
* ঘুম থেকে জেগেই নেট অন করা থেকে বিরত থেকেছি আজ। অনেক কাজ আজ।আটটার মধ্যে সকালের নাস্তা সম্পন্ন করে বসে যাই জমির ফাইল নিয়ে। রেকর্ড করাতে হবে নিজের নামে, যা এতদিন করানো হয়নি। এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাস হতে আরম্ভ করেছি ক্রয় করা জমির নিজ নামে রেকর্ড করার প্রক্রিয়া। ফেব্রুয়ারী হতে আজ পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি জমির রেকর্ড নিজের নামে করানো গিয়েছে। রেকর্ড করার সফলতার যে অনুপাত, তাতে আমার সব কিছু নিজের নামে রেকর্ড করাতে কমপক্ষে কুড়ি বছর লেগে যাবে। আরো কুড়ি বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ফলাফল হতে পারে, নিজের টাকায় কেনা সম্পত্তি নিজের নামে আর রেকর্ড করানো হবে না, জমি বিক্রেতার নামেই থেকে যাবে।
অতএব অত্যন্ত সিরিয়াস হয়ে রোজ ভুমি অফিসে গিয়ে এ বিষয়ে তাগাদা দিতে হবে। তাগাদা না দিয়ে শুধু টাকা দিলে হবে না।
* দশটায় বন্ধুর লাইসেন্স করা পিস্তল আনার জন্য বন্ধুর সাথে থানায় গেলাম। দুইবছর আগে পিস্তল থানার মাল খানায় এটি জমা দেয়া ছিল। দুই এক বছর পর জমা দেয়া আগ্নেয়াস্ত্র তুলে নিয়ে তেল তুল দিতে হয়। মাল খানার যে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ তাতে এতে জং ধরার একশত ভাগ গ্যারান্টি দেয়া যায়। তাঁর এই পিস্তল আনতে আজ নিয়ে মোট আট বার গিয়েছি থানায়। আজকে সফল হলাম।
মনে মনে বলছিলামঃ পারিবোনা একথাটি বলিও না আর, একবার না পারিলে দেখো শতবার। আমাদের শতবার লাগে নি, আট বার লেগেছে।
* বন্ধুকে নিয়েই হেটে হেটে জেলা প্রশাসকের অফিসে গেলাম আমার রিভলবারের নবায়নের জন্য। গতবছর নির্দিষ্ট সময়ে নবায়ন করিনি বিধায় অতিরিক্ত চব্বিশ হাজার টাকা জমা দিতে হয়েছে। কেন জমা দিতে পারিনি নির্দিষ্ট সময়ে? কিছুটা আলসেমি এবং অনলাইনকে নিয়ে এত বেশী চিন্তা করেছি যে এসব ছোট খাটো বিষয় মাথায়ই ছিল না।
এখন স্থির ধারনা সিদ্ধান্ত হলো , আগে এসব কাজ নির্দিষ্ট সময়ে করতে হবে, এরপর অনলাইন। অনলাইনের কেউ তো আর এসব কাজ করে দেবে না আমাকে।
* মোবাইল বেজে উঠলো এক অফিসারের কলে। জেলা প্রশাসক অফিস হতে ছুটলাম তাঁর অফিসে। তাঁর অফিসের দরজা বন্ধ। কি এক গোপন মিটিং করছে তাঁর এক স্টাফের সাথে। প্রায় এক ঘন্টা বসে আছি। অপেক্ষা করতে করতে মেজাজ খারাপ এবং হতাশা। ঘুষ দিতে এসেও এমন অপেক্ষা কার ভালো লাগে? ফোন দিলাম তাকে, বললেন একটু অপেক্ষা করুণ। ঘুষ দিতে এসেও অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে সফল হলাম।
* দুইটায় বাসায় ফিরে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে শাওয়ার, দুপুরের খাওয়া, ড্রেস পড়ে বাইক নিয়ে সোজা কর্মক্ষেত্রে ছুটলাম। দশ মিনিটের ড্রাইভ। অপেক্ষা করছে কয়েকজন। গতকাল প্রায় সারাদিন জমির মাপ দেইয়েছি। আমার কেনা জমির উপর সে ঘর বানাতে চায়। গতকাল তাকে আমার ডকুমেন্ট দেখিয়েছি, তাঁর ডকুমেন্ট আনুযায়ী সে এই জায়গা পাবে না বলে বুঝিয়েছে। আজ আরো লোক নিয়ে এসেছে কিছুটা প্রভাব খাটানোর জন্য। আগামীকাল নাকি সে ঘর তুলবেই।
সিদ্ধান্তঃ সোজা আংগুলে ঘি ওঠেনা। মাইরের উপ্রে ঔষধ নেই। আগামীকাল সে ঐ জায়গায় আসলে পিটু পিটু করা হবে।
গতরাতে বন্ধু ছাইরাছ হেলালকে বললাম অনলাইনে এটা অর্ডার দিয়ে কিনবো। আমার ছাদ বাগানের জন্য দরকার। হেলাল বললো এটি তো এখানেই পাওয়া যায়। দেখে শুনে কেনার জন্য দু বন্ধু সন্ধ্যার পড়ে হেটে হেটে বাজারে গিয়ে এটি সহ আরো তিনটি টুলস কিনেছিলাম বাগানের জন্য।
