
সকালের শেষ প্রহর গড়িয়ে সবে মাত্র পা দিয়েছে দুপুরে । অর্থাৎ তখন দুপুরের প্রথম প্রহর। হঠাৎ বেজে উঠল ফোন। তারার হাতেই ছিল ফোনটা। অপ্রত্যাশিত নম্বরে ফোন পেয়ে চমকে উঠলো তারা। এক মুহূর্ত দেরি না করে রিসিভ করেই কানে ধরলো। অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো প্রিয়জনের কন্ঠস্বর।
-তুমি কোথায়?
বাসায়।
-কোনো বাসায়?
যেখানে থাকি।
-আচ্ছা, এক কাজ করো তোমার বাসার এ্যাড্রেসটা ডিটেইল বলো তো।
কেনো? আমার বাসার এ্যাড্রেস দিয়ে কী হবে?
-আমি আসবো।
আপনি আসবেন!
-আমি তোমার শহরেই আছি।
সত্যিই!
তারা ধ্রুবকে তার এ্যাড্রেস দিয়ে দিল। আর অপেক্ষা করতে শুরু করলো। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। ধ্রুব ঠিক করে কিছু বলেনি কোন সময় দেখা হবে? শুধু বলেছে সেই ফোন দেবে। তারার মনে অজস্র প্রশ্নের আনাগোনা। সত্যিই দেখা হবে তো! হঠাৎ দেখা হলে কেমন লাগবে? এই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মনের মধ্যে। বুক দুরুদুরু, অন্যরকম ভয়ে কেঁপে উঠছে হৃদয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। তারার অপেক্ষা যেনো শেষই হচ্ছে না।
সন্ধ্যার একটু পর আবার ফোন এলো। তারা রিসিভ করেই বললো…
টেনশন দেওয়ার স্বভাব এখনো যায়নি দেখছি।
-জান শোনো না, ফিরে যাচ্ছি। আজ আর দেখা হবে না। সময় করে একদিন আসবো ইনশাআল্লাহ।
মানে কী? এতো কাছে এসেও দেখা না করেই চলে যাবে?
-কী আর করবো বলো? যা হোক ভালো থেকো। আল্লাহ হাফেজ।
-জানতাম তুমি আসবে না, মন বলছিল। আচ্ছা বেশ, যা ভালো বোঝ করো। জোর করবো না।
তারা ফোন রেখে দিয়ে নৈঃশব্দিক কান্নায় ভেঙে পড়লো। দু’চোখে যেনো শ্রাবণের ধারার মতো অঝরে ঝরছে অশ্রু। তারা মনে মনে বলছে তুমি কখনোই তোমার দেখা কথা রাখোনি। আজও সেটাই করলে। তোমার থেকে দূরে রেখেছো, সেটাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমি। তাইলে আবার নতুন করে কষ্ট দেবার কী খুব দরকার ছিল?
মিনিট বিশেক পর আবার এলো ধ্রুবর ফোন। তারা ফোনটা কেটে দিলো। ধ্রুব পর পর কয়েকবার ফোন দিলো। কিন্ত তারা ফোন রিসিভ করলো না। ধ্রুব তখন টেক্সট দিলো।
-কই তুমি? আমি তো আসলাম
তারা সাথে সাথে ফোন ব্যাক দিলো। জানতে চাইলো ধ্রুব কোথায়? সত্যিই এসেছে কিনা!
ধ্রুব অবাক করে দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি বাইরে আসো। আমি অমুক জায়গায় আছি। তারা এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে বাইরে গেলো। যখন ধ্রুব আর তারা মুখোমুখি তখন সন্ধ্যার অন্ধকার জেঁকে বসেছে। নিয়ন বাতির আবছায়া আলো অস্পষ্ট দেখাচ্ছিল ধ্রুবকে। তারা পৃথিবীর সমস্ত ভাষা যেনো হারিয়ে ফেলেছিল, কিছুই বলতে পারছিল না। ধ্রুব তারাকে কাছে টেনে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো এবার ফিরে যাও। তারা অশ্রুসিক্ত নয়নে শুধু চেয়েই রইল। ধ্রুব যেতে হবে বলতেই তারা বললো…
আজ থেকে যাও না প্লীজ।
-এমন আবদার করো না জানো প্লীজ। আমি আবার আসবো ইনশাআল্লাহ।
বলেই ধ্রুব চলে গেলো। তারার ভীষণ ইচ্ছে করছিল দৌড়ে গিয়ে ধ্রুবকে জাপটে ধরতে। কিন্তু সে তা করতে পারলো না। অদৃশ্য কোনো শক্তি যেনো ওর পা দুটো চেপে ধরে রেখেছিল। তারা চেয়ে চেয়ে দেখলো ধ্রুবর চলে যাওয়া। ধ্রুব আড়াল হলেই অশ্রুস্নাত নয়নে ফিরে এলো তারা
মাত্র দশ সেকেন্ড ধ্রুবতারা কাছাকাছি ছিল। এতোক্ষণ যা যা ঘটলো সবটায় তারার কাছে স্বপ্ন মনে। মনে হলো সে এতোক্ষণ সুন্দর স্বপ্নে বিভোর ছিল। আর সে স্বপ্নেই এসেছিল তার প্রাণাধিক প্রিয় প্রিয়তম ধ্রুব। কখনো কখনো সত্যিও স্বপ্ন মনে হয় তার বাস্তব প্রমাণ তারা পেলো সন্ধ্যার এই দশটা সেকেন্ড পেয়ে।
ধ্রুবতারার গল্পটা সত্যি ছিল, তবুও স্বপ্নই মনে হলো। ভালো থাকুক ধ্রুব, ভালোবাসায় মিশে থাকুক তারার হৃদয়ে। ধ্রুবতারা মিশে থাকুক সবার হৃদয়ে।
ছবি-গুগল
২১টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
