জীবন তুই কি ব্যস্ত?
না না তেমন না, সোহেল কি হলো কোর্টে?
জীবনের অফিস থাকায় নদীর সাথে বন্ধু সোহেল আর ওর বউ সোফিয়া ভাবীকে কোর্টে যেতে বলেছে।
খবর ভালো আমরা এই মাত্র বের হলাম কোর্ট থেকে।
রায় কি হলো সেইটা বল।
নদীর হাসবেন্ডকে নদীকে নির্যাতন করার অভিযোগে এক বছরের কারাঢন্ড এবং ডিভোর্সের কারণে দুই লাখ পাউন্ড পাবে নদী।
গুড।
নদীর সাথে কথা বল।
দে।
হ্যালো জীবন, নদী বললো অপর প্রান্ত থেকে।
কেমন আছেন?
জি ভালো।
বাসায় যান, রেস্ট করুন, সন্ধ্যায় দেখা হবে।
নাবিলাকে পিক করে নিয়ে যায় স্কুল থেকে?
জি, যান আর ঘরে কিছু লাগলে জানাবেন।
ঠিক আছে, বাই।
বাই, সোহেলকে দেবেন প্লিজ।
হ্যালো।
সোহেল যাবার সময় নাবিলাকে উঠিয়ে নিয়ে যাস, সময় হবে তো তোর?
হবে হবে, তুই চিন্তা করিস না।
ওকে দোস্তো বাই।
বাই বাই।
ফোন ডিস্কানেকট করে জীবন ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
নদী নাবিলাকে নিয়ে বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে খেতে বসলো, খেতে খেতেই নাবিলা বললো।
ডু ইউ নো আই স্টুড ফার্স্ট ইন মাই ক্লাস।
ওহ রিয়েলি, ভেরি গুড মাই সুইটি, বলো তুমি কি খেতে চাও?
চকলেট আইস্ক্রিম।
ওকে, খেয়ে উঠো তারপর তোমাকে আইস্ক্রিম দেবো, তোমার ড্যাড জানে?
নো নট ইয়েট, বাসায় ফিরলে জানাবো।
ওকে, তুমি খেয়ে নাও, তোমাকে আরেকটা চিকেন দেবো?
না না আমি ফ্যাট হয়ে যাবো বেশি খেলে।
বাহবা, মেয়ে আমার এখন থেকেই হেলথ কন্সাস।
আন্টি।
বলো মামনি।
আমি তোমার মেয়ে?
হাঁ অবশ্যই।
বাট তুমি তো আমার মা না?
আমি মা নাহলেও মার মতো।
ওহ আই সি।
নদী হেসে টেবিল থেকে প্লেট আর বাটি নিয়ে উঠে পড়লো, নাবিলারও খাওয়া হয়ে যাওয়াতে নাবিলা উঠে গেল।
প্লেট বাটি ধুয়ে রেখে নদী হাত পরিস্কার করে ফ্রিজ খুলে আইস্ক্রিম আছে কিনা দেখলো, ফ্রিজেই ছিলো চকলেট আউস্ক্রিম, দুই বাটিতে করে আইস্ক্রিম নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে এলো ও, নাবিলা টিভিতে কার্টুন দেখছিলো, একটা বাটি নাবিলাকে দিলো আর নিজে একটা নিয়ে পাশেই বসে পড়লো।
সোফাতে বসা অবস্থাতেই ঘুম লেগে ছিলো চোখে, সেলফোনের রিং বাজতেই ঘুম ছুটে গেল নদীর, হাত বাড়িয়ে ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বললো।
শেষ পর্যন্ত ছেলেটিকে জেলেই দিয়ে দিলি, অপর প্রান্ত থেকে নদীর মার গলা ভেসে এলো।
তোমাকে কে বলেছে?
রনির মা ফোন দিয়ে বললো, তুই চাইলে কি মিউচুয়াল করতে পারতিনা?
