ফোনটা বাজছে তখন ঘড়িতে সময় ভোর ৫ টা। আমি ঘুমের ঘোরে মোবাইলটা ধরে বলি কে?ওপাশ থেকে আবির বলে উঠে চিনো না আমাকে। আমি বললাম আরে ঘুমের মধ্যে তোমার নাম্বারটা দেখিনি।তো এত সকালে যে কল করছো?
আবির:সেই কখন থেকে কথা বলি না তোমার সাথে।
আমি:রাতেই না বললা।
আবির:সেইই রাতে প্রায় ৩-৪ ঘন্টা আগে। এত্তক্ষন কথা বলে থাকা যায় বলো।
আমি:তাই।ভালবাসো
আবির:অনেক। তোমার সাথে ১ মিনিট কথা না বললে মনে হয় কত্তদিন কথা বলি না।
আমি: তাই।
আবির:হুম গো।আচ্ছা শোন,অনেক দিন তোমাকে দেখি না।
আমি:পরশু না দেখলা।
আবির: সেই পরশু কত্তদিন আগে। আজকে আসো না একটু দেখবো।
আমি:আচ্ছা।ঠিক আছে ১২ টার দিকে কলেজে যাব তখন আসিও গল্প করবো এখন। ক্যাম্পাসে।
আবির:আচ্ছা।
আমি: আচ্ছা রাখি। ফ্রেস হয়ে নাও।
আবির:অকে।লাভ ইউ কিউটিপাই
আমি:লাভ ইউ টু পাগল
ফোনটা রেখে উঠে ফ্রেস হয়ে নিয়ে আবার বিছানায় শুয়ে পড়ি আর আবির এর কথা ভাবি। ছেলেটা আমাকে কত্ত ভালবাসে। এতটা ভালবাসে কেউ কাউকে সেইটা আবির কে না দেখলে বুঝতাম এই না। আচ্ছা যাই হোক আমার নাম জুঁথি। আমি এইবার অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি। আবির এর সাথে পরিচয় হয় অনার্স লাইফেই। আমরা সেম ব্যাচ। ছেলেটাকে প্রথমদিন দেখেই আমার একটু একটু ভালো লেগেছিল। কিছুদিন যেতে না যেতে ছেলেটা আমাকে প্রোপোজ করে তার পরে আমি রাজি হয়ে যাই। আমি কলেজে যাওয়ার জন্য ঘড় থেকে বাহির হয়ে আবির কে কল দিলাম।বললাম কই তুমি। সে বললো তুমি কই আমি কলেজে আছি। আমি বললাম আচ্ছা থাকো আসতেছি। মিনিট দশেক পরে আবির এর সাথে দেখা সে একটা মুচকি হাসি দিলো আমাকে দেখে। তার হাসিটা দারুন।আমরা দুইজন মাঠে বসে অনেকক্ষন গল্প করার পর আমি বিকেলের দিকে আসলাম বাড়িতে।বাসায় ঢুকে দেখি কয়েক জন লোক ডাইনিং এ বসে আছে। আমি তাদের দিকে না তাকিয়ে সোজা আমার রুমে গেলাম। গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতেই মা এসে বলে। জুঁথি মা। আমি বলি হ্যাঁ মা বলো। আচ্ছা শোন তোকে কয়েকজন লোক দেখতে আসছে। আমি বললাম কিহ্ ? আমার অনুমতি না নিয়ে কেন তাদের আসতে বললে তাদের যেতে বলো। আমি বিয়ে করবো না। মা বললো আরে পাগলি দেখলেই কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি? আমি যেতে চাই নি কিন্তু মায়ের জোড়াজুরিতে যেতে হলো।গিয়ে বসতেই কতজন আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলো। নিজেকে মনে হচ্ছিলো ভাইভাবোর্ডে আছি।আচ্ছা যাই হোক,কিছুক্ষন পর ওখান থেকে চলে আসি আমার রুমে। আর মাকে বলেছি মা শুনো আমি কিন্তু এখন বিয়ে টিয়ে করতে পারবো না।তুমি বাবা কে বলে দিও।পরের দিন সকালে আমরা সবাই খেতে বসছি একই টেবিলে।বাবা আমাকে বললো জুঁই, মা তোকে যে দেখতে এসেছিল সে কিন্তু খুব ভাল ছেলে।