
অনন্ত জলিল ভাইয়া আর বর্ষা ভাবী একখান সিনেমা বানাইছে ‘ দিন – দ্য ডে’। বাংলাদেশ ও ইরানের যৌথ প্রযোজনায় এটি নির্মাণ করেছেন মুর্তজা অতাশ জমজম। যার বাজেট ১০০ কোটি টাকা। সেই থেকে পেটটা কেমন কেমন যেন করচ্ছে, সিনেমাটা দেখার জন্য।
এতো টাকা দিয়ে করলোটা কি? কারণ হিসাবে আলহাজ্ব অনন্ত ভাইয়া জানান, “সিনেমার খরচ ৩০ কোটি, তার পারিশ্রমিক ৪০ কোটি, আর বর্ষা ভাবীর পারিশ্রমিক ৩০ কোটি। মোট ১০০ কোটি।”
মাগো, মা “বলিউডে শাহরুখ খানের পারিশ্রমিক সর্বোচ্চ ২০ কোটি। আর ভাইয়ার ৪০ কোটি!”
প্রশ্নের জবাবে ভাইয়া বলেন, “শাহরুখ কি দিন – দ্য ডে লেভেলে কোনো সিনেমা এখন পর্যন্ত বানাইছে? আমার সিনেমার তুলনা একমাত্র টম ক্রুজের সিনেমার সাথে হতে পারে।”
মাগো, 🤑আমি গ্যান হারাবো মরেই যাবো, বাঁচাতে পারবে না তো😭
কুড়িগ্রামে দুটো সিনেমা হল ছিল এখন একটিও নেই। অনন্ত ভাইয়ার ছবি দেখুম ক্যামনে। অগত্যা ভরসা বিনিতের দোকান। সিনেমা দেখি প্রচুর সে সেটা জানে। তাই বললো, হিন্দি তো সব দিয়েছি।
– উহুম, বাংলা দিন- দ্য ডে!
– এ্যাঁ, সত্যি!
– এ্যাঁ নয়, হ্যাঁ।
ইদে মুক্তি পাওয়া তিন ছবি দিন- দ্য ডে, পরান ও সাইকো। পরান ও সাইকো ছবির কাহিনী কিংবা অভিনেতা/ অভিনেত্রীগন যথেষ্ট প্রসংশা পেয়েছেন। তাতে না আসি।
কিন্তু টিভি খুললেই ভাইয়া/ ভাবীর গরম হাওয়ায় টেকা দায়। বলতে মন চায়- মুখ না থাকলে ঈঁদুরে টেনে নিয়া যাইতো!
আড়াই ঘণ্টার সিনেমায় এই দিন- দ্য ডে শিরোনামের কি মহত্ব বা কারন কে জানে! ছোটবেলা টেলিভিশনে সাদাকালো সিনেমাগুলোর সামনে বিরক্তিকর এ্যাড সহ্য করেও বসে থাকতে হতো। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি, নাকের পানি, মায়ের পিটুনি সব একাকার ছিল। কিন্তু দিন সিনেমায় সেরকম কোনো গল্প খুঁজে পাওয়া গেল না। হাসি, কান্না কোনটাই নয় বরং বিরক্তিকর একটা অবস্থা।
সিনেমা গড়ে উঠেছে মাফিয়া ডন আবু খালিদকে কেন্দ্র করে। আফগানিস্থানে চোরাকারবারি, মাদকের বিস্তার ইত্যাদির গ্যাং লিডার সে। বিনা কারণে সেই গল্প ঘোরে তুর্কি, ইরান ও আফগানিস্থানে। আবু খালিদের ভূমিকায় তেমন কোনো মাফিয়াটিক কার্যক্রম চোখে পড়ে না। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া পুলিশ অফিসার অনন্ত ওরফ এজে এবং বর্ষার ভূমিকা মোটেও পুলিশের এটিটিউড ভিত্তিক নয়।
‘ দিন – দ্য ডে’ ছবি দেখতে গিয়ে সালমান খানের ‘ এক থা টাইগার’ মুভিটি বারবার আসছিল সামনে। মনে হল অনন্ত- বর্ষা কপি করছে সালমান- ক্যাটরিনাকে। কিম্তু টাইগারে যে ফাইট আর একশানে ক্যাটরিনা ছিল সেখানে আমাদের বর্ষা নিতান্তই ভাবীটাইপ অভিনয় করেছে। তাদের মতো কিছু কিছু বোমা বাজি, ক্রাশ এসব হয়েছে।
ছবিতে আজাইরা কিছু ডায়ালোগ আছে। যেমন- বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হতে পারে কিন্তু রিদয়ে অনেক জায়গা, তাই রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়েছে’ মোটামুটি তেলবাজি, অবান্তর!
