
রাত গড়ালে টকশো দেখাটা আমার একটা অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে ।সেটা নিয়ে বাসায় একপ্রকার অস্বস্তি লেগেই আছে। এরপরে ও সেটা হয়ত আমার কাছে মেনিয়া হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিদিন নির্বাচন নিয়ে একপক্ষ বলে ভূমিধ্বস বিজয়। অন্যপক্ষ যথারীতি ২৯শে ডিসেম্বর রাতের ভোট বলে। ৩০ ডিসেম্বর হটাৎ একজন দর্শক প্রশ্ন করে বসলেন। একবছর পরও রাতের ভোটটা কি তথ্য প্রমান হাজির করা যায়নি কেন ? কোন নির্বাচনী ট্রাইবুনালে মামলা হয়নি কেন ? যে প্রশ্নটা আমার মনে ও ঘুরপাক খায় প্রতিদিন, কিন্তু কোনদিন হয়না জানা। যথারীতি সেদিন ও উত্তর এড়িয়ে গেলেন সো কলড সুশীল।
যাক ভুমিকাটা একটু বড় হয়ে গেলো। অনেকদিন আমার অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করব বলে ভাবছিলাম কিন্তু হয়ে উঠেনি । আজ সোনেলা ব্লগে সুযোগটা নিচ্ছি।
৩০শে ডিসেম্বর ২০১৮, রোজ রবিবার শীতের শুভ্রতায় সূর্যটা কুয়াশা কেটে রোদের ঝলকানি উঁকিঝুকি মারছে। আমরা দুজন স্ত্রীসহ বের হলাম সকাল ৮.৩০ টায় ভোট উৎসবে সামিল হব বলে উত্তরা থেকে নদ্দা বারিধারায় ভোট সেন্টারে। ৩ বার রিক্সা পাল্টিয়ে ১২০ টাকা ভাড়ায়। যথেষ্ট উপভোগ্য হল সেজে গুজে রিকসা চড়ে ঢাকায় ঘোরা। সাথে সেলফিতো আছেই। কাকতালিয় ভাবে ৩ জায়গায় শুনতে হল গন্ডগোল হবে যাবেন না।
মহানন্দে পৌঁছলাম ভোট সেন্টারে কালাচাঁদপুর স্কুলে
চিত্রনায়ক ফারুক কে ভোট দেব বলে। সাথে মোবাইলে ভোট সেন্টার জানা হল। বাইরে উৎসুক মানুষের ভীর চতুর্দিকে, নৌকার অফিস থেকে কম্পিউটার দেখে নাম্বার নিচ্ছে। ভীর ঠেলে লাইনে দাঁড়ালাম ভুল লাইনে যেহেতু সেখানে নদ্দা ও কালাচাঁদপুর দুটি ভোট সেন্টার। পরে এজেন্টরা আমাদের নাম্বার মিলাতে না পেরে এন-আইডি কার্ড নিয়ে আমাদের সেন্টার দেখিয়ে দিলেন । এই প্রথম ভুল সেন্টার/ লাইনে দাড়িয়ে কত কথাই শুনতে হলো।
দমে যাবার পাত্র আমি নই, আবার দুজনে সঠিক লাইনে দাঁড়িয়ে ( অনেক পিছনে ) ভোট দিয়ে মহানন্দে ভি দেখালাম পাগলের মতো। যখন ভোটসেন্টার থেকে বের হই তখন শত সহস্র মানুষ বাইরে, পুলিশ, আনসার বাহিনী নিয়ন্ত্রন করতে হিমশিম খাচ্ছে।