আর তাদের ফ্যামিলিও কিন্তু বেশ ভালো আর ছেলেটা সরকারী চাকুরি করে। তুই অনেক সুখে থাকবি মা। আমি বললাম কিন্তু বাবা আমি এখন বিয়ে করবো না। বাবা হঠাৎ এই বলে উঠলো আচ্ছা তুই কি কোন ছেলে কে ভালবাসিস ? আমি তার কথা শুনে মনে মনে ভাবলাম বাবাকে সব বলবো কি বলবো না? শেষ পর্যন্ত আবির এর সম্পর্কে সবকিছু বলেই দিলাম। বাবাও আর বেশি কথা না বলে আমাকে বললো আবিরকে আমার সাথে দেখা করতে বলিস। আমি তো খুশিতে আত্তহারা হয়ে আবিরকে ফোন দিয়ে সব বললাম। আর বললাম তাকে বাবার সাথে দেখা করতে। আবির ও আমার কথা মত দেখা করলো। আমি ভেবেছিলাম বাবা কোন কথা না বলেই আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেবে।কিন্তু না আমি ভুল ভেবেছিলাম বাবা আবিরকে অপমান করে বাহির করে দেয় আমাদের বাড়ি থেকে।বাবার কথা ছিল বেকার ছেলে হয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও। আগে নিজে চাকুরি কর তারপর আমার মেয়ের দিকে তাকাও। আমি সেইদিন অনেক কেঁদেছিলাম। বাবা বলে দিল যে ছেলে দেখতে এসেছিল তাদের নাকি আমাকে অনেক পছন্দ হয়েছে। তারা দিন তারিখ ঠিক করতে চায়। বাবা বিয়ে ঠিক করে ফেললো আমার অজান্তেই আর আমার মতের বিরুদ্ধে। আমার বাড়ি থেকে বাহির হওয়া নিষেধ ছিল আর ফোন ব্যবহার করাও। অনেক কষ্টে আবির এর সাথে যোগাযোগ করি। আমি হাতে কিছু টাকা নিয়ে দেখা করতে যাই এই ভেবে যে আবির এর সাথে আজকে শেষ রেস্টুরেন্টে যাব। সারা জীবন আবির আমাকে খাওয়াইছে। আজকে আমি খাওয়াবো এই ভেবে। আবিরের সাথে দেখা হতেই আমি তাকে জড়িয়ে ধরি। আর কাঁদতে কাঁদতে বলি তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আবিরও তাই বলে, তারপর আমরা রেস্টুরেন্টে বসি।কথা বলতে বলতে আবির হঠাৎ বলে চলো আমরা পালিয়ে যাই। আমি কোন কিছু না ভেবেই বলে ফেললাম চলো। আবির ও বাসা থেকে কিছু টাকা নিয়ে এসেছিল। আমি বাবা মার কথা না ভেবেই আবির এর হাত ধরে বেরিয়ে পড়লাম নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে।আমরা ঢাকায় গিয়ে প্রথমে বিয়ে করে নেই তারপর নতুন বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি।কয়েক মাস ঢাকায় থাকার পর আবির তার মা বাবা কে রাজি করিয়ে নেয় আর তার মা আমাদের মেনেও নেয়। তারপর আমরা ঢাকা থেকে আবির এর বাসায় যাই।সেখানে ভালই কাটছিল আমাদের বিবাহিত জীবন।একদিন আবির আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল শপিং করতে,রাস্তায় গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম। আমি রিক্সায় ডান দিকে আর বাম দিকে আবির এর হাত ধরে আছি। হঠাৎ কোথা থেকে একটা বাস এসে আমাদের রিক্সাকে ধাক্কা দেয়। আমি সাথে সাথে রাস্তায় পরে যাই।পরার সাথে সাথে আমার পায়ের উপর দিয়ে বাস এর চাকা যায়।আমাকে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।ডা: আমার ডান পা কেটে ফেলে।আমি এখন ১ পায়ে চলাফেরা করি। দুই হাতে দুইটা ক্রাচ নিয়ে চলাফেরা করি। তেমন কাজ করতে পারতাম না। কিন্তু তবুও চেষ্টা করতাম। আবির আস্তে আস্তে আমাকে অবহেলা করতে থাকে। আমাকে মাঝে মাঝে খোটা দেয় এবং বলে আমি কেন এখনো বেঁচে আছি। আমাকে আবির এর মাও কষ্ট দিতে থাকে।আর বলে আমি নাকি আবির এর অন্ন বসে বসে ধংস করছি।আবির আমার দিকে আর তাঁকাতো না তেমন।যে আবির আমাকে না দেখতে পারলে থাকতে পাইতো না। সে আজ আমার এই অবস্থা দেখে আমার দিকে আর তাঁকায় না কত পরিবর্তন।একদিন আবির আমাকে বলেই ফেললো আমি তোমার থেকে ডিভোর্স চাই।