বছর বিশেক আগের শেষ হয়ে আসা আগস্টের এক পড়ন্ত বেলায় আমাদের শেষ দ্যাখা, ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের পুরনো জারুল গাছটার নিচে। পরস্পর পরস্পরের কুশল বিনিময় ছাড়াও বলার মত কিংবা জিজ্ঞেস করার মত অনেক প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও পরস্পরই পরস্পরের ব্যাধিময় পরিণতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলিনি সেদিন! গড়ালো বছর বিশেক এরপর রিলের মত সিনেমার আর পদ্মা, মেঘনা, যমুনায় জেগে উঠলো কত যে চর ভাঙলোও যে কত! ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে গেট পর্যন্ত তিন মিনিটের রাস্তা, এই পথটুকুতেও কোনো কথা বলেনি ও কেবল রিক্সায় উঠে বিদায়সূচক হাত নাড়া ছাড়া!

ওর সাথে আজ আবারো দ্যাখা হঠাৎ, বছর বিশেক পর চলন্ত ফেরির ক্যান্টিনে, আরিচায়। সিগারেট টানছিলাম পেছনে দিকের চেয়ারে বসে, আনমনে। এমনই সময় ক্যান্টিনের সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো একজন। দ্যাখেই মনে হলো, মনে হচ্ছিলো কোথায় যেন দেখেছি অনেক, চেনা জানা, পরিচিত অথচ মনে পড়ছে না এমন। সিগারেট টানতে টানতে আড়চোখে দেখছিলাম আর হিসেব মেলাচ্ছিলাম এসবই সাত পাঁচ। এমন সময় কাছে এসে বললো, ‘কেমন আছো? কতদিন পর দ্যাখা, তেমনই কিন্তু আছো। উস্কোখুস্কো চুল, খোঁচা খোঁচা দাড়ি, বয়সের সাথে সাথে চশমার কাঁচটা বদলেছে কেবল।‘ ওর সাথে এক কিশোর। চৌদ্দ কি পনের হবে। পরিচয় করিয়ে দিলো, ওর ছেলে।

ওরা বসলো আমার মুখোমুখি। কানের দু’পাশ থেকে দু’এক গোছা শুভ্রকেশ উড়ছিলো ওর প্রমত্তা পদ্মার হাওয়ায়। কখনোবা আঁচল। আর দু’একবার ও আঁচল ছুঁয়ে যাচ্ছিলো আমাকেও। ভার্সিটি ক্যাম্পাস, ক্লাশ ফাঁকি দেয়া উত্তাল আবেগের দিনগুলো তখন মনে পড়ছিলো কেবল, আমার ওর, আমাদের। এটা ওটা আলাপচারিতার ফাঁকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলো, ‘কি করছি, কোথায় আছি। ও যাচ্ছে সাকুরায়, জানতে চাইলো আমি?’ মৃদু হেসে জানোলো, ও আছে ধানমণ্ডি দশে, সময় করে যেতে একদিন। জানতে চাইছিলো আর, ‘কোথায় বিয়ে করেছি, ছেলে মেয়ে ক’জন ইত্যাদি ইত্যাদি।‘

ফেরিটা ততক্ষণে ঘাটের কাছাকাছি। ক্যান্টিনের সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে হঠাৎ দৃষ্টি পড়লো চোখের দিকে ওর। হয়তোবা কিছু বলতে চেয়েছিলো অথচ জানা হলো না। ফেরি ভিড়লো ঘাটে, আমরা দু’জন পরস্পর পরস্পরকে পুনর্বার বিদায় জানিয়ে যার যার বাসে চেপে বসলাম। বাসটা কিছুদূর যেতেই মনে পড়লো, আহা ঠিকানা, সেল নাম্বার কিছুইতো জানা হলো না ওর। আমারটাও জানলোনা ও।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