ভূমিকা : উপল বড়ুয়া কবি ও গল্পকার। জন্ম ও বেড়ে উঠা কক্সবাজারের রামুতে। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ তিনটি। কানা রাজার সুড়ঙ্গ (২০১৫), উইডের তালে তালে কয়েকজন সন্ধ্যা (২০১৮)তুমুল সাইকেডেলিক দুপুরে (২০১৯)।  ২০২০ এর বইমেলায় উড়কি থেকে এসেছে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ডিনারের জন্য কয়েকটি কাটা আঙুল।’ এ উপলক্ষে তার সঙ্গে কথা বলেছেন নাজমুস সাকিব রহমান।

—উপলদা, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের একটা বইয়ের নাম ‘বেঁচে আছি গল্পটা বলবো বলে’। তোমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কেমন? কোন গল্পটা বলার জন্য তুমি বেঁচে আছ?

আলোচনার শুরুতেই মার্কেজের নামটা শুনে এক ধরনের ভাল লাগা কাজ করছে। মার্কেজ গল্প করতে ভালবাসতেন। আমি মনে করি, মানুষ বাঁচে গল্পের ভেতর দিয়ে। গল্প না থাকলে মানুষের জীবন ক্লান্ত ও একঘেঁয়ে হয়ে পড়ত। আমার ক্ষেত্রে মানুষের প্রচুর গল্প শোনা হয়। মানুষ সে-বিষয় নিয়ে গল্প করে, যেটা তার জীবনে স্মরণীয়। এই করতে গিয়ে অনেক কিছু ছাঁকতে হয়। তবে আমার ভাল লাগে জীবনের অনুল্লেখযোগ্য ও বিস্মরণীয় গল্প, যেটা মানুষ কখনো কাউকে বলতে চায় না।

—তোমার বইয়ের নাম ‘ডিনারের জন্য কয়েকটি কাটা আঙুল।’ এটা কেন? ডিনারের জন্য কয়েকটি ডেডবডিও তো হতে পারতো

(হাসি)। ডেডবডি হতে পারতো। কিন্তু আস্ত এক ডেডবডি মুখের সামনে নিতে কেমন অস্বস্তি হয়। খাওয়ার সময় কোত্থেকে এক পচা গন্ধ এসে নাকে লাগবে। তারচেয়ে আঙুলই ভাল। যত্ন করে ঠোঁট-মুখ মুছে নিতে পারবে টিস্যুতে।

—তোমার তিনটা কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এবার এল প্রথম গল্পের বই। কবিতা আর গল্পের মধ্যে গার্লফ্রেন্ড আর বউয়ের মত পার্থক্য নেই তো?

তিনটা নয়, আমার কবিতার বই আসলে আড়াইখানা। তিনটা বই মিলেও একশ কবিতা নেই। কবিতা-গল্প আমি কখনো সচেতনভাবে বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে লিখিনি। কয়েকটা কবিতা অবশ্য দীর্ঘদিন সময় নিয়ে, ভালবেসে লিখেছি। ব্যাপারটা হচ্ছে এমন, কেউ লেখা চাইছে-আর না দিয়েও উপায় নেই, তখন ল্যাপটপের সামনে বসে লিখতে থাকি। ওই সময় যা লিখি তাই আমার প্রিয়। আর আমি তো অবিবাহিত মানুষ। নারীর প্রতিও তেমন আকর্ষণ নেই। তাই গল্প-কবিতা বউ না প্রেমিকা তা বলতে পারছি না।

—নিজের বইয়ের সমালোচনা কর।

বই প্রকাশের পর আমার মনে এক ধরনের অবসাদ নেমে আসে। বিক্রি-বাট্টা নিয়েও আমি মাথা ঘামাতে অনিচ্ছুক। নিজের বই নিয়ে সমালোচনা বলতে এটুকু বলা যায়, লিখতে-লিখতে হাতে ও মগজে ক্লান্তি আসায় গল্পগুলো আমি তাড়াতাড়ি শেষ করেছি। আরেকটা সত্য হচ্ছে, মানুষ আমার গল্প তেমন পড়ে না।

—উপলদা, ধরো তুমি একটা ক্লাসে ঢুকেছ। চল্লিশজন মানুষ বসে আছে সেখানে। তারা একটা ইন্টারেস্টিং গল্প শুনতে চায়। তুমি কোন গল্পটা বলবে?

বহুদিন আগে লঞ্চডুবিতে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাদের মধ্যে চল্লিশজন নিখোঁজ রয়ে যায়। তোমরাই সেই চল্লিশজন মানুষ যারা আমার সামনে বসে আছো। আর আমি ছিলাম সেই লঞ্চের এক দুর্ভাগা শ্রমিক, যাকে তোমরা কখনো নিখোঁজের তালিকাতেও রাখোনি।

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