
বিদেশি হিসাবে তাজমহলে প্রবেশের টিকেট বেশিই দাম পড়লো ভারতীয়দের তুলনায়, কাউন্টার দিয়ে প্রবেশ করে ভিতরের দিকে অগ্রসর হলাম আমরা তিনজন, সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য শখ করে বানিয়েছিলেন এই তাজমহল যা আজও প্রেমের প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে, দূর থেকে দেখা যাচ্ছে তাজমহল তা অপার সৌন্দর্য্য বিলিয়ে যাচ্ছে।
আসল প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে আরেকটি তোরন (গেইট) দেখা যাচ্ছে।
গাইড আমাদেরকে বললো, আপনারা তোরনের উপর কিছু লেখা দেখতে পারচ্ছেন?
আমরা বললাম “হাঁ আরবিতে লেখা দেখছি”।
আপনারা খেয়াল রাখুন লেখা গুলোর সাইজের দিকে।
আমি বললাম, ” কেন সব গুলোই তো বড় বড় হরফে লেখা দেখছি”।
চলুন এগুতে থাকি।
আমরা এগুতে থাকলাম, তোরনের সামনে এস গাইড বললো, এখন দেখুন, নিচ থেকে উপরে উঠে আবার নিচের দিকে এসেছে, আরবী হরফে লেখা সব গুলো আল্লাহর নাম, যত নামে উনাকে ডাকা হয় সব নাম আছে, এই নাম গুলো এমন ভাবে লেখা হয়েছে যে তা আপনি দূর থেকে দেখুন আর কাছ থেকে, সব গুলোই এক সমান লেখা যা আপনি দূর থেকে এবং কাছ থেকে বা ডান বাম যেদিক থেকেই দেখবেন তা সমান ভাবেই দেখবেন।
আমরা অবাক হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখলাম, সব হরফই সমান সাইজের, কোনো হেরফের নাই।
আমরা আবার এগুলাম ভিতরের দিকে, দূর থেকে দেখা তাজমহল এখন আরও কাছ থেকে দেখে আরও অভিভূত হয়ে গেলাম, মাঝে পানির ফোয়ারা আর দুই পাশে চলাচলের পথে প্রচুর পর্যটক হাটাচলা করছেন, আমার বন্ধু কিছু ছবি তুললো ওর ডিজিটাল ক্যামেরায়।
এরপর আমরা ধীরেসুস্থে এগুলাম তাজমহলের দিকে।
তাজমহলের উপরে উঠে আসতে কয়েকটা সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠে আসতে হয়, আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছি তাজমহলের দিকে, গাইডের কাছে শুনলাম ও দেখলাম তাজমহলের চার কোনায় চারটি মিনারের মত আছে, এই মিনার গুলো এমন ভাবে তৈরি যেন ভূমিকম্প, বাতাস বা যেকোনো কারণে মিনার গুলো যদি ভেঙ্গে পড়ে তাহলে তা বাইরের দিকে ভেঙ্গে পড়বে, কোন কারণেই তা ভিতরে পড়বেনা, এমন করেই বানানো হয়েছে সেই চার মিনার, এর কারণও আছে আর তা হলো যদি ভেঙ্গে ভিতরে পড়ে তাহলে তাজমহলের বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে, এই মিনার গুলো এক একটি ৪/৫ তলার সমান।
এরপর আমরা বাইরের দিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম, আমরা তাজমহলের ডান পাশে এলে দেখলাম লাল রঙের এক মসজিদ পশ্চিম দিকে মুখ করা, গাইড বললো এইখানে নামাজ পড়া হয়, দেখতে খুবই সুন্দর মসজিদ, মুগ্ধকরা তার ডিজাইন।
এরপর আমরা ঘুরে পিছনে এলাম, পিছনে যমুনা নদী কিন্তু পানি তখন খুবই অল্প, নদীর অপর পাশে কিছু স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছিলো যা এখন বন্ধ আছে, গাইড আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে বললো, ঐ যে অপর পাশের স্থাপনা দেখছেন তা হলো ব্ল্যাক তাজমহল।
আমরা অবাক হয়ে আবার তাকালাম, আমি বললাম ” কি বলেন, ওখানে তো দেখছি সবই ইটের স্তুপ, কালো তাজমহল কই?
