জীবন !!!

মনির হোসেন মমি ১০ নভেম্বর ২০১৩, রবিবার, ১১:২৬:৪৪পূর্বাহ্ন বিবিধ ১০ মন্তব্য

জীবন মানে যন্ত্রনা

নেই ফুলের বিছানা

সে কথা সহজে কেউ মানতে চায় না......

জীবন!!!একটি শিশু যখন মায়ের উদরে ভুমিষ্ট হয়ে পৃথিবীতে আসে তখন হতেই আশা নামক একটি শব্দ উৎপরত ভাবে জীবনের সাথে লেগে থাকে।যে জীবনে উদ্দ্যেশ্য নেই সেই জীবন হয় ছর্ণ ছাড়া।কেউ হতে চায় ডাক্তার কেউবা ইঞ্জিনিয়ার।স্রষ্টার কাছে আমার চাওয়ার তেমন কিছুই ছিলনা।যা ছিল আমার বাবা মায়ের।কিন্তু বড় হয় সে কি হবে তা সময়ই তাকে বলে দেবে।তবে উদ্দ্যেশ্য থাকা বাঞ্চনীয় নতুবা লক্ষ্যে পৌছা সম্ভব নয়।যে দিন আমার নব জম্ম হয় সে দিন থেকে জীবনকে ছেড়ে দিছি ভাগ্যের কাছে।নব জম্ম!অবাক হবার কথা।

হারাইনার পুকুর।২০ শাতাংশ স্কয়ার যায়গার উপর পুকুরটি।পুকুরের চারদিকে বড় বড় বৃক্ষে পাখিদের কিচিমিচি থাকে অনবরত।যেই কোন পরিশ্রান্ত মানুষ পুকুর পাড়ে দাড়ালে হিমেল হাওয়ায় মনে প্রশান্তি আনে।গভীরতা মোটামুটি।তখন বয়স আমার ৭/৮ বছর।আমার সাথে আরো দুজন ছিল একজন মেয়েও একজন ছেলে।আমাদের বয়স মোটামোটি একই ছিল।এত ছোট বেলার ঘটনা তেমন কিছু মনে নেই।সকালে আমরা তিন জন পুকুর পাড়ে গেলাম।আমার হাতে ছিল একটি প্লাষ্টিকের ছোট কলস।যথারিতী পুকুরে একটি কোনায় তিন জনই পাড়ে নামলাম।আমি দেখতে পেলাম একটি মাছ লাফালাফি করতে দেখে আমি ওদের বললাম "ঐ দেখ মাছ,আমি যাই ধরে নিয়ে আসি ঝুলাবাতি খেলা যাবে।ওরা আমাকে সম্মতি দিল ততক্ষনে পানিতে নেমে পড়ি।কিছুক্ষন পর মেয়েটি অবশিষ্ট ছেলেটিকে বলল "কি রে মনির যে মাছ ধরতে গেলো আরতো এলো না।আমি যাই ওরে নিয়া আহি।এই বলে মেয়েটিও পানিতে ডুব দিল।অবশিষ্ট ছেলেটি এখন একা।ঠায় ঐ স্হানেই দাড়িয়ে রইল আমাদের আসার অপেক্ষায়।এ দিকে সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে সকাল গড়িয়ে দুপুর হবার পথে।আমাদের তিন জনকে এক সাথে ঐ পুকুর পাড়ের এক বৃদ্ধ মহিলা দেখেছিল পুকুর পাড়ে দাড়িয়ে আছি।আবার যখন বৃদ্ধ মহিলাটি দেখল পুকুর পাড়ে শুধু এক জন দাড়িয়ে আছে তখন বৃদ্ধ মহিলাটি ছেলেটির কাছে গিয়ে...

-কি রে তগো দেখলাম তিনজন,এখন বাকী দু জন কই?

ছেলেটি উত্তর দিল..

