
আমি বিরতিহীন ভাবে ২০১৪ সাল থেকে নিয়মিত আমাদের দেশীয় ৬ প্রজাতি মুনিয়া পাখির ছবি ঢাকায় তুলে আসছি। পাখিটি ছোট হলেও এদের স্বভাব ও দলগত বিচরন আমাকে খুবই টানে। তার মূল কারন এক ঝাঁকেই ৫ প্রজাতি মুনিয়া এক সঙ্গে পাওয়া বা দেখা যায়।এরা খুবই শান্ত স্বভাবের হয়ে থাকে। যে কাউকে এই পাখি মন মাতিয়ে রাখার সক্ষমতা থাকে। যারা খাঁচায় বন্দী করে পাখি পোঁষে থাকেন তাদের কাছে এই মুনিয়া পাখি অত্যন্ত প্রিয়। আমাদের দেশীয় ৬ প্রজাতি মুনিয়া পাখির পরিচিতি ধারাবাহিক ভাবে পর্ব আকারে পাঠকদের কাছেRed Avadavat বা লাল মুনিয়ার পরিচিতি তুলে ধরলাম।
মিরপুর মাজার রোডের বাঁ পাশ দিয়ে বেড়িবাঁধ ধরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরে দিয়াবাড়ি। বিশাল এলাকাজুড়ে দিয়াবাড়ি রাজউক প্লট। শরৎকালে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যায়। সাদা কাশবনে ঢেকে যায় এলাকা। দৃষ্টিনন্দন লাল মুনিয়ার খোঁজে কয়েকদিন কেটেছে এই এলাকায়। অবশেষে একদিন দেখা মিলল।
শরতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিয়াবাড়ি অনেকেই বেড়াতে যান। ঢাকার নিকটে হওয়ায় বার্ড ফটোগ্রাফারের পছন্দের জায়গা এই দিয়াবাড়ি। এক সময় দিয়াবাড়িতে হুদহুদ, নানা প্রজাতির ফ্লাইক্যাচার, ভরত, মুনিয়া, প্রিনিয়া, ব্লুথ্রট, নীলকণ্ঠ, হটটিটিসহ নানা প্রজাতির পাখির বিচরণ ছিল। নানা কারণে পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এজন্য আমরাই দায়ী।
লাল মুনিয়া Amandava গোত্রের Estrildidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ১০ সেমি দৈর্ঘ্যের ছোট আকারের তৃণচর পাখি। এদের ঠোঁট ও কোমর লাল। মেয়ে ও পুরুষ পাখির চেহারায় পার্থক্য আছে। প্রজননকালে পুরুষপাখির গায়ে লাল রঙের মাঝে সাদা ফোটা থাকে। মাথার চাঁদি জলপাই-বাদামি। ঘাড়ের পিছনের অংশসহ কাঁধ ও ডানার ঢাকনি কালচে বাদামী। লেজ কালো। পা ও পায়ের পাতা পীত বর্ণের। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষ ও মেয়েপাখির লাল কোমরসহ পিঠ অনুজ্জ্বল বাদামি। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েপাখির পিঠ বাদামী ও ঠোঁট লাল। বুক ও বুকের নিচে হালকা হলুদ।
লাল মুনিয়া পানির ধারে তৃণভূমি, ফসলাদি জমির কাছে ছোট ঝোপ, আখক্ষেত ও গ্রামের মাঠে কাশবন বা ছনবনে বিচরণ করে। সচরাচর এরা ছোট ঝাঁকে থাকে। তৃণ, নল ও আখ ক্ষেতে এরা খাবার খোঁজে। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাস-বীজ। অনেক সময় মাটিতে ঘাসের বীজ খুঁজে খুঁজে খায়। মে থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন সময়। এরা তীব্র শব্দে উড়ে বেড়ায়। প্রজননকালে পুরুষ পাখি ঘাস ও নলের ডাঁটার উপরে বসে মেয়েপাখিকে আকৃষ্ট করার জন্য গান গায়। পানির ধারে কাঁটা-ঝোপের নিচুতে ঘাস দিয়ে গোল বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখি ৮-১০টি ডিম দেয় এবং ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। দুজনে মিলে বাচ্চাদের লালন করে।
লালমুনিয়া ছেলে
লাল মুনিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমিতে পাওয়া যায়। বহু আগে ঢাকা বিভাগে দেখা যেত। মাঝে এদেরে ঢাকায় দেখা যেত না। বর্তমানে ঢাকায় দেখা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এদের বিচরণ রয়েছে।
লাল মুনিয়া মেয়ে
বাংলা নাম: লাল মুনিয়া
ইংরেজি নাম: Red Avadavat
বৈজ্ঞানিক নাম: Amandava amandava
ছবিগুলো ঢাকার দিয়াবাড়ি থেকে তোলা।
