আজ ঘুম থেকে উঠেই বিরাট বড় ভুল করে ফেলেছি। ব্রাশ করতে গিয়ে বুঝলাম টুথপেস্ট আর সেভিংক্রীম এক জায়গায় রাখা ঠিক হয় নি। মাথাটা গেল বিগড়ে! কোনমত ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফার্স্টের জন্য ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ালাম। ভাত না পরোটা__ কোনটা খাবো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আজ কয়েকদিন হচ্ছে, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। শেষে বনডিম মানে পাউরুটির ভিতরে ডিমভাজি দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে এলাম। আজ সারাদিনটা বিভিন্ন ভুলের মধ্যে দিয়েই যাবে নিশ্চিত; কারণ যেদিন ভুল শুরু হয়, সেদিন সবকিছুতেই ভুল হয়।

এছাড়া আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করি, আমার জীবনে সুখ ও দুঃখ সমান সমান। অর্থাৎ আজ যদি খুব বেশি আনন্দ-ফুর্তিতে থাকি, তবে ১০০% শিওর কাল কোন না কোন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে; কষ্ট পেতে হবে। এটা সাইকোলজিক্যাল বিষয় কিনা জানি না, এইটা অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করে আসছি। তাই আমি বেশি আনন্দ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি পাছে বড় ধরনের কষ্ট পেতে হয়।

যাহোক, ক্লাসের জন্য একাডেমিক ভবনের দিকে পা বাড়ালাম। প্রথমেই প্লান্ট-প্যাথলজি প্র্যাক্টিক্যাল। দেখলাম, ডিসেকশন বক্স ভুলে ফেলে এসেছি। ঐ যে, যা ভেবেছিলাম, তাই-ই হল। উঠন্ত মুলা পত্তনেই বোঝা যায়। পাশের জনের কাছে থেকে ফরসেফ, ব্লেড, নিডল ইত্যাদি শেয়ার করে কাজ চালিয়ে নিলাম। বরাবর মাইক্রোস্কোপে আমার স্লাইড ভালো আসে। দু এক জনের স্লাইড না এলে আমি তাদের হেল্প করি। কিন্তু আজ শত চেষ্টা করেও নিজের স্লাইড আনতে পারলাম না।

কয়েকজন বন্ধুর সাথে দুপুরের খাওয়াটা ক্যাফেটেরিয়াতেই সেরে নিলাম। ২টায় জেনেটিক্স কুইজ পরীক্ষা ছিল। প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েই সব গুলিয়ে ফেললাম। What is central dogma? এই প্রশ্নের উত্তরটা কিছুতেই মাথায় আনতে পারলাম না। মনে মনে ভাবলাম

The dog which bark loudly to protect our house from the central point is called central dogma!

কিন্তু জেনেটিক্স তো বানিয়ে লেখার বিষয় না, তাই লেখা থেকে বিরত থাকলাম। পরীক্ষা শেষে দেখলাম DNA থেকে RNA এবং RNA থেকে Protein তৈরির প্রক্রিয়াকেই Central dogma বলে। এই সহজ কথাটা কেন যে মাথায় ছিল না! এজন্য নিজেকে হাজার বার ধিক্কার জানালাম!

রুমে এসে কিছুটা সময় রেস্ট নিলাম। পরে টিউশনির উদ্দ্যেশে বের হলাম। বেশ কিছুটা পথ অতিক্রম করার পড়ে খেয়াল করলাম মানিব্যাগ আনতে ভুলে গেছি। নিজেকে শতবার গালি দিতে দিতে মানিব্যাগ নিতে রুমে এলাম। পরে আবার টিউশনীর জন্য রওয়া দিলাম।

টিউশনীর বাসায় কলিং বেল চাপতেই বরাবরের মত ছাত্রের বড় আপু মোনালিসা গেট খুলে দিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিল। মেয়েটার হাসিতে যেন জাদু আছে! মোনালিসা এইবার ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে। মেয়েটি অনেক সুন্দরী। বড়লোকের মেয়েরা সবসময় সুন্দরীই হয়! এরা ৪তলা বাড়ির দোতলায় থাকে। কিছুদিন হল মোনার সাথে কথা বলে অনেকটা ফ্রি হয়ে গেছি। প্রথম প্রথম আন্টি এসে গেট খুলে দিত। আজ কয়েকদিন মোনা এসে গেট খুলে দেয়। ছাত্রকে পড়ানোর সময় দেখি মোনা এটা-ওটা নেওয়ার নাম করে রুমে ঢুকে। কথাবার্তায় বোঝা যায় মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে। এখন পর্যন্ত সরাসরি কিছু না বললেও আকার-ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।

ছাত্রকে পড়ানো শেষে মোনা গেটের তালা