নামাজ

সুরাইয়া নার্গিস ১৫ মার্চ ২০২০, রবিবার, ১২:৫২:৫৫অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২১ মন্তব্য

ছোটবেলা থেকেই দেখছি আব্বু আম্মু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তাদের গল্পের বেশিভাগ বিষয়েই থাকতো নামাজ, নবী রাসুলের আদর্শ, আল্লাহর নবী সম্পর্কে।

আব্বু চাকরি সূত্রে যত জায়গায় বদলি হয়েছেন, তিনি সব সময় চেষ্টা করছেন সেখানকার একজন ব্যক্তিকে অন্তত আল্লাহর রাস্তায় আনতে।
সেটা তিনি পেরেছেন এক দু' জন নয় বেশ কয়েকশত জনকে আল্লাহর নবীর দেখানো পথে আনছেনা, যারা নিয়মিত নামাজ পড়েন।

আমরা নতুন যে জায়গায় আসছি সেখান সবাই শিক্ষিত উচ্চ বৃত্ত তাদেরকে এক নামে সমাজের সবাই চিনে,সম্মান করে,তারা সবাই সম্ভান্ত পরিবারের মানুষ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় তাদের অনেকেই আল্লাহকে চিনেন না।

আব্বু ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যান মসজিদটা ছোট ভাবলেন হয়ত নামাজের জায়গা পাওয়া যাবে না এখানে এত লোকের বসবাস।
অবাক কান্ড আব্বু মসজিদে গিয়ে পরিচিত কাউকে পেলেন না।
হাতে গুনা কয়েক জন নামাজ পড়তে আসলেন।বিষয়টা আব্বুকে খুব কষ্ট দেয়, তিনি থেমে থাকেন নাই মসজিদ থেকে বাসায় না ফিরে সবার বাসায় বাসায় গিয়ে নামাজের দাওয়াত দিলেন, পরদিনও কেউ সাড়া দেয়নি, পরদিন আবার গেলেন তাতে অনেকে বিরক্ত হলেন পাশার বাসার আন্টিরা আম্মুকে এসে বললেন সকালে একটু ঘুমানো যায় না ভাইয়াকে বললেন বাচ্চার বাবা বাসায় নামাজ পড়ে। ভোর রাতে ডাকাডাকি করে অন্যের ঘুম ভাঙা ঠিক এটা তিনি জানেন না, তারপরও বলে গেলাম নিষেধ করে দিবেন।

আব্বু পড়দিন আবার গেলেন এবার একা না মসজিদের ইমাম সহ আরো ৪,৬ জন যারা মসজিদে নামাজ পড়েন তাদের নিয়ে গেলেন। সবাই মিলে নামাজের দাওয়াত দিলেন এতে অনেকেই বিরক্ত হলো আব্বুকে মুটামোটি অনেকে গালি দিলেন,সামনা সামনি অপমান করলেন।

আব্বু বাসায় কিছু জানান নাই কিন্তু আম্মু পাশের বাসার আন্টির ঘটনাটা জানালেন আব্বু কষ্ট পেলেন চুপ করে থাকলেন। সব শুনে আমার খুব কষ্ট লাগলো আব্বুকে বললাম তুমি আজ থেকে বাসায় নামাজ পড়বে মসজিদে যেতে হবে না।কারন আল্লাহ সব জায়গায় থাকেন, আব্বু হেসে বললেন। মা তুমি জানো না বাসায় একা নামাজ পড়ার চেয়ে জামাতে নামাজ পড়ার সওয়াব ৭০ গুন বেশি.!

হু জানি কিন্তু সবাই তোমাকে বকা দেয়, পেচনে খারাপ বলে, আর তুমি কত ভালো তারা তোমাকে সম্মান করে না। তারা নামাজ পড়তে চায় না তুমি তাদের জোর করো কেন.?

আব্বু হেসে বললেন মা, ওরা অবুজ আল্লাহ সম্পর্কে জানে না যেদিন জানবে সেদিন আর বকবে না,গালি দিবে না মসজিদে আসবে, নামাজ পড়বে। আচ্ছা আজকেই শেষ ডাকবো কাল থেকে আর কাউকে বলবো না।
ওকে,
পরদিন রাতে এশার নামাজের সময় আব্বু সবার বাসার সামনে আবার অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ডাকতে শুরু করলেন।
তাতে একজন সাড়া দিলেন। আব্বু বাকিদের, খুশি করার জন্য বললেন আমি জানি আপনারা সবাই বাসায় নামাজ পড়েন। আজ মসজিদে যেতে হবে না শুধু আপনারা নামাজ পড়তে ওঠছেন এতটুকু বুঝতে পারলেই আমি চলে যাব। একথায় অনেক লজ্জাবোধ করলেন, কেউ কেউ দরজা খুলে বললেন আপনি যান আমরা পরে আসবো। অনেকেই দরজা খুলেন নাই আব্বু নিরাশ হয়ে ফিরে আসলেন এবং মন খারাপ করে মসজিদে চলে গেলেন।

