
বসন্ত বাউরি বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন বসন্ত বউরি, বসন্ত বাওড়ি, বসন্ত বৌরি ইত্যাদি। এই পাখির গড় দৈর্ঘ্য ১৬-১৭ সেন্টিমিটার। কপাল, বুক পরিষ্কার লাল। চোখের দুই পাশ থুতনি ও গলা হলুদ। মুখাবয়ব কালো। পিঠ ঘাসরঙা সবুজ। নিচের দিকে খাড়া খাড়া মোটা রেখা। ওড়ার পালক কালচে। বুক উজ্জ্বল লালের সঙ্গে সোনালি হলুদের পট্টি। লেজ খাটো। লেজের শেষ প্রান্ত সবুজাভ নীল। চোখের মণি কালচে-ধাতব। ঠোঁট শক্ত মজবুত, কালো। ঠোঁটের গোড়ায় ক’টি শক্ত লোম। পা বাদামি-লালচে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
বসন্তকালে এদের দেখা মেলে। গ্রামের নির্জন রাস্তা ধরে হাঁটলে প্রজাতির ‘টুক্-টুক্-টুক্…’ ডাক কানে আসে। অনেক দূর থেকে শোনা যায় সে শব্দ। হঠাৎ শব্দটি কানে গেলে যে কেউ কামারের হাতুড়ি পেটার শব্দ মনে করতে পারেন। বিদঘুটে আওয়াজ হলেও সুরে রয়েছে চমৎকার তাল-লয়। শোনার আগ্রহ জাগে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এরা আকারে চড়ুই পাখির সমান হলেও অনেক উচ্চস্বরে ডাকতে পারে। পাখি দেখতে ভারী চমৎকার!প্রথম দর্শনেই ভালো লাগে। সাধারণত এরা বসন্তকালে জনসন্মুখে আসে। অন্য সময়ে চলে যায় আড়ালে আবডালে। তাই বলে এরা কিন্তু পরিযায়ী নয়। দেশি প্রজাতির পাখি। হরেক প্রজাতির দেখা মেলে দেশে। তার মধ্যে এরা অতি সুলভ দর্শন। ঢাকা শহরেও হরহামেশাই দেখা মেলে। চোখ-কান খোলা রাখলে রাজধানীর উদ্যানগুলোতে নজরে পড়তে পারে এদের। উঁচু উঁচু গাছে এদের বিচরণ। ঘন পাতার আড়ালে থাকতে পছন্দ করে। বৃক্ষচারী পাখি; পারতপক্ষে মাটিতে নামে না।
বসন্ত বাউরী পাখি ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে বাসা বাঁধে ও প্রজনন করে। প্রজননের সময় পুরুষ পাখিটির মাথার উপরি অংশ ও বুকে সিঁদুরে লাল বর্ণের হয়। যা দেখে মেয়ে পাখি আকৃষ্ট হয়। মেয়ে ও পুরুষ পাখির মধ্যে ভালোবাসার আদান-প্রদান হলেই তারা প্রজনন করে। অঞ্চলভেদে সময়ের হেরফের হয়। যেমন ভারত, শ্রীলঙ্কায় ভিন্ন সময়ে বাসা বাঁধে। তবে সব স্থানেই এরা গাছের খোড়লে বাসা বাঁধে। নিজেরাই খোড়ল করে নেয়। এরা ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫দিন। শাবক উড়তে শেখে ১৫-২০ দিনে। ছোট ছোট বুনোফল। বট-পাকুড়, বকুল, দেবদারু, পেয়ারা, জাম, আতা, সফেদা, জামরুল ইত্যাদি ফলের প্রতি আসক্তি বেশি। ফল সংকটে পোকামাকড়েও ভাগ বসায়।
বাংলা নাম:ছোট বসন্ত বাউরি
ইংরেজি নাম: Coppersmith Barbet
বৈজ্ঞানিক নাম: Megalaima haemacephala
ছবিগুলো ঢাকার মিরপুর ‘জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান’ থেকে তোলা।
২৫টি মন্তব্য
উর্বশী
যাক,কাল অনুযায়ী পাখির নাম ও জানা হলো আপনার সৌজন্যে।এটি বড় ব্যাপার। কত কিছু যে অজানা আছে এখনো । দারুন ভাল লাগা নাম থেকে শুরু করে একদম সব কিছুই জানা যায়। সুন্দর উপস্থাপন । আন্তরিক ধন্যবাদ ।
শামীম চৌধুরী
সঙ্গে থাকুন। যদি আমি বেঁচে থাকি তবে ৫৬০ প্রজাতি পাখির নাম জানতে পারবেন। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
বসন্ত বাউরি নামটায় আমার পছন্দ, আজ বুঝতে পারলাম এই পাখিরই শব্দ শুনি আমি গ্রামের দিকে গেলে, যেন কামার হাতুরি চালাচ্ছে।
অসাধারণ পোস্ট দিলেন ভাই।
শামীম চৌধুরী
কন্ঠের স্বর তেমনটাই মনে হয। ধন্যবাদ ভাই।
ইঞ্জা
তা বুঝে গেছি, বেশ কয়েকবার বিভিন্ন গ্রামে এমন শব্দ আমি শুনেছি।
ছাইরাছ হেলাল
নামটি অনেক সুন্দর, এবার থেকে খেয়াল করবো, এমন ডাক শুনি কী-না।
চড়ুই সাইজে উচ্চস্বরে ক্যামনে ডাকে কে জানে!!
