নাগরিকত্ব আইন

আলমগীর হোসাইন ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ০৭:০০:২৩অপরাহ্ন সমসাময়িক ১ মন্তব্য

নাগরিকত্ব আইন........

 

প্রথমেই বলে রাখি,নাগরিকত্ব আইনের দ্বৈত নাগরিকত্বর বিশেষ অংশের খসড়াতে যা দেখলাম,তা দেখে বলতে পারি,বহির্বিশ্বে বসবাসরত এক কোটিরও বেশি প্রবাসীকে বর্তমান সরকারের প্রতিপক্ষ কেন করা হচ্ছে -তা আমার বোধ্যগম নয় ?

আইনই সভ্যতার নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে | আইনের একজন ছাত্ৰ হিসাবে এটি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি |কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের দেশ গুলোতে আইন দ্বারা অনেক মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে |

যেগুলোকে আমরা কাল আইন বলি | মিলিটারি অফিসার জিয়া ইনডেমনিটি করে জাতির পিতার হত্যার বিচারের পথ রূগ্ধ করেছিল ; প্রজন্ম কিন্তু এগুলো ভুলে নাই !

#বিগত অর্ধশতাব্দী সময়কালে বিশ্ব রাজনীতি এবং মানুষের জীবনযাপন প্রণালিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।

সেই পাকিস্তান আমলে প্রণীত ‘দি সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ১৯৫১’ এবং ‘দি বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ (টেম্পোরারি প্রভিশন) ১৯৭২’ দিয়ে দেশের মানুষের নাগরিকত্বের বিষয়টি নির্ধারিত হয়ে আসছিল।

মহান স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশ বছর অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব আইন ছিল না।

বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ একটি নাগরিকত্ব আইন করতে যাচ্ছে সরকার।

ইয়েস এটা খুবই সত্য যে নতুন আইনে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ অনেক সম্প্রসারিত হচ্ছে। আগে বাংলাদেশীদের জন্য কেবল আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক হওয়ার আইনী সুযোগ ছিল। এখন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বাংলাদেশী নাগরিক বৃন্দ এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন |

কিন্তু !!!!!!

দ্বৈত নাগরিকত্বের আওতায় আমরা আমাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হব !!!তবে সেটা কিভাবে এবং কোন আইনের অধীনে তা আর বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।

এপরিস্থিতিতে দেশের মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের উদ্যোগ যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখার কথা ছিল কিন্তু যা দেখলাম খসড়া আইনে -দেখে অনেকটা অবাক ও হতবাক হয়ে পড়েছি |

বিশেষ করে দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে চরম বিমাতা সুলভ আচরণ করা হয়েছে এখানে |

আমাদের ধারণা ছিল, নতুন এই আইনটি দেশ ও জাতির জন্য ভাল কিছু নিয়ে আনবে কিন্তু না এটি এখন পর্যন্ত যেভাবে আছে ; তা থেকে সোজা বলা যায় - এটি প্রবাসীদের আগামীর জীবনে বারটা বাজাবে এতে কোন সন্দেহ নেই |

কথা হচ্ছে কারা আমাদের সরকারকে এই দ্বৈত নাগরিকত্বের সব সুযোগ-সুবিধা ক্ষেত্রে এই ভুল পরার্মশ গুলো দিচ্ছে |বহির্বিশ্বে বসবাসরত এক কোটিরও বেশি প্রবাসীকে বর্তমান সরকারের প্রতিপক্ষ কেন করা হচ্ছে -আমার বোধ্যগম নয় ?

প্রস্তাবিত আইনের চূড়ান্ত খসড়া ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভ করেছে। খুব সহসাই এটি সংসদে পাস হবে বলে আশা করা যায়।

কিন্তু প্রস্তাবিত বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন অনুমোদন ও কার্যকর হলে বহির্বিশ্বে বসবাসরত লাখ লাখ বাংলাদেশির সন্তান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হারাতে পারেন।

পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হবে।

প্রবাসীরা এই আইনে মারাত্মক বিড়ম্বনায় পড়বেন। বিশেষ করে ব্রিটেনসহ ইউরোপ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় ও মধ্যপ্রাচ্য সহ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীরা নাগরিকত্ব নিয়ে যারা বসবাস করছেন তারা মারাত্মক সমস্যায় পড়বেন।

#খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, আইনটি বলবত হলে বিদ্যমান ‘দ্য সিটিজেনশিপ এ্যাক্ট ১৯৫১ এবং দ্য বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ (টেম্পোরারি প্রভিশন) অর্ডার, ১৯৭২ (অর্ডার নং ১৪৯ অব ১৯৭২) রহিত হবে।

#দ্বৈত নাগরিকত্ব ক্ষেতে চরম বৈষম্য......

#সুপ্রীমকোর্টের বিচারক, জাতীয় সংসদের সদস্য, সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি, সশস্ত্রবাহিনী বা প্রজাতন্ত্রের কোন বেসামরিক পদে নিয়োজিতরা দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না।

সহজ ভাষায় যদি বলি..আপনি আমাকে নাগরিকত্ব দিবেন কিন্তু প্রিয় দেশের জন্য আমার দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করবেন কেন ?
যা বাংলাদেশের পবিত্ৰ সংবিধানের চরম লঙ্গন |

#আরোও অনেক বৈষম্য আছে যেগুলো উল্লেখ্য না করলেই নয়....

এই আইন অনুমোদন ও কার্যকর হলে বহির্বিশ্বে বসবাসরত দ্বৈত নাগরিকদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পুনরায় রেজিস্ট্রি করতে হবে।

তবে তারা যদি নাম রেজিস্ট্রি না করেন তাহলে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন কি-না তা আইনে পরিষ্কার নয়। তাছাড়া এই রেজিস্ট্রেশন স্থানীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে করা যাবে কি-না তাও আইনে উল্লেখ নেই।

যারা বহির্বিশ্বে বংশসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক (দ্বিতীয় প্রজন্ম) তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে প্রমাণ করতে হবে যে, তাদের পিতা বা মাতা এই আইন কার্যকর হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। তাছাড়া এই আইন প্রণয়নের দুই বছরের মধ্যে নিজেদের নাম স্থানীয় হাইকমিশনে রেজিস্ট্রি করতে হবে।

আর তৃতীয় প্রজন্মের জন্য আইনটি খুবই উদ্বেগজনক। যেহেতু তাদের পিতামাতা এই আইন কার্যকর হওয়ার পরে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন সেহেতু তাদের নাগরিক হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

কারণ আইনে বলা হয়েছে, কেউ বাংলাদেশের নাগরিক হতে হলে প্রমাণ করতে হবে যে, তার পিতা বা মাতা উক্ত আইন হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন।
কি সেকুলাস !!

প্লিজ প্লিজ প্লিজ আমরা যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছি -আমাদের সবাইকে বিষয়টা আপনার আমার আগামী প্রজন্মের জন্য সিরিয়াসলি নিতে হবে | এভাবে আইনটি
পাস্ হয়েগেলে বিরাট সমস্যায় পড়তে হবে সব প্রবাসীদের আগামী প্রজন্মকে |

ধন্যবাদ
আলমগীর হোসাইন
ম্যানচেস্টার,ইংল্যান্ড |

0 Shares

একটি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