আজ বিকেলে এটি নিয়ে ছাদে দিয়ে গাছের শুকনা ডাল কাটলাম যত্ন নিয়ে, গাছ যেন ব্যাথা না পায়। ডাল কাটা শেষ হলে রেস্ট রুমে গিয়ে কয়েকটি টিস্যু পেপার নিয়ে এটি পরিষ্কার করছিলাম। হঠাৎ বাম হাতের আঙ্গুলে ব্লেডের মত ধারালো কিছুর স্পর্শ।ফিনকি দিয়ে টপ টপ রক্ত ঝরছে। এত ধার এটিতে! ধারণাই ছিলো না। স্টাফ ডাক দিলাম, ডেটল টেটল কিছুই নেই। সে কি এক পাতা ফিসে আনলো। কেটে যাওয়া অংশে সেটা দিয়ে টিস্যু পেপার দিয়ে ব্যান্ডেজ করলাম। এরপর একটা লাল কাপড় দিয়ে গিট্টূ দিলাম।আরো বাঁধা দরকার। টাকার রাবার ব্যান্ড দিয়ে ভালো মতো পেঁচানোর পরে সন্তষ্ট হলাম।
ব্যান্ডেজ কিন্তু ভালোই হয়েছে বলা যায়। এই অবস্থায় স্টাফদের সাথে কথা বলে রাত আটটায় বাইকে উঠে বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম। বাইকের হ্যান্ডেল ধরা এবং ক্লাচ করতে কিছুটা কষ্ট হয়েছিল। ব্যাপারনা, এত সব ভাবলে জীবন থেমে যাবে।
সিদ্ধান্তঃ কর্মক্ষেত্রে একটি ফার্স্ট এইড বক্স রাখা জরুরী।
নয়টায় এই লেখা আরম্ভ করলাম। ল্যাপটপে লিখতে তেমন সমস্যা হয়নি। কেটে যাওয়া আংগুল উঁচু করে রেখেছি।
সবাই ভালো থাকুন,
সকলে সুখী হোক।
১৬টি মন্তব্য
তৌহিদ
কি ব্যস্ত দিন গেলো! যাক তবু কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অনলাইনে অনেক সময় ব্যয় হলে প্রয়োজনীয় কাজ কিছুই হয়না। জমিজমার বিষয়ে সদা তৎপর থাকুন ভাইজান।
হাত কেটে গিয়েছে তাতে কি! লেখালিখি চলবেই। শুভকামনা রইলো ভাই।
ঘুষ দিতে গেলেও লাইনে দাঁড়াতে হয়- এটি জটিল কথা হয়েছে। ☺☺
শুভকামনা ভাই।
জিসান শা ইকরাম
এই ব্যস্ততা কবে কমবে জানিনা, জমি ক্রয়ের সময়ে একজনের উপর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সে সব কিছু ঠিক আছে বলার পরে প্রতিটি জমি কিনেছি। রেকর্ড করাতে গিয়ে দেখছি, অর্ধেকের বেশী জমিতে কিছু কিছু ভুল সনাক্ত হয়েছে। সে সব ভুল কিভাবে সংশোধন করবো জানিনা। জমি বিক্রয়ের পরে বিক্রেতাকে খুঁজে আনা কঠিন।
হ্যা ভাই, ঘুষ দেয়ার জন্যও অপেক্ষা করতে হয়।
লেখা লেখি চলবে অবশ্যই।
শুভ কামনা।
মাছুম হাবিবী
একদিনে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়েছে ভাইয়্যা। জমি নিয়ে বিরোধ, তার মধ্যে গাছের ঢাল পালা পরিষ্কার করা, থানায় পিস্তল আনতে যত বিরোধ। সব মিলিয়ে বরিং টাইম কাটিয়েছেন। তারপরও, একটা ভালো লাগা থেকে যায়। সেটা হল ‘কাজে ব্যস্ত থাকলে সময় কোনদিনে যায় খেয়াল ই থাকেনা। আপনিও ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
এমন ব্যস্ততা বহুদিন যাবত চলছে, আরো কতদিন চলবে জানিনা।
ভালো থাকবেন ভাই,
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
বেটা বুড়ো হয়েছে……পোলাডা বড় হয়নাই😂😂😂😂 টিস্যু পেপার দিয়ে নতুন একেবারে শার্প ব্লেডের ধার মুছতে গেলে আরেকটু সচেতন হওয়া দরকার…এটাই টিকাটিপ্পনী। বহুত দৌঁড়ের উপরে দিনাতিপাত করিলেন আইজকা। এবার একটু পেন্ডিং কাজগুলোর দিকে নজর দেবার সময় আসছে।অনলাইনের বাইরেও আপনার ম্যালা কাজ বকেয়া পরে আছে। একটু খেয়াল দিন প্লিজ😊😊😊
জিসান শা ইকরাম
ঙ্কিছু বিষয় আমি পারিনা আসলে। নক কাটাও এর মধ্যে আছে।
এরপর থেকে সাবধান থাকতে হবে ক্লিন করার সময়।
হ্যা, অন লাইনের বাইরের পেন্ডিং কাজ গুলোর দিকে সিরিয়াস ভাবে নজর দিচ্ছি।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
কর্মক্ষেত্রে একটি ফার্স্ট এইড বক্স রাখা জরুরী।
সেকচার দিয়ে আমি দুবার হাত কেটেছি মুছতে গিয়ে।
শীতের দিনে বেশ ব্যথাও করে থাকে।
.
