
১|
চিমটি কেটে দেখো! এখনো মরিনি….
নিশ্বাস নিয়ে যাচ্ছে বুকের করোটিতে আমার সকল সাফল্যের রোজনামচা।
উনুনের হাড়িতে টগবগে ভাত আর ডালের উপচে পরা শৃঙ্খলতা আটকে দেই যখন তখন! আগুন আঁচে সেঁকে নেই দুচোখের ভেজা নুনের জল।
নির্লিপ্ত ঠোঁটে আলগা রং ঠেসে দিয়ে
সঙ সেজে দাঁড়াই ঘরের বাস্তকোনের আয়নার সামনে; ঐ তো ও ঠোঁটে হাসি লেগে আছে দেখা যায়! মেডেলটা পেতে আর বাঁধা কোথায়?
২|
জানলার গ্রীলে চড়ুই এসে করে কিচিরমিচির।
রংচায়ের কাপে ধোঁয়া ওঠা উষ্ণতায় আমুদে চোখে তৃপ্তি। সকালটা জানিয়ে গেলো আরেকটা দিন ঠাওড়াচ্ছে জীবন ; সেমিকোলন আর ব্রাকেটে আটকে থেকে ঝুলে আছে নিরাময় হীন ক্যালসিয়ামের অভাব। দুর্বোধ্য মৌণ ঠোঁটের দিকে অপলক প্রতীক্ষায়, তবু ক্লান্তিহীন অপেক্ষাদের বিরক্ত হতে দেখি না।
৩|
একটা অক্ষর বা শব্দের কাছে হাঁটু ভেঙে নুয়ে থাকা কতযুগ ধরে! প্রবঞ্চনার হতস্যিপনায় দিকভুল বারবার। একটা অক্ষরের অক্ষে ঘুর্ণায়মান গাঙচিল থেকে গেছে মধ্যাকাশের আকর্ষনে তৃষ্ণার্ত।
নীচেই লোনাজলের সীমাহীন জলধী; অথচ ডানায় নেই শক্তি মিঠেজলের হদিস।
ঋতু ভেঙে ভেঙে বেলা গড়ানো বিকেলটায় আবারো উড়ে চলার দুঃসাহস!
কঠিন পাথরের ঝর্ণায় ডুবে মরার আকুল আকিঞ্চন নিয়েই তবে প্রতীক্ষারা গুণে যাক গণিতের সরল সমাধান!
৪|
বিমূর্ত শহরের পিচঢালা রাস্তা লম্বা হয়ে এলিয়ে রেখেছে শরীর; ফুটপাতের ধারঘেষে ফুটো থালার পাশে ধুলোময়লার সজ্জায়, পাগলীটা মরা মাছের চোখ নিয়ে হেলে আছে দেয়াল ভর করে…….
দেয়ালের ওপাশেই ঘন অন্ধকার! দূর জংশন থেকে ষ্টেসনে ছুটে আসা রেলের ফিসপ্লেটে ঝন ঝন শব্দ উঠছে কেঁপে কেঁপে।
কয়েকটা বাঁদুর চক্কর দিচ্ছে ঝুলে থাকার ডাল খুঁজতে…..
মুখ ঢাকা মুখোশে দু’জোড়া পা এগোতে এগোতে গাঁ ঘেষে এসে পাগলীটার পা মাড়িয়ে দিয়ে জানতে চাইলো….. তোর ক্ষিদে পেয়েছে?
৫|
বৃক্ষের কাঁচা পাতা ছিঁড়ে জলে ভাসিয়ে দেখেছি
শিরাউপশিরা নিয়ে ডোবেনি সে। পাতারা চোখ টিপে হেসে বললো ; মরিনি তো! বেঁচেই তো আছি দিব্যি।
ভালোই তো আছি!
আমার বুকে পিঁপড়া নিয়েছে
বেঁচে যাবার গতি।
স্রোতের টানে আমি ভেসে চলি।
ভেসেই তো আছি!
যাইনি তো মরে!
বেঁচেই তো আছি
জলের বুকে
শিরা উপশিরা নিয়ে!
১০টি মন্তব্য
সঞ্জয় মালাকার
দিদি পড়ে মুগ্ধ হলাম, আপনার প্রতিটা লেখা আমার খুব প্রিয়,
বেঁচেই তো আছি
জলের উপর
শিরা উপশিরা নিয়ে।
৪/নাম্বার বেশ ভালো লাগলো দিদি
ভালো থাকবেন শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
অনেক ধন্যবাদ দাদা। ভালো ভাবে বেঁচে থাকা শিখুন প্রতিদিন। শুভ কামনা।
হালিমা আক্তার
বেঁচে আছি, বেঁচে থাকার মতো করে নয়। তাইতো চিমটি কেটে বুঝতে হয় এখনো প্রাণ পাখি ধরফর করে। একে কি বেঁচে থাকা বলে। তবু আছি স্রোতের ঘূর্ণিপাকে। এতো সুন্দর করে লিখেন আপনি। শুভ কামনা রইলো। ঈদ মুবারক।
বন্যা লিপি
মনে যখন যেমন আসে,,,লিখি, লিখে জমা রাখতে এই সোনেলার পৃষ্ঠাটাকেই বেছে নিই।কারন যতদিন নেট দূনিয়া থাকবে! লেখাগুলো এখানেই জমা থাকবে, আর কোথাও থাকবে না মনের এইসব প্রপঞ্চ নামা।
অনেক ধন্যবাদ আপা🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
একবার পড়লাম,
একটির সাথে অন্যটির কি যোগসূত্র আছে?
