থাক্ , এতোটুকু থাক্

আকবর হোসেন রবিন ১০ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৬:১৭পূর্বাহ্ন গল্প ১৬ মন্তব্য
বিকেলে ঘুমানোর অভ্যাস নেই । কিন্তু গত কয়েক রাতে ভালো ঘুম হয়নি , তাই ঠিক করলাম আজ আয়োজন করে ঘুমাবো । অনেক প্রস্তুতি নিয়ে যখনই বালিশে মাথা রাখলাম , তখনই সাফা ভাইয়ের কল ।
“ রবিন ! কোথায় তুমি ? ”
আমি বললাম , “ বাসায় ”
“ ফ্রি আছো ? ”
“ হ্যাঁ , কেন ?”
“ একটু সাগর পাড়ে যাবো । পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে চলে আসো । ”
সাফা ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্কটা শুধু বড় ছোট ভাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না । আমরা খুব ভালো বন্ধুও বটে । তাই উনার কোন আবদারে না বলতে পারি না । তার কথা মতো ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হলাম । ভাই বাসার সামনে দাঁড়িযে , গায়ে ধূসর রঙের শাল । হাতে সিগারেট পুড়ছে ।
“ ভাই ! এটাতো মেয়েদের শাল । তবে আপনাকে ভালোই মানিয়েছে । ”
“ ধুর মিয়া ! তোমার দেখছি শাল সম্পর্কে কোন আইডিয়া নাই । এটা কাশ্মীরী শাল । গত শীতে মামা এনেছে । এটার দাম বাংলাদেশী টাকায় এগারো হাজার । আরেকটা কথা মনে রাখবে , একরকম শাল ছেলেমেয়ে সবাই পড়তে পারে । অবশ্য ধূসর রংয়ের শাল ছেলেদেরকেই বেশী মানায় ”
বাসার কাছেই বঙ্গোপসাগর । রিক্সায় দশ মিনিটে যাওয়া যায় । একটা রিক্সা ভাড়া করে রওনা হলাম , পি এইচ আমিন একাডেমীর পাশ দিয়ে । এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসার সময় আমি খুব স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি , এই স্কুলে কেটেছে আমার শৈশব , রয়েছে হাজারো স্মৃতি । আহা জীবন ! স্কুল জীবন !
আমি বললাম , “ ভাই ! এই কনকনে শীতের সন্ধ্যায় সাগর পাড়ে কেন যাচ্ছি ? ”
সাফা ভাই বললেন , “ কাজ আছে । ”
“ সূর্যাস্ত উপভোগ করবেন ? ”
“ না ”
“ তাহলে কি কাজ ? ”
“ গেলেই দেখতে পাবে । আপাদত চুপ করে বসে থাকো । ”
“ মানুষ কেন যে এই কাদা পানিতে ঘুরতে আসে ! ”
“ ধুর মিয়া ! কী বলো তুমি ! তোমার দেখি রুচি বলতে কিছুই নাই । আমি মনেকরি , এতো টাকা পয়সা খরচ করে সুন্দরবন কক্সবাজার না গিয়ে এই সাগর পাড়ে আসা উচিত । একসাথে দুটোই দেখতে পাবে । এখানে একপাশে সুন্দরী গেওয়া গাছের বন , অন্যপাশে বিশাল সমুদ্র ।”
কথা বলতে বলতে আমরা সাগর পাড়ে চলে আসলাম । রিক্সা থেকে নামার পর হাঁটতে হাঁটতে বনের কাছাকাছি আসতেই চারু আপুর সাথে দেখা। এতক্ষণ পরে বুঝলাম , এই অবেলায় সাফা ভাইয়ের সাগর পাড়ে আসার কারণ ।
চারু আপু সাফা ভাইয়ের খুব ভাল বন্ধু । তবে আমার ধারণা , উনাদের মধ্যে সম্পর্কটা বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি । যদিও দুজনের একজনও এটা প্রকাশ করে না । চারু আপুর সাথে উনার ছোটবোনও ছিল । বোনের নামটা এখন মনে করতে পারছি না । আমার একটা খারাপ অভ্যাস , খুব বেশি না মিশলে মানুষের নাম মনে রাখতে পারি না ।
সাগর পাড়ে সবসময় চা , বাদাম , ঝালমুড়ি বিক্রেতাদের আনাগোনা দেখা যায় । এক চা বিক্রেতাকে চার জনের জন্য চার কাপ রঙ চা দিতে বললাম । সাফা ভাই চায়ে চুমুক দেওয়ার সাথে সাথে একটা সিগারেটও ধরালেন । আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম , “ উফ ! ভাই , পাশে ছোটবোন বসে আছে , সিগারেট এখন ধরানোর কি খুব দরকার ছিল ? ”
চারু আপু বললেন , “ রবিন ছেলেটা এখনো বাচ্চায় রয়ে গেলো ! পুরুষ মানুষ সিগারেট টানবে না-তো ললিপপ চুষবে ! ”
আহমদ ছফার ‘ অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী ’ গল্পের দুরদানার সাথে চারু আপুর পোশাক পরিচ্ছেদ , কথাবার্তার বেশ মিল আছে । আর , আট-দশটা বাঙ্গালি মেয়ের মতো খুব বেশি রক্ষণশীল মাইন্ডের নয় ।
যা হোক, তারপর সবাই মিলে সবুজ ঘাসের ওপর গোল করে বসে আড্ডা দিতে শুরু করলাম। সাফা ভাইয়ের সাথে দেওয়া আড্ডাগুলো খুবই ভালো জমে । খুব রসিক মানুষ । তাছাড়া সাফা ভাইয়ের মধ্যে একটা অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে, চারপাশের মানুষদের খুব সহজে হাসাতে পারে।
আড্ডার মাঝে চারু আপু হঠাৎ ব্যাগ থেকে ছোট ছোট দুটো বক্স বের করলো । আপু আমাদের জন্য পায়েস রান্না করে এনেছে । তারপর, খাওয়া শেষে বায়না ধরেছেন , সাগরের পানিতে খালি পায়ে হাঁটবে । আপুকে সঙ্গ দিতে সাফা ভাইও গেল ।
দুজনের হাত ধরে খালি পায়ে হাঁটার দৃশ্য দেখে আমার খুব ঈর্ষা হলো । মনের মধ্যে একটা হালকা অভাব অনুভব করলাম । যদি চারু আপুর মতো অদ্ভুত এক পাগলি আমার লাইফেও থাকতো !
অবশেষে, কিছু বাদাম কিনে বাসার উদ্দেশে রওনা হলাম । সূর্য অস্ত যায় যায় অবস্থা। ফেরার মুহূর্তে সাগর ভরা জোয়ারের ঢেউগুলো দেখে মনে হলো , সদ্য একটি যুদ্ধ শেষ হয়েছে । চারদিকে নিস্তব্ধ । যেন হাজারও মৃত সৈনিকের রক্তের জোয়ারের ঢেউ এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে । স্পর্শ করতে চাচ্ছে , রাঙ্গাতে চাচ্ছে । থাক্ , আজ এতোটুকুই থাক্ ।
0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