নারী তুমি কার?

রোকসানা খন্দকার রুকু ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার, ০৪:২০:৪৭অপরাহ্ন সমসাময়িক ২৮ মন্তব্য

অনেকদিন হল পত্রিকা নেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।বন্ধের দিন হকার করুন চোখে তাকালো । বুঝলাম কষ্টটা। তবুও মুখ ফিরিয়ে নিলাম।প্রতি মাসে তিনশ টাকা করে বিকাশ করি ওর নাম্বারে।ও বোধহয় বুঝতে পারে।প্রায়ই নেইম প্লেটের পাশে পেপার গুঁজে দিয়ে যায়।মাঝে মাঝে নিয়ে রাখি ,তরকারী কাটার সময় ব্যবহার করি।তখনই মাঝের বিনোদন পাতাটা দেখি ক্যাটরিনা,দিপীকার খবর কি? আর পড়তে ইচ্ছে হয়না।আছেই বা কি?

সকাল বেলা হেঁটে এসেই টিভি ছাড়া অভ্যাস ,তাও বদলে ফেলেছি। ভয় হয়!যদিও ছাড়ি হিন্দি গানের চ্যানেল এ গানই শুনি। মোবাইলেও ঢুকি না খারাপ খবর দেখার ভয়ে!

সকালবেলা খারাপ খবর দেখার পর মনটা তেঁতো হয়, বিষিয়ে ওঠে সারাদিন খারাপ কাটে। ভালো কোন খবর নেই,তাই চুপচাপ সংসারের কাজ করে যাই!

মন কিন্ত ঠিকই আনচান করে! মা ডিসকভারি চ্যানেল দ্যাখে।পানি খেতে গিয়ে হরিন নৃশংসভাবে কুমিরের ধারালো দাঁতের থাবার শিকার হয়।আহ্হা শব্দ করে ওঠে।চেন্জ করে সংবাদ দেয়।

চোখে পড়ে একানব্বই বছরের বুড়ি, ছয় বছর, পাঁচ বছরের শিশু, আদিবাসী, গৃহবধূর ধর্ষনের খবর।

প্রতিনিয়ত এসব ঘটছে।বাবা-মা সন্তানদের লুকিয়ে রাখছে। টাকা পয়সা দিয়ে সাপোর্ট দিয়ে বলে,তুই লুকিয়ে থাক আমরা দেখছি।আত্নীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব বাঁচাতে বদ্ধপরিকর। ভালো উকিল নিয়োগ,মেয়ের পরিবারে হুমকি-ধামকি সহ সকল প্রক্রিয়া অনুসরন করে।এবং একসময় নির্দোষ প্রমাণিত করে ফুলের মালা দিয়ে বরন করে নেয় বাড়িতে।

বাংলাদেশের আইন কি করে? চেয়ে চেয়ে দ্যাখে।কারন আইনের ধারক বাহক সব বন্দী,শেকলে বাঁধা হাত পা তাদের।

অধিকাংশ ধর্ষকই প্রভাবশালী কিংবা কোন দলের দোহাই,নেতাদের দোহাই দিয়ে বেঁচে যায়।

দীর্ঘশ্বাস  ফেলে আমার আশি বছরের মায়ের দিকে তাকাই।জীর্ন শীর্ন শরীর,কোথায় আকর্ষন হবার মত কি আছে সে শরীরে!

ভাইয়ের ছোট্ট মেয়ে প্রশ্ন করে,রক্তাক্ত শিশুর ছবি দেখিয়ে -

-ফুপি ওর কি হয়েছে? অবাক চোখে ওর দিকে তাকাই ।ওর  বয়সীই তো!কি আছে এই এতটুকু শরীরে।

আমার এগারমাসের সন্তান আযানকে বুকে আঁকড়ে ধরি। ওকে তো এডপ্ট করেছি মানুষ করব বলে,পারব কি মানুষ করতে?আজকের যে ছাত্ররা মেয়েটির সাথে এমন করেছে তাঁরাও নিশ্চয়ই আমার মত পরিবারের সন্তান।তাহলে কেন তাঁরা এমন?

থরথর করে কাঁপতে থাকি,চেয়াল শক্ত হয়ে যায়।আযানকে বুকে জোড়ে চেপে ধরি। চিৎকার করে কাঁদছে। আমি যেন শুনতে ই পাচ্ছি না।

হ্যাঁ আমি এমনই হব? তোকে চিপে মেরে ফেলব,যতই তোকে ভালবাসি না কেন? যতই আমি নিঃসন্তান হইনা কেন? এমন ঘৃনিত জঘন্য অপরাধে আমি তোকে স্থান দেবনা বুকে।উকিল নিয়োগ করবনা! তোর সাজার জন্য আইনকে সাহায্য করব। ছেলেমানুষ ভুল করে ফেলেছে এসব বলে শালিশের ব্যবস্হাও করতে যাবনা।বরং চাইব যত দ্রুত তোর চরম সাজা হয়,তত দ্রুত শান্তি আমার।

কষ্ট তো হবেই।কত শত চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে  তোকে বড় করেছি।রেপিষ্ট হিসেব দেখবার জন্যই কি?

তুই কেমন রে?একজন নারীর গায়ের গন্ধ শুকে শুকে,বুকে জড়িয়ে বড় হবার পরও সম্মান করতে শিখিস না। তাহলে তোকে কি করা উচিত? ক্রস ফায়ার কিংবা এমন কোন সাজার ব্যবস্থা যাতে সারা জীবন বেঁচে থাকবি কর্ম ফল সাথে নিয়ে।তখন বুঝবি যন্ত্রণা কাকে বলে!

আযান আরো জোড়ে কাঁদছে। চটকা মেরে ফেলে দিলাম বিছানায়।গোটা পুরুষ জাতির উপরই ঘৃনা হচ্ছে,খুব ঘৃনা।

আমি কলেজে বাংলাদেশের সংবিধান,সাংবিধানিক আইন পড়াই না। লজ্জা লাগে ,বমি পায়।  মেয়েরা বললে -তোমাদের স্যারই ভালো জানেন। অতবড় সংবিধান আমার মাথায় কুলায় না।কিংবা আমি হয়ত দেশপ্রেমিক না।তাতে অবশ্য সমস্যা নেই!

পড়াই UK,USA,France এসব। মাত্র দশপাতা সংবিধান।প্রয়োগ, সৃষ্টি, সফলতা এক সভ্য সমাজ।ভালোলাগে পড়াতে। এটাই হয়ত আমার প্রতিবাদ।পাতি বাঙালি হিসেবে আমার আর কিইবা করার আছে।

"দেখব শুনব বলবনা,কোন বিপদে পড়ব না।"এমন একটা ভাব নিয়ে বেঁচে থাকা!

ছবি-সংগ্রহ

 

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