না মা, আমি আগেও বলেছি ওকে আমি মাফ করতে পারবোনা।
কিন্তু তোর সংসার তো শেষ করে ফেললি, ছেলেটা তোকে কতো কষ্ট করে লন্ডনে নিয়ে গেল, নদীর মার গলায় উদ্বেগ ফুটে উঠলো।
মা তুমি কি জানো, আমি আসার দুই মাসের মধ্যে আমাকে চাকরীতে লাগিয়ে দেয় আর সেই চাকরীর একটা টাকাও সে আমাকে দেয়নি, বেতন পেলেই সে নিয়ে নিতো।
তাতে কি, সে তোর হাসবেন্ড।
তাই বলে আমার সাথে কুকুর বেড়ালের মতো ব্যবহার করবে?
সে যে বললো সে তোকে খুব ভালোবাসে।
মা ওইসব বাদ দাও, সে একটা মিথ্যুক ছাড়া আর কিছুই নয়।
আজ তোর কারণে সমাজে আমরা মুখ দেখাতে পারবোনা।
কেন আমি কি করেছি যে সমাজে মুখ দেখাতে পারবেনা?
স্বামী ছাড়া মেয়েদের এইদেশ ভালো চোখে দেখেনা।
তুমি তাহলে থাকো তোমার সমাজ নিয়ে, আমি আর দেশে আসবোনা।
কিভাবে থাকবি ওখানে, তোর তো নাগরিকত্ব ওর কারণে যা ক্যান্সেল হয়ে যাবে, রনি বলেছিলো।
মিথ্যে কথা মা, এই দেশে একবার নাগরিকত্ব দিলে সেইটা ক্যান্সেল হবেনা কখনোই, যদি না আমি বড় ধরণের দোষ না করি।
নদীর মা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।
মা আর কিছু বলবে?
তারমানে তুই দেশে আসবিনা, তাহলে ওখানে কি করবি?
কেন কি করবো, চাকরী করবো।
তুই একলা মেয়ে ওখানে কিভাবে থাকবি?
মা, ও নিয়ে তুমি চিন্তা করোনা।
আচ্ছা এখন তুই কোথায় আছিস?
কেন লন্ডনে।
লন্ডনে তো জানি কিন্তু কোথায়?
যিনি আমাকে বাঁচিয়েছেন তার বাসায় আছি।
ওর সাথেই কি রনি তোকে দেখেছিলো?
মা রনি কি দেখেছিলো আমি কি জানি?
লোকটা কি করে ওখানে, কেমন লোক?
নদী বিরক্তির সাথে বললো, উনি ব্যাংকে চাকরী করেন বড় পদে আর তোমার জানার জন্যই বলছি, উনি এতো ভদ্রলোক যে তোমার মেয়ের দিকে চোখ তুলেও থাকাননা, হয়েছে তোমার, আমি এখন রাখছি, বাই।
নদী ফোন ডিস্কানেক্ট করে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল এরপর পাশ ফিরে তাকালো নাবিলার দিকে, বাচ্চাটা সোফার মধ্যে শুয়ে গুমিয়ে গেছে, খুব মায়া হলো নদীর, মাথার চুলে বিলি কেটে দিলো, গালে একটা চুমু খেলো আর তাতেই নাবিলার ঘুম ভেঙ্গে গেল, চোখ পিটপিট করলো একটু, এরপর নদীর দিকে হাত বাড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরে নদীর কপালে চুমু খেলো, বললো আন্টি আই লাভ ইউ।
মি টু সুইটি, উঠে পড়ো, মুখ ধুয়ে আসো এরপর আমরা হোম ওয়ার্ক করবো।
ওকে বলে নাবিলা উঠে পড়লো।
নদী নিজের জন্য কফি করে মেয়ের জন্য অরেঞ্জ জুস নিলো, নাবিলা এলে ওকে জুস খেতে দিয়ে নিজে কফি খেতে খেতে নাবিলার হোম ওয়ার্ক দেখিয়ে দিতে লাগলো।
কলিং বেলের শব্দে নাবিলা নদীর দিকে তাকালো পারমিশন পাওয়ার আশায়, নদী মাথা নাড়িয়ে সায় দিলে দৌড় দিলো দরজা খুলার উদ্দেশ্যে, কিছুক্ষণ পর বাবার কোলে করে ফিরে এলো।
জীবন নদীর দিকে তাকিয়ে বললো, হাই।
হাই, আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন কফি করছি।
ঠিক আছে আমি আসছি বলেই জীবন নিজ রুমে চলে গেল, নদী নাবিলাকে পড়াতে শুরু করলো।
জীবন ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে এলে নদী কফির মগটা এগিয়ে দিলো।
আপনি কষ্ট করতে গেলেন কেন?
