
#ডাউন মেমোরি লেন – ১
বহুদিন দরজার বাইরে পা রাখিনি। ব্যালকনি দিয়ে ফালি করা আকাশ দেখি। হাত বাড়িয়ে আলো ছুঁই… বাতাস মাখি। টবের গাছগুলোতে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিই জীবনের। ছোটবেলার কথা হানাদারের মত আছড়ে পড়ে স্মৃতিতে তাদের অলঙ্ঘ্য দাবি নিয়ে। আমার ফুল কুড়োনো সকাল, পুকুর ঝাঁপানো দুপুর, মন্টুবাবুর আমবাগানে আমমাখা জড়ানো বিকেল। গৌতম মাস্টারমশাই এর টিউশন পড়ানো, দুপুরে লুকিয়ে সার্কাসের তাবু দেখতে যাওয়া, সারা পায়ে বেতের দাগ… এখনো কী জ্বলজ্বলে…
আমার একটা ক্যাম্প খাট ছিলো। একফালির একটা ঘর, একটা টেবিল.. তাতে মায়ের নকশা বোনা টেবিল ক্লথ…এখনো তার ডিজাইনটা স্পষ্ট মনে আছে। আরো ছোটবেলায়… ঠাকুমা আর পিসির সাথে বড়ো ঘরে শোওয়া। ঘুমনোর আগে বালিশে তিনবার ‘ আস্তিকমুনি, আস্তিকমুনি, আস্তিকমুনি ‘ বলে টোকা দেওয়া… জানিনা আমার একশোর কোঠায় পৌঁছনো ঠাকুমার এখনো সে অভ্যাস আছে কিনা… তোমার মত লাউয়ের পায়েস, বড়ি কেউ বানাতে পারেনা। ধামায় করে কলাই ডাল ধোওয়ার জন্য পুকুরে যাওয়া আর হবে না, তাইনা?
বসন্তকালের শেষের দিকে গ্রামীণ ভাঁটি পুজো। এখন আর কেউ করে না।আমরা জনা কয়েক আট দশ বছরের মেয়ে আগের দিন থেকে পুজোর উপকরণ গোছাতাম, মাদার ফুল, ইঁদুরের মাটি, ছেঁড়া চুল, শেয়াল কাঁটা আরও অনেক কিছু। আর প্রধান উপকরণ ভাঁট ফুল। একটা অশ্বত্থ গাছের ছড়ানো শেকড়ের এক একটা ফোকর আমাদের সকলের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতাম। আগেরদিন গোবর দিয়ে নিকিয়ে রাখতাম। পরদিন ভোরবেলা উঠে পুজো খুকুপিসির বাড়ি।
খুকুপিসি আমার প্রথম দিদিমনি।এমন স্থিতধী শান্ত সৌম্য মানুষ খুব বেশি দেখিনি। একটু বড়ো হয়ে অবাক হতাম। একজন ছিমছাম রোগা গড়নের মিষ্টি মুখশ্রীর মানুষ জীবনের প্রতি এমন নির্মোহ কেন! ছাত্র পড়ানো আর বিধবা মা আর এক দাদা আরো ছোট দু বোন নিয়েই তার আবর্তন। অনেক বয়স পর্যন্ত খুকু পিসি বিয়ে করেনি। বয়ঃসন্ধির অদম্য কৌতুহলে জেনেছিলাম তার জীবনের প্রতারণার অভিশাপ। কাঁচা বয়সের সেই অভিজ্ঞতা তাকে বহুদিন ঘিরে রেখেছিল… কেমন আছো খুকুপিসি? দেখো তোমার ‘ অ আ ‘ শেখানো ছাত্রী এখন কলম ধরতে পারে।
উড়ো ঝুরো ভাবনাগুলো কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যায়… ছাড়াতে পারি না… যাইহোক, ভাঁটপুজো সাঙ্গ হলে সামান্য বাতাসা নকুলদানার প্রসাদ বিলি করে মন্টুবাবুর পুকুরে সেই কুলো ভাসিয়ে স্নান করে ভিজে গায়ে দুলাল জেঠুর দোকান থেকে লাল মোড়কের জেলি লজেন্স আর চৌকো আকৃতির এলাচ মেশানো টী টাইম বিস্কুট বিস্কুটের মহোৎসব করে ঘরে ফেরা…
‘ ঘরে ফেরা ‘ বড়ো মনকেমন করা শব্দ… বড়ো মায়াময়… আজীবন এই ঘরে ফেরার আশায় থাকি আমরা… কিন্তু কোন ঘর? আসলেই কি ঘর বলে কিছু হয়…
( ক্রমশ….)