শামীম চৌধুরী
খেয়াল করলেই জানতে পারবেন কি করে ডাকে।
তৌহিদ
পাখিটির নাম যেমন সুন্দর, দেখতেও দারুন চমৎকার। বসন্ত বাউরী সম্পর্কে আজ জানলাম অনেক কিছুই।
ভালো থাকুন ভাইজান।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
টুক টুক ডাকে বসন্ত বাউরি
সুন্দর নামে ডাকতে পারি।
পাখিটা দেখতে যেমন সুন্দর মাইরী।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
আপনার জন্যও রইলো শিভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বসন্ত বাউরি গ্রামবাংলা অতি প্রাচীন পরিচিত এক পাখি।
বসন্ত জুড়ে যাদের আনাগোনা বিদ্যমান থাকে।
আমার খুবি পছন্দের এক পাখি।
বিস্তারিত বিষয় নিয়ে উপস্থাপনের জন্য সাধুবাদ,দাদা।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ দাদাভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
নামের সাথে দারুন মিল পেলাম। সত্যিই সুন্দর দেখতে। আপনার বর্ণনায় আবারো একটি পাখি সম্পর্কে জানতে পারলাম বিশদভাবে। বসন্ত বৌরি নামটা চমৎকার ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো অহর্নিশি
শামীম চৌধুরী
মন্তব্যে আপ্লুত হলাম দিদিভাই।
আরজু মুক্তা
আমাদের বাসায় দেখা যায়। পুরা বসম্তে থাকে।
তবে তথ্যগুলো জেনে ভালো লাগলো
শামীম চৌধুরী
জ্বী আপু।
দেশের সব অঞ্চলেই এদের দেখা পাওয়া যায়। খুবই কমন পাখি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভাইয়া আপনার বদৌলতে পাখি দেখে স্বাধ মিটাচ্ছি।
শুভ কামনা॥
শামীম চৌধুরী
আপনার জন্যও রইলো শুভ কামনা স
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর এক পাখির বণনা পড়লাম শামীম দা
শামীম চৌধুরী
অনেক কৃতার্থ দাদা।
মোঃ মজিবর রহমান
বুঝলাম না দুই নাম্বার পাখিটির ঠোটের নিচে চোখের মত লাগছে। বাম পাশে। অসম্ভবা সুন্দর পাখি । আল্লাহর সৃষ্টি মনোলোভা।
শামীম চৌধুরী
মজিবর ভাই, সেটা ছিল ডুমুরের ফল। তখম এদের প্রজননকাল চলছিল। মেটিং করার সময় মেয়ে পাখির মুখে ফল দিয়ে ভালবাসার অনুভুতি প্রকাশ করে। সেটা চোখ নয়।
ধন্যবাদ ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
মুখে ফল আছে কিন্তু মুখের নিচে চোখের মত একটি কি লাগছে তাই। ধন্যবাদ ভাইয়া।
শামীম চৌধুরী
ওহ..!! সেটা মেয়ে পাখির চোখ ভাইজান।