অসুবিধা নেই, এখন তো মোটামুটি হাটতে চলতে পারছি।
এরপরেও আপনি মেহমান আমাদের।
ওইসব বাদ দিননা প্লিজ।
ওকে ওকে, আচ্ছা ভালো কথা, আপনার দেশের পড়াশুনার সার্টিফিকেট গুলো কোথায়?
আমার কাছেই আছে, হাসপাতালে থাকা কালিন আমার শপের মালিক ফেরত দিয়ে গিয়েছিলেন।
মানে?
চাকরীতে জয়েন করার সময় চেয়েছিলেন, আমি অরিজিনাল কপি গুলোই দিয়েছিলাম আর ফেরত নেওয়া হয়নি।
গুড, খুব ভালো হলো তাহলে, একটু দেখতে পারি?
অবশ্যই, নিয়ে আসছি।
কষ্ট করে যাবেন?
অসুবিধা নেই, আসছি আমি বলেই নদী সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেল।
জীবন নদীর সার্টিফিকেট গুলো একটা একটা খুলে দেখছে আর নদী আগ্রহভরে জীবনের দিকে তাকিয়ে রইল, দেখা শেষ করে জীবন বললো, আপনি তো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, এসএসসি, এইচএসসিতে ফার্স্ট ডিভিশন তাও সাইন্স নিয়ে, পড়েছিলেন ফার্মাসিউটিকেলস আর তাতেই ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড, বাহ, দারুণ রেজাল্ট।
হটাৎ সার্টিফিকেট দেখলেন?
আপনার জন্য একটা এক ইউনিভার্সিটিতে জব পেয়েছি আর তাই সার্টিফিকেট গুলো দেখলাম।
সত্যি, কোন ইউনিভার্সিটিতে, কি পদে?
সেইন্ট পিটার্স ইউনিভার্সিটি, কাছেই আছে হেটে যেতে পারবেন, আজ ওই ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এসেছিলো, বললো রেজিস্টারার লাগবে ওখানে, তাই ভাবলাম আগে দেখি আপনার রেজাল্ট গুলো কি।
চাকরী হবে, নদীর চোখে মুখে প্রশ্ন।
কাল সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আপনাকে নিয়ে যাবো, তারপর দেখি কি হয়।
আল্লাহ্ তুমি সহায় হও, চাকরীটা করিয়ে দাও, নদী দুহাত তুলে ফরিয়াদ করলো আর তা দেখে জীবন হাসলো।
ড্যাড, আই হ্যাভ আ গুড নিউজ ফর ইউ।
জীবন হাত বাড়িয়ে ধরে নাবিলাকে কোলে তুলে নিলো এরপর জিজ্ঞেস করলো, বলো শুনি কি নিউজ।
আমি ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছিইইইইই।
ওহ মাই গড, রিয়েলি, মেয়ের গালে চকাম করে একটা চুমু দিলো জীবন।
ড্যাড এইটা কি করেছো বলে গাল মুছতে মুছতে কোল থেকে নেমে গেল।
ইয়াক ড্যাড মুখে থুথু লাগিয়ে দাও তুমি।
জীবন হো হো হো করে হাসতে লাগলো।
২৪টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আমাদের মায়েদের একদম ঠিক ভাবে তুলে ধরেছেন,
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান, বাংলার মায়েদের তো চিনি নাকি? 😀
ছাইরাছ হেলাল
ভাল করেই চিনি, বাকী নেই কিছুই!! ভাই।
ইঞ্জা
জেনারেশন টু জেনারেশান এই চলে আসছে এইসব কুসংস্কার, এইসব থেকে সবার বেরিয়ে আসা উচিত।
নীহারিকা জান্নাত
এবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে নদী।
ভালো লাগছে।
এভাবেই যেন কালে কালে মেয়েরা রনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শেখে, ঘুরে দাঁড়াতে শেখে।
নদীর জন্য একরাশ শুভকামনা।
ইঞ্জা
মেয়েরা যদি এখনো না শিখে তাহলে কপালে আরো বেশি দূর্গতি আছে দাদীজান।
রিফাত নওরিন
আগের পর্বগুলো পড়া হয়নি, তবে এই পর্বটা খুব ভালো হয়েছে…
কষ্ট সয়ে নিজের জীবনটা নষ্ট করার কোন মানে হয়না…নদী ভালো ডিসিশন নিয়েছে!!
