ধর্মের গুরুত্ব কতোখানি?

সাফায়েতুল ইসলাম ২২ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার, ১০:৪০:১৩পূর্বাহ্ন সাহিত্য ৩ মন্তব্য

সব ধার্মিক মানুষদের, সম্পূর্ণ সম্মানের সাথে বলছি; দেখো, ধর্মের মূল অর্থ হলো; কোন কিছুতে বিশ্বাস করা। যখনই কেউ বলেন; আমি একজন ধার্মিক মানুষ, তারা নিজেদের উল্লেখ্য করেন বিশ্বাসী রূপে। তাই না? বিশ্বাসী...।

বিশ্বাসের অর্থ কি? মানে হলো; তুমি কিছু জানো না, কিন্তু, তুমি স্বীকারও করতে চাইছ না, যে তুমি জানো না। সুতরাং, তুমি যদি কিছু না জানো, কেনো সরাসরি বলছ না যে তুমি জানো না।

হ্যালো... বুঝা যাচ্ছে...

আমি যখন কিছু জানি না, আমি বলি আমি জানি না। কারণ, আমি জানি না একটি অসামান্য সম্ভাবনা। যখন তুমি বলবে আমি জানি না, তখন জানার এই ইচ্ছেটা, জানার এই আগ্রহটা, জানার এই সম্ভাবনাটা হয়ে উঠে তোমার জীবনের প্রকৃত বাস্তব।

যা কিছু আমরা জানি না সেগুলোই আমরা বিশ্বাস করি। আর এর থেকেই যত গণ্ডগোলের শুরু। একটা জিনিস, আমরা করে থাকি। এইটা তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, আমি বিশ্বাস করি, অর্থাৎ তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। কিন্তু, স্বচ্ছতাব্বিহীন আত্মবিশ্বাস একেবারে অর্থহীন। এইটা এমন একটা বিপর্যয়, যেইটা বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে এখন পৃথিবীতে উদ্ঘাটিত হচ্ছে। যারা দেখতে পায় না তাদের সামনে কি রয়েছে, তারাই সব থেকে আত্মবিশ্বাসী, যেটা কিনা বিপদজনক। যদি তুমি দেখতে না পাও, অন্তত তোমার দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া উচিৎ, তাই না? যদি তুমি দেখতে না পাও, অন্তত তোমার দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া উচিৎ। কিন্তু তুমি দেখতে না পাওয়া সত্ত্বেও, নিজেকে আত্মবিশ্বাসী ভাবছ। স্বচ্ছতা বিহীন আত্মবিশ্বাস। এই বিশ্বাসটা এলো কোত্থেকে?

যাই হোক, তোমাদের একটা মজার কথা বলি; ঠিক আছে তো? খুব গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে নাকি ব্যাপারটা? এতো গম্ভীর দেখাচ্ছে তোমাদের, আমিই ভয় পেয়ে যাচ্ছি। এইটা ঘটেছিল, নিউইয়র্ক শহরে। একটা আট বছরের ছেলে, স্কুল থেকে ফিরল, বিকেল বেলা। বাড়িতে তার একজন মা ছিলেন। অবশ্যই তিনি সিঙ্গেল। সে বাড়ি ফিরে জিজ্ঞাসা করল; মা, ঈশ্বর কি পুরুষ নাকি নারী? যদিও এইটা অ্যামেরিকাতে একটা বিরাট বড় বিতর্ক। ভগবান পুরুষ নাকি নারী, অ্যামেরিকাতে এইটা বিরাট বিতর্কের বিষয়। তোমরা তো জানো; গতবারের নির্বাচনেই ওরা এইটার মীমাংসা করতে চেয়েছিল। মা ভাবলেন, একজন প্রগতিশীল মহিলা হিসেবে পুরুষ ও নারীর অধিকার সংক্রান্ত বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে, সে সময় দেশে এইটার গভীর প্রভাব, তো অনেক ভেবে তিনি বললেন; দুটোই। শুনে ছেলেটি তো বিস্তর চিন্তায় পড়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে জিজ্ঞাসা করল; মা, ঈশ্বর কালো নাকি ফর্সা? তোমরা জানো, আগের নির্বাচনে তারা এই ব্যাপারটারও মীমাংসা করতে চেয়েছিল। কারণ, বর্ণ রাজনীতি এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি ভাবলেন সেই বর্ণ রাজনীতি নিয়ে। যেইটা তখন দেশে প্রবলমাত্রায় প্রচলিত। অনেক ভাবনার পর তিনি বললেন; দুটোই।

এইবার ছেলেটি আবার গভীর চিন্তায় পড়ে গেলো। অনেক ভাবনার পর সে ফিরে এলো। জিজ্ঞাসা করল; মা, ঈশ্বর কি শুধু ছেলেদের ভালবাসে? নাকি মেয়েদেরও ভালবাসেন? শ্যাম রাখি না কুল রাখি, এই নিয়ে ভেবে ভেবে মা অবশেষে বললেন; যে দুজনকেই। তাই শুনে ছেলেটি আনন্দে লাফাতে লাফাতে বলল; বুঝেছি, এইটা মাইকেল জ্যাকসন।

আমি জানি না, তোমরা কিভাবে বিশ্বাসী হয়েছ। তোমাদের বুঝতে হবে, এইটা হলো এক ঈশ্বর বিহীন সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিতে আমরা সব সময় তোমাদের বলেছি যে; তোমাদের কর্মই হলো তোমাদের জীবন, হ্যাঁ কিনা? তোমরা ভুলে গেছো। এই সংস্কৃতিতে আমরা সবসময় বলেছি; তোমার কর্মই হল তোমার জীবন। তার অর্থ, তোমার জীবন তোমার দ্বারায়ই গঠিত। কেউ ওখান থেকে বসে তোমাদের পরিচালনা করছে না। তোমার জীবনটা পুরোটাই তোমার কর্ম। তুমি লম্বা, তুমি বেঁটে, তুমি সক্ষম, তুমি অক্ষম, তুমি কিছু করতে পারো, তুমি পারো না, সবটাই তোমার কর্ম।

আমরা, আমরা... তোমাদের চিরকাল ধরে বলে এসেছি, তোমাদের জীবনটা সম্পূর্ণ রূপে তোমাদেরই বানানো। কিন্তু, আমরা এইটাকে পরিবর্তন করে নিয়েছি, অন্য কিছুতে। এখন আমরাও উপরে তাকাতে শুরু করেছি। উপরওয়ালা। তোমরা তো সবাই ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্রছাত্রী, তোমরাই বলো; এই গ্রহটি বৃত্তাকার নাকি সমতল? সত্যি! বৃত্তাকার? কেউ কেউ বলছে না। আমি তোমাদের জিজ্ঞাসা করছি? এইটা কি বৃত্তাকার? এইটা কি ঘুরছে? তো... তোমরা তো উত্তর মেরুতেও নেই। তোমরা তো এখন এই চেন্নাইতে। এখানে তোমরা যদি উপরের দিকে তাকাও, এবং গ্রহটি যদি ঘুরে, তাহলে তোমরা অবশ্যই ভুল দিকে দেখছ। হ্যালো... তোমরা তো এইটা জানো না কোনটা উপরের দিক। আচ্ছা, তোমরা কি জানো কোনটা উপরের দিক আর কোনটা নিচের দিক? হ্যালো... কোনোদিকটাতে কি মার্ক করা আছে যে এইটা উপরের দিক। এই ব্রহ্মাণ্ডে কোথাও খুঁজে পাবে কি কোনটা উপরের দিক? তাহলে তোমরা যে উপরের দিকে তাকাচ্ছ, কিসের জন্য? যখন তোমরা জানোইনা যে কি রয়েছে উপরে, তোমরা কিভাবে জানলে কে আছে উপরে?

তারমানে কি এই যে আমি এই জগৎকে বানিয়েছি? নাহ, অবশ্যই না? তোমার আমার জন্মানোর অনেক আগেই এখানে এসব ছিল, তাই না? সুতরাং, এখন তোমাদের অন্তত বলা উচিৎ যে আমি আসলে কিছুই জানি না। তো সমস্যা হলো, কেউ আস্তিক তো কেউ নাস্তিক। তারা কেউ আলাদা মানুষ নয়, শুধু খোলসটাই আলাদা, একই নির্বুদ্ধিতা। একজন বিশ্বাস করে, যা কে সে জানে না পজিটিভ দিক থেকে। আরেকজন বিশ্বাস করে, যা কে সে জানে না নেগেটিভ দিক থেকে। দুজনেই বিশ্বাস করে এমন কিছু কে, যা কে সে জানে না, তাই না?

মানুষের ঠিক সমস্যাটা কি, যে তোমরা স্বীকার করতে পারো না যে আমি জানি না। যদি আমরা বলি; আমরা জানি না, তাহলে এইটা কত বিস্ময়কর, কত সুন্দর, যে আমরা জানি না। যদি তুমি অনুভব করো যে তুমি সত্যি জানো না, তোমার বুদ্ধি কিন্তু সব সময় সজাগ থাকবে। কখনই বিকল হবে না, সব সময়, জীবনের প্রত্যেকটি মূহুর্তে। এমনকি তোমার ঘুমের মধ্যেও তুমি সজাগ থাকবে, যদি তুমি উপলব্ধি করো যে তুমি সত্যিই জানো না।

এই বিশ্বাসটা এমন বানী দিয়েছে যে, পোঙ্গল খেয়ে... তুমি জানো, অলস করে দিয়েছে। এই গোটা বিশ্বটাই অলস হয়ে পড়েছে। যখন আমি অলসতার কথা বলি, শারীরিক রূপে নয়, বুদ্ধিটা অলস হয়ে পড়েছে। কারণ, এই বুদ্ধিটাই বিশ্বাস করে, সবাই কোন না কোন নির্বুদ্ধিতায় বিশ্বাসী।

আমরা কি যথেষ্ট সাহসী হতে পারি? হে রাষ্ট্রের যুবসমাজ, আমি তোমাদের বলছি! আমরা কি যথেষ্ট স্বচ্ছ হতে পারি এইটা বলার জন্য, যে যেইটা আমি জানি, সেইটা জানি, আর যেইটা আমি জানি না, সেইটা জানি না।

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