“দিগন্ত জুড়ে মুগ্ধতা!”

জাকিয়া জেসমিন যূথী ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বুধবার, ১০:৫৪:৩১অপরাহ্ন গল্প ১৫ মন্তব্য

 

দু’হাজার নয় সাল। ডিসেম্বরের শুরু।

ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ।

গোটা কলেজে বিএড, এম এড এর শিক্ষার্থীরা এমনকি শিক্ষক শিক্ষিকাগণের মুখে মুখে এখন একটাই কথা। শিক্ষা সফর। শিক্ষা সফর দেশে হবে নাকি প্রতিবেশী দেশগুলোর কোথাও হবে তা নিয়ে কয়েকদিন ছাত্র-শিক্ষক মিটিং হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে ত্রিদেশীয় শিক্ষা সফর হবে; ভারত-নেপাল-ভুটানে বেড়াতে যাবে শিক্ষার্থীরা। তবে, প্রথমে ভিসা নিশ্চিত করতে হবে। তার আগে পাসপোর্ট বানাতে হবে। নেপাল ভুটানের ভিসা নিয়ে ঝামেলা হবে না। ভারতের ভিসার জন্যে আগে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। ভারতের ভিসা নিশ্চিত হয়ে গেলে যাত্রার দিন তারিখ নির্দিষ্ট করা যাবে। একদিন সকাল দশটায় সকল ক্লাস রুমে নোটিশ দিয়ে দেওয়া হলো এই বলে যে যারা এই শিক্ষাসফরে যেতে ইচ্ছুক, তারা যেন দ্রুত পাসপোর্ট বানানোর প্রস্তুতি নেয়। কলেজে টাকা জমা দিলে কলেজ কর্তৃপক্ষও এই কাজটি সহজে করে দিতে পারবে।

স্কুল জীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেছে কাবেরী কিন্তু কখনোই শিক্ষা সফরে যেতে পারেনি। পরিবার থেকে অনুমতি মেলেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠান কিংবা বনভোজনে যুক্ত থাকতে পেরেছে শুধু। কিন্তু দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার এমন সুযোগ এর আগে কখনো আসেনি। টিভির পর্দায় দেখা দিগন্ত ছুঁয়ে যাওয়া পাহাড়, নদী নিজের চোখে দেখবে। পাহাড়ি নদীর পানিতে পা ছোঁয়াবে ভাবতেই অজানা আনন্দের শিহরণ জেগে উঠে। ওর বন্ধুরা অনেকেই যাবে। ওরও খুব যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বাসায় কি বলে রাজী করাবে ভেবে পাচ্ছে না। তার উপরে স্কুল শিক্ষক বাবার স্বল্প আয়ের চালানো সংসারে জরুরী পাসপোর্ট বানানোর জন্যে ছ’হাজার টাকা কীভাবে চাইবে? বাসায় গিয়ে কীভাবে এ কথা উপস্থাপন করবে সেই চিন্তাতেই ও অস্থির। এক দিকে দেশ ভ্রমণের অদম্য বাসনা, অপর দিকে বাবা-মায়ের মাথায় চিন্তার বোঝা চাপানো! উভয় সংকটে পরেছে কাবেরী। কি করবে? চিন্তার বস্তা মাথায় করে ও এক সময় কলেজ থেকে বাসায় ফিরে আসে।

 

প্রতিবেশী দেশ ভারতে আত্মীয় বন্ধু অথবা চিকিৎসার জন্য অনেকেই যায়। ভারতে দূর সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজনও আছে। সেখানে বেড়াবার সুযোগ জীবনে কখনো আসতেও পারে। কিন্তু পাহাড় ও মন্দিরের দেশ নেপাল অথবা ভুটানে যাওয়ার সুযোগ কি কখনো আসবে? কিন্তু বাবা-মায়ের অসম্মতি ও অসন্তোষকে সামনে রেখে কোনকিছু করে কাবেরী কখনো শান্তি পায় না। তাই তাদেরকে এমন কিছুই বলতে চায় যাতে ওনারা স্বাচ্ছন্দে ওকে যেতে দেন।

ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সব সময় একটা কথা শুনতে হয়েছে-‘যারা এখানে ভালো রেজাল্ট রাখতে চান, তারা সব সময় ক্লাসে উপস্থিত থাকবেন, কলেজে শিক্ষা সম্পর্কিত সবকিছুতে অংশগ্রহণ করবেন। তাহলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সুনজরে থাকতে পারবেন।’ কাবেরীর এই কথাটাই মনে পরে গেলো। আর তা দিয়েই শেষ চেষ্টা করতে বাসায় গিয়ে বললো-“এই শিক্ষা সফরে না গেলে আমার ফার্স্ট ক্লাস যদি মিস হয়ে যায়?”

