দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য!

মারজানা ফেরদৌস রুবা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ০৯:৩৮:৩৪পূর্বাহ্ন সমসাময়িক ৪ মন্তব্য

"দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য!"
এই বাক্যটির সারবত্তা বিবেচনায় না নিলে খেসারত কিন্তু আপনাকেই গুনতে হবে। কদিন যাবত কয়েকজন বিদ্বান ব্যক্তির ঐক্য আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। ভাবনাটা এজন্য যে তারা বিদ্বান বটে তবে তাদের হিতাহিত জ্ঞান প্রশ্নবিদ্ধ। এজন্যই জ্ঞানীদের বানি, "দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য"।
দুর্জনদের মিলিত ঐক্য আপনাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, ফলাফল অনুমান করতে চাইলে তাদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করুন। ভবিষ্যৎ দেখতে চাইলে তাদের অতীতটা মিলিয়ে দেখুন।

এমনি এক বিদ্বানকে নিয়ে আজ এখানে কিছু বলে গেলাম।

এক.
জ্ঞানপাপী!
বিখ্যাত, জ্ঞান গরিমায় সমৃদ্ধ, সুধীজন বলে সমাজে পরিচিত এবং সমাদৃত। কিন্তু জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও যখন জ্ঞানের বোধকে ছাপিয়ে বিবেকবর্জিত কাজ করে ফেলা হয় লোকে তখন সে ব্যক্তিকে জ্ঞানপাপী বলেই জানে।

তেমনই জ্ঞান গরিমায় সমৃদ্ধ, সুধীজন বলে পরিচিত মানুষটি সেদিন এক বিবেকবিবর্জিত কাজ করে বসেন। ২০০১ সাল। জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগমুহুর্ত। সেই সুধীজন মিডিয়াকে (এটিএন বাংলা) ব্যবহার করে ‘সাবাস বাংলাদেশ’ নামের একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। সেই তথাকথিত ‘সাবাস বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে তিনি একহাতে কুরআন আর অন্যহাতে গীতা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন জনতার মুখোমুখি। প্রশ্ন রেখেছিলেন ”আপনি কি কোরানের শাসন চান নাকি গীতার শাসন চান? ”

উপস্থাপনায় বলেছিলেন যদি কোরানের শাসন চান তাহলে প্রতীক বেছে নিতে হবে ধানেরশীষ, আর যদি সে প্রতীক হয় ’নৌকা’ তবে গীতাকে দেখিয়ে বলেন, দেশে মসজিদ থেকে আযানের বদলে কানে ভেসে আসবে উলুধ্বনি!

জ্ঞানপাপী তিনি সেদিন তাঁর জ্ঞানের ঝোলা থেকে যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়েছিলেন, সে বিষের ছোবলে জাতি নীলে নীল হয়েছিলো অক্টোবর (২০০১) নির্বাচন পরবর্তী সময়টিতে।

তারপর?

দুই.
রাষ্ট্রপতি!
সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সন্মানিত পদ।

২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে সুধীজন বলে পরিচিত সেই তিনি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক সর্বোচ্চ সন্মানিত পদটি অলংকৃত করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁকে সর্বোচ্চ সন্মানিত পদ থেকে পরিস্থিতির শিকার হয়ে সাত মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় অত্যন্ত বিস্রীভাবে, যা ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম এবং অত্যন্ত করুন অধ্যায়ের সংযোজন।

না পাঠকবৃন্দ, পদের সম্মান অটুট রাখতে তিনি পদত্যাগ করেননি সেদিন, নিজের পিঠ বাঁচাতেই পদত্যাগ করেছিলেন।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে পদত্যাগ করেও তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিলো।

বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনে সংসদে যখন তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাবের পরিকল্পনা চলছিলো, তখনই তিনি পদত্যাগ করেন।

তারপর?
তারপর আরও বিশ্রীরকম ঘটনা ঘটে।

দেশের সর্বোচ্চ সন্মানিত পদ অলংকৃত করা ব্যক্তিটি পেটোয়া বাহিনীর দৌড়ানী খেয়ে রেললাইন বরাবর ৪০০ মি. বেগে দৌড়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

শুনেছি পাপ নাকি বাপকেও ছাড়ে না।

তিন.
২০১৪ সালের মার্চ মাস। আবার সেই সুধীজন!!

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন এর বৈঠকখানা। তিনি আসলেন, বৈঠকখানায় বৈঠক করলেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় সে বৈঠককে কেন্দ্র করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় বক্তৃতাকালে তাঁকে ‘বদু কাকা’ সম্বোধন করায়। দেশের সর্বোচ্চ সন্মানিত পদ অলংকৃত করা সাবেক রাষ্ট্রপতি (বৈঠকখানায় বসেই যিনি সেদিন নিজেকে ইতিহাসের খাতায় ক্লাউন হিসাবে দাঁড় করিয়েছিলেন। পেটোয়া বাহিনীর দৌড়ানী খাওয়া মানুষটির সম্মানবোধ সেদিনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।) সেই তিনি ‘বদু কাকা’ সম্বোধনে বিরাট অপমানিত বোধ করলেন। বেজায় চটে গেলেন। প্রকাশ্য জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর এ কৌতুক-উক্তিকে তিনি অরুচিকর বলে অভিযোগ উত্থাপন করলেন।

*কেনো যে মানুষ এরশাদকেই কেবল ‘বিশ্ববেহায়া’ বলে!

২০১৪ সালে তিনি তাঁর পুরোনো জায়গা রাজনীতির মাঠে পুনরায় ফিরে এসেছিলেন! চাইলে তিনি সর্বোচ্চ সম্মানিত পদটির মূল্য ধরে রেখে চিকিৎসা সেবায় মনোনিবেশ করে জাতির হৃদয়ে পরম শ্রদ্ধার আসনটি করে নিতে পারতেন। কিন্তু না, তিনি যে ‘বদু কাকা’।

যাহোক, সেই সুধীজনসহ আরো কয়েকজন বিদ্বান আবার তৎপর হয়ে উঠেছেন!

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