অনেকক্ষন নিরাপদে দাঁড়িয়ে সবার আনন্দ উৎসব দেখতে মজাই লাগছিল। কিন্তু রান্নাঘর পিছু ডাকে মোরে। আবার রিক্সা যাত্রা ফিরতে হবে বাসায় বিরানী রান্না হবে ছুটির দিন বলে।
কিন্তু উত্তরা ৭ নম্বর সেকটর এসেই মনে মনে হোচট খেলাম, বাইরে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে, উদ্দেশ্য ভোট নম্বর কালেক্ট করা। ভোট সেন্টারের ছেয়ে বাইরে লাইন বেশী। বাসায় বউকে রেখে বন্ধুদের নিয়ে বের হলাম উদ্দেশ্য নির্বাচনী মজা দেখা। আমরা ৪ জন মিলে সাথে একজন আছে যার ভোট কোথায় দেয় কোনদিন জানা যায় না।
সারাদিন উত্তরা সেক্টর ৭, ৯, ১১ নম্বর ভোট সেন্টার ঘুরে ঘুরে দেখা, সবাই মনের আনন্দে বাইরে লাইন ধরে কম্পিউটার থেকে নম্বর নিয়ে লাইন ধরে ভোট দিচ্ছে। মনে হচ্ছে নীরব ভোট বিপ্লব হচ্ছে। সারাদিন এভাবে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট দিল। কিন্তু ধানের শীষের প্রার্থীটাকে কেউ চিনে বলে মনে হয় না। তাদের নাছিল প্রচার নাছিল কোন অফিস ভোটারদের সাহার্য্য করার জন্য। ভোট শেষ হল কোনরকম গ্যাঞ্জাম ছাড়া।
অবশেষে ভোট গণনার পালা, প্রথম রেজাল্ট দেয় ৯ নম্বর সেক্টর থেকে। রেজাল্টগুলি প্রায় নিম্নরুপ
সেক্টর ৯, নৌকা ২৮০০ , ধান ১২০০,
সেক্টর ১১ নৌকা ৩৫০০, ধান ১৭০০,
সেক্টর ৭, নৌকা ৮০০০, ধান ২০০০,
নদ্দা ২ সেন্টার মিলে নৌকা ১৬০০০, ধান ৪০০০,
ভোট কাস্ট ৬৫-৭০%।
বাড়িতে ফোন দিলাম ভাইপোকে সে নতুন ভোটার
সে যা বলল সেখানে সবাই নৌকা যারা বিএনপি করত তারা আ: লীগ হয়ে গেছে অনেক আগে থেকে। কোন সমস্যা হয় নাই সারাদিন লাইন ধরে ভোট দিয়েছে।
সে ও দিয়েছে ২ ভোট। সেখানে নৌকা ভোট পেয়েছে ৮০% কালেকশান ৮৫%
চট্টগ্রাম শহরে ফোন দিলাম আমার বন্ধুকে ছাত্রজীবনে দূর থেকে যারা খালি মজা দেখতে অভ্যস্ত মানে ভীতু।
সে প্রিসাইডিং অফিসার বাকলিয়া এলাকার এক সেন্টারে । বলে রাতে ফোন দিস বাসায় গিয়ে কথা বলবো। যথারীতি রাতে ফোন দিলাম। বলে সারাদিন ব্যস্ত ও ভয়ে ছিলাম, জিজ্ঞেস করলাম কেনো ?
উত্তরে যা বলল, তুই তো জানিস এলাকাটা ধানের শীষের ছিল ২০ বছর আগে। এবার একদম উল্টা তাদের কোন কর্মী বাহিনী নাই ভোটার এনে কালেক্ট করবে। সারাদিন নৌকার কর্মীরাই ভোট সেন্টারে ছিল।
৭০% কাস্ট হয়েছে। নৌকাই জিতল।
রাতে বসে টকশো আর ভোট গননার পালা
নৌকার ভুমি ধ্বস বিজয়। দুপুরে মির্জা সাহেব বললেন নির্বাচন সুষ্ঠ হচ্ছে রাত গড়াতেই সুর পাল্টে গেল।
এক বছর পর মনে হচ্ছে এই নির্বাচন থেকে কেউ জিততে পারেনি
আ:লীগ ভূমিধ্বস বিজয় আশা করেনি
বিএনপি কমিশন বানিজ্য করতে গিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে
জনগন যারা ভোট দিয়েছে তাদের ভোটকে এক শ্রেনীর টকশো ওয়ালারা প্রতিদিন প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
যতই যাক না দিন
ছড়িয়ে হতাশা
তবু ও মানুষ বাঁধে বুক
বেঁচে থাকে আশা।
ঢাকা
৩০.১২.২০১৯
Thumbnails managed by ThumbPress
২৪টি মন্তব্য
নাজমুল আহসান
অন্ধ মানুষে ভরে গেছে সমাজ।
সুপায়ন বড়ুয়া
অন্ধজনে দাও আলো
মনের জানালা খোলে
ধন্যবাদ। শুভকামনা।
সুরাইয়া পারভীন
আমি প্রথম ভোট দিতে পেরেছিলাম বলে সেই খুশি। ভোট দিয়ে বাড়ি আসতে না আসতে দেখি সবাই দৌড় দিচ্ছে।কারণ কাউকে নাকি আর ভোট দিতে দেওয়া হবে না। সে যাই হোক আমি কিন্তু আমার কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীকেই ভোট দিতে পেয়েছিলাম
সুপায়ন বড়ুয়া
কোন সেন্টারে আপু ,
বড়ই দুর্ভাগ্য ,
অতি উৎসাহীরা অঘটন ঘটাবে
হয়ে যায় উদাহরন ,যা ১/২% .
একটি সাজানো বাগান তছনছ
করতে একটি বানরই যথেষ্ট।
আমরা সবাই জিততে চাই
বাচ্চাদের স্কুলে বিস্কুট দৌড়
প্রতিযোগীতায় ও আমরা ঝগড়া করি ।
শুভ কামনা, ভাল থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমিও আমার ফ্যামিলির সাথে খুব ভালোভাবে ভোট দিয়েছি। কুনোই সমেস্যা হয় নাই দাদা। 🙂🙂🙂🙂 । ভোট দেয়া আনন্দের। শুভ অপরাহ্ন
সুপায়ন বড়ুয়া
এই আনন্দটাকে ও এক শ্রেনীর
সুশীল প্রশ্ন তোলে যারা ভোট
দিয়েছে তাদের প্রতিনিয়ত
অপমান করে।
শুভ কামনা সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম ঠিক বলেছেন দাদা। অন্যের দোষ খুঁজাটাই এদের ধর্ম।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি একবারই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পেরেছি। তারপর আর কষ্ট করে যেতে হয়নি। কে বা কারা আমার হয়ে শুভ কাজটি সেরে ফেলেছেন উপরওয়ালা ভালো জানেন। তবে স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, ভোটের দিন আমার কাছে একটা উৎসবের দিনের মতো লাগে।
পোস্টে নতুনত্ব আনায় ভালো লাগছে দাদা।
আশা করছি প্রতিটি বিভাগে আপনার চমৎকার রচনা শৈলী দেখতে পাবো।
শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
সুপায়ন বড়ুয়া
আপু আপনে না দিলে অন্যজন কাজটি সারবে
আমি এখানে ৪ আসনের, ৬ টি ভোট সেন্টারের
চিত্র তুলে ধরলাম।
৪ টি কেন্দ্রের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত
যারা গিয়েছে তারাই ভোট দিতে পেরেছে।
বাড়িতে ভাইপো নিজেরটা ও মনের আনন্দে চাচাত
ভাইয়ের টা দিতে কার্পন্য করেনি । (অন্যায়)
হয়ত এজেন্ট ধরতে পারেনি।
মনের কষ্টে অনেকদিন পর সোনেলায় সুযোগ পেয়ে
লিখলাম।