কাবেরীর বাবা-মা পড়াশুনা ও ভালো রেজাল্টের জন্য সবকিছু করতে রাজী। তাই তারা শুধু এটুকুই বললেন-“তোমাদের সাথে মহিলা শিক্ষক যাচ্ছেন তো? মহিলা শিক্ষক গেলে আমাদের কোন অমত নেই।”

এর পর আর কোনকিছুই কঠিন রইলো না। কাবেরীর ছোট ভাই আবির প্রায়ই গণিত অলিম্পিয়াড, প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্টের সাথে টাকার মূল্যে উপহার পায়। জমানো সেই টাকা হতে সে বড় বোনের পাসপোর্টের জন্য দিলো পাঁচ হাজার টাকা।

এর পরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত দৃশ্য পালটে যেতে লাগলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভিসা পেতে দেরী হওয়ায় ভারত যাত্রাটা বাদ দিতে হলো। কেননা আটত্রিশ জনের বিশাল দলে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ছাড়াও দেশের অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণও রয়েছে যারা এখানে তাদের বিএড ও এমএড ডিগ্রি সম্পন্ন করতে এসেছেন। তাদের অনেকেই সরকারি কর্মস্থলে নির্দিষ্ট ছুটির ফাঁদে আটকা। বছর শেষের ঐ এক সপ্তাহের ছুটিটাকে শিক্ষা সফরের জন্য নির্দিষ্ট দিনগুলোতে ব্যয় করে আবার তাদের ফিরে এসে কাজে যোগ দিতে হবে। সবশেষে সিদ্ধান্ত হলো প্লেনে সরাসরি নেপালে যাওয়া হবে। তাতে খরচ কিছুটা বেড়ে গেলেও যাত্রা আরামদায়ক হবে।

 

পঁচিশ ডিসেম্বর দু’হাজার নয় সাল। শুক্রবার। সুন্দর এক সকালের শুরু। বাতাসে হালকা শীতের আমেজ। দুই ফুট লম্বা একটি ট্রাভেল ব্যাগ ও কাঁধে একটি ছোট কালো ভ্যানিটি ব্যাগ ঝুলিয়ে কাবেরী যাচ্ছে বাবার সাথে রিকশায় করে। মেয়ে এই প্রথম দেশ ভ্রমণে বের হচ্ছে। তাই বাবা সাথে এসেছে বিদায় জানাতে। একটা সপ্তাহ সে চোখের আড়ালে থাকবে ভাবতেই বাবার বুকের ভেতরে কষ্ট মোচড় দিচ্ছে।

কাবেরীর চোখে বা মনে কোন দুঃখ কষ্ট দানা বাঁধছে না। ওর দু’চোখে স্বপ্ন। সমস্ত অবয়বে ছড়িয়ে পরেছে খুশীর ঝিলিক। আজ বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় যা দেখছে তাতেই মুগ্ধতা জড়াচ্ছে। সকাল নয়টা বেজে গেছে অথচ এখনো রাস্তায় যানবাহনের আনাগোনা ভিড় বাড়ায়নি। অনেকটাই ফাঁকা রাস্তার শেষ প্রান্ত গিয়ে ছুঁয়েছে অনেক দূরে। মনে হচ্ছে দিগন্তের শেষ প্রান্তে ঢাকা শহরের ছোট ছোট বাড়ি, বড় বড় ব্রিজ আর গাছগুলো যেন শিশুদের খেলনার মত বাস্তব রাস্তায় সাজানো রয়েছে।

মিনিট পনেরোর মধ্যেই ওরা পান্থপথ থেকে রিকশায় করে সায়েন্স ল্যাব ব্রিজ পেরিয়ে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গেটে পৌঁছে গেলো। অন্যদিন হলে এই সময়টা লাগতো দ্বিগুণ। গেটের কাছে পৌঁছে দেখে শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থী বন্ধুদের অনেকেই পৌঁছে গেছে সেখানে। একটা বাসও দাঁড়িয়ে আছে। এই বাসে করে সবাইকে যেতে হবে।

