জুমু’আর ফজিলত ও জুমু’আর দিনে করণীয় কাজ

মোঃ খুরশীদ আলম ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১২:২১:৫৯অপরাহ্ন বিবিধ ১০ মন্তব্য

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের এবং ‍দুরুদ ও সালাম প্রিয় নবি (সঃ) ও তার সকল অনুসারীগণের উপর। সুস্থ থেকে মহান রাব্বুল আলামিনের জিকর করার সামর্থ্যদানকারী মহান আল্লার হাজার শোকরিয়া, আলহামদুলিল্লাহ। জনাবে রাসূল (সঃ) এর পবিত্র হাদিস সকল কাজের ফলাফল নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল যথাযথভাবে আমল করার তাওফিক চাই। আল্লাহ কবুল করুন।

নিশ্চই নেক আমল দূর করে দেয় পাপসমূহকে – (হুদ : একশত চৌদ্দ) আল্লাহর দ্বীনের আওয়াজ ছড়িয়ে দিতে লেখালেখি ও মেধার চিন্তাশক্তি ব্যয় করা এবাদতেরই অংশ, আলহামদুলিল্লাহ।

‘জামউন’ শব্দ হতে উদ্ভুত ‘জুমা’ শব্দটির অর্থ হলো একত্রিত বা সম্মিলিত হওয়া। বিগত সাপ্তাহের যাবতীয় ভুল-ত্রুটি সংশোধন ও পরবর্তী করনীয় (আমল সংশোধনের লক্ষে) কর্মসূচী গ্রহণে পরিকল্পনা প্রণয়ন, খোতবা শ্রবণ ও সম্মিলিতভাবে সালাত আদায় করা হয় বলে দিবসটির নামকরণ করা হয়েছে ‘ইয়াওমুল জুমআ।’ জুমা আরবি সাপ্তাহের একটি দিন যাকে বাংলা বার হিসাবে শুক্রবার বলা হয়। শুক্রবার দিনটি পৃথিবীব্যপি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। যোহরের ওয়াক্তে জুমার সালাত আদায় করা হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে আঠাশতম পারায় সূরা আল-জুমুআহ নামক একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা রয়েছে। এটি মদীনায় অবতীর্র্ণ এবং এর আয়াত সংখ্যা এগারো।

হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে-ইহূদী নাসারাদেরকে জুমু’আর এই দিনটি দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু তারা এতে মতোবিরোধ করেছে। ফলে, এ থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে। আর আমাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালা জুমা’র দিনের প্রতি পথ প্রদর্শন করেছেন, আমরা তা লাভ করেছি এবং পূর্ব থেকেই এ দিনটি এই উম্মতের জন্য রাখা হয়েছিল। এ উম্মতের জন্য এ দিনটি ঈদের দিন। সুতরাং এই উম্মত সকলের অগ্রবর্তী হয়ে গেল আর ইহূদী-নাসারাগণ পিছনে পড়ে গেল। (মুকাশাফাতুল-ক্বুলুব-2য় খণ্ড-316 নং পৃষ্ঠা, তাফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন)

ইয়াওমুল জুমআ বৈশিষ্ট্য :

এক) হাদিসে বর্ণিত আছে, আদি মানব হযরত আদম (আঃ)-কে তৈরী করার কাদামাটি এদিনে জুমা করা হয়েছিল বলে এ দিনের নাম হয়েছে ‘জুমা’;

দুই) হযরত আদম (আঃ)-এর পাঁজর হতে আদি মাতা হাওয়া (আঃ)- কে সৃষ্টির পর এই শুক্রবারেই তাঁদের মধ্যে প্রথম মিলন ঘটেছিল;

তিন) বেহেশত হতে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর দীর্ঘকাল বিচ্ছিন্ন থাকার পরবর্তীতে তাদের মধ্যে পুনরায় যে মিলন ঘটেছিল তা এই জুমার দিনেই;

চার) এ দিনটিতে কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং সকলকে হাশরের মাঠে বিচারের জন্য জমায়েত করা হবে-এজন্য জুমা নামকরণ করা হয়েছে। (বেহেশতী জেওর-প্রথম ভলিউম, দ্বিতীয় খন্ড, 192 নং পৃষ্ঠা, এক নং হাদীস এবং ইসলাম জীবনের আলো-পৃষ্ঠা নং-121)

উল্লেখিত 4টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করার পাশাপাশি তাফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন 173 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে যে, এই দিন এমন একটি মুহুর্ত আসে, যাতে মানুষ যে দোয়াই করে, তাই কবুল হয়।