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অনিঃশেষ, গল্পটি প্রথম থেকে পড়তে চাইলে ব্লগেই পাবেন আর সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রেরিত হলাম।
প্রহেলিকা
আগের পর্বগুলো পড়া হয়নি, মিস করেছি। সময় করে পড়ে নিবো। তবে সহজ ভাষায় উপস্থাপন বেশ ভালো লাগলো। সাবলীলতা বজায় রাখা লেখকের গুণের মধ্যে অন্যতম যা অনেকের থাকে না।
সুন্দর শুভকামনা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য, অনুপ্রেরিত হলাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমাদের বাঙ্গালী সমাজ সে যে দেশেই থাকুক না কেন, চরিত্রের বদল হয়না। এখানেও যদি কেউ ডিভোর্স নেয়, বাঁকা চোখে তাকাবেই। বড়ো বড়ো কথা বলে মুখে, কিন্তু পেছনে সরেই ফিসফিস শুরু করে। নদীর মাকে তাই দোষ দিতেও পারিনা।
তবে নদীর এই যে সামনে এগিয়ে চলা, ভালো লাগছে।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ প্রিয় আপু, আমাদের দেশ না আগানোর প্রথম কারণই হলো অন্যের বিষয়ে অযথায় নাক গলানো, যতদিন এই নাক গলানো বন্ধ না হবে, ততদিন এই দেশ পিছিয়ে থাকবে।
নীলাঞ্জনা নীলা
একেবারে ঠিক বলেছেন হ্যান্ডপাম্প ভাই।
ইঞ্জা
-{@
মোঃ মজিবর রহমান
ও! দারুন খুব ভাল লাগলো ভাইয়া।
ইঞ্জা
আপনাদের ভালো লাগায় তো আমার অনুপ্রেরণা ভাই। 🙂
মৌনতা রিতু
এতো সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলেন 🙂 মনে হয় কোনো বাস্তব দৃশ্যই দেখছি।
মাকে একদম ঠিকমতো জবাবটা দিতে পেরেছে নদি।
সামনে কি হয় দেখার অপেক্ষা।
ইঞ্জা
অনুপ্রেরিত হলাম আপু, দোয়া রাখবেন যেন সুন্দর ভাবে শেষ করতে পারি।
মিষ্টি জিন
বেশ ভাল হয়েছে এই পর্ব ।
দেখা যাক কি হয় শেষ পর্যন্ত ।
ইঞ্জা
দোয়া রাখবেন আপু যেন সুন্দর ভাবে গল্পটি শেষ করতে পারি। 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হয়তো নাবিলাই নদীর জীবনের মাঝে জোড়া লাগাবে -{@ গল্প ভাল হচ্ছে দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়। -{@
ইঞ্জা
দেখি কি হয়, বলা তো যায়না কি হয়। :p
জিসান শা ইকরাম
নদী নদীর মতই বহমান থাকুক,
কোন বাঁধ যেন তাঁর চলার পথ আঁটকে দিতে না পারে।
ইঞ্জা
দোয়া রাখবেন ভাইজান।