ওদের সবার জন্য গাইড হিসেবে যাচ্ছে শফিউল করিম স্যার। এবং আরও এগারোজন শিক্ষক শিক্ষিকা। কাবেরী ওর বাবার সাথে সব স্যার ও ম্যাডামের পরিচয় করিয়ে দিলো।

দেখতে দেখতে দু’ঘন্টা সময় পেরিয়ে গেলো। যাত্রা শুরুর সময় হয়ে এলো। কাবেরীর বাবা সহ অনেক অভিভাবকই সেখানে তাদের সন্তানদের দূর দেশ যাত্রার শুভকামনা করে বিদায় জানালো। সবাই বাসে উঠে পরলে ঠিক সাড়ে সাতটায় বাস চলতে শুরু করলো। গন্তব্য জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর।

কাবেরী সহ শিক্ষার্থীদের অনেকেই আগে কখনো প্লেনে ওঠেনি। জীবনে প্রথম শিক্ষা সফর! তাও আবার দেশের বাইরে ভ্রমণ! জীবনে প্রথম প্লেনে ওঠা! এত সব কিছু এক সাথে পাওয়া যেন ওদের চোখে স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিলো!

 

বেলা চারটা।

আকাশে ডানা মেলে উড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশ বিমান বিজি-৭০৩। অন্যান্য যাত্রীদের সাথে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের আটত্রিশ জনের বিশাল দলটির সবাই প্লেনে ঢুকে পরেছে। সবাই আনন্দে আত্মহারা। যার যার নির্দিষ্ট সিট নম্বর মিলিয়ে জায়গামত বসে গেলো সবাই। প্লেনটা ফাঁকাই ছিলো। অনেক সিট ফাঁকা। জানালা দিয়ে বাইরে দেখার জন্য কাবেরী, মেহেদী, রেহানা, আরজু, শাহীন সহ কয়েকজন জানালার ধারের সিট দখল করলো। প্লেনের সিটে বসে থেকে যতটা দেখা যাচ্ছিলো তাতে বহু নিচের ঐ দূর দিগন্তের আকাশটাকে লাগছিলো যেন একটি উলটানো বাটির অর্ধেক বা অর্ধ চাঁদের মত। সেখানে সবুজ ভূমি এসে মিশে অপূর্ব দেখাচ্ছে। প্লেন একটু করে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে আর নিচের সবকিছু ধীরে ধীরে ছোট আকারের হতে শুরু করেছে। ছোট হতে হতে এক সময় বিন্দু হয়ে গেলো।

প্লেনের ভেতরে এক সুন্দরী বিমানবালাকে ডেকে কাবেরী জিজ্ঞেস করলো-“এখন আমরা কত উঁচুতে?”

“৩৫০০ ফুট!” জবাব শুনে তো কাবেরী সহ ওর বন্ধুরা থ হয়ে গেলো। “ওয়াও!” বলে চেঁচিয়ে উঠলো সবাই। জানালা দিয়ে দেখতে পেলো পেঁজা তুলোর মত থরে থরে সাজানো মেঘের মধ্য দিয়ে ওদের আকাশযানটা ঢুকে যাচ্ছে। জানালা খোলা থাকলে যেন ওই তুলোর মত মেঘ হাতে ছোঁয়া যেতো। সূর্যের আলো খুব কাছে থেকে তাপের পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে।

উচ্ছ্বাস আর আনন্দে কখন এক ঘন্টা পেরিয়ে নেপাল সীমান্তে পৌঁছে গেছে, ওরা টেরই পায়নি। টের পেলো যখন বিমানবালার মিষ্টি কণ্ঠে ভেসে এলো-“আর মাত্র পনেরো মিনিট পরেই আমরা নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে অবতরণ করবো। সবাই সিট বেল্ট বেঁধে শান্ত হয়ে বসুন।” ঘোষণার পর পরই জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশ থেকে নেপালকে দেখতে শুরু করলো। চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়।