আবু খালিদ বর্ষাকে বন্দি করে নিজ আস্তানায় নিয়ে যায়। বর্ষাকে উদ্ধার করতে এজে ছুটতে থাকে। পর্দায় লেখা ওঠে তুর্কী। একটু পর আফগানিস্থান। কী কারণে হঠাৎ দেশ পরিবর্তন? গানগুলো বলতে গেলে মানহীন আর ভুল ইংরেজি উচ্চারণ।
তবে এই সিনেমায় লোকেশনগুলো অসাধারণ! মরুপ্রান্তর, পাথরের গুহা, দৃষ্টিনন্দন সড়ক আর কিছু গাড়ি। দিন – দ্য ডে ছবিতে ক্যাটরিনার- ” আফগান জেলেবি, মাসুক ফারেবী; ঘায়েল হ্যায় তেরা দিওয়ানা”- টাইপ গানের চিত্রায়ণ কিংবা ড্রেসআপ। এটা ভালো ছিল কিন্তু নায়িকার যে ইমপ্রেশান দরকার তা মোটেও ছিল না।
তবে অনন্ত- বর্ষা প্রডিউসার থেকে যদি ছবিতে অন্যদের দিয়ে কাজ করাতো তাহলেও মনে হয় কিছুটা চলতো। প্রথমদিন লোকজন কিছুটা হুমড়ি খেয়ে গিয়ে বোকা বনেছে। আর অনন্ত জলিল যতোই টাকাঅলা হোক, তার সিনেমার ডায়ালগ বলার মতো যোগ্যতা নেই। কথা বলার যে মাধুর্য থাকা দরকার তাও যেহেতু নেই। তাই অনুরোধ আর নায়ক হইতে যাইয়েন না। এটা হইতে যথেষ্ট মেধার প্রয়োজন, শুধু চেহারা আর দাঁড়ির কাটই যথেষ্ট নয়। শেষে শুধু বলতে চাই, ভাই ডায়ালোগবাজি কমান। আর এমন ছিঃনেমা করে বাকি হলগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা করবেন না।
Release: July 10, 2022
Director: Morteza Atashzamzam
Budget: 12.1 million.
IMDb –3.7/10
গান দেখা যেতে পারে—
বেশ অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেললাম। একজন আমাকে দেখে বেশ বুঝতে পারছে তাকে ঠকিয়ে আজ কঠিন ধরা খেয়েছি। শুভরাত্রি ছিঃনেমা!!
ছবি- নেটের।
২০টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
ভাগ্যিস দেখি নাই মুভিটা দেখার পর মনে হতো তোমার মত বেশ সময় নষ্ট করা হত। তবে অনন্ত জলিল তার সিনেমায় নায়ক নায়িকা অন্যদের নিলে হয়ত ভালো করত তবে হয়ত নাম হত দিন দ্যা নাইট। মুভি রিভিউ ভালো হয়েছে। ঠকিয়ে ধরা খেয়ে অবস্থা খারাপ হলে লটকন খাও আর তাকেও খাওয়াও তার রাগটা কমলে এবার দেখে ফেল উত্তরন, অন্তহীন,মুখোশ মুভির মত অসাধারণ মুভি। শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হ্যাঁ, অবশ্যই এ তিনটা মুভি দেখবো।।
শাহরুখ খান এর গৌরী তো অনেক সুন্দর কিন্তু সে তো নায়িকা হয় না। পাকিস্তান থেকে নায়িকা আনে কাহিনীর প্রয়োজনে।।
ভালো থেক 🥰🥰
নার্গিস রশিদ
‘আর চেহারা আর দাড়ি কাটই যথেষ্ট নয়’ খুব হাসলাম। যাক আর সময় নষ্ট করতে হলনা। অনেক ধন্যবাদ
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা 🥰
বন্যা লিপি
আপনার ধৈর্যের জন্য হাততালিটা পাওনা। দিন- দ্য ডে…..অনন্ট কাক্কু আর বর্ষা কাক্কিই পারে শাহরুখরে টেক্কা দিতে,,,,,শালা কি বাঘা ছাল গায়ে চড়ানো হিরু-হিরুইন আমগো দ্যাশের! গালিটা না দিয়া পারলাম না। কোটি কোটি টাকা অপচয় করে এই….. ছিঃনেমার পেছনে, অথচ দারিদ্র বিমোচনে অবদান লবডঙ্কা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
টম ক্রুজ/ আর শাহরুখ খান। কি এক্টা অবস্থা।
সিনেমা বানাক, নিজেরা নায়ক/ নায়িকা হবার দরকার কি?
