ডিজিটাল ডিজটাল মুখে বলে জাহির করা হলেও ডিজিটাল সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী শওকত হোসেন হিরন। তিনি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। সদ্য বিদায়ী মেয়র। যিনি এক সময়ে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন। জাপার শাসনামলে উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে হিরন বরিশাল আওয়ামী লীগের অভিভাবক খ্যাত সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র হাত ধরে আ’লীগে যোগদান করেন। দায়িত্ব পান দলের মহানগর শাখার আহবায়কের। আ’লীগের সমর্থনেই গত বারের বিসিসি নির্বাচনে জয়ী হতে সক্ষম হন। অবশ্য কেউ কেউ বিগত নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরনের ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সঙ্গে তুলনা করছেন। কারন ২০০৮ সালের ৪ আগষ্টের বিসিসি নির্বাচনে বিএনপির হাইকমান্ড অংশ গ্রহন করে নি। এজন্য বরিশালে দলের সমর্থন পেয়ে এককভাবে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। তৎকালীন সময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক,বরিশাল মহানগর শাখার সভাপতি এমপি অ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার কারাগারে ছিলেন। দলের চরম ক্রান্তিকাল চলছিল। নেতৃত্ববিহীন ছিল বরিশাল বিএনপি। হ য ব র ল পরিস্থিতি বিরাজমান। দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার হেভিওয়েট কোন প্রার্থীও ছিল না। বর্তমান মেয়র প্রার্থী আহসান হাবীব কামাল বহিস্কারের খড়গ নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছিলেন। বরিশাল জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদকও বহিস্কারের খড়গ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। এছাড়া শওকত হোসেন হিরনের সঙ্গে স্বল্প ব্যবধানে হেরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু দেশে আলোচনার ঝড় তুলেন। রাজননৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির বেশিরভাগ ভোটই পেয়েছেন সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু। আর আহসান হাবীব কামাল এবং এবায়েদুল হক চাঁনও বিএনপির ভোট পেয়েছেন। এই তিন জনই মুলত বিএনপির ভোট পেয়েছেন। ভোটের হিসাবে তিন জনের ভোট যোগ করলে বিএনপির ভোটের সংখ্যা দাড়ায় হিরনের দ্বিগুন। এবারের নির্বাচনে বিএনপির হাইকমান্ড সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালকে সমর্থন দিয়েছেন। হাইকমান্ডের নির্দেশ দলের সকল বিভেদ বিভাজন ভুলে গিয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে বিজয়ী করতে হবে। বরিশাল বিএনপির কর্ণধর খ্যাত এমপি মজিবর রহমান সরোয়ারও আনুষ্ঠানিভাবে একই প্লাটফর্মে আভিভূত হয়ে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নেত কর্মীদের আহব্বান জানান। আহসান হাবীব কামালকে বলা হয় দলের কর্মী বিচ্ছিন্ন নেতা। কর্মীদের মাঝে বিভাজনের রূপ রেখা পুরোপুরি মেটাতে সক্ষম হননি কামাল। এটা তার এখনও ব্যর্থতা। দলীয় একটি সূত্রের ভাষ্য, আহসান হাবীব কামালের নির্বাচনী ছকের মুখ্য ভুমিকায় থাকছেন তার ছেলে। সেটা নেপথ্যে হোক আর প্রকাশ্যে হোক। বাবা এনালগ হলেও ছেলে কিছুটা ডিজিটাল। কর্মীদের সঙ্গে আহসান হাবীব কামালের ছেলেরও দুরত্ব রয়েছে। ছেলে রাজধানীতে ব্যবসা করেন। তবে বিএনপির হাইকমান্ডের অনেক বিষয়ই তার নখদর্পনে রয়েছে। বয়সে অনেক সিনিয়র হলেও স্টাডির সূত্র ধরেই এক সময়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জৈষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে তার সর্ম্পক ঘটে। সিনিয়র তারেক রহমানের আর্শিবাদও জুটেছিল তার।
