ভালোবাসা, প্রেম, ভক্তি ভালো কিন্ত আপনি যদি কাউকে অতি ভালোবাসেন তার ভোগান্তিও কিন্তু অনেক। মন পোড়াবেন, দেহ পোড়াবেন, কষ্ট- যন্ত্রনা সব পাবেন তবুও ভালোবেসেই যাবেন। আমি কিছু মানুষকে এমন ভালোবাসি বলে নিজের উপর মাঝে মাঝে বিরক্ত হই তবুও এ কাজটিই মনোযোগ দিয়েই করি।

সাধারণত  গ্রাম/ মফস্বলের বাড়িতে নিজেদের খাওয়ার জন্য ফলমূলের গাছ থাকেই। আমাদেরও মোটামুটি সব ফলের গাছই আছে। সারাবছর এগুলো ছেলেমেয়ের বাড়িতে পাঠানো মায়ের কাজ। আর এ দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে আমাকেই বহুবছর যাবত পালন করতে হচ্ছে। দায়িত্ব মাঝে মাঝে কষ্টকরও হয় তবুও মাকে ভালোবাসি মুখে না বলতে পারি না।

সিলেটে আম পাঠানো শেষ এবার মা ছেলের বাসায় আম পাঠাবেন। কিন্তু আম ছিঁড়ে দেবে এমন লোক নেই। খলিল ভাই দুদিন কাজে আসে না। মা অস্থির হয়ে অবশেষে আমাকেই গাছে ওঠার নির্দেশ দিলেন। মায়ের কথা অমান্য করার সাধ্য আমার নেই। তাছাড়া গাছে উঠে হাত ভাঙ্গার রেকড্ও আমার আছে। এখন বয়স হয়েছে তবুও ছোট গাছ দেখে বিসমিল্লাহ বলে উঠলাম।

আম ছেঁড়ার প্রায় শেষের দিকে ঘাড়ে কি যেন কামড় দিলো। খেয়াল করলাম আমি মৌমাছির চাকে গুতা মারছি এবং তারা আমার দিকেই ধেয়ে আসছে। নামতে নামতেই পরপর তিনটা মাছি কামড় দিলো। আমি কোনমতে নেমে ও বাবা গো, মা গো অবস্থা।

যাই হোক, ব্যথার ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। সকাল বেলা উঠে দেখি কান, মাথা, গাল ফুলে চোখ বন্ধ হবার অবস্থা হয়েছে। আপনারা বুঝতেই পারছেন চেহারা দেখার মতো হয়েছিলো। আমি ছোট আয়নায় নিজেকে করুন হয়ে ঘুরে ফিরে দেখছি। তাছাড়া আমার বাইরে যাওয়াও ভীষন জরুরী।

আমার এমন অবস্থা অথচ মা মিটিমিটি হাসছে! চা খেতে খেতে শুনলাম তিনি আমেনা বুয়াকে বলছেন, ‘ উমম, স্টাইল আর ফ্যাসানের বারোটা বাজছে। মুখ দেখানোর জো নেই। অনেকদিন বাইরে যেতে পারবে না।’

আমি তার দিকে তাকাতেই বললো, ‘ ঠিক হবে সমস্যা নেই। সুরা পড়ে দিচ্ছি। কেউ কারও দুরাবস্থায় এমনে মজা নেয় এবং এটাও যে ভালোবাসা ভেবেই হাসলাম।

কুমিলার লোক আনস্মার্ট, চাষা শুধু ভাত পছন্দ করে। এজন্য মোটা, ফলমূলসহ ভালো খাবার খাওয়া শেখেনি। বিরাট বড় ভূল হয়েছে কুমিল্লার মানুষ বিয়ে করা। তার বাপ এমন ছিলো, সেও এমন শুধু ভাত খায়- এগুলো মায়ের কথা। আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে প্রায়ই বলে। মূলত আমরা কুমিল্লার মানুষ। দাদা রংপুরে বিয়ে করেছে বলে আমরা এদিকে সেটেল। তো আমি তার মতো চুকুর- মুকুর খাবার সবসময় খাই না। তিনি ভাত দেখলেই কাঁদেন কিন্তু অন্য জিনিসে সারাদিন চলেন। আর এসিডিটির ওষুধ খেতেই থাকেন।

যাই হোক মায়ের এমন অপমানের কারন আম কম খাচ্ছি। খাবো ক্যামনে আমে যে পোকা। তবুও মায়ের কথা এবং আমি মোটামুটি কানা মানুষ তাই চশমা পরেই আম খাচ্ছি।

মা হঠাৎ বললো, ‘ খাবারের সময় চশমা পরার কি দরকার। চোখের একটা আরামের ব্যাপার আছে না।’

কথা ঠিক। মা কেটে দিচ্ছেন আমি চশমা খুলে আম খাচ্ছি। হঠাৎ ঠোঁটের পাশে সুরসুর করছে। কি ঘটনা, হাতে নিয়ে দেখি জলজ্যান্ত আমের সাদা পোকা ঠোঁটের পাশে হেঁটে বেড়াচ্ছে।

মুহুর্তেই আমার বমি শুরু হলো। আমি বমি করছি আর মা বলছে, ‘ ঈশ্ চশমা খুলে খাওয়ার বুদ্ধি দিলাম যাতে চোখে না দেখে পোকা সহ খায়। ক্যামনে যে টের পাইলো। আর আম খাওয়ানো গেলো না।‘

প্লান পুরাই ফেল হবার চিন্তায় তিনি অস্থির আর আমি বমি করে অস্থির। ভাবছি, আমার মতো একটা তরতাজা আধবুডো মেয়েকে নিয়ে তার কতো চিন্তা। শুধু আমি না সব ছেলেমেয়েকে নিয়েই তিনি ভাবেন। আমরা কখন শুকাই, কখন কালো হই, কখন ফ্যাকাশ হই তাই নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। অথচ তাঁর নিজের শরীরে যে শুধু হাড্ডি আর চামড়া তার বিন্দুমাত্র খোঁজ নেই!

ছোট বেলা থেকেই মা আমাদের ভাত কম স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। যেমন- দুধ, কলা, ডিম এবং এমন গান, কবিতা শুনিয়ে ঘুম থেকেও ওঠাতেন। “বাবা- মাঁই ওঠো দুধ বাতাসা পিয়া কারো, যুগ যুগ জিয়া কারো।”

আমরাও চাই হাজার বছর বাঁচুক এবং ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মমতাময়ী, স্নেহময়ী মায়েরা।যাঁরা আমাদের আগলে রাখেন ছোট্ট বুকের ভেতর আজীবন! আর আমরাও সবাই যেন শেষ বয়সে তাদের মা- বাবা হয়ে উঠি। সবাইকে শুভ রাত্রি!!!!

ছবি- নেটের

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