কত  অদ্ভুতই না আমাদের জীবন!

গত জোছনায় যে সহপাঠীর সাথে টঙ দোকানে দাঁড়িয়ে বেকারত্ব নিয়ে গল্প করেছি, সে এই জোছনায় সাদা কাফন পরে মাটিতে শুয়ে আছে।

 

সুরমা নদীর উপর লেপ্টে থাকা জোছনার প্রলেপ দেখে আমার গগন হরকরার কথা মনে পড়েছিলো। মনে পড়েছিলো পত্রদিবাহক সেই মানুষটার কথা- যে জোছনায়- কাঁধে ঝোলা নিয়ে- পা’য়ে হেঁটে চিঠি বিলি করতো। আমি পত্রদিবাহকের কাছে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলাম- “এটা ‘তাকে’ পৌঁছে দিও তো! আর তাকে বলো- আমার একা থাকতে ভালো লাগে- ‘না’।

 

মানুষটার হাতে চিঠি দে’বার পরের জোছনায় টেলিভিশনে ঘোষণা করলো- ‘এই জোছনা থেকে চিঠি এবং চিঠি-আদানপ্রদানকারী মানুষগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাদের আর পাওয়া যাবে না।’ আমার একা থাকতে ভালো লাগে না- এটা শোনার পর 'দিয়া'র কেমন লেগেছিলো- তা আমার জানা হয় নি।

 

মাঝে মাঝে “সিওন এনোস দে সোলেদাদ”এর মাকোন্দো গ্রামবাসীর মতো আমারো ঘুম উবে যায়। শেষ রাতে বুক গরম হয়ে আসে- মুখে জমাট বেঁধে থাকে তিতা থুথু- যেনো আনাড়ী হাতে বানানো গ্রামীণ মদ। সিগারেটহীনতায় আমার নেশা ক্রমবর্ধমান- প্রতি রাতে।

সুরমা নদে লেপ্টে থাকা জোছনাও আমাকে কোনো উপশম দেয় নি।

নদের পাশের নিন্মশ্রেণীর মানুষগুলো সন্ধ্যায় জলে ঝাপ দিয়ে মাছ হয়ে যায়। এতে একটা সুবিধা আছে- দিনটা কোনোরকম কষ্টে-সৃষ্টে পার করা গেলেও- রাতের থাকা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করতে হয় না। মাছ হয়ে নদে দিব্যি থাকা যায়। বরং- রাতে কোথায় ঘুমুবে- মানুষ হয়ে থাকলে- এই চিন্তাতেই ঘুম আসতো না।

 

মাঝে মাঝে মাছগুলোকে চিল বা মাছরাঙা এসে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে যায়। এটাও কোনো গুরুতর সমস্যা না। মৃত্যু মানের জীবন থেকে মুক্তি- কিছু কিছু মানুষ এই মৃত্যুর অপেক্ষায় মাছ হয়ে থাকে।

 

জোছনা কিংবা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অবশ রাত্রি যাপনের প্রাক্কালে সফেদ তরুণীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- আমার ভেতর যদি দুরারোগ্য ভাইরাস বাসা বাঁধে- তুমি আমাকে চুমু খাবে?

সে বলেছে- না।

 

আমারো মাছ হয়ে যেতে ইচ্ছে হয়- জোছনায় কোনো চিঠি আসার কথা না- আসে না কখনোই- তবুও তো-

 

‘রাত বেড়ে যায় জোছনা মাখা তাপে

চোখের পাতা তোমার ভেবে কাঁপে......’

 

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