আবার পড়া লাগবে,
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
যতবার খুশি পড়েন। যোগসূত্র থাকলেও থাকতে পারে!!! মিলিয়ে দেবার কাজ আমি নেব না।
সৌবর্ণ বাঁধন
হয়ত আপাত চোখে দেখা সাফল্য মানুষের প্রতিনিয়ত করে যাওয়া অভিনয়ের এপিসোড শেষ করেনা! সত্যিই এমন নিঃখুত অভিনয়ে পুরস্কার তো প্রাপ্যই। দুর্বোধ্য ঠোঁট থেকে যদি কাংখিত শব্দের প্রতীক্ষায় থাকে কেউ তখন সময় হয়ত আটকে যায় সেমিকোলনে ও ব্রাকেটে! হয়ত শব্দগুলো শোনার জন্যই এই অভিনয়। ভিতরের সত্তাটা হয় আছে তৃষ্ণার্ত গাংচিল। যে জল তার কাছে সুলভ তাতে পিপাসা মিটছেনা। দরকার সুমিষ্ট পানির! মনের গহীনের অচিন পাগলটা তো সবসময়ই ক্ষুধার্ত। তৃষ্ণার জল চেয়ে কিংবা ক্ষুধার অন্ন। তবু যারা তাকে দিতে এসেছে এসব তারাতো তার কাঙ্ক্ষিত পরিচিত নয়। মুখোশের আড়ালের এই অস্বস্তি সে হয়ত চায়না! প্রত্যাশায় থাকে সেই কাঙ্ক্ষিত ঠোঁট এবং না বলা শব্দগুচ্ছ। তাকে না পেলেও কিন্তু জীবন বয়ে চলে। অনেকটা জলে ভাসা পাতার মতো নিজের ইচ্ছায় নয় বরং স্রোতের নিয়মে ভাসাই হয়ত জীবন।
চমৎকার লিখেছেন। অনেকদিন পর কোন লেখা নিয়ে চিন্তার ঘোরে ছিলাম। শুভকামনা।
বন্যা লিপি
সৌবর্ণ বাঁধন – এই প্রথমবারের মত আমি মনে হয় বলতে পারি– এতকাল ধরে আমি যা যেমন করে লিখছি…আজ তার পূর্ণ অর্থ বুঝে পেলাম।
কেন লিখি? কাদের জন্য লিখি? কোন সে পাঠকের জন্য লিখি!…. এখন বলতে আরো ইচ্ছে করছে,,, আপনি ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন? তাই বুঝি একটু বেশি সময় পাচ্ছেন লিখতে এবং অন্যের লেখা পড়তে!
তবে অভিযোগ জমে গেলো যে! আমার অন্য লেখা ( আগের) গুলো কেন পড়তে আসেননি?
আপনার মত একজন পাঠকই তো সব লেখার জন্যই ভীষণ প্রয়োজন।
আপনার মন্তব্যই একটা অনন্য লেখার জন্য যথেষ্ঠ।
আন্তরিক সাধুবাদ রইল আপনার জন্য।
খাদিজাতুল কুবরা
সত্যি বলতে আপনার লেখা পড়ি, বারবার পড়ি এবং নিজের ভেতরের অর্বাচীন সত্তার হাহাকার ঝংকার শুনতে পাই। শব্দের এমন ঢেউ খুব কম লেখাতেই পাই। সৌবর্ণর বক্তব্যের পর নতুন কিছু বলার নেই। গুচ্ছ কবিতার পুরো হৃদপিণ্ডটা সে সেঁকে তুলেছে। ধন্যবাদ উনাকে এবং আমার প্রিয় বন্যা আপুকে
বন্যা লিপি
আমি সৌবর্ণের মন্তব্যে চমৎকৃত হয়েছি। পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে বিশ্লেষণ করে গেলেন পুরো লেখার।
আমি খুব সাধারণ ভাবেই লিখে যাই, সেটা যে যেমন ভাবে বুঝবে! সেখানেই আমার লেখার সার্থকতা। তোমার হৃৎপিন্ডে ঝড় তোলে বলেই আমার মুখে হাসি ফুটে ওঠে তৃপ্তির,,, কারো তো লেগেছে ভালো আমার শব্দগুচ্ছ!!
ভালবাসা জেনো💕💕