তোমার সাথে আমার এত এত স্মৃতি জড়িত আছে যে তার সব বা অর্ধেকটা কোনভাবেই বলা সম্ভব না । তাই ভেবেছিলাম লিখব না। কিন্তু তুমি তো জানোই একবার কোন কিছুর ভুত ঘাড়ে চড়ে বসলে তা সাধারণত আমি শেষ না করে কোনদিনই নামাতে পারি না।তাই আবার শুরু করলাম ।জানি না কিভাবে বাকীটুকু লিখব।কিভাবে আমাদের কাহিনীর ধারাবাহিকতা ঠিক রাখব। আর এটাও বুঝতে পারছি না আমার লেখাটা পড়ার যোগ্য কিনা।কেউ হয়ত বিরক্তও হচ্ছে। কিন্তু আমি লিখবই। কিন্তু কেন লিখব বা লিখছি তা নিয়েও অনেকবার ভেবেছি। কোন উত্তর পাই নি। শুধু জানি আমাকে লিখতে হবে।তোমার আর আমার সুখ/দুঃখের ঘটনার সাক্ষী কিছু মানুষকে করতেই হবে।

 যা হোক ধান ভাঙতে শিবের গীত অনেক হল, এখন আসল কথায় আশাযাক। এর আগের পর্বে তুমি নিশ্চয় পড়েছ আমি তখন ঢাকার বাতাসে নিজেকে লেজ বাঁধা ঘুড়ির মত উড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে বৈশাখের দমকা হাওয়ার মত তোমার আগমন ঘটল ।প্রথম যেদিন তোমার সাথে আমার কথা হয় তুমি সেদিন আমাকে দাদা বলেছিল ,তোমার কি তা মনে আছে?? যাই হোক তুমি ফোন দিলে আমি তোমাকে প্রথম জিগ্যাস করলাম আমার নম্বর তুমি কোথায় পেয়েছ?? তুমি বললে তোমার মামাতো বোনের কাছে থেকে। আমি জিগ্যাস করলাম তাহলে বল কেন ফোন করেছ?? তুমি কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকলে। আমি আবারও জিগ্যাসা করলাম আবার সেই অন্ধকারের নিস্তব্ধতা।কিন্তু সেই নিস্তব্ধতার মানে বোঝার ক্ষমতা তখন আমার হয়নি। তাহলে মৌরীর বলা কোথাগুলোও হয়ত বুঝতাম। যাই হোক, আমি কথা চালানোর জন্য জিগ্যাস করলাম তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে,বাসার সবাই কেমন আছে,তোমার মামাতো বোন কেমন আছে,আমাদের শহরে যাও কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। কোনটার জবাব দিলে, কোনটার দিলে না। তুমি কি আমাকে কিছু জিগ্যাস করেছিলে?? হুম আমার স্পষ্ট মনে আছে,প্রাথমিক পরিচয় পর্বের পর তুমি শুধু জিগ্যাস করেছিলে আমি ভালো আছি কিনা।আমার অসুস্থ মা কেমন আছে । আমি মনে হয় জবাবও তোমাকে দিয়েছিলাম সামাজিক জীবের মত। তুমি পুরো ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডে বললে আমি এখন রাখি ,আর ৫৯ সেকেন্ডে লাইন টা কেটে দিলে।কি বিশ্বাস হচ্ছে না, আমার ডাইরিতে সব লেখা আছে, বিশ্বাস না হলে দেখে যাও।বুঝলাম তুমি যথেষ্ট হিসাবী। কারণ একেবারে টাইম ২ টাইম তুমি লাইন কাটলে । আর আমি বুঝে গেলাম তোমার সাথে ফোনে টাংকি মারতে হলে আমাকেই ফোন দিতে হবে। তাই লাইন কাটার সাথে সাথেই আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম।যদিও তুমি বলেছিলে আপনাকে ফোন দিলে কোন অসুবিধা আছে কিনা?? তবে আমার মনে হল তুমি বড় যোর মাঝে মাঝে আমাকে মিসকল দিতে পারো ।

 আসলে তখন সময়টাই কেমন যেন ছিল । হাই ফ্যাশান ঢাকার সামনে তোমার খুলনাকে খুব ম্লান লাগত। প্রকিতি সুন্দরী খুলনা প্রসাধন সুন্দরী ঢাকার কাছে মার খেয়ে গেল। তাই খুলনার মেয়ে তোমাকে আমি মনে ঢোকাতে পারলাম না। ক্লাশ,হোস্টেল,বন্ধুমহল এবং মৌরি এই তিন নিয়েই আমি সময় কাটাতে লাগলাম ।আমার শহরের জন্য যদিও খুব মন খারাপ হত কিন্তু এত কিছুর ভিড়ে তোমার কথা আমার মনে পড়ত না, নানা মুখী চাপ সুযোগই দিত না তোমাকে নিয়ে ভাবার।

 আমার সব ধারনা ভুল প্রমাণিত করে তুমি প্রতি রাতে আমাকে ফোন দিতে শুরু করলে। প্রতিদিন রাতে বাঁধা ১০ মিনিট মানে ৯ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড তুমি আমার সাথে তখন কথা বলতে লাগলে।যদিও কথা যা বলার আমিই বলতাম, তুমি শুধু শুনতে।কত কথাই না তোমাকে বলতাম , জানো আজ এই করেছি,কাল ওখানে যাব,এটা কিনতে হবে,মৌরি এটা বলেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তুমি কিছুই বলতে না। তোমার নিরবতা আমি উপভোগ করতাম,কিন্তু নিরাবতার মানে আমি তখন খুজি নি বা বুঝিও নি ।  

 তুমি প্রতিদিন রাতেই আমাকে ফোন দাও সুতরাং তোমার সাথে কথা বলা আমার অভ্যাসে পরিণত হল । একদিন ,পুরা ঘটনা আমার মনে নেই, কোন একটা দুর্ঘটনার জন্য আমার রাতে কাকার বাসায় থাকতে হল । তুমি তো জানোই আমার কাকা একটু পাগলাটে ধরনের। তিনি সারারাত জেগে বই পড়েন । এবং আমি কাকার বাসায় যে রুমটায় ঘুমাই সেটাই তার পড়ার ঘর। সুতরাং সেদিন রাতে তুমি ফোন করা স্বত্বেও তোমার সাথে কথা বলতে সাহস পেলাম না । একবার রিং বাজার পরেই কাকা আমাকে বলেছিল এত রাতে কার ফোন?? আমি মিসকল এটা বলেই ফোন বন্ধ করে দিলাম। আমি জানিনা সারারাতে তুমি আর কতবার চেষ্টা করেছিলে আমাকে ফোন দিতে। কিন্তু সারারাত বিশ্বাস কর আমার ঘুম হয়নি । এই প্রথম সারারাত জেগে থাকার অভিজ্ঞতা আমার হল।কিন্তু তখনও বুঝতে পারি নি কেন আমি ঘুমাতে পারলাম না।সারারাত না ঘুমিয়ে শুয়ে থাকা কত কষ্টের তা তুমি এখন জানো ।

চলবে ..................  

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