গাইড তখন সব খুলে বললো, সম্রাট শাহজাহানের পুত্র হুমায়ুন চেয়েছিলো তাজমহলের অনুরূপ কালো তাজমহল গড়ার কিন্তু পরবর্তীতে ফাইনান্সিয়াল ক্ষতি হচ্ছে দেখে সেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যদি সেই কাজ বন্ধ করা না হতো, তাহলে আজ আমরা দ্বিতীয় তাজমহলও দেখতে পারতাম।
চলবে।
ছবিঃ গুগল।
৪২টি মন্তব্য
নাজমুল হুদা
তাজমহলের ইতিহাস আর ভ্রমণ কাহিনী সংমিশ্রণে নতুন করে জানতে পারছি ।
চলুক ,, অপেক্ষায় আছি 😍
ইঞ্জা
নতুন করে মানে, আপনিও কি গিয়েছিলেন তাজমহল দেখতে? 😊
নাজমুল হুদা
হা হাহা হা, আরে না সেই ভাগ্যে হবে না।
পাঠ্যের ইতিহাসের চেয়ে আপনার লেখায় মাধুর্যময়তা আছে ,!
সেটাই বললাম
ইঞ্জা
😊 ধন্যবাদ অনিঃশেষ ভাই।
তৌহিদ
পড়ছি আর অভিভূত হচ্ছি। সেই সময়ের কারিগর এবং ইঞ্জিনিয়ার অনেক দূরদর্শী ছিলেন। কিন্তু অন্যান্য দেশের পর্যটকের চেয়েও সার্কভুক্ত দেশের পর্যটকের কাছ থেকে টিকেটের মুল্য কম রাখে জানতাম দাদা।
ভ্রমণ গল্প ভালো লাগছে।
ইঞ্জা
কারিগরদের কথায় পরের পর্বে আসবো ভাই, আর সার্কভুক্ত পর্যটকদের খুবই অল্পই চার্জ কম হয় যা বলার নয়।
তৌহিদ
বুঝতে পারছি দাদা।
ইঞ্জা
নতুন পর্ব দিয়েছি ভাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
যতই পড়ি ততো অভিভূত হচ্ছি।
তাজমহলে যদিও যাওয়া হয়নি আপনার এই দারুণ বিবরণে অনেককিছু জানতে পারলাম।
অজস্র ধন্যবাদ ও শুভকামনা দাদা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ দাদা, আমার লেখাতেই যদি অভিভূত হোন, তাহলে ভেবে দেখুন তাজকে দেখতে না কত বেশি অভিভূত হবেন?
মোহাম্মদ দিদার
যতই পরছি,
যেনো গভীরে হারিয়ে যাচ্ছি
ইঞ্জা
আজ নতুন পর্ব দিলাম,পড়ে দেখুন। 😊
ছাইরাছ হেলাল
চলবে মানে! অবশ্যই চলবে।
আজ আমরা তাজমহলের অনেক তথ্য-ই জানি কিন্তু একজন সোনালা যখন এটি লিখে জানাচ্ছে
তখন কিন্তু ব্যাপারটি একটু ভিন্ন-ই!
সাবাস।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান, নিজ চোখে যখন দেখেছি সেই হিসাবে নিশ্চয় আরও কিছু রহস্য খোলতাই হবে, পাশে থাকবেন। 😊
বন্যা লিপি
পর্বে পর্বে টান টান বিবরন।দারুন ভাবে আপনার চোখে দেখে দেখে এগুচ্ছি। দারুন রোমাঞ্চকর!!
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, তাজমহল এক অপার রহস্য ঘেরা স্থাপত্য, এর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে রহস্য, পাশে থাকুন আরও অনেক কিছু জানতে পারবেন। 😊
মনির হোসেন মমি
প্রথম পর্বে চমক পেলাম চন্দ্রের আলোয় তাজ মহলের রূপের পরিবর্তন।এ পর্বে জানলাম আরবী হরফের তেলেসমাতী কারবার অতপর কালো তাজ মহলের ইতিহাস।চমৎকার অজানাগুলো জানছি।চলুক লেখা-যাওয়ার নেশা যেন দ্রুত জেগে যায়।
ইঞ্জা
তাজমহলের পরতে পরতে রয়েছে অজানা রহস্য, যতই এগুবো ততই রহস্য গুলো খোলতাই হবে, পাশে থাকবেন প্রিয়। 😊
মনির হোসেন মমি
না দেখিলেও আপনার লেখায় দেখে নিচ্ছি।
ইঞ্জা
আজ নতুন পর্ব দিয়েছি ভাই। 😊
রেহানা বীথি
ভাবতেই অবাক লাগে, কতবছর আগের তৈরী, অথচ কত নিখুঁত স্থাপনা। তথ্যগুলো জেনে চমৎকৃত হচ্ছি ভাইয়া। লিখে যান, শুভকামনা সবসময়।
ইঞ্জা
৪০০ বছরেরও বেশি বয়স তাজমহলের, বয়সের মতোই সে আঁকড়ে রেখেছে তার অপার সৌন্দর্য্য ও রহস্যের ভান্ডার, পাশে থাকুন আপু আরও আসছে। 😊
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার কল্যানে তাজমহলকে নতুন ভাবে জানলাম
ইঞ্জা
মাত্র তো শুরু ভাই, আরও জানার বাকি আছে। 😊
মোঃ মজিবর রহমান
জানার অপেক্ষায় আছি।❤
ইঞ্জা
আজ নতুন পর্ব দিলাম ভাই। 😊
রেজওয়ান
তাজমহলে এখনো যাওয়া না হলেও অনেক বেশকিছু ইতিহাস পড়েছি। কিছু অথেনটিক ইতিহাস বলে হুমায়ূন নয় বরং শাজাহানেরই পছন্দ হয়নি বলে নতুন আরেকটা কালো তাজমহল গরতে চেয়েছিলো। কিন্তু অর্থের অপচয় হবে এই আশঙ্কায় উনার ভাই বাধা দিয়েছিলো কালো তাজমহল না বানানোর জন্য!