কারন এক শ্রেনীর সুশীল প্রতিদিন প্রশ্ন তোলে
যারা ভোট দিয়েছে তাদের প্রতিনিয়ত
অপমান করে।
শুভ কামনা সবসময়।
সাবিনা ইয়াসমিন
এমন লেখা আরও লিখুন দাদা।
আপনার মননে, চিন্তায়, পছন্দে/ অপছন্দে যে ভাবনা গুলোর উপস্থিত হবে তাই লিখবেন। আমরা পড়বো।
ফয়জুল মহী
চরম বাস্তবতার অনন্য লিখনী।
সুপায়ন বড়ুয়া
ধন্যবাদ ভাই।
সকল কাজে ২টা পক্ষ থাকে
সবাই জিততে চায়
এক পক্ষ জিতে অন্য পক্ষ আরেকজনের সাফল্য
নিয়ে প্রশ্ন তোলে ম্লান করে অথবা নষ্ট করে।
বোনের ভাল রেজাল্ট ও ভাইয়েরা মেনে নিতে
চায় না
শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
গত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, প্রশ্ন থাকবেই। বাংলাদেশের সমস্ত নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন আছে। ভবিষ্যতেও এই প্রশ্ন কমে কিনা জানিনা।
লীগ এত বড় বিজয় আশা করেনি এটি যেমন সত্য,
বিএনপি কেমন একটা গাছাড়া ভাব নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমাদের আসনে বিএনপি কোনো কেন্দ্রে এজেন্ট দেয়নি।
নির্বাচনের সময় একটা উৎসবের আমেজ থাকে, যা আনন্দ দেয় খুব আমাকে।
এমন পোস্ট এই প্রথম দিলেন।
সমসাময়িক বিষয়ের উপর আপনার লেখা আশা করছি।
শুভ কামনা দাদা।
সুপায়ন বড়ুয়া
সহমত ভাইজান , তাইতো বলি ,
“এক বছর পর মনে হচ্ছে এই নির্বাচন থেকে কেউ জিততে পারেনি
আ:লীগ ভূমিধ্বস বিজয় আশা করেনি
বিএনপি কমিশন বানিজ্য করতে গিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে
জনগন যারা ভোট দিয়েছে তাদের ভোটকে এক শ্রেনীর টকশো ওয়ালারা প্রতিদিন প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
যতই যাক না দিন
ছড়িয়ে হতাশা
তবু ও মানুষ বাঁধে বুক
বেঁচে থাকে আশা। “
নিতাই বাবু
গরম জিনিস কিন্তু সবসময় গরম থাকে না দাদা। একসময় বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কে বুঝিতে পারে!
সুপায়ন বড়ুয়া
সহমত দাদা ,
গরম জিনিষ ও ঠান্ডায় বরফ হয়ে যায়
আমি ও স্মৃতি রোমন্তন করি শীতল এই ঠান্ডায়।
ধন্যবাদ , সাথে থাকার জন্য
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
তবুও মানুষ বাঁধে বুক আশায়
নিরাশার দোলাচালে!
সুপায়ন বড়ুয়া
সেটাই বা কম কিষে !
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য
শুভ কামনা।
ইসিয়াক
সামনে হয়তো সবকিছু ঠিকঠাক চলবে।
শুভকামনা রইলো দাদা ।
সুপায়ন বড়ুয়া
আশায় থাকি
আশায় বাচি
শুভ দিনের
স্বপ্ন দেখি।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য
শুভ কামনা ভাইজান।
তৌহিদ
ভোট যতদিন থাকবে তা নিয়ে এদল সেদলের মতভেদ থাকবেই দাদা। ভন্নতর বিষয় উপস্থাপন কিরে লিখলেন দেখে ভালো লাগলো। এরকম লেখা আরো চাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
ধন্যবাদ ভাইজান,
অনুপ্রেরণা দায়ী মন্তব্য ও সাথে থাকার জন্য।
শুভ কামনা। ভাল থাকবেন সব সময়।
আরজু মুক্তা
আমি পাহাড়তলি তে গিয়ে দেখি ভোট দেয়া শেষ।
কি দকার এতো টাকা খরচ করে নাটক করার। সাধারণ মানুষ ফাঁকিঝুকিও বোঝে?
সুপায়ন বড়ুয়া
বোনটি আমার গিয়ে দেখে
ভোট টা দেয়া শেষ।
এ দায়টা তোমার আমার
দুর্ভাগা স্বদেশ।
পাহারতলী বিহারী পল্লীটা এখনো আছে আপু ?
শুভ কামনা , ভাল থাকবেন।