-মনির গেছে মাছ ধরতে,ফিরোজা গেছে মনিরকে আনতে।বৃদ্ধ মহিলাটির বুঝতে আর অসুবিধা হলো না।সঙ্গে সঙ্গে মহিলাটি চিৎকার দিয়ে মানুষ জন জড়ো করতে লাগল।-কার ছেলে মেয়ে জানি পানিতে পড়ছে গো........ধীরে ধীরে মানুষজন পুকুর পাড়ে ভির করতে থাকে।ইতি মধ্যে খোজা খুজি শুরু হয়ে গেছে।আমার মা বাবা পাগলের মত দৌড়ে আসে পুকুর পাড়ে।আমি ছিলাম তাদের আদরের এক মাত্র ছেলে সন্তান তাই পরিবারের কাছে আমার গুরুত্ত্ব অনেক।মা পাগলে প্রলেপ করছেন আর মসজিদ মাজার মান্যত করছেন।এতক্ষনে পুকুর পাড়টি লোকে ভরপুর।সবাই যে যেভাবে পারেন আল্লাহর কাছে ফরিয়াত করছে।৩/৪জন লোক প্রায় দু,তিন ঘন্টা যাবৎ খুজে হয়রান অবশেষে ক্লান্ত দেহে এক জন খুজার উদ্দ্যেশে পানিতে ডুব দিতে পেয়ে যায় একজনকে পুকুড় পাড়ের সবাই আল্লাহু আকবর বলে যিগির পড়া শুরু করে সবার ধারনা ছিল আমাকে পেয়েছে কিন্তু না সবার ধারনা ভেঙ্গে দিল ডুবুরী যখন লাশটি মাথার উপর করে পাড়ে নিয়ে আসে।ডুবুরী মাথায় করে লাটিমের মত ঘুড়াতে লাগল আর লাশের পেটে পিঠে ছাই মাখিয়ে ঘুড়াতে ঘুড়াতে হঠাৎ মেয়েটি একটি হাচর্চি মারে।সবাই উচ্চ স্বরে যিগির পড়ছে।মেয়েটিকে পাওয়া গেলো ।ঐ দিকে আমার কোন খোজই তারা পাচ্ছেনা।সকাল গড়িয়ে বিকাল হলো ।এক লোক সাইলো কাজ করে সে এসেছে পুকুরে গোছল করতে।সে আমার মা বাবার খুব কাছের লোক তাকে অনুরোধ করতে সেও খুজতে লাগল।৩/৪ ডুবুরী খুজছে আমাকে হন্যে হয়ে।কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা।তখন প্রায় সন্ধ্যে ডুবুরা ক্লান্ত ঐ দিকে আমার মা বাবা প্রায় পাগলের মত আল্লাহর কাছে ফরিয়াত করছেন।নতুন ঐ লোকটিও ক্লান্ত আশা ছেড়ে দিয়ে বলে এবার একটি শেষ ডুব দেই, প্রায় পাচ দশ মিনিট পর সে উঠে এসে একটি সু খবর দিল----মনে হচ্ছে কি যেন একটা পায়ে লাগল ততখনাৎ আবার বড় করে দম নিয়ে ডুব দিল মাথায় তুলে নিয়ে এলো আমাকে।পুকুর পাড়ের সমস্তলোক এক সাথে যিগির দিয়ে উঠল।মা বাবার মনে প্রশান্তি নেমে এলো।কিন্তু আমার পানির নীচে থাকা ঘন্টা প্রায় ৮ ঘন্টা হওয়াতে আমার দেহের ওজন তিন ডাবল হয়ে যাওয়াতে ডুবুরী আমাকে মাথায় নিয়ে ঘুড়াতে অনিহা করে তাছাড়া এত ঘন্টা পানির নীচে বেচে থকার আশা প্রায় সকলেই ছেড়ে দিছে তারপর লোকটি প্রায় দুই ঘন্টার মত ঘুড়ানোড় পর অবশেষে আমার একটি হাচচ্চি আসে আর মুখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসে ডক্তার সাথে সাথে আমার শিরা চেক করে বলে ---ভয়ের কিছু নেই বেচে আছে।সবাই যেন একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আল্লহর নাম জবতে থাকে।

দীর্ঘ সাত দিন আমি পৃথিবীর আলো দেখতে পাইনি।চিকিৎসা আর সেবায় সাত দিন পর জ্ঞান ফিরে দেখি নতুন পৃথিবীর সেই চির চেনা মায়ের মুখ।মামীর কুলে শুয়ে আছি ,জ্ঞান ফিরে মাকে মা বলে ডাক দিতেই মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

চলবে...

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