৪৩টি মন্তব্য
ইঞ্জা
প্রথমেই স্বাগতম জানাই আপনাকে, পরে আসছি।
ততক্ষণে সোনেলাকে ঘুরে ফিরে দেখুন।
কমলিনী
আপনার আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এখানে লেখা সম্ভব হত না… কৃতজ্ঞতা অপার…
ইঞ্জা
অসুবিধা নেই দিভাই, আমি শুধু কিছুটা সাহায্য করেছি মাত্র।
ফয়জুল মহী
প্রীতিজনক ও স্নিগ্ধোজ্জ্বল লেখনী
কমলিনী
প্রাপ্তি অশেষ… কৃতজ্ঞতা জানবেন…
সুরাইয়া পারভীন
সোনেলার উঠানে সু-স্বাগতম আপনাকে
স্মৃতিকথার দারুণ উপস্থাপন।
শেষের প্যারা খুব করে নাড়া দিল
সত্যিই তো ঘর! কোন ঘর, কার ঘর, কিসের?
এর উত্তর যে নেই জানা
কমলিনী
নতজানু আপনার আত্মিক অনুভবের কাছে .. শুভেচ্ছা নিরন্তর…
তৌহিদ
সোনেলায় স্বাগতম দিদিভাই। প্রথমেই চমৎকার একটি লেখা নিয়ে এলেন দেখে ভালো লাগলো। আশাকরি সোনেলার উঠোনে আপনার বিচরন করতে ভালো লাগবে।
নিয়মিত লিখুন। শুভকামনা সবসময়।
কমলিনী
অনেক ধন্যবাদভা… আপনার মন্তব্য আস্থা বাড়ালো… শুভেচ্ছা অপার…
তৌহিদ
ব্লগ সম্পর্কিত যে কোন সমস্যা সোনেলার ফেসবুক গ্রুপে অবশ্যই জানাবেন দিদিভাই। আমরা পাশেই আছি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সোনেলায় আপনাকে স্বাগতম ও শুভেচ্ছা। একান্ত অনুভূতির মোড়কে খুঁজে পেলাম নিজের জীবনের স্মৃতি বিজড়িত দৃশ্যাবলী। শেষটা খুব স্পর্শকাতর । কোন ঘর , কিসের ঘর কোথায় যাচ্ছি তা কেউ জানিনা। নিরাপদে থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
কমলিনী
আপনার অনুভূতিকে নমন। ভরসার কাঁধটি দেবার জন্য কৃতজ্ঞতা অপার …
মোঃ মজিবর রহমান
সৃতি জাগানিয়া, সৃতি কষ্টের হোক আনন্দ কিবা বিষাদের। একমনকায় পড়ে গেলাম। মুগ্ধ হলাম। সোনেলা হোক আপন ঘর। লিখুন প্রাণখুলে।
কমলিনী
অনেক বড়ো প্রাপ্তি…কৃতজ্ঞতা জানবেন…
মোঃ মজিবর রহমান
লিখুন পড়ুন খুব ভাল লাগবে আশা করি।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সোনেলায় স্বাগতম সুস্বাগতম, দিদি।
প্রথমেই স্মৃতিকথা নিয়ে অসাধারণ লেখা উপহার দিলেন। সত্যি সত্যি খুবি ভালো লাগলো।
স্পর্শকাতর লেখনীর পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
শুভকামনা।।
কমলিনী
অনেক ধন্যবাদ ভাই এমন একটি আঙিনার সন্ধান দেবার জন্য… এভাবেই পাশে থেকো… ভালোবাসা অফুরান…
ইঞ্জা
স্মৃতি গুলো সত্যি নাড়া দিয়ে গেলো, খুব ভালো লাগলো লেখাটি।
কমলিনী
প্রাপ্তি আমার…. সঙ্গে থাকুন ভরসা হ…
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা অবিরত।
জিসান শা ইকরাম
ছোট বেলার সোনালী স্মৃতি তুলে আনলেন লেখার মাঝে সুন্দর উপস্থাপনায়।
চমৎকার শব্দের গাঁথুনিতে লেখাটি মুগ্ধ হয়েই পড়লাম এক টানা।
খুকুপিসিরা প্রতারণার জালে আঁটকে থেকেও অন্যদের জীবনে প্রদীপ হয়ে থাকেন।
লেখার শেষে বর্তমানের আত্মোপলব্ধি মুগ্ধ করার মতো।
স্বাগতম সোনেলার উঠোনে। এ উঠোন আজ হতে আপনারও।
নিয়মিত লিখুন।
শুভ কামনা, শুভ ব্লগিং।
কমলিনী
আপনার অনুভূতি আমাকে এক আকাশ বিস্তৃতি দিল… দিল ভরসার মাটি… কৃতজ্ঞতা অপার …
বন্যা লিপি
স্বাগতম আপনাকে সোনেলার সোনালী উঠোনে।
আজ থেকে আপনিও আমাদের একজন।
স্মৃতিকথারা এমনই, অক্ষরগুলো একেকেটা অন্তর নিংড়ে বেরিয়ে শব্দের শরীর আঁকড়ে ধরে।আপনার লেখনী চমৎকার। লিখুন, আমাদের লেখাও পড়ুন।
সতত শুভেচ্ছা🌹🌹🌹🌹🌺🌺🌺
কমলিনী
মরমী শব্দেরা ছুঁয়ে গেল… জড়িয়ে থাকতে চাই এভাবে…
দালান জাহান
চমৎকার স্মৃতি কথন। শেষাংশ যেন জীবনের স্পর্শ কাতর অনুভূতিগুলো জীবন্ত হয়ে উঠে।
কমলিনী
প্রাপ্তি অপার…. কৃতজ্ঞতা জানবেন…
আলমগীর সরকার লিটন
অনু গল্পের অনবদ্য প্রকাশ হয়েছে আপু
অনেক শুভেচ্ছা রইল—————-
কমলিনী
বড়ো ভরসা পেলা… শুভেচ্ছা নিরন্তর ভা…
আলমগীর সরকার লিটন
জ্বি আপনাকেউ
শামীম চৌধুরী
প্রথমেই আপনাকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
নিয়মিত পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
শুভ কামনা রইলো।
কমলিনী
আপনার মন্তব্য আমাকে ভরসা দিল… কৃতজ্ঞতা জানবেন। আজ পাখি সম্পর্কে আপনার লেখার কথা জানলাম। পড়বার অপেক্ষায় রইলা।
আরজু মুক্তা
স্বাগতম সোনেলায়।
স্মৃতিজাগানিয়া লেখা ভালো লাগলো। বিশেষ করে শেষের স্তবক।
শুভকামনা
কমলিনী
বড়ো প্রাণিত হলাম… সঙ্গে থাকবার প্রত্যাশা রাখলাম।
সুপায়ন বড়ুয়া
স্বাগতম আপনাকে দিদি, সোনেলার সোনালী উঠোনে।
ঘরে ফেরার সুন্দর পা বাড়ানোটা দৃষ্টি কটু মনে হলেও অর্থবোধক। আরও সুন্দর ছবি দিয়ে গৃহ প্রবেশ বা বাইর হওয়া যেত। এটা আমার একান্ত অভিমত।
“ঘরে ফেরা ‘ বড়ো মনকেমন করা শব্দ… বড়ো মায়াময়… আজীবন এই ঘরে ফেরার আশায় থাকি আমরা… কিন্তু কোন ঘর? আসলেই কি ঘর বলে কিছু হয়…”
এই জটিল প্রশ্নের উত্তর মেলা ভার।
ভাল থাকবেন সবসময়। শুভ কামনা।
কমলিনী
প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিকোণ, অনুভূতির ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। তাতেই বৈচিত্র্য থাকে। আপনি অত্যন্ত মন দিয়ে আমার লেখা পড়ে কোট করেছেন, এ আমার বড়ো প্রাপ্তি! কৃতজ্ঞতা জানবেন। শুভেচ্ছা নিরন্তর….
সৌবর্ণ বাঁধন
অসাধারণ বর্ণনা। ঘুরে নিয়ে আসে নিজস্ব অতীত থেকে। মেলানকোলিয়ায় মাখা দিনগুলো ডাকে এখনো।
কমলিনী
কৃতজ্ঞতা অফুরান… ভরসা পেলাম অনেক। শুভেচ্ছা নিরন্তর…
উর্বশী
সুস্বাগতম সোনেলাপরিবারে, ভালোবাসার বাগানে।দারুন স্মৃতিময় তার উপখ্যান নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্য বাদ সহ ফুলেল শুভেচ্ছা। স্মৃতির ডাইরিতে আজ জমে থাকা ধূলো গুলো হাওয়ায় উড়ে গেল দিদি। নিজেকে নতুন রুপে দেখা,পাওয়া এ যেন আশা জাগানিয়ায় দোদুল্যমান। চমৎকার লিখেছেন। আগামী লেখার অপেক্ষায়। অফুরান শুভ কামনা।
কমলিনী
এক আকাশ রোদেলা দিনের শুভেচ্ছা। সকাল বেলার স্নিগ্ধ শিউলির মত সুরভিত আপনার শব্দমালা ছুঁয়ে গেল হৃদয়বাড়ি…. এ আমার বড়ো প্রাপ্তি…
রেজওয়ানা কবির
আপনার লেখায় পুরোনো সব স্মৃতি খুঁজে পেলাম।সোনেলায় স্বাগতম আপু।
কমলিনী
আপনার ভালোলাগা আমার সম্পদ… কৃতজ্ঞতা অপার…
রোকসানা খন্দকার রুকু
স্বাগতম সোনেলা পরিবারে।আপনার স্মৃতি কথা দারুন লাগলো।বিশেষ করে শেষটুকু। লিখতে থাকুন।
শুভ কামনা।
কমলিনী
প্রাপ্তি অপার… কৃতজ্ঞতা জানবেন…