যাই হোক আপনার সফলতা কামনা করি,দাদা।
শুভকামনা রইলো।
এভাবে আমাদেরও অনেক জায়গা গ্রাস করে আছে ভূমিখেকোরা। তবে আমরাও পিছু ছাড়ি নাই।
জিসান শা ইকরাম
শীতে ব্যাথা সহজে যায় না। এখনো প্রচন্ড ব্যাথা আছে।
জায়গা জমির ব্যাপারগুলো অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হয়। ধৈর্য দরকার এতে।
শুভ কামনা প্রদীপ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ওফফ জমির নাম খারিজ মহা ঝামেলা। বহু ঝামেলার পর এসিলেন্ট ম্যাডামকে রিকোয়েস্ট করলাম। তিনি পরিচয় জানার পর বিরাট ধমক।
আমার উত্তর- ম্যাডাম আমি তো অসৎ আগে আগে চাইছি। তো আপনি যে ফিসের নামে টাকাটা নেন সেটা কি?
ফলাফল- আর তিনি থাকতে নামখারিজ হবে বলে মনে হয়না।
বাকি সব ঠিকঠাক, ঘুসে টুসে, আঙ্গুল বাকা সোজায় চালিয়ে যান।
শুভ কামনা নতুন উদ্যেমের।
জিসান শা ইকরাম
এসি ল্যান্ড অফিসে বিশাল সাইনবোর্ড এ লেখা থাকে জমা খারিজের জন্য মোট খরচ ১২০০ টাকার মত। অতিরিক্ত টাকা দাবি করলে অভিযোগ করার জন্য বলা হয়েছে। মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকে। যারা যারা অভিযোগ করেছে, তাদের জমা খারিজ ইহ জনমে আর হবে না। এটিই নিয়ম।
আপনার ঐ এসি ল্যান্ড থাকতে আর জমা খারিজ হবে না, এই নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দাদা ভাই আপনার প্রতিটি ঘটনার সারমর্ম গুলো খুব ভালো লাগলো। আশা করি আপনি আপনার সবকিছু সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু শুধু ফাস্ট এইড রাখলেই হবে না সাবধানতা অবলম্বন করাটাও জরুরী। লেখালেখি বন্ধ করার অজুহাতে হবেনা, সেটা চালিয়ে যেতে হবে কিন্তু। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
জিসান শা ইকরাম
সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে ছোট দি।
আমি যা লিখতে পারি, তা তো লিখবোই।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
যতই বর্ণনা দেন। কাটা আঙ্গুলের ছবি দারুণ হইছে।
আজকোর কাজ আগামীর জন্য ফেলে না রাখাই ভালো।
জিসান শা ইকরাম
নিজের কাজের প্রতি বেশ উদাসীন ছিলাম আমি। এখন সিরিয়াস হয়েছি, একারনে অনলাইনে কম দেখা যাচ্ছে।
শুভ কামনা।
খাদিজাতুল কুবরা
আমার কর্মোদ্যমী ভাইয়ার হাতটা শীতের মধ্যেই কাটতে হলো!
হাতের যত্ন নেবেন ভাইয়া।
আমাদের দেশের সরকারি কাজ আদায় করা যে কষ্টের তা ভুক্তভোগীই জানে।
সকল কাজ ইনশাআল্লাহ সুসম্পন্ন করুন।
সুস্থ, সুন্দর সুখী হউক আগামী।
দিনলিপি থেকে শেখার অনেক কিছু আছে।
উদ্যোগটা প্রশংসনীয়!
জিসান শা ইকরাম
সরকারী দপ্তরের সবচেয়ে বাজে সিস্টেম হলো- জবাদিহিতা নেই। ভুমি অফিসের ভুল কোন ভুল না, সে ভুলের মাশুল দিতে হয় জনসাধারনকে। এ থেকে জনগনের মুক্তি নেই।
শুভ কামনা।