বিকেল পাঁচটা দশ মিনিটে সবাই একে একে প্লেন থেকে নামতে শুরু করলো। প্লেন থেকে নামতেই এক ঝলক প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটায় শরীরকে কিছুটা অবশ করে দিলো। বাংলাদেশের দিগন্ত মিলিয়ে গিয়ে পাহাড়ের দেশে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য ওদের চোখ ধাঁধিয়ে দিতে চাইলো। এয়ার পোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নেপালের বিখ্যাত থামেল সিটিতে ওরা দার্জে ইন হোটেলে অবস্থান নিলো। একটু পরে ফ্রেশ হয়ে সবাই এক সাথে বের হলো মুসলিম খাবারের উদ্দেশ্যে। সেই সাথে সবাই আশেপাশে একটু ঘুরে বেরিয়েও দেখতে চায়।

 

শিক্ষা সফর মাত্র সাত দিনের। তাই একটি দিনও মিস করা যাবে না। এদিকে নেপালে পৌঁছে ভুটানে কবে যাবে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেলো ভুটানে ধর্মঘট চলছে। এখন ওদিকে যাওয়া নিরাপদ নয়।

পর দিন ছাব্বিশ ডিসেম্বর। সকালে নাস্তা খেয়ে শহর দেখতে বের হোল। রিকশা ভাড়া করলে দুজন দুজন করে উঠতে হবে। তাতে এই নতুন জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই সবাই এক লাইনে হেঁটে হেঁটে চললো। এভাবে থামেল শহরে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান যেমন-কাঠমুন্ডু দরবার স্কয়ার (এটি একটি কাঠের তৈরী আলিশাল বাড়ি যেখানে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ আবিষ্কৃত হয়েছিলো), বিশ্বনাথ মন্দির, সার্ক সেক্রেটারিয়েট ভবন ইত্যাদি কয়েকটি জায়গায় ঘুরে বেড়ালো সবাই। এক ফাঁকে ব্যাংকে ঢুকে সবাই ডলার ভাঙ্গিয়ে নেপালী টাকা নিয়ে নিয়েছে। ওদের চলার পথেই অনেক মার্কেট। সেখান থেকে কাবেরী ওর মায়ের জন্য দুটি কাশ্মেরী শাল কিনলো। কেউ কিনলো কয়েকটি করে পশমী শাল।

এর পরে ওরা সবাই গেলো নেপালের নারায়নহিতি রাজপ্রাসাদ দেখতে। সুরক্ষিত রাজবাড়ির ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশ মূল্য নেপালীদের জন্য একশত রুপি। সার্কভূক্ত দেশের জন্য আড়াইশো রুপি এবং সার্ক বহির্ভূত দেশের জন্য পাঁচশত রুপি। নেপালী মূদ্রা রুপি ও বাংলাদেশের টাকার মূল্য সমান। নেপালের রাজার আমল শেষ হওয়ার পরে এ প্রাসাদ এখন মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে। কারুকার্য খচিত সুউচ্চ দালান। সিড়ির সামনেই দু’পাশে দুটো মাছ, দুটো হাতি, দুটো ঘোড়া আর দুটো ড্রাগনের মূর্তি। পত পত শব্দে উড়ছে নেপালী পতাকা। ভেতরে বায়ান্নটি কামরার মোট উনিশটি কামরাকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে রাখা আছে। নেপালের জেলার নাম ধরে প্রতিটি কামরার নাম লেখা। প্রতিটি কামরা দামী কার্পেট, ঝাড়বাতি, প্রয়োজনীয় আসবাব, ছবি ও পেইন্টিং দিয়ে সাজানো।

 

ঠাশ ডিসেম্বর সকালে পোখরার উদ্দেশ্যে বাসে যাত্রা শুরু হলো। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বড় সড়ক। সেখানে দিয়ে বাস ছুটে চলেছে। বড় পিচের সড়ক থেকে খুব নিচে চোখে পরছে পাহাড়ের খাঁজ গিয়ে মিলিত হয়েছে কোন শাখা নদীতে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছুটে চলা বাস থেকে এক সময় চোখে পরলো পাহাড়ের গাঁ ছুঁয়ে বানানো পিচের সড়কে একটা দুটো বাস ছুটে আসছে। যেন বাস্তব নয়, এ কোন সিনেমার দৃশ্য। কাবেরী ভাবে–“ইস! ও যদি দামী মোবাইল সাথে নিয়ে আসতো তাহলে ছবি তুলে খুব সহজেই এই আনন্দের মুহুর্তগুলো দেশে থাকা বাবা-মা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারতো!”