যাইহোক তথ্যানুসন্ধানী সূত্র বলছে,আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনের দ্বিতীয় টার্মের নির্বাচনী বৈতারনী পাড় হওয়া সহসাই সম্ভব নয়। ভোট ব্যাংকের হিসেব নিকেশের জটিল সমীকরনের হোঁচটের মুখে হিরন। সিটির শাসনামলে নানাবিধ অন্যায় অনিয়মের ফিরিস্তি রচনা করে অরুন বরুন তরুনরা। প্রশ্ন উঠে হলফনামায় তার সম্পদের বিবরন নিয়ে। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার অনিয়ম নিয়ে কথা উঠে। বলা হচ্ছে, লুটপাটতন্ত্রে অপরিকল্পিত নগর উন্নয়ন করেছেন হিরন। বিনোদন প্রেমী হিরন  কৌশলে একদা প্রশংসা  কুড়াতে সক্ষম হলেও অনেকটা ভেস্তে যায় নিজের দ্বাম্ভিকতা আর অরুন বরুন তরুনদের যতসব অপকর্মে। অরুন বরুন তরুনদের কালো অধ্যায়ের চিত্র তুলে ধরায় হিরনের শাসনামলে ঘটেছে সাংবাদিক নির্যাতনেরও ঘটনা। ত্রিরতœরা অবৈধ পন্থায় বিপুল পরিমান বিত্ত বৈভবের মালিক বনে যান। আখের গোছাতে গিয়ে নগরীতে জন্ম দেয় যতসব ঘটন অঘটন। অরুন বরুন তরুনদের কর্মকান্ডে সমলোচনার ঝড় তুলে সারা দেশ। এমনকি দেশের বাইরে প্রবাসীদের মাঝেও দাগ কাটে  বিতর্কিত কর্মকান্ডে। তবুও শওকত হোসেন হিরন হাইকমান্ডের সঙ্গে জোড়ালো একটা সম্পর্ক গড়তে সক্ষম হয়। হিরনকেই যোগ্য প্রার্থী বিবেচনায় মনোনয়ন দেয়া হয়। আ’লীগের অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহও আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কর্মীদের কাজ করতে বলেছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন হিরন। আরেকবার মেয়র পদে আসীন করে নগরবাসীর জলাবদ্ধতাসহ সকল সমস্যার সমাধানে যথাযথ ভুমিকায় রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সূত্রের ভাষ্য,অঢেল অর্থও ঠালছেন নির্বাচনী মাঠে। হিরনের নির্বাচনী অর্থের ঢেউ মিডিয়ায়ও বইছে। নির্বাচনী মাঠে একটা কথা প্রচলন হয়েছে লোকাল প্রিন্ট  মিডিয়ার অধিকাংশই হিরনের দখলে। বেশ কাভারেজ পাচ্ছেন শওকত হোসেন হিরন। জাতীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্্র মিডিয়াও নিজের অনুকুলে রাখতে তৎপর।
হাস্যরসের বিষয় হলো সদ্য বিদায়ী মেয়র ও মহানগর আ’লীগের শীর্ষ নেতা শওকত হোসেন হিরন অনলাইন মিডিয়া চিনেন না। এটা আবার কি ! অতিসম্প্রতি অনলাইন দৈনিক বাংলানিউজ’র রাজধানী থেকে বরিশালে আসা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ স্বাক্ষাৎকার নিতে যান শওকত হোসেন হিরনের। পরিচয় দিলেন আমি বাংলানিউজ’র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আপনার একটা স্বাক্ষাৎকার নিব। মেয়র প্রার্থী হিরন অনলাইন মিডিয়া সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন  তখন। বলেন, “বাংলানিউজ” এসব মানুষ পড়ে নাকি!  কিংকর্তব্যবিমূঢ় সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম সেরাজ। একজন সাবেক মেয়র যিনি পাত্তাই দিলেন না নিউ জার্নালিজম অনলাইন মিডিয়াকে। সেখানে উপস্থিত কয়েক সংবাদ কর্মীও হিরনের এহেন আচরনকে কেউ দ্বাম্ভিকতা আবার কেউ ডিজিটাল সম্পর্কে অজ্ঞ বলে মন্তব্য করেছেন। “বাংলানিউজ” সম্পর্কে ন্যাক্কারজনক আচরন প্রর্দশনের বিষয়টি সংবাদকর্মীদের মাঝেই আলোচনায় রূপ নিচ্ছে।
সবমিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ভিশন বাস্তবায়নের রোড ম্যাপে এগুচ্ছেন। ডিজিটালের ছোয়া লেগেছে ইউনিয়ন পর্যায়েও। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অনলাইন ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে আ’লীগের মহানগীর শীর্ষ নেতা মেয়র প্রার্থী শওকত হোসেন হিরন যেন ইন্টারনেট জগত থেকে বিচ্ছিন্ন এক মানুষ। মন্তব্য সচেতন সংবাদকর্মীদের।

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