এই শহরে আজ থ্যাংকস গিভিং ডে। এবার অন্যবারের মতো বন্ধুরা মিলে পার্টির আয়োজন নেই। এখানে আজ তুমুল বৃষ্টি নামার কথা ছিল। কিন্তু ঘুম ভেঙে রোজকার নিয়মে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখি ঝলমলে রোদ। আকাশের দিকে তাকাই। নীল আকাশে ভেসে ভেসে মেঘেরা চলে যাচ্ছে অচিন কোনো দেশের পাণে।
নভেম্বরের শেষ সময়। হাড় কাঁপানো শীত থাকার কথা। অথচ এত চমৎকার আবহাওয়া! এমন দিনে ঘরে থাকা দায়। বেরিয়ে পড়ি শহর, শহরের মানুষ, উৎসবের আমেজ দেখতে। হলিডের কারণে অধিকাংশ দোকানপাট ও বড় বড় শপিং মল বন্ধ। তবু কেউ ঘরে বসে নেই। মানুষজন হাঁটছে সড়কের দুইপাশের ফুটপাতের কিনার ঘেঁষে। জংশন ব্লুবার্ডে মোড় নিতেই চেনা রেস্তোরাঁ। আর্জেন্টিনার নীল-শাদা জার্সি পরা কিছু মানুষের জটলা। সাধারণত খেলা চলাকালীন সময়টাতে রেস্তোরাঁটি আকাশচুম্বী নীল-শাদা ব্যানারে সাজানো হয়। উচ্চ ভলিওমে মিউজিক বাজানো হয়। তখন হৈচৈ আর আনন্দ উচ্ছ্বাসে মাতিয়ে রাখে জার্সি পরা একদল মানুষ। কিন্তু আজ কোনো মিউজিক বাজেনি। উচ্ছ্বসিত হাসির আওয়াজ শোনা যায়নি। সুনসান নীরব, বিষণ্ণ। শোকে স্তব্ধ। আজও সেখানে নীল-শাদা ব্যানার বাতাসে দুলছে। ব্যতিক্রম দৃশ্য। থমকে দাঁড়াই। ব্যানারের গায়ে কালো হরফে লেখা- “মরে গেলে, আবারও আমি জন্ম নিতে চাই, একজন ফুটবলার হতে চাই। আবারও দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা হতে চাই। আমি একজন ফুটবলার যে মানুষকে আনন্দ দিয়েছে আর এটা আমার জন্য বেশির চাইতেও বেশি।” এইসব একদা বলেছিলেন সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তী ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাদোনা। কী অসীম, অকৃত্রিম ভালোবাসা ফুটবলের প্রতি!
আমি সামনের দিকে হাঁটছি। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে দেখছি। আবারও। ব্যানারটি বাতাসে উড়ছে। আমার খুব করে মনে পড়ছিল আমার শহর চাঁদপুরের কথা। যেন মানস চক্ষে হাজী মহসিন রোডের পৈত্রিক বাড়িটি দেখছিলাম। যার ছাদে বাঁশের মাথায় পতপত করে উড়ছে নীল-শাদা পতাকা। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ খেলা চলছিল তখন। আব্বা ছাদে আর্জেন্টিনার পতাকা লাগিয়েছিলেন। সেটি সুনীল আকাশের দিকে মাথা উঁচিয়ে পতপত করে উড়ত। পাড়ার ছেলেপেলেরা কেউ কেউ খেলা দেখতে আসত আমাদের বাসায়। আমাদের সাদাকালো টেলিভিশনে। আমরা গভীর মনোযোগে দেখতাম ১০ নাম্বার জার্সি গায়ে ম্যারাদোনার মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো। সেই থেকে ফুটবল খেলা ভালোবাসতে শিখে যাই। স্কুলে ফুটবল টিমে খেলতাম। ইন্টারস্কুল ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করতাম।
আমি জংশন ব্লুবার্ড ধরে কিছুদূর হেঁটে গিয়ে ফিরে আসি। রেস্তোরাঁর সামনের জার্সি পরিহিত মানুষ দেখি। বিষণ্ণ, স্তব্ধ মানুষ। বাতাসে দুলে উঠা নীল-শাদা ব্যানার দেখি। ব্যানারের লেখা পড়ি। সর্বকালের সেরা একজন দেশপ্রেমিক দেখি। আমার আর উৎসবের আমেজ দেখা হয়নি।
রিমি রুম্মান
নিউইয়র্ক,যুক্তরাষ্ট্র
৬টি মন্তব্য
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
অনেক সুন্দর লেখা উপহার দিলেন
শুভকামনা রইল
রোকসানা খন্দকার রুকু
আজ সেখানে নীল-শাদা ব্যানার বাতাসে দুলছে। ব্যতিক্রম দৃশ্য। থমকে দাঁড়াই। ব্যানারের গায়ে কালো হরফে লেখা- “মরে গেলে, আবারও আমি জন্ম নিতে চাই, একজন ফুটবলার হতে চাই। আবারও দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা হতে চাই। আমি একজন ফুটবলার যে মানুষকে আনন্দ দিয়েছে আর এটা আমার জন্য বেশির চাইতেও বেশি।” এইসব একদা বলেছিলেন সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তী ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাদোনা। কী অসীম, অকৃত্রিম ভালোবাসা ফুটবলের প্রতি!
এমন ভালোবাসা ছিল বলেই তিনি সেরা। সবার সেরা। আমরা তার আত্নার শান্তি কামনা করি।
প্রদীপ চক্রবর্তী
অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় ফুটবলের ঈশ্বর প্রেমীকে নিয়ে প্রকাশ করলেন, দিদি।
কিংবদন্তী ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাদোনা আমাদের মাঝে চিরকাল অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
“আর্জেন্টিনাকে থামাতে চাও তাহলে ম্যারাডোনাকে থামাও। ম্যারাডোনা থামলেই আর্জেন্টিনা থেমে যাবে”
তাঁর আমলে একটা প্রচলিত বাক্য।
কিংবদন্তীর মৃত্যু নেই…
অপারে ভালো থেকো ফুটবলের রাজপুত্র।”
আরজু মুক্তা
ভালো মানুষরা তাঁর কথা ও আচরণের মাঝেই বেঁচে থাকে।
ভালো থাকুন ওপারে।
জিসান শা ইকরাম
আর্জেন্টিনার সমর্থক না হলেও আমি ম্যারাডোনার প্রচন্ড রকমের ভক্ত ছিলাম,
তিনি অবসর নেয়ার পরে আর আর্জেন্টিনার খেলা দেখিনি।
তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনে বিষণ্ণ থেকেছি সারাদিন।
ভালো থাকুক তিনি ওপাড়ে।
কামাল উদ্দিন
যদিও আমি বিদেশী পতাকা উড়ানোর বিরোধী, তবু বিশ্বকাপ ফুটবল এলে আমার ছাদে নীল সাদা পতাকা উড়ে আমার ছোট ছেলের কল্যানে। ম্যরাডোনাকে আমরা সকলেই ভালোবাসি, বিশেষ করে ম্যারাডোনার খেলাটা যারা দেখেছে তারা নির্দিধায় স্বীকার করে তিনিই ফুলবলে সর্বকালের সেরা। আমাদের স্বপ্নের নায়ক যেখানে গেছে সেখানে ভালো থাকুক এই কামনা করছে।