পোখরায় এসে সবাই খুশিতে আত্মহারা। পাহাড়ের প্রাচীরে ঘেরা পোখরা লেক মনে অনাবিল শান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। এক পাশে স্থল আর সামনে বহুদূর পর্যন্ত শুধু নদী বয়ে গেছে। দু’পাশ থেকে ছোট বড় পাহাড় এবং দূর বহু দূরেও কুয়াশা মাখা আরও অনেক পাহাড়-এইসব গিয়ে মিশে গেছে অনেক দূরের কোন দিগন্তে। সবকিছু ছবির মত। বা তার চেয়েও অনেকগুণ বেশি সুন্দর। কাবেরীর নিজেকে খুব ভাগ্যবান বলে মনে হতে লাগলো। আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাকে এই অপার সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ করে দিয়েছেন! মাথার উপরে তাকিয়ে দেখে অনেক উঁচুতে প্রজাপতি উড়ছে। কাবেরী অবাক চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বুঝলো ওগুলো আসলে প্রজাপতি নয়। হিমালয় দেখার জন্য অনেক উঁচুতে প্যারাসূটে ভ্রমণকারীদের দল। সাথে থাকা ওদের গাইড করিম স্যারের কাছে মেহেদী, শিবলী, কুইন বার বার অনুমতি চাইলো ওরাও ওইরকম প্যারাসূটে চড়তে চায়। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে স্যারের কাছে অনুমতি মিললো না। কাবেরীর খুব ভালো লাগছিলো উড়ন্ত মানুষ-প্রজাপতিগুলোকে দেখতে। কিন্তু ওগুলোতে নিজের উড়তে ইচ্ছে হলো না। ওর হঠাত ইংরেজী সিনেমা ‘জুরাসিক পার্ক’ এর একটি দৃশ্যের কথা মনে পরলো। সিনেমায় ছোট ছেলেটা ওরকম একটায় চড়ে দূর পাহাড়ে হারিয়ে গিয়ে মাংসাশী ডায়নোসরের খপ্পরে পড়েছিলো। সে কথা মনে করে গাঁ কাঁটা দিয়ে উঠলো অজানা ভয়ে!

এর পর ওরা সারাংকোট পাহাড় চূড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। বাংলাদেশের লেগুনা গাড়ির মত গাড়িতে চরে ওরা সারাংকোট পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছুলো। সেখান থেকে পাহাড়ি পথে হেঁটে হেঁটে উপরে উঠতে হবে। শুরুর পথে বড় বড় পাথর বিছানো। ঐ পাথরের উপর দিয়ে হেঁটেই পাহাড়ের চূড়ায় যেতে হবে। সে এক অদ্ভূত অনুভূতি! বয়সের দিক থেকে যারা মধ্য গগন ছাড়িয়েছে তাদের কেউ কেউ ও পথে না ঊঠার সিদ্ধান্ত নিলে কাবেরী সহ চব্বিশ জনের দল এগিয়ে চললো আরও উঁচুতে। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে কোথাও ইট বসানো সিড়ি। আবার কোথাও মাটি কাটা সিড়ি। আর খাঁজে খাঁজে কোথাও কোথাও ছোট ছোট খাবারের হোটেল আর পণ্যের দোকান। সেখানে কোথাও শুধু বাঁশি বিক্রি করছে কেউ। কোথাও শুধুই নানারকমের কাপড়ের ছোট বড় টুপি। কোথাও শুধুই পশমী শাল। সেই শালের জমিনে ঐ দেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য ফুঁটিয়ে তোলা। এরকম একটি শাল আড়াইশো রুপি দিয়ে কিনে নিলো কাবেরী। ইচ্ছে-দেশে ফিরে বান্ধবী আবিদাকে দেবে।

সারাংকোট পাহাড়ে উঠতে গিয়ে দু-তিনজন করে আলাদা আলাদা জুটি বা গ্রুপ হয়ে যেতে লাগলো। কেউ একটু বেশি এগিয়ে যেতে লাগলো। কেউ বা একটু জিরোতে জিরোতে পথ চলতে লাগলো। পোখরা লেক হতে সারাং কোট পাহাড়ের উচ্চতা সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট। ঐ পাহাড় চুড়ার উপর হতে হিমালয়ের আড়ালে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখা যায়। অদ্ভূত শিহরণে সবাই উত্তেজিত! কে কার আগে গিয়ে পৌঁছুবে ঐখানে। সকালে জ্যাকেট পরে যাত্রা শুরু হয়েছিলো। হেঁটে পাহাড়ে উঠতে গিয়ে গরমে সব ঘেমে নেয়ে অস্থির।

