
রবার্ট ব্রুস যখন গুহার দেওয়ালে মাকড়সাটিকে দেখে মনে মনে নিজেকে ভাঙছিলেন তখন কোথাও লেখা হচ্ছিল রূপকথার ব্লু-প্রিন্ট, কোথাও একটু একটু করে তৈরী হচ্ছিল কালজয়ী কাহিনীর সুনিপুণ চিত্রনাট্য-মাকড়সার লড়াই নয় ব্রুসেরর সাফল্য এই গল্পটাকে শেষ করেছিল- কিন্তু যদি সফল না হতেন ব্রুস?
মাকড়সা-কে কি আর মনে রাখত কেউ? সময়েরে গভীরের কোথায় হারিয়ে যেত সেই ছোট্ট লড়াইটা, কোথায় যেন ফিকে হয়ে যেত একটা স্বপ্নের বারে বারে ভেঙে যাবার গল্প।
বাঁ পায়ে ম্যানুয়াল নয়ারের পাশ দিয়ে যখন বলটাকে গোলের দিকে ঠেলে দিলে তখন কোথাও যেন ডেকে উঠল মেঘ, বৃষ্টি নামার আগেই বারপোস্টের কয়েক ইঞ্চি বাইরে দিয়ে বেরিয়ে গেল শটটা, চিলির বিরুদ্ধে অব্যর্থ লবটা ক্রসপোস্টে লেগে গোলের সামনে গোঁত্তা খেয়ে ক্লিয়ার হয়ে গেল, আজ বাঁ পায়ের প্রথম শটটা বারপোস্টের লেগে ছিটকে আসতে কোথাও যেন বাঁধ ভাঙল ধৈর্যের, সব মেঘে হয়ত বৃষ্টির মাদকতা লিখে দেন না বিধাতা, তাই দ্বিতীয় শটটাও আগুয়েরোর পায়ে না গিয়ে সামান্য এগিয়ে গেল- সব মেঘে বৃষ্টি হয় না ঈশ্বর, সব মেঘে…
যারা তোমায় ঈশ্বর ভাবে আমি তাঁদের দলে নই, যারা প্রতি ম্যাচ হেরে গেলেই তোমার যোগ্য সঙ্গতের অভাব বলে বাকি খেলোয়াড়দের অপমান করে আমি তাঁদের দলে নই, যারা প্রতিদিন তোমার পরাজয় দেখে হাসবে বলে ফুটবলটা দেখে আমি তাদেরও দলে নই- আমি তো শুধু সেই সকালের আকাশের সাদা মেঘটার মতো তোমাকে দেখেছিলাম ১৩ বছর আগে, একটু একটু করে সে মেঘ ভেসে যেতে থাকল, প্রতিটা গর্জনে সে রঙ বদলালো, যন্ত্রণার কালো ঘনীভূত হলো তাঁর বুকের মাঝে, প্রতি গর্জনে সে ঝরে যেতে চাইল- কিন্তু ঐ একটা বারপোস্ট-একটা দু-ইঞ্চি গ্যাপ-একটা পেনাল্টি মিস-একটা আলিসনের দুরন্ত সেভ তাকে ঝরতে দিল না, তাকে বইয়ে দিল পরের স্টেশনের দিকে, পড়ন্ত বেলায় এসে একবুক কান্না নিয়ে কালোমেঘ দাঁড়িয়ে রইল মাথার ওপর, যে নীচে তাকালে দেখতে পায় ছোটোবেলার সবুজ রোজারিওর মাঠটা, সে দুপাশে তাকালে দেখতে পায় ছোটো ছোটো মেঘদের যারা ঝরে যাচ্ছে সবুজ পৃথিবীর বুকে- সে বারে বারে চেষ্টা করে নিজের বুকথেকে ভারী পাথরটাকে সরিয়ে কুলকুল করে বয়ে যাওয়া নদীটাকে ঢেলে দিতে ফুটবলদুনিয়ার ওপর -কিন্তু !
১৩ বছরের ও বেশি সময় ফুটবল দেখছি, ঈশ্বর চাইলে আগামী আরও অনেকদিন দেখে যেতে চাই পৃথিবীর সব চাইতে সুন্দর এই খেলাটাকে- শুধু চাই না এ বিশ্বে আর কোন খেলোয়াড়ের ওপর কেউ ‘ঈশ্বর’, ‘সম্রাট’, ‘গ্রেটেস্ট অফ অল টাইম’- এর মতো ভারী পাথর বেঁধে দিক, আমি চাই না কোন শিল্পীর দুহাতে কেউ তুলে দিক পুরস্কারের বোঝা যাতে সে তুলিটা ধরতে গেলে ভয় পায়, আমি চাই না ব্রাজিলের মারাকানা বা বেলো হরিজন্তে তে অনেক উচ্ছ্বাসের পাশে কেউ চিরকাল এভাবে দাঁড়িয়ে থাকুক, সর্বোপরি আমি চাই না এ বিশ্বে কোনওদিন কোনও শিল্পী তোমার মতো ভাগ্য নিয়ে জন্মাক…
আজ যেখানে আমাদের মনের ভেতর প্রতিদিন বেড়ে চলেছে অহং বোধ, আজ যেখানে নিজেকে ছাপিয়ে উঠছে নিজের স্ট্যাচু, আজ নিজের দোষ ঢেকে যেখানে তর্জনী উঠছে অন্যের দিকে সেখানে এটাই হয়তো লিওনেল মেসিকে নিয়ে কিছু বলার জঘন্যতম সময়, এটাই হয়তো শ্রেষ্ঠ সময় লিওনেল মেসিকে নিয়ে কিছু বলার…
হয়তো একদিন টিভির পর্দার সামনেই করুন সুরে কেউ গাইবে –
” তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাই বা আমায় ডাকলে… ”
আর তো কয়েকটা দিন…
৬টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
পৃথিবীর নিয়ম এটাই।।
শাহরিন
প্রখ্যাত বিখ্যাত মানুষদের সমালোচনা হবেই, একজন তাদের উপর আংগুল তুলবে আর হাজার জন তাদের পাশে দাড়িয়ে তাদের উৎসাহ দিবেন। এর জন্য জ্ঞানী লোকেরা সমালোচনা পছন্দ করে সমালোচকদের সম্মান করে।
জিসান শা ইকরাম
ফুটবল খেলাটা আগের মত আর দেখিনা,
আগ্রহ কমে গিয়েছে।
শামীম চৌধুরী
গঠনমূলক সমালোচনায় সৃজনশীলতা বাড়ে।
নিতাই বাবু
একসময়ের জনপ্রিয় ফুটবল খেলা এই বঙ্গদেশ থেকে যেন হারিয়ে যাচ্ছে।
লেখকের জন্য শুভকামনা রইল।
মোঃ মজিবর রহমান
চাক্রীর ঝামেলায় আর মনের ইচ্ছায় আর খেলা দেখা হয়ে উঠেনা। লিখা টা ভাল লাগ্ল।