে একজন পাক লোক সাথে দরকার। আচ্ছা আজমত উল্লাহ সাব পাক মানুষতো। উনি কি রিলিফের গম চুরি করে? উনি কি রিলিফের টিন চুরি করে? মসজিদে আইসাতো বাজামাত নামাজ পড়ে। ভালইতো লাগে। বাতাসে ভাসা ভাসা শুনি ওনি নাকি খারাপ পাড়ায় যান। মদ ভাং খাইয়া নেশা করেন। না! উনি আমার মুসুল্লি। আমি যেহেতু দেখি নাই তার সম্পর্কে খারাপ ধারনা পাপ। পেয়ারে রাসূল সা: বলছেন, কোন কথা শুনলে তা যাচাই কইরা নিতে। না! এইসব ভাব ঠিক না! যদি এমন হয়ও অসুবিধা নাই। আল্লাহ হইলেন গাফ্ফার। ক্ষমা করনেওয়ালা। তিনি পবিত্র কালামে পাকে বলেন, তোমারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইওনা। তওবা করাইয়া নিমু তারে। লোক হিসেবে চেয়াম্যান সাব খারাপ না। আলেম ওলামাগো লাইগা দরদ আছে।
আজ এশার নামাজে মসজিদে মাত্র ৪ জন লোক ইমাম ফখরুদ্দিন, মোয়াজ্জেম মহসিন মিয়া আর গ্রামের দুই জন। আজমত উল্লা আসেন নাই। তাই নামাজবাদ ফখরুদ্দিন তার প্রস্তাব নিয়া আজমত উল্লার বাসায় হাজীর হইল। কিন্তু এ তিনি কি দেখলেন? শয়তানের বাক্সের সামনে বইসা আজমত উল্লাহ নাচ গান দেখায় মক্ত। নাউযুবিল্লাহ বলতে বলতে মসজিদের পথে ফিরে চলেন। আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন হে আল্লাহ আমাদের সবাইরে সোজা সিরাতুল মুসতাকিমের পথ দেখাও। শয়তানের খপ্পর থেইকা আমার মুসল্লিগো রক্ষা কর।

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