দুপুর হয়ে এলে চব্বিশ জনের দলটা একটা স্থানীয় হোটেলে খেতে বসে গেলো। পাহাড়ি গ্রামের হোটেল। সেই হোটেলের কামরাও দারুন। এক পাশে খোলা একটু উঠানের মত। সেখানে টেবিল চেয়ার পাতা। টেবিলগুলোর ধার দিয়ে ধাঁই করে নেমে গেছে খাড়া পাহাড়। অর্থাৎ ওই উঠোনটাই একটা খাড়া পাহাড়ের ওপরে অবস্থান করছে। এক দিকে যেমন টেবিলে খেতে বসে সামনে কুয়াশাচ্ছন্ন দূর পাহাড়, দূর দিগন্তের বাস্তব দৃশ্য উপভোগ করা যায়, তেমনি একটু বেতাল হলেই খাড়া পাহাড় থেকে পড়ে নির্ঘাত মৃত্যুর হাতছানি!

খেতে বসে সবাই দেখলো প্লেটগুলো অদ্ভূত। কাসার তৈরী প্লেটে মশলা রাখার প্লেটের মত খোপ খোপ। ভাত রাখার জায়গাটা কিছুটা বড়, তার পাশে তিনটে ছোট ছোট খোপ। প্লেটে ভাত এবং তিন পদের তরকারী দেয়া হলো। ক্ষিদে পেটে শহুরে তরুণ তরূণী, যুবক-যুবতীদের এই দলটার পাহাড় চড়ায় যে পরিশ্রম হয়ে গেছে তাতে এই খাবার যেন অমৃত মনে হলো। বিদেশের মাটিতে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, তার সাথে একটু আলাদা কায়দায় রান্না হলেও সবজির ঝোল, ডাল সবাই চেটেপুটে সাফ করে ফেললো নিমেষেই।

আবার যত উপরে উঠা শুরু হলো ঠান্ডায় যা যা গরম কাপড় খুলে ফেলা হয়েছিলো সেগুলো আবার একটা একটা করে শরীরে জড়ানো শুরু হলো। এর মধ্যে মাহফুজা আপুকে এক জায়গায় বসে পরতে দেখে কাবেরীও দাঁড়িয়ে গেলো। আপুর নাকি ওয়াশ রুমে যাওয়া প্রয়োজন। মাসের ব্যাপারটা শুরু হতে চলেছে নাকি কে জানে! প্রস্তুতি নিয়ে তো আসা হয়নি। এখন কি কেলেংকারী ঘটবে কিছু? উপরে উঠে যাচ্ছে ক্রমশঃ সহযাত্রী দলের বাকীরা। এখানে এই অজানা জায়গায় ওয়াশ রুম কোথায় পাবে? এখানের লোকজন হিন্দি ভাষা বুঝে। ভুল হিন্দি আর বাংলার গোজামিলে কাবেরী কাছেই দাঁড়ানো একটা ছোট মেয়েকে বললো-“তুমহারা গোসল খানা কাহা হে? ইসকি বহুত জরুরত হোনা!” মেয়েটি হাত উঁচিয়ে দেখিয়ে নিজেই এগিয়ে নিয়ে গেলো। মাহফুজা আপা আর কাবেরী দুজনেই কিছুটা ভয়ও পাচ্ছিলো। কি জানি আবার কোন বিপদে পরবে কি না! জায়গামত গিয়ে অবশ্য দেখতে পেলো না সেরকম কিছু নয়। মানুষগুলো ভালোই। মাহফুজা আপুও ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো নিশ্চিন্ত মনে। চিন্তা করার মত কিছুই ঘটেনি। কিছুক্ষণ এখানে বসে এই মানুষগুলির সাথে কথা বলতে থাকলো ওরা।

  • আপ লোগ কাহা সে আয়া? (কাবেরীর কাছে মনে হলো এই পাহাড়ি মানুষগুলোও খুব ভালো হিন্দি বলছে না! ভুল হচ্ছে বোধহয়!)
  • বাংলাদেশ মে!(মাহফুজা আপা জবাব দিলো)
  • ইধার কিউ আয়া?
  • হিমালয় দেখম-মে! আপলোগকে সাথ বাত ভি করনা, কুছ কেনাকাটা ভি কারনা!