২২টি মন্তব্য
ইঞ্জা
এক সময় আমি বাসার উঠোনে বড় এক রুমের সমান খাচা বানিয়েছিলাম, তাতে এই মুনিয়া, ফ্রিঞ্চ, লাভ বার্ড সহ হরেক প্রজাতির পাখি রেখেছিলাম, তাদের বাচ্চাও হয়েছিলো প্রচুর, তখন থেকেই আমি মুনিয়া চিনি, যদিও য়খন এই লাল মুনিয়া দেখিনি।
অনেক কিছু জানলাম আজ, আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ভাই পোস্টটির জন্য৷
শামীম চৌধুরী
আপনাকেও ধন্যবাদ ও শুভ কামনা জানাই।
ইঞ্জা
ভালোবাসা সবসময় ভাইয়ের জন্য।
সাবিনা ইয়াসমিন
লাল টুকটুকে মুনিয়াকে দেখে মুগ্ধ হলাম 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹
শামীম চৌধুরী
আপনার মুগ্ধতায় আমার পরিশ্রম সফল। আপনার জন্যও শুভ কামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
একদম ঠিক বলেছেনা , এই পাখি সত্য সত্য মন মাতিয়ে রাখার মতোই।
দেখতেও ভারী মনকাড়া।
শামীম চৌধুরী
জ্বী, তাইতো গত ৬ বছর ধরে এই পাখির ছবি তুলছি। আমার খুব পছন্দের পাখি। ভালোলাগার পাখি। ধন্যবাদ স
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভাইয়া আপনি পাখির ছবি নিয়ে একটা বই বের করেন। আমরা প্রায়ই মন খারাপে সেগুলো দেখে মন ভালো করব। সব অসাধারণ। শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
খুব শীঘ্রই পাবেন। প্রেসে কাজ চলছে।
প্রদীপ চক্রবর্তী
মুনিয়া পাখি কত্ত সুন্দর।
পাখিটার নাম শুনেছি ঠিক কিন্তু দেখিনি।
আপনার লেখা বিস্তারিত বিষয় ও পাখির ছবিতে মুগ্ধ,দাদা।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ দাদাভাই। আরনাকে দেখাতে পারায় আমি খুশী।
আরজু মুক্তা
ও মা! ছেলে পাখি তো আরও সুন্দর।
দারুণ লাগলো লেখাটি পড়ে
শামীম চৌধুরী
মুক্তা আপু,
পাখি প্রজাতিতে সব ছেলে পাখি সুন্দর হয়। মেয়ে পাখিকে আকর্ষন করার জন্য। এটাও বিধাতার ইচ্ছা। আরো মজার ব্যাপার হলো প্রজননকালে ছেলে পাখির দেহের বা পালকের রং আরো চাকচিক্য হয়।
আরজু মুক্তা
মজার তথ্য জানলাম।
ধন্যবাদ পাখি ভাই
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ আপু।
দোয়া করবেন আমার জন্য।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এই পাখিটির রূপ, সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছে বিশেষ করে লাল মুনিয়া ছেলে। অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ভাইয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
শামীম চৌধুরী
দিদিভাই,
এই লালমুনিয়া আমাকেও আপনার মতন ভালোবাসায় আঁটকে রেখেছে। যার জন্য গত ৬ বছর যাবত শুধু লালমুনিয়ার ছবি তোলার জন্য উত্তরায় যাচ্ছি। আপনিও ভালো থাকুন। শুভ কামনা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
লাল মুনিয়া আমারও খুব পছন্দের একটি পাখি,
মেয়ে লাল মুনিয়ার ছবি দেখে বুঝলাম, এটিও মুনিয়া। আমি অন্য কোনো পাখি ভাবতাম এতদিন।
ছেলে মুনিয়া দেখছি মেয়ে মুনিয়ার চেয়ে সুন্দর দেখতে।
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই, এমন পোষ্ট দেয়ার জন্য।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ ভাইজান।
তবে আমার কাছে লালমুনিয়া প্রজাতিতে মেয়ে মুনিয়াকে সবচেয়ে বেশী ভারো লাগে।
আলমগীর সরকার লিটন
লাল মুনিয়া খুব সুন্দর পাখি শামীম দা
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ কবি দা।
তৌহিদ
লাল মুনিয়া আমার খুব পছন্দের। কাশবন কেটে ফেলায় এই পাখির প্রজনন ক্ষেত্র বিলুপ্ত হচ্ছে। দায়িত্বশীলদের অবশ্যই এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ভাই।