
ছোটবেলায় ডাকঘর এবং ডাকবাক্স আমার কাছে অদ্ভুত বিস্ময়কর এক বস্তু ছিলো। একজন মানুষ ছোট্ট টিনের বাক্সে টুক করে একটা কাগজ ফেলে দিলে সেটা কি করে আরেকজনের কাছে চলে যায় সেটি নিয়ে আমার ভাবনার অন্ত ছিলোনা।
চিঠি কি তা যখন একটু একটু করে বুঝতে শিখেছি তখন জীবনের প্রথম চিরকুট আকারে চিঠি লিখেছিলাম আব্বার কাছে। ছোট্ট চিঠিগুলি ছিলো এমন- “আব্বু আমার জন্য অবশ্যই একটা ম্যাকগাইভার চাকু আনবা।” কিংবা, “আব্বু, বাজারে গেলে একটা ওয়াটারপ্রুফ হাতঘড়ি আনবা কিন্তু”- এমন ধরনের লেখা।
এসবই ছিলো স্কুলে ভর্তির প্রথম দিকের সময়। ডাকবাক্স থেকে হারিয়ে যাবে সেই ভয়ে চিঠিগুলিকে আমি আব্বার কোর্ট অথবা শার্টের পকেটেই রেখে দিতাম।
“টাকা চাহিয়া পিতার নিকট পত্র লিখ” যখন মুখস্ত করলাম আমিতো লজ্জায় শেষ। বাবাকে টাকার জন্য চিঠি লিখতে হবে কেন! মনেপড়ে, বাসায় আব্বাকে বলেছি – আব্বু, টিফিনের টাকা দাও তবে চিঠি লিখতে পারবোনা।
এরপরে একদিন সত্যি সত্যি খামে ভরে চিঠি পোষ্ট করেছিলাম যার কাছে তিনি আমার নানা। সেটি ছিলো আমার জীবনে ডাকঘরের ডাকবাক্সে পোস্টকৃত প্রথম চিঠি। চিঠিটি ঠিক তিনদিনের মাথায় নানার কাছে পৌঁছায় কি না তা দেখার জন্য চিঠি পোষ্ট করে আমি নানুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য এটা দেখা- ডাকবাক্সে ফেলে আসা চিঠি কি করে একজায়গা থেকে অন্যজায়গায় যাতায়াত করে!
চিঠি লেখার দিনগুলিকে খুব মিস করি। এখন ইমেইলেই কথা আদানপ্রদান হয়। মরচেপড়া ডাকবাক্সগুলি দেখলে পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়। অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা প্রতিটি ডাকবাক্সেরও রয়েছে হাজারো খামে প্রেরিত আবেগের শতসহস্র স্মৃতি।
১৫টি মন্তব্য
তৌহিদুল ইসলাম
সোনেলায় আপনাদের প্রচন্ড মিস করি। কেমন আছেন সবাই?
নাজমুল আহসান
ভালো আছি, ভালো থাকবেন।
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখবেন। 📨
তৌহিদুল ইসলাম
আপনিও ভালো থাকবেন ভাই।
খাদিজাতুল কুবরা
ছোটবেলায় রানার ছুটেছে কবিতা পড়ে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তাম।
সত্যি সেসব এখন স্মৃতি।
খুব সুন্দর পোস্ট।
আপনাকে অনেক পর সোনেলায় পেয়ে ভালো লাগছে।
এতোদিন ফাঁকা ছিল যেন।
তৌহিদুল ইসলাম
আমি সবসময়ই সোনেলার সাথেই আছি আপু। ভালো থাকুন সবসময়।
মনির হোসেন মমি
চিঠি লেখাতো মিস করছিই।।আগেতো যোগাযোগের মাধ্যম এটাই প্রধান ছিলো।প্রতিদিন পোস্টার চিঠি নিয়ে জনে জনে যেতেন।
চমৎকার উপস্থাপনা।
তৌহিদুল ইসলাম
ধন্যবাদ ভাই, চিঠি এখন আর আমাদের কারোরই লেখা হয়না বোধহয়।
মোঃ মজিবর রহমান
চিঠী দিও প্রতিদিন আর কেউ বলেনা, বলেনা লিখা খারাপ সব হয়ে যায় ওটোকারবারে কাগজে।
তৌহিদুল ইসলাম
চিঠি এখন সোনালি অতীত। ভালো থাকবেন ভাই।
আলমগীর সরকার লিটন
সত্যই ডাকঘর ভুলতে বসেছি স্মৃতি হাসায় কাদায়
এখন দীর্ঘশ্বাস জলের পাড়া————
তৌহিদুল ইসলাম
ঠিক তাই ভাই, ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চিঠি লেখা খুব খুব মিস করি। বান্ধবী যখন বিদেশ থেকে চিঠি দিতো সে যে কি আনন্দ! তবে চিঠির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিলো ডাকটিকেট । ধন্যবাদ ভাইয়া স্মৃতিগুলো জাগিয়ে দেয়ার জন্য। অফুরন্ত শুভকামনা রইলো
তৌহিদুল ইসলাম
ডাকটিকেট জমানো আমার প্রিয় হবি ছিলো। এখন ছেলেবেলার সেই সোনালি সময় আর নেই। ধন্যবাদ আপু।
হালিম নজরুল
ছেলেবেলায় আমাদের ডাকঘরে বসে আড্ডা দিলাম। এখন মরচপড়া বাক্স দেখলে কষ্ট হয়।
তৌহিদুল ইসলাম
এখনো রাস্তার মোড়ে এসব বাক্স দেখি। মনেপড়ে পুরোনো স্মৃতি। ভালো থাকুন ভাই।