দুই পক্ষই বুঝতে পারছে কোনরকমে এরা কথা আদানপ্রদান করছে। কেউই খুব শুদ্ধ ভাষা বলছে না। এভাবে ভাঙা ভাঙা ভাষাতেই ওরা কথা বলতে লাগলো।

 

বিকেল গড়িয়ে গেছে। সন্ধ্যা হতে আর বেশি বাকী নেই। ঠিক যখন সন্ধ্যা হয় হয় তখন নাকি সারাংকোট পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়ালে হিমালয় পর্বতের চূড়া দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয় নেপালীদের কাছে জেনেছে এই অভিযাত্রী শিক্ষা সফরকারী দলটা। পাহাড়টা যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে তাঁর উপরে একটা দালান। সেখানে ডুপ্লেক্স বাড়ির মত লোহার সিড়ি উঠে গেছে উপরে। সেই সিড়ি বেয়ে তাহমিনা উঠছে আর ভাবছে-“আমিই প্রথম উঠেছি! ফার্স্ট!” এই বলে সে সিড়ির শেষ ধাপে উঠে দেখে উপরে খোলা ছাদে আগে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আছে ওদের দলের শাহেদা, মুনিরা আর শহীদুল ভাই। এখানে খুব ঠান্ডা! শীতে জবুথবু অবস্থা একেবারে! এর মধ্যেই যারা উপরে পৌঁছে যাচ্ছে সবাই মিলে ছবি তোলার হুড়োহুড়ি লেগে যাচ্ছে।

ওদিকে হয়েছে আবার আরেক কাহিনী! দলটা দু-তিনজনে ভাগ ভাগ হয়ে গেলেও খুব বেশি দূরে না থেকে সবাই কাছাকাছিই চোখের সীমানাতেই পথ চলছিলো। একটু করে উঠে। আর সামনে ও পেছনের বন্ধুদের খেয়ালে রাখে। এভাবে হঠাৎ চব্বিশজন বন্ধুর উপরের দিকে চলতে থাকা বিশ, একুশ ও বাইশতম বন্ধু নিশাত, জাফর আর স্মৃতি নিচের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়েও তেইশ ও চব্বিশ নম্বর বন্ধু মাহফুজা ও কাবেরীর পাত্তা পাচ্ছিলো না। জাফর নিচে নেমে এসে অনেকটা পথ পেছনে গেলো। খুঁজে খুঁজে হয়রান। পেছনে নিচের দিকের ফেলে আসা পথে ওদের কোন চিহ্ণই নেই! ধ্বক করে উঠলো বুকের ভেতর! পাহাড় থেকে পরে গেলো নাতো? নাকি এখানের কোন ছেলেরা গায়েব করে দিলো মেয়ে দুটোকে! বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে দৌঁড়ে উপরে গিয়ে করিম স্যারের কাছে গিয়ে জানালো-“মাহফুজা আর কাবেরীকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!”

পাঁচ হাজার ফুট উপরে উঠে স্যার এখন ক্লান্ত! একটুও নিচের দিকে যেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু তা বললে কী হবে? উনি যে গাইড! সকলের দলনেতা! তাই হাঁপাতে হাঁপাতে নিচের দিকে নামতেই হলো। মেয়ে দুটোকে খুঁজতে। এর মধ্যে মাহফুজা ও কাবেরী ওদের হিন্দি ভাষার কসরত শেষ করে আবার পাহাড়ের উপর দিকে হাঁটা ধরেছিলো। করিম স্যার কিছুদূর গিয়ে দেখলো ওরা উপরে উঠছে। দেখে স্যার খুব ক্ষেপে গেলেন-“এই আপনারা কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন? খুঁজে না পেয়ে সবাই অস্থির!”

মাহফুজা আপু তো বকা খেয়ে একদম চুপ! কাবেরী মুখ খুললো-“স্যার, একটু পারসোনাল কাজ পরে গেলো!”

“এখানে আবার কিসের পার্সোনাল কাজ? কি যে করেন না আপনারা!” স্যার রাগে বোম্ব। যেন ফেঁটে পরবে এখনই।

“না মানে স্যার, ওয়াশরুম!” লাজুক স্বরে মিন মিন করে শিশুর মত কানে হাত তুলে কাবেরী ভান করলো-“এরকম আর হবে না!”