তবে ভাইজানের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা অসাধারণ, কেমন একটা থ্রিলিং অনুভব হয়✌পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম🤘
ইঞ্জা
অথেনটিক ইতিহাস যা বলে তা ভুল, কারণ হুমায়ুন চেয়েছিলো কালো তাজমহল গড়ে সাদা তাজমহলকে ব্যঙ্গ করবে, পরে টাকার কথা চিন্তা করে বাদ দেয় সেই চিন্তা, এছাড়া আরেকটি বিষয় ছিলো, তা হলো কারিগরের অভাব, কারণ কারিগরদের হাত কর্তন করেছিলেন সম্রাট শাহজাহান।
রেজওয়ান
জি ভাই কারিগরদের এই হত্যা, বিকলাঙ্গ করার জন্যই তাজমহল দেখতে মন চায় না। তাজমহলের ছবি দেখলেও সেই কারিগরদের কথা মনে হয়। আর ভাবি একজন রাজা কতটা উন্মাদ হলে এমন করতে পারে!💔😭
ইঞ্জা
ততকালীন সম্রাটরা কিছুটা উম্মাদই ছিলো, কারণ তারা যুদ্ধ সহ বিভিন্ন কারণে মানুষ খুন করতো, স্বাভাবিক ভাবেই তাদের মনে দয়া মায়া কমই থাকার কথা।
মোস্তাফিজুর খাঁন
খুব ভালো লেগেছে,,, ভাইজান
দ্বিতীয় তাজমহল দেখা নাই বা হলো,,,
তৃতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষা রইল ।
ইঞ্জা
দ্রুতই পাবেন ভাই, ধন্যবাদ। 😊
সাবিনা ইয়াসমিন
বাহ! আরবি হরফের ব্যাপারটি বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো। কারিগররা কত মেধা খাটিয়ে তাজমহলের প্রতিটি ইঞ্চি তৈরি করেছেন!!
চারটা মিনারের ছবিতে দেখলাম, একটি মিনারকে ফ্রেম দিয়ে আটকে রেখেছে। এটা এভাবে রাখা কেন? এই মিনারটি কি কোনো কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো ?
ভালোতো লাগছেই পড়তে। এটা আর বলা লাগবেনা। আপনি ঝটপট সুস্থ হয়ে পরের পর্ব দিন ভাইজান। ভ্রমন কাহিনী জিড়িয়ে জিড়িয়ে পড়তে ভালো লাগেনা
🙁 🙁
ইঞ্জা
মিনার শুধু নয়, তাজমহলও বারে বারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা আবার মেরামতেরও প্রয়োজন পড়ে আপু, দোয়া রাখবেন দ্রুতই পোস্ট দেবো। 😊
অশোকা মাহবুবা
বাপরে। ব্ল্যাক তাজমহলের কথা এই প্রথম শুনলাম। দারুণ। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, আজ দিয়েছি এর ৩য় পর্ব। 😊
চাটিগাঁ থেকে বাহার
ইন্ডিয়ায় তিনবার গেছি। কলকাতা, আগরতলা ও মেঘালয়।
দিল্লি, আগ্রা, আজমীর, কাশ্মীরসহ আরো কয়েকটি প্রদেশে যাবার ইচ্ছা আছে।
আপনার লেখা ভালো লাগছে।
ইঞ্জা
আজমীর শরীফ নিয়ে লেখা আশা করছি আগামী দিন পাবেন ভাই।
দিল্লিতে দেখার জন্য নয় খাওয়ার জন্য যাবেন, আজমির, আগ্রা সহ বেশ কিছু জায়গাতে যেতে হলে দিল্লি থেকেই যাওয়া উচিত।
শাহরিন
এক নিঃস্বাসে পড়লাম।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা আপু
কামাল উদ্দিন
ইতিহাসগুলো জানা হচ্ছে, সেই সাথে ছবি দেখে যাওয়ার চিন্তাটা মাথায় বেড়ে যাচ্ছে। পরের পর্বে যাচ্ছ……..
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই