তাজমহল (৩য় পর্ব)

ইঞ্জা ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১০:৪২:১৩অপরাহ্ন ভ্রমণ ২৮ মন্তব্য

গাইডকে জিজ্ঞেস করলাম, গতরাতে দেখা তাজমহলের রঙ বদলানোর বিষয়টি। জবাবে ও বললো, এর কারণ তাজমহলের ভিন্নমাত্রার টাইলসের কারণেই এমন প্রতিচ্ছবি হয়, এছাড়া সূর্যের অস্তাচলের সময়েও তাজের চেহেরা লালাভ ও কখনো সোনালি হয়ে উঠে (ফিচার ছবি দ্রষ্টব্য) ।

আমরা অবাক হলাম কথাটি শুনে।
গাইড বলছে এই তাজমহল গড়ার অনেক করুন কাহিনী আছে, এই তাজমহল তৈরির জন্য সকল টাইলস ও মূল্যবান রঙ্গিন পাথর সাড়া এশিয়া এবং ভারত থেকে আনা বিভিন্ন উপাদান সামগ্রী দিয়ে, নির্মাণ কাজের সময় ১,০০০ এরও বেশি হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল নির্মাণ সামগ্রী বহন করে আনার জন্য। আলো-প্রবাহী অস্বচ্ছ সাদা মার্বেল পাথর আনা হয়েছিল রাজস্থান থেকে, লাল, হলুদ বা বাদামী রঙের মধ্যম মানের পাথর আনা হয়েছেল পাঞ্জাব থেকে।
চীন থেকে আনা হয়েছিল কঠিন, সাধা, সবুজ পাথর, স্ফটিক টুকরা। তিব্বত থেকে বৈদূর্য সবুজ-নীলাভ (ফিরোজা) রঙের রত্ন এবং আফগানিস্তান থেকে নীলকান্তমণি আনা হয়েছিল। নীলমণি- উজ্জ্বল নীল রত্ন এসেছিল শ্রীলঙ্কা এবং রক্তিমাভাব, খয়েরি বা সাদা রঙের মূল্যবান পাথর এসেছিল আরব থেকে।
এ আটাশ ধরনের মহামূল্যবান পাথর সাদা মার্বেল পাথরেরে উপর বসানো রয়েছে।
এই তাজমহল গড়ার আসল কারিগর দিল্লি, আগ্রা, ইরান সহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়েছিলো, যাদের কাজ শেষে সকলের হাতের আঙ্গুল কর্তন করা হয়েছিলো যেন আরেকটি তাজমহল সৃষ্টি যেন করা না যায়।

তাজমহলের ভিতরের প্রবেশ পথের কারুকার্য।   

তাজমহল গড়তে ততকালীন আনুমানিক ৩২ মিলিয়ন ডলার খরচা করা হয়েছিলো, পাথর বহন, স্থাপন সহ বিভিন্ন কাজে ১০০০ হাজারের মতো হাতি ব্যবহার করার হয়েছিলো।
তাজমহল ছিলো তখনকার মোগল সাম্রাজের উতকৃষ্ট এক স্থাপত্যকলা, দিল্লির জামে মসজিদও সম্রাট শাহজাহানের আরেক সৃষ্টি, বেগম মুমতাজের অকালমৃত্যুতে শোকাহত সম্রাট গড়েছিলেন তাজমহল যা বিশ্বের ৭ম আশ্চর্য হিসাবে স্বীকৃতি হুসাবে এখনো বিদ্যমান।
তাজমহল তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নকশার উপর, বিশেষ করে পারস্য ও মুঘল স্থাপত্য অনুসারে, নির্দিষ্ট কিছু নকশা তিমুর ও মুঘল ইমারতের মত হুবহু করা হয়েছে, যাদের মধ্যে তিমুরের গুর-ই-আমির, সমরখন্দে মুঘল সাম্রাজ্যের পূর্বসূরী, হুমায়ূনের মাজার, ইমাদ-উদ-দৌলার মাজার (কখনো ডাকা হয় শিশু তাজ নামে), এবং দিল্লীতে শাহজাহানের নিজের তৈরি দিল্লী জামে মসজিদ (আগেই বলেছি)।

ভিতরের কারুকার্য।  

তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায়, মুঘল ইমারত পরিমার্জনের এক নতুন স্তরে পৌছায়, যেখানে পূর্ববর্তী মুঘল ইমারতসমূহ তৈরি হয়েছিল লাল বেলে পাথরে, শাহজাহান চালু করেছিলেন সাদা দামি মার্বেল পাথরের প্রচলন।

তাজমহল সংলগ্ন মসজিদের অন্দরের ছবি। 

আমরা যমুনা নদীর পার্শ্ব থেকে পশ্চিম দিকে এগুলাম, কিছুদূর এসে তাজমহলের পশ্চিম পাশে পূর্ব পাশের অনুরূপ এক মসজিদ দেখে হতবাক হলাম, এই মসজিদটির কেবলা পূর্বদিকে মুখ করা, একটা মসজিদ তাও পূর্বদিকে কেবলা কি করে সম্ভব?
গাইড বললো, যেহেতু তাজের দুই পাশের জায়গা খালি ছিলো, সেহেতু পূর্ব পাশে নয়াভিরাম মসজিদ বানানো হয়, কিন্তু পশ্চিম পাশের জায়গাটা খালি রয়ে যায়, এতে তাজমহলের সৌন্দর্য্যের হানি হচ্ছিলো বিধায় এর পশ্চিম পাশে পূর্বের মসজিদের ন্যায় এক ডামি মসজিদ বানানো হয়, যেইটাতে কোন নামাজ বা প্রার্থনা করা হয়না।
বুঝে দেখুন, এক সম্পূর্ণ সৌন্দর্য্যমন্ডিত মসজিদের অনুরুপ আরেক ডামি মসজিদ বানানো হয়েছে শুধু মাত্র তাজমহলের সৌন্দর্য্য অক্ষুণ্ন রাখার জন্য, যার কোন কাজ নেই, শুধু সৌন্দর্য্য ধরে রাখা।
আমি এখনো ভাবি, কেমন ব্রেইন আর মেধা ছিলো সেই সময়কার নক্সাবীদদের?

চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