আমি কিছু বলি নি শুধু কেঁদেছি।আমার ভাগ্যে এটাই ছিল এই ভেবে আমি তার ইচ্ছায় ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিলাম। আমি আবার বাড়িতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু এই ৭-৮ মাসে আমি বাবা মায়ের কোন খোজ নেইনি। এখন আর কিভাবে মুখ দেখাবো তাদের।বাবা হয়তো প্রথম দিনেই আবিরকে চিনতে পেরেছিল। আবির এর ভিতরটা দেখতে পেরেছিল।যে আবির শুধু আমার দেহটাকে ভালবাসতো মনটাকে নয়। তাই হয়তো আমাকে তার সাথে বিয়ে দিতে চাই নি বাবা। বাবার কথা শুনলে আজকে আমার হয়তো এই অবস্থা হতো না। আমি একটা হুইল চেয়ার নিয়ে এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেড়াই। আর রাত হইলেই ষ্টেশনে গিয়ে শুয়ে থাকি। সেখানে হাজারও আমার মত কপাল পোড়ারা থাকে। একদিন দুপুরে পার্কে দূর থেকে হুইল চেয়ারে একজনকে আবির এর মত লাগছে ।কাছে যেতেই দেখি সত্যি এইটা আবির।সে আমাকে দেখে কেঁদে ফেললো। আমি তাকে বললাম তোমার এই অবস্থা কি করে হইলো।আবির বললো তুমি চলে আসার পর আমি আবার একটা বিয়ে করি। বিয়ের কিছুদিন পরে আমার গোদ রোগ হয়। আমার পা ফুলে যায়। ডা: বলে আমার পা না কাটলে আমাকে বাচাঁ সম্ভব হবে না।তারপর আমার পা কেটে ফেলে।আমার চিকিৎসার খরচ করতে আমার বাড়িঘড় বিক্রি করতে হয়।আর কিছুদিন পর আমার দ্বিতৃয় স্ত্রী আমাকে ফেলে চলে যায়। তার কিছুদিন পর আমার বাবা মা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়।আমি এখন আমি খুব একা যুঁথি। আমি এখন একা রাস্তায় রাস্তায় থাকি। আমি আবির এর কথা গুলো শুনে কাঁদতে কাঁদতে চলে যাই হুইল চেয়ারটা চালিয়ে।পিছন থেকে আবির বারবার ডাকে কিন্তু সারা দেই না।
.
আমি ভাবতে থাকি এইটা কি প্রতিশোধ। কিন্তু আমি তো আবির কে কোন অভিশাও দেই নি। কেন এমন হলো আবির এর সাথে।
.
সবার কাছে প্রশ্ন থেকে গেল এইটা প্রতিশোধ নাকি ভুলের মাসুল?
.
লেখা:নাজমুল ইসলাম নিশাদ
৫টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
সোনেলায় স্বাগতম। চমৎকার অনুগল্প।
এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ।
সবার লেখা পড়ুন। কমেন্ট করুন। আর সময় করে নিজের গল্পের মন্তব্যের জবাব দিয়েন।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
সোনেলায় স্বাগতম ভাই। প্রথমেই সুন্দর একটি লেখা নিয়ে এলেন দেখে ভালো লাগলো। লেখার বাক্যের মাঝে বিরতি বা প্যারা করে দিলে আরো সুবিধা হতো পড়তে।
নিয়মিত লিখুন। শুভকামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সোনেলায় স্বাগতম। নিয়মিত লিখুন!!
পপি তালুকদার
সোনেলা উঠানে স্বাগতম। দারুন অণুগল্প পড়লাম।আমরা সবকিছু ভুলে গেলেও প্রকৃতি কিছুই ভুলেনা সময়ে সে ঠিকই তার উপযুক্ত জবাব দিয়ে দেয়।
আমরা হয়তো সেটা বুঝি হয়তো না।
ভালো থাকুন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সোনেলার উঠোনে স্বাগতম আপনাকে। সময় কথা বলে, প্রকৃতি এভাবেই প্রতিশোধ নেয়। চমৎকার গল্প। নিয়মিত লিখুন, মন্তব্য করুন। স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো