নিঃস্বঙ্গ প্রেম (শেষ পর্ব)

আর্বনীল ২০ এপ্রিল ২০১৪, রবিবার, ০৭:০৭:৫৯অপরাহ্ন গল্প ৭ মন্তব্য

ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। এরই মধ্যে অর্ক পুরো এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করে ফেলেছে। সে একটা দোকান থেকে আরো এক প্যাকেট সিগারেট কিনল। পরপর দুকাপ চা খাওয়ায় শরীরটা চাঙ্গা হয়েছে। বিষন্ন ভাবটাও কেঁটে গেছে। অর্ক এখন কি করবে কোথায় যাবে তার কিছুই সে ভাবেনি। ট্রেনের হুইসেল বাজঁল। অর্ক এখন ট্রেনের দিকেই এগুচ্ছে। ট্রেন আস্তে আস্তে চলতে শুরু করল। লোকজন ছুটাছুটি করছে। যারা তখনও ট্রেনে উঠেনি তারা লাফিয়ে-ঝাপিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। আস্তে আস্তে ট্রেনের গতি বাড়ছে। বৃষ্টি এখনও কমেনি। অর্ক ট্রেনের পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে। কেন দৌড়াচ্ছে সে জানে না। বৃষ্টির এক একটি ফোটা এসে তার সমস্ত শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে একটা দরজার সামনে আসতেই কেউ একজন অর্ক’র হাত ধরে ভেতরে টেনে নিল। সেই একজনকে অর্ক চেনে না। চেনার প্রয়োজনও নেই।

 

ট্রেন তার আপন মনে হেলে দুলে চলছে। অর্ক দরজার পাশে এসে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে। সে এক হাতে দরজার হ্যান্ডেল্টা ধরে মাথাটা বাইরে বের করল। অন্য হাতে সিগারেটের ছাই অঝোরে ঝরে পরছে। সেদিকে তার খেয়ালই নেই। সে এখন ভাবছে কেন সে এমন একটা বোকামি করল? বাতাস এসে তার চোখে, মুখে, গালে, ঠোঁট ছোঁয়ে যাচ্ছে। অর্ক চোখ বন্ধ করল। এমন বাতাসে নায়লার শাসন না মানা অবাধ্য চুলগুলোও হয়তো জানালার ফাকে উড়ে বেরাচ্ছে। অর্ক নিজের উপর নিজেই খানিকটা বিরক্ত হল। সে কেন বারবার নায়লার কথা ভাবছে? তার মনে কি নায়লার জন্য কোন ভাল লাগা বা ভালোবাসা তৈরী হচ্ছে? নায়লা কি তার জীবনের একটা অংশ কেড়ে নিতে চাচ্ছে? যেখানে নায়লাই হবে তার জীবনের একটা অংশ? না… অর্ক এই মুহুর্তে আর কিছু ভাবতে পারছে না। তার অবচেতন মন বারবার তাকে কবিতার লাইন মনে করিয়ে দিচ্ছে। অর্ক মনে মনে আবৃতি করতে লাগল…

 

যদি ভালবাসা পাই,

আবার শুধরে নেব জীবনের ভুলগুলি

যদি ভালবাসা পাই

ব্যাপক দীর্ঘ পথের তুলে নেব ঝোলাঝুলি

যদি ভালবাসা পাই

শীতের রাতের শেষে মকমহলের দিন পাব

যদি ভালবাসা পাই

পাহাড় ডিংগাবো আর সমুদ্র সাতরাব

যদি ভালবাসা পাই,

আমার আকাশ হবে দ্রুত শরতের নীল

যদি ভালবাসা পাই,

জীবনে আমিও পাব মধ্য অন্তমিল

 

আচ্ছা! রফিক আজাদও কি তার মত এমন অবস্থায় পরেছিলেন? যার কারনে তিনি এই কবিতা লিখেছিলেন? নাকি এর থেকেও ভয়াবহ কোন কারনে এমন একটা কবিতা লিখেছিলেন? অর্কের খুব জানতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন কোন ভাবেই তা জানা সম্ভব না। তবে অর্ক ঠিক করেছে যদি কখনো স্বপ্নে উনার দেখা পায়। তখন সে জিজ্ঞেস করে জেনে নেবে। হঠাৎ করে ব্রেক কষে ট্রেন থামল। অর্ক দরজার ফাকে মাথা বের করে বাইরে তাকাল। কোন চা বিক্রেতাকে পাওয়া গেলে সে এক কাপ চা খেয়ে নিবে। কিন্তু ট্রেন কোন স্টেশনে থামেনি। খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে ফসলের মাঠে বিস্তৃত প্রান্তর। এখানে ট্রেন দাঁড়াবার কোন কারন নেই। এ নিয়ে লোকজনের মাঝে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে।

 

রাত আনুমানিক ২টার মত হবে। অর্ক ট্রেন থেকে নিচে নেমে একটু সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। লোক মুখে শোনা যাচ্ছে ট্রেনের ইঞ্জিনে সমস্যা। ঠিক হতে নাকি সময় লাগবে। বাইরে প্রচন্ড বাতাস। অর্ক রেল লাইনের পাশে একটা ঝোপের কাছে গিয়ে দাড়াল। তার ঠিক পেছনের বগিতেই নায়লা বসে আছে। কিন্তু অর্ক সেটা খেয়াল করেনি। সে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল। অর্ক সিগারেট হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কেন জানি তার খেতে ইচ্ছে করছে না। সে তাকিয়ে আছে খোলা মাঠের দিকে। দৃষ্টির শেষ সীমানা পর্যন্ত শূণ্যতা আর শূণ্যতা। পেছন থেকে কেউ একজন তার পাশে এসে দাড়াল। অর্ক সেদিকে তাকাল। পাশে নায়লা দাঁড়িয়ে আছে। নায়লাকে দেখে অর্ক একটুও অবাক হয়নি। কারন তার মন বলছিল নায়লা তার কাছে ফিরে আসবে। আজ নয়তো কাল। কিন্তু আসবেই। নায়লা কিছু বলছে না । সে তার উড়না দিয়ে বারবার চোখ মুছে যাচ্ছে। অর্ক বলল, আপনি এখনো বোকার মত কাদঁছেন কেন?

নায়লা মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো বলল, আপনাকে ছেড়ে যেতে আমার কষ্ট হচ্ছিল। খুব কষ্ট হচ্ছিল।

অর্ক কিছু বলল না। সে আকাশের দিকে বিজয়ের হাসি হাসল।

নায়লা অর্ক’র দিকে তাকিয়ে আছে। বাতাসে তার অবাধ্য চুলগুলো এসে তার কান্না ভেজা চোখ মুখ ঢেকে দিচ্ছে। অর্ক নায়লার মুখ থেকে পরম মমতায় সেই চুলগুলো সরিয়ে দিল।

নায়লা বলল, আমার জন্য আপনার কষ্ট হচ্ছিল না?

হ্যা হচ্ছিল।

তাহলে তখন আমাকে একা পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন কেন? ধরে রাখতে পারলেন না?

তখন যে আমার সেই অধিকার ছিল না।

আর এখন?

অর্ক নায়লাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, আর এখন তুমি চাইলেও যে ছাড়ব না। পুরো অধিকার নিজেই আদায় করে নেব।

নায়লা অর্ক’র বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল। মেয়েটা এমন আনন্দ মুহুর্তে কেন কাঁদছে কে জানে?

 

কিছুক্ষন আগেও বৃষ্টি ছিল। এখন একেবারেই নেই। অর্ক আকাশের দিকে তাকাল। সব কিছু এমন কাকতালীয়ভাবে হয়ে যাবে। সে ভাবে নি। তার পাশে নায়লা দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ মেঘশুন্য। মাঝ আকাশে অদ্ভুত সুন্দর একটা চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। মনে হয় এটাই সেই পোয়াতি চাঁদ। যে কিনা কিছুক্ষন আগে প্রসববেদনায় কাদঁছিল বলেই আকাশ জুড়ে বৃষ্টি ঝরছিল। কিন্তু এখন তার কোলে ফুটফুটে একটা কঁন্যা সন্তান হয়েছে। যার আলো ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে বিশাল আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এবং তার এই রুপবতি কন্যার রুপে মুগ্ধ করতে চাচ্ছে সমস্ত নগরীকে।

 

পুরো গল্পটার পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

download - http://storage.fusionbd.com/161202

 

#৬

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