স্যারও বললেন-“ঠিক আছে! কাউকে না জানিয়ে এরকম উধাও হবেন না আর! এই অপরিচিত জায়গায় আপনারা হারিয়ে গেলে কত সমস্যা হবে, তা কি জানেন?” উপর থেকে জাফর আর স্মৃতি এসে তাড়া দিলো-“স্যার, সময় হয়ে যাচ্ছে! এক্ষুণি চূড়ায় না পৌঁছলে হিমালয় দর্শন মিস হয়ে যাবে!”

এর কিছুক্ষণ পরে ওরা সবাই এক সাথে লোহার সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠলো।

কাবেরীর খুব ঠান্ডার ধাঁত! একটুতেই টনসিল ফুলে যায়। আর এই সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উপরে খোলা ছাদে হিমালয়ের খুব কাছে ঠান্ডায় সবাই জমে যাচ্ছে। মাফলার ও জ্যাকেট পরে নিয়েছে সবাই। তবু শীত মানছে না! কিন্তু শীতের দাপটকে ভেংচি কেটে ওরা তখন দূরে মেঘ ও কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের মধ্যে ক্রিস্টালের শো-পিসের মত ত্রিভুজ দেখতে ব্যস্ত! ওটাই হিমালয় পর্বতের চূড়া। যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নামতে থাকে তখন একটু পলকের জন্য মাঝেমাঝে দেখতে পাওয়া যায় ওই চূড়া! আল্লাহ রব্বুল আলামীন দ্বিতীয়বারের মত মুগ্ধতায় জড়াবার সুযোগ করে দিয়েছেন। মনে মনে কাবেরী আল্লাহর শুকরিয়া করছে আর একই সাথে উপভোগ করছে চারদিকের বন্ধুদের উচ্ছ্বাস! যারা ডিএসএলআর ক্যামেরা সাথে নিয়ে গেছে তারা ঐ এক মুহুর্তে দেখা অপরূপ দৃশ্যটাকে ক্যামেরায় বন্দী করে নিলো।

উপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে কাবেরীর নিজেকে স্বর্গের পরী বলে মনে হতে লাগলো। এই পাহাড় চূড়ো থেকে নিচে পর্যন্ত যেন পরীর থাকে থাকে ঝুলে জড়ানো ঘাগড়া। যে ঘাগরার থাকে থাকে রয়েছে অনেক গ্রাম্য কুঁড়েঘর, কলাগাছ, সবজির গাছ। পাথরে সাজানো উঠান, সিড়ি আর রাস্তাঘাট। ঘাগড়ার চতুর্দিকে বৃত্তের মত দূরে দিগন্তের শেষে কুয়াশা ঢাকা পৃথিবী! যে পৃথিবী শুধু দু’চোখ ও অন্তর দিয়ে উপভোগের। সে বর্ণনা সঠিক ভাষায় বিবরণে তুলে ধরা কোন সুদক্ষ লেখকের পক্ষেও হয়তো সম্ভব নয়। কিংবা আঁকা সম্ভব নয় কোন নামকরা চিত্রশিল্পীর হাতের তুলিতেও।

রাত নামতে শুরু করবে আর একটু পরেই। তার আগেই সন্ধ্যের হালকা গোধূলী আলোয় পথ চলে এই আলো-আঁধারী অচেনা পথ থেকে বের হয়ে যেতে হবে সবাইকে। নইলে পাথুরে পথের কোণায় কানায় কোথায় বিপদ ওঁত পেতে লুকিয়ে থাকতে পারে তা কে বলতে পারে!

বুকের ভেতরে অসাধারণ এক আনন্দের দ্যুতি ছড়িয়ে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষা সফরের এই যাত্রীদল লাইন ধরে একে একে নেমে যেতে থাকে তাদের ফেরার পথ, পোখরা ভ্যালির উদ্দেশ্যে। আর প্রকৃতি তার বিশাল রাতের চাদর টেনে বিছিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দশ দিগন্তের সব দিকে।

 

(সমাপ্ত)

 

(নোটঃ গল্পটি ২০১৫ সালে বিদ্যানন্দ প্রকাশনী থেকে "প্রতিসরণ" নামে গল্পসংকলন গ্রন্থে প্রকাশিত)

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