এতো আলোচনা, আর কথার ফুলঝুরি আসলে সেরকম কিচ্ছু না। বাংলাদেশের জনগনের প্রেম করার, বেড়ানোর জায়গা নাই তাই যায়।
ওর চেয়ে চৌধুরীর গানই অনেক ভালো। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু🥰🥰
বোরহানুল ইসলাম লিটন
আপনার লেখা পড়ে আমি পূরো সিনেমাটাই অনুভব করলাম আপু!
চাপার জোরে বানানো সিনেমার খরচ
১০০ কোটিই হয়!
তবে ভাববার বিষয় কত লক্ষতে এক কোটি!
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
রোকসানা খন্দকার রুকু
তাহাদের নিজের পারিশ্রমিকই তো সব। খরচ শুধু বিদেশ ভ্রমনে।
ছাইরাছ হেলাল
দেখুম না ঠিক করলাম!
রোকসানা খন্দকার রুকু
আইচ্চা কতা জানি ঠিক থাহে!!
খাদিজাতুল কুবরা
টাকা অপচয়ের মহোৎসব করেছে অনন্ত সাহেব। মাশাল্লাহ চেহারায় নিজেকে প্রভাস ভাবে আর কি!
কোন বাহুবলী ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আল্লাহ জানে
সাদা কালো পুরনো ছবি দেখবো সেই ভালো
রোকসানা খন্দকার রুকু
ঠিক ঠিক বাহুবালী ছাড়াতেও পারে, বলা যা না।।
মনির হোসেন মমি
অনন্ত আর বর্ষার অভিনয় মোটেও চলে না এটা ১০০% ঠিক কিন্তূ তার মত এমন টেকনোলজির ব্যবহার দেশীও চলচ্চিত্রে তার মত আর কেউ নেই।যাই হোক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলা চচ্চিত্রটাকে ঘুরে দাড়াতে অন্য কেউতো আসছে না কিন্তু কেন? সে না হয় শুরু করলো ধারাবাহিকতায় তো সমালোচকদের আসা উচিত। সমালোচনা করা সহজ করে দেখানোটা অনেক কঠিন তাইতো তাকে ভূষিত করা হয়েছে- সব অসম্ভবকে সম্ভব করার নামই অনন্ত জলিল।
রোকসানা খন্দকার রুকু
পুরোনো সিনেমায় টেকনোলজি ছিল না, আজও চলে। অনন্ত সাহেবের গরম কথাবার্তায় লোকজন দেখতে গেছে।
‘ মনপুরা ‘ চলাকালীন একমাস আগের টিকেট সিনেপ্লেক্সে বিক্রি হয়ে গেছিল। আমরা দেখতে পাইনি। এতে টেকনোলজি নেই, কাহিনী আছে। কাহিনী ছাড়া শাহরুখের মতো স্টেপ দিলেই সিনেমা হয় না। অভিনয় দক্ষতাও জরুরী।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ, বর্তমান সিনেমা এবং সিনেমাহলের দুরাবস্থার মধ্যে এই “দ্যা ডে” মুভিটা ব্যবসাসফল হতে যাচ্ছে, মনেহয়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা দাদা।
সৌবর্ণ বাঁধন
যাক হালের আলোচিত সিনেমাটা জানা হয়ে গেলো আপনার সুলিখিত রিভিউ এর সুবাদে। দেখার সুযোগ ইচ্ছা কোনটাই ছিলনা। শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ফালতু ছবি। আপনার জন্যও শুভকামনা অনেক অনেক।
হালিমা আক্তার
ইদানিংকালের ছবির কোন খবরই রাখি না। আমি এখনো ইউটিউব থেকে পুরানো বাংলা ছবি দেখি। তবে কয়েক দিন ধরে বর্ষার কান্নাকাটির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। এবার বুঝতে পারলাম ঘটনা কি। আমাদের হিরো আলম গায় রবীন্দ্র সংগীত। অনন্ত বর্ষার মুভি। ভাবছি টাকা থাকলে আমিও নায়িকা গায়িকা হইতে পারতাম।
রিভিউ সুন্দর হয়েছে। শুভ রাত্রি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা। চলেন একটা ছিঃনেমা বানায় ফেলি। নায়িকা আপনি থাইকেন, আমারে খালা/ চাচী বানাইলে হবে। এখন সোনেলায় নায়কের সন্ধান করতে হপে 😄😄