আব্বু ছেলেবেলা থেকেই প্রতিদিন রাত ২ টার পরে আর ঘুমান না তাহাজ্জুতের নামাজ পড়েন, নফল নামাজ পড়েন, তারপর ফজরের নামাজ পড়ে আর ঘুমান না কোরআন তেলাওয়াত করেন।
পরদিন আব্বু আর ডাকতে গেলেন না ভোরে অজু করে নামাজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেন। আজান হলো, আব্বু ডাকার আগেই অনেকে বাসার সামনে স্যার ওঠেন ফজরের নামাজ পড়তে যাবেন না..? আব্বু হেসে বললেন আসসালামু আলাইকুম সবাই সালামের জবাব দিলেন আব্বু রুমের দরজা খুলে বের হলেন তারপর সবাই নামাজ পড়তে মসজিদে গেলেন।

আমাদের নতুন এলাকায় বয়স্ক লোক গুলোও জানি কেমন মেয়ে মহিলা দেখলেও সম্মান করে না বেহায়াপনা বাড়িয়ে দেয় খুব বাজে একটা অবস্থা। একদিন যারা আমার সালামের জবাব দিত না, তারা আজ আমাকে সালাম দেয়,কেমন আছো মা জানতে চায়। এই পরিবর্তন গুলো সত্যি খুব ভালো লাগে।

আগে যে পুরুষ বা ছেলে গুলো যারা রাস্তায় হিন্দি গায় গেয়ে পথ চলতো আজ সে আল্লাহ আকবার বলে,কোরআনের সূরা পড়তে পড়তে রাস্তা চলে। নিয়মিত মসজিদে যায়, নামাজ পড়ে, মেয়ে মানুষ দেখলে সালাম দেয়, চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে পথ চলে।

আমি বিয়ষ গুলো খেয়াল করলাম আব্বুর জন্য সবটা সম্ভব হলো, আব্বুর সবাইকে বুঝাতে পেরেছিলো নামাজ পড়া দরকার আল্লাহর ভয়ে সবাই নামাজমুখী হলো।সব শুনে আমার এতো ভালো লাগলো যে আনন্দে কেঁদে ফেললাম, আব্বুর চেষ্টা, কষ্ট সফল হয়েছে, আব্বু তুমি পেরেছো।

যারা কোনদিন মসজিদের সামনে দিয়ে যেত না নামাজ পড়ার ভয়ে আজ তারা নামাজ পড়তে যায় আল্লাহর ভয়ে। আল্লাহ্ রহমতে সবাই মসজিদে গেল আব্বু ছিলেন উছিলা যার মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্ধাদের তার দিকে নিয়ে গেলেন।

ছোটবেলা থেকেই বাসায় দেখেছি প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে আম্মু আব্বুর কাছে অনেক পুরুষ মহিলা আসেন নামাজ, হাদিস আল্লাহর সম্পর্কে জানতে।
অনেকেই নামাজ পড়তেন না, আম্মু তাদের নামাজ শেখাতেন,কোনআন পড়াতেন।
যে মসজিদে ১০-১৫ জন নামাজ পড়তো বর্তমানে সেই মসজিদে ১০০-১৫০ জন মানুষ নামাজ আদায় করেন।
বর্তমানে মসজিদে সবাই সবার সামর্থ অনুযায়ী দান করেন, মসজিদে নতুন মোয়াজিন নেওয়া হয়েছে। ৩০ বছর পর আব্বু এবং সকলের চেষ্টায় ২০১৯ সালে মাহফিলের আয়োজন করেছেন।

আমরা নামাজ পড়ি এবং অন্যকে নামাজ পড়তে বলি কারন নামাজ বেহেস্তের চাবি কোরআন, নামাজ পড়া ছাড়া বেহেস্তে যাবার বিকল্পনকোন পথ নেই, আল্লাহ্ আমাদের সকলকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার ও আল্লাহর নবী রাসুলের দেখানো পথে চলেতে পারার তৌফিক দান করুন।

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