স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অবাধ তথ্য প্রবাহের এ যুগে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে ক্রীড়া, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও সভ্যতা, বিনোদন, শিক্ষা সহ হরেক রকমের বিষয়। সৃজনশীল, মননশীল, সৃষ্টিশীল, নান্দনিক শিল্প সংস্কৃতি, ক্রীড়া সহ বিভিন্ন বিনোদন আজ আমাদেরকে প্রতিনিয়ত আনন্দিত শিহরিত আর শিক্ষিত করছে তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য বিদেশী অপ সংস্কৃতি, কুরুচিপূর্ণ অশ্লীলতাও যে ঢুকে পড়ছে অবাধ তথ্য প্রবাহের বলা ভালো অবাধ আগ্রাসী তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে। প্রতিটি ক্রিয়ার যেমন প্রতিক্রিয়া থাকে তেমনি ভালোর সাথে মন্দও আমাদের মাঝে, আমাদের সমাজের মাঝে, আমাদের সংস্কৃতির মাঝে ঢুকে পড়ছে। আমাদের বাংলা সিনেমার গান গুলো অনেক ক্ষেত্রে বোম্বে হলিউডকেও হার মানায় অশ্লীলতার দিক থেকে। আমাদের টিভি নাটকে স্লিভলেস ব্লাউস অনেক আগেই ঢুকে পড়েছে। মেয়েদের সেলোয়ার কামিজের সাথে যে একটা ওড়না নামক বস্ত্র ছিল তা  উধাও হয়ে গেছে নাকি পাশ্চাত্যের বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে তা আমরা জানিনা। আরও দুঃসাহসী ব্যাপার হচ্ছে ইদানীং ক্রিকেট খেলা চলার সময় বিভিন চ্যানেলে বিরতির সময় খেলা নিয়ে যে আলোচনা, বিশ্লেষণ হয় তাতে প্রায় সব উপস্থাপিকা টাইট লেগিংসের সাথে টপস বা এ জাতীয় কাপড় পরিধান করে বুকের ওড়না তো থাকেই না বরং পায়ের উপর পা তুলে এমন ভঙ্গিতে কথা বলেন যা আমাদের সমাজ সংস্কৃতি আর ধর্মীয় ভাবধারার সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। এগুলি হচ্ছে আমাদের দেশে আগ্রাসী অপ সংস্কৃতির তথাকথিত উদারমনা আর মুক্তমনার ফসল। আমরা কি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ভাবধারা বিসর্জন দিয়ে অন্যদেরকে অন্ধভাবে অনুকরণ করতেই থাকবো আমাদের নিজস্বতাকে বাদ দিয়ে। অন্ধ হলেই কিন্তু প্রলয় বন্ধ হয়না।

আমাদের স্বাতন্ত্র্য কৃষ্টি, সভ্যতার নিরিখে ধর্মীয় অনুশাসনের ভিত্তিতে কোন কোন বিষয় আমরা গ্রহণ করবো বা বর্জন করবো তা আমাদেরকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে, নির্বাচন বা নির্ধারণ করতে হবে। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে যাতে অশ্লীলতা, কুরুচি, ব্যাভিচার, ধর্ষণ, খুন আর ব্যাপ্তি লাভ করতে না পারে তার জন্য সুষ্ঠ জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এটা এখন সময়ের দাবী। অবাধ তথ্য প্রবাহের নামে যেন সমাজ কুলষিত না হয় সে লক্ষ্যে স্যাটেলাইট বা ক্যাবল নেট ওয়ার্ক, গুগল, ফেইসবুক, টুইটার, ওয়াটস আপ সহ বিভিন্ন ধরণের এয়াপ্স নেট ওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণের অপরিহার্যতা বিবেচনা করে এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক। কোন মাধ্যম থেকে ভাল বা খারাপ গ্রহণ বা বর্জন করা নির্ভর করে মানুষের মানবিক, নৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর। আজ আমাদের মানবিক, নৈতিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক অবক্ষয় চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে মাদক গ্রহণ বা মাদকাসক্তি, ধর্ষণ, খুন আর সহিংসতার মাত্রা আশংকাজনক ভাবে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পাঁচ তাঁরা হোটেল থেকে গাছ তলা পর্যন্ত পার্টি হয়, সুরা আর সাকীর অবাধ পদ চারণা, নেশা বা মাদক গ্রহণ সব কিছু চলে আড়ালে আবডালে। অতি সম্প্রতি বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের কি বীভৎস দুর্ঘটনাই না ঘটে গেল। অথচ ঐ হোটেলে মদ বেচার কোন লাইসেন্সও নাকি নেই। অথচ অবাধে মদ বেচা হচ্ছে, মাদক ইয়াবা এসে গেছে সবার হাতের নাগালে। দুঃখজনক হলেও সত্য এই নারকীয়, বীভৎস, দুঃখজনক ধর্ষণের আবার ভিডিও চিত্রও ধারণ করে রাখা হয় যাতে পরবর্তীতে তাঁদেরকে রিইউজ করা যায়, ব্লাক্মেইল করা যায়, পুলিশের কাছে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয়া যায়। আর এসবের অনেক কিছুই চলছে পুলিশে নাকের ডগায়।

এখনো সময় আছে অবাধ তথ্য আগ্রাসনের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা না নিলে তা হবে দেশ ও সমাজের জন্যে , ভবিষ্যৎ বংশধদের জন্যে বিরাট হুমকি স্বরূপ। বিজ্ঞানের এই অগ্রযাত্রার যুগে, ডিজিটালের এই যুগে এই নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়তবা অনেকের কাছে পাগলের প্রলাপ মনে হতে পারে, সেকেল গোড়ামী বা মৌলবাদীতা হতে পারে । কিন্তু আমরা যখন কচি শিশু বা কিশোর যুবাদের সাথে নিয়ে স্যাটেলাইটের ক্ল্যাণে টিভির সামনে বসি তখন অনেক অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠতে হয়। কেননা গান এখন শোনার বিষয়ের বদলে হয়ে উঠেছে এক একটা কল্প কাহিনী এবং দেখার বিষয় যাকে ভিডিও মিউজিক বলা হয়ে থাকে। আগের দিনের একটা সিনেমার খরচের চেয়ে বেশী খরচ পড়ে এক একটা গানের দৃশ্যে। এখানে প্রেম বিরহ যৌন সুড়সুড়ি কিছুই বাদ যায় না।

অতএব ধর্মীয় অনুশাসন, নৈতিক এবং মানবিক মূল্যবোধের নিরিখে আমাদের স্বাতন্ত্র্য দেশজ সংস্কৃতি, কৃষ্টি , সভ্যতার আলোকে গ্রহণ বা বর্জন করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। দেশের যুব সমাজকে পরিচালনা করার দায়িত্ব তো আমাদের সকল স্তরের মানুষের উপর বর্তায়। তাদের সংশোধনের এবং সঠিক পথে আনার দায়িত্ব তো আমাদেরই। আশা করি সমাজের সকলের এ ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করার অবকাশ আছে।

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