আজ ২৩ শে জুলাই, শামসুন নাহার হল ছাত্রী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনের ১২তম বার্ষিকী।
কি ঘটেছিল এই দিনে, আসুন এক নজরে দেখে আসি।
২০০২ সালের ২৩ শে জুলাই দিবাগত রাত ১২ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের গেইট ভেঙ্গে সাধারণ ছাত্রীদের উপর নজিরিবিহীন বর্বরোচিত হামলা চালায় তৎকালীন সরকারের পুলিশ।
শামসুন নাহার হলের তৎকালীন প্রভোস্ট অধ্যাপক সুলতানা শফির দায়িত্বের মেয়াদ তখনো শেষ হয়নি কিন্তু পূর্ববর্তী সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বলে তাকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেয়া হয়। অন্যদিকে হলের ছাত্রদলের সভানেত্রী লুসিসহ অন্যান্য বহিরাগতদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ওঠে সাধারণ ছাত্রীরা। এসব কারণে ফুসে ওঠা সাধারণ ছাত্রীদের ন্যায্য আন্দোলনে অপ্রত্যাশিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুরুষ ও মহিলা পুলিশ ঢুকে ছাত্রীদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালায় ও ১৮ জন ছাত্রীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। হামলাকারী পুরুষ পুলিশ দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ছাকার (দক্ষিণ) তখনকার এডিসি আব্দুর রহীম। সে রাতে পুলিশের অশ্লীলতা, নিষ্ঠুরতা আর অবিবেচনার শিকার হয় শত শত সাধারণ ছাত্রী। রুমে ঢুকে বা করিডোরে, যাকে যেখানে পেয়েছে, নির্বিচারে পিটিয়েছে পুলিশ। অথচ যে মেয়াদোত্তীর্ণদের ছাত্রদল নেত্রীদের নিয়ে আন্দোলন তারা ছিল বহাল তবিয়তে।
পরদিন ২৪ জুলাই কয়েক হাজার প্রতিবাদকারী ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, রাবার বুলেট চালনা ও লাঠি চার্জ করে পুলিশ। তখনকার উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী দশ হাজার সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে “বহিরাগতদের আন্দোলন”, “বিচ্ছিন্ন ঘটনা” ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।
এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ২৫ জুলাই ধর্মঘট পালিত হয়। ঐদিনও পুলিশ পোস্টার লাগানোর অপরাধে ৪ ছাত্রকে গ্রেফতার করে।
২৬ শে জুলাই অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে “নির্যাতনবিরোধী ছাত্রবৃন্দ” ব্যানারে প্রায় ১০/১২ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, অভ্যুত্থানের রূপ নেয় ক্যাম্পাস।
২৭ জুলাই উপাচার্য একক ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে পরদিন সকাল ৮ টার মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেন। পুলিশের দখলে চলে যায় ক্যাম্পাস। কিন্তু তবুও শিক্ষার্থীরা তাদের স্বঘোষিত ‘মুক্তাঞ্চল’ (রোকেয়া হলের সামনের রাস্তা) এবং শহীদ মিনারে অবস্থান করে আন্দোলন চালাতে থাকে ও আমরণ অনশন শুরু করে।
২৯ জুলাই আবার সাংবাদিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর চলে পুলশি হামলা, আহত হয় অর্ধ শতাধিক। ফলে পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার উপক্রম হয়। ঘটনার দীর্ঘ ৮ দিন পর ০১ আগস্ট উপাচার্যকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করা হয়। সেই সাথে তৎকালীন প্রক্টর ড. নজরুল ইসলামও বিদায় নেন।
এরপর থেকে প্রতিবছর এই দিনটি শিক্ষার্থীরা গুরুত্বের সাথে পালন করে আসছে। ইতিহাসের এমন কালো দিনের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে এই কামনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী।
১৪টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
হ্যাঁ ,অবশ্যই কালো দিন । এত বছর পেরিয়েও আমরা প্রায় কিছুই পেরিয়ে যেতে পারিনি ।
এ দায় কার তাও আমরা জানি না ।
ফাহিমা কানিজ লাভা
এমন কালো দিনের পুনরাবৃত্তি না হোক, এই কামনা করি আমরা।
খসড়া
মনে করিয়ে দলেন ১২ বছর আগের সেই ইতিহাস।
ফাহিমা কানিজ লাভা
দিনটা কালো আবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক অনন্য উদাহরণও বটে। মনে রাখতে চাই এমন ইতিহাস।
মা মাটি দেশ
-{@ (y) গুড পোষ্ট।
ফাহিমা কানিজ লাভা
ধন্যবাদ।
শুন্য শুন্যালয়
ইতিহাসই বলে দেয় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যেনো না ঘটে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।
ফাহিমা কানিজ লাভা
একমত।
জিসান শা ইকরাম
আপনার পোষ্ট পড়ে চলে গিয়েছিলাম ঘটনাবহুল সেই দিন গুলোতে ।
আমরা আসলে ইতিহাস ভুলে যাই।
এমন ঘটনা যেন আর না আসে —
ফাহিমা কানিজ লাভা
আমরা সবাই এই কামনাই করি, এমন ঘটনা যেন আর না আসে
মিসু
এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর চাই না।
ফাহিমা কানিজ লাভা
হুম।
ব্লগার সজীব
মনে করিয়ে দিলেন (y)
ফাহিমা কানিজ লাভা
ধন্যবাদ…