তবুও মেঘ সরে গেলে দিও সাড়া,এ আঁধারে জেগে আছে আছে ধ্রুবতারা। ধ্রুবতারা দুজনেই ভালো থাকুক।
সুরাইয়া পারভীন
ভালো থাকুক ধ্রুব ভালো থাকুক তারা
যুগযুগ বেঁচে থাকুক ধ্রুবতারার ভালোবাসা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
শামীম চৌধুরী
আপন জনের সঙ্গে দেখার করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তা কতক্ষনে দেখা হবে সেই টেনশন কাজ করে। তখন এক সেকেন্ড এক বছর মনে হয়। অপেক্ষা করাটা কত যে অসহ্যকর ও বিরক্তিকর সেটা তারা বুঝলো। ধ্রুবকে পেয়ে তারার কাছে মনে হলো সে আকাশের চাঁদ পেয়েছে। আর কপালে আালতো করে চুমু তারাকে কোথায় যে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সেটা তারা ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না।
খুব ভাল লাগলো।
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদাভাই আপনাকে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
কামাল উদ্দিন
এমন কেনো তাদের প্রেম। এই গল্পের আগে কি আরো কোন গল্প আছে? এতোটা অপেক্ষার কষ্ট দেওয়ার পর স্বল্প সময়ে এসে কষ্টটাকে বাড়িয়েই বা লাভ কি হলো ওর? আমি তো গল্পই ভেবেছিলাম, কিন্তু সল্পটা যে সত্যি সেটাই তো আমাকে ভাবাচ্ছে……..শুভ কামনা জানবেন আপু।
সুরাইয়া পারভীন
প্রিয়জনকে এক পলক দেখলেও যে প্রশান্তি আসে মনে তা কথা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময় ভাইয়া
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, আপনিও ভালো থাকুন সব সময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কারো জন্য অপেক্ষা যেমন মধুর তেমনি কষ্টের। অতি প্রিয় জন সামান্য সময় দিয়ে চলে যাওয়াটা আরও কষ্টের।
এর মাঝেই ভালো থাকুক দুজন॥
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
কখনো কখনো সামান্য সময়টুকুই আবার নতুন করে বাঁচিয়ে তোলে জীবন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আপু
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
উর্বশী
অপেক্ষা জিনিসটা অনেক কষ্টের, তেমনি তার প্রহর কেটে গেলে আবার আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়,তখন কষ্টগুলো আর কষ্ট মনে হয়না। কিন্তু স্থায়ীত্ব কম হলে বিভীষিকাময়। মিশগটি প্রেমের অনুভূতি টুকু সারাজাগানিয়া। ভাল লাগলো।
শুভ কামনা অবিরাম।
সুরাইয়া পারভীন
কোনো কোনো গল্পের ১০ সেকেন্ডের দেখাও কয়েক যুগ পাড়ি দেওয়ার রসদ সরবরাহ করে। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
মিলনাত্মক গল্প হলেও বাঁকগুলো সুন্দর ছিল।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
ত্রিস্তান
প্রতীক্ষার প্রতিটি প্রহর কালের সমীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। হয়তো ধ্রুবর হাতে এমন কোন অফিসিয়াল কাজ ছিলো যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সে কারণে আপনাকে সময় দিতে পারেনি। অপেক্ষা করলে একসময় আরো ভালো কিছু পেতে পারেন। ধন্যবাদ ।
সুরাইয়া পারভীন
ঠিকই বলেছেন
যোগাযোগহীন বহুদিন বিচ্ছিন্ন প্রতীক্ষার প্রহর শেষে যা পাওয়া গিয়েছে তা নিয়ে আরো কয়েক যুগ পাড়ি দেওয়া যায় অনায়াসে
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
ফয়জুল মহী
চটুল ভাষায় হৃদয়ঙ্গম লেখা । অনবদ্য প্রকাশ । মনোলোভা কথার চয়ন।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
আরজু মুক্তা
ছোট গল্প ছোট ছোট কথা, আবেগ আর নীরব ভালোবাসা
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা অশেষ আপু
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
তৌহিদ
ক্ষণিকের ভালোবাসা ধ্রুবতারা হয়েই ধরা দেয়। ভালোবাসার আক্ষেপ সবাই বুঝতে পারেনা।
চমৎকার গল্প পড়লাম আপু। শুভকামনা সবসময়।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়