পবিত্র কুরআনে জুমার সালাত আদায়ের প্রতি গভীর তাগিদ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ্ বলেন, যখন জুমুআর দিনে নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর।– (জুমুআহ্-9) জুমার দিনে যাবতীয় দুনীয়াবি কাজ হতে বিরত থেকে মহান আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকা ঈমানেরই দাবী। এই আয়াত দ্বারা জুমার নামাযের আযানের পর মসজিদে যাওয়ার পরিপন্থি সর্বরকম কাজকর্ম এবং ব্যবসা বাণিজ্যকে হারাম তথা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (এহ্ইয়াউ ‍উলূমিদ্দীন-প্রথম খন্ড, জুমার বিবরণ পরিচ্ছেদ-পৃষ্ঠা নং-251)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, উক্ত সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত থাকা হারাম। আ’তা (রাঃ) বলেন, জুমার আযানের পর শিল্পকর্মও হারাম। ইমাম যুহরী বলেন, জুমার আযান হলে (অবস্থান-রত) মুসাফিরও জুমার নামাযে উপস্থিত হবে। (হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ কর্তৃক প্রকাশিত বোখারী শরীফ প্রথম খন্ড, -264 নং পৃষ্ঠা-জুমার দিন ও নামাযের আহকাম অংশ)

জুমার সালাত আদায় না করার বিষয়ে কঠোর সতর্কতা এসেছে। জৈনক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলো, “ওমুক ব্যক্তি মারা গেছে। সে জুমআ ও জামাতে হাজির হতো না। বলুনতো, এখন তার অবস্থা কি হবে? তিনি জবাব দিলেন, লোকটি দোযখী হবে। প্রশ্নকারী লোকটি একমাস পর্যন্ত একই প্রশ্ন করতে থাকলো এবং ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাকে একই জবাব দিলেন যে, সে দোযখে যাবে। ”

জুমার নামায অত্যন্ত তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ বিধায় শরয়ি ওজর ব্যতিত না পড়া খুবই অন্যায়। হাদীসে এসেছে- “ যে ব্যক্তি অলস্য করিয়া তিন জুমু’আ তরক করে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর নারায় হয়ে যান। অন্য রেওয়ায়তে আছে, আল্লাহ তায়ালা তার দিলের উপর মোহর মেরে দেন।”- বেহেশতি  জেওর।

সুতরাং বুঝা গেল যে, জুমু’য়ার নামায আমাদের জন্য কতটা গরুত্ববহ।

জুমুয়ার নামাযের ফজিলত :

পাক সাফ হয়ে চুলে তৈল দিয়ে, খুশবু লাগিয়ে জুমার মসজিদে যাবে এবং কাউকে তার জায়গা হতে না  উঠিয়ে যেখানে জায়াগা পায় সেখানে বসে যেতে হবে, ইমামের খুতবা শুনবে- এরুপ করলে উক্ত ব্যক্তির গত জুমু’আ অবধি সকল সগিরা গুণাহ মাফ হয়ে যাবে।

জুমার দিনে দুরুদ শরীফ পড়লে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশী সাওয়াব পাওয়া যায় বলে এই দিন বেশী বেশী দুরুদ শরীফ পাঠ করার তাগিদ হাদীস শরিফে এসেছে।

জুমু’য়ার নামাযে হেঁটে মসজিদে গেলে প্রত্যেক প্রত্যেক কদমে এক বৎসরের নফল রোযা রাখার সাওয়াব হাসিল হয়।

জুম’য়ার রাত নূরে ভরা রাত এবং  জুমার দিন নূরে ভরা দিন। জুমার দিন সর্বাপেক্ষা অধিক ফজিলতের দিন।

জুমার দিন সমস্ত দিনের সর্দার এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দিন।

জুমআর দিনের করণীয় কাজ :

গোসল করা, মাথার চুল এবং পুরো শরীর উত্তমরূপে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা।

মেসওয়াক করে দাঁত পরিস্কার করা।

যার কাছে যেমন পোশাক আছে তা পরিধান করে খোশবু লাগিয়ে মসজিদে গমন করা;

নখ কাটা,

জামে মসজিদে অতি পূর্বে গমন করা;

জুমার ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার হতেই তৎপরতা বৃদ্ধি করা।

বৃহস্পতিবার আছরের বাদে তাওবা-এসতেগফার ও জিকির আজগারে মত্ত হয়ে দোয়া করা।

প্রথম কাতারে বসার চেষ্টা করতে হবে। নামাযীর সামনে দিয়ে যাবে না।

জুমার নামাযের পূর্বে কোন মজলিসে যাবে না;

মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করবে, কোন কথায় মগ্ন থাকা যাবে না।

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আমাদের আমল করার তাওফিক দিন।

তথ্য : তাফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন, বুখারী শরীফ, মুকাশাফাতুল ক্বুলুব -দ্বিতীয় খন্ড, এহইয়াউ উলুমিদ্দিন, বেহেশতী জেওর, ইসলাম জীবনের আলো ।

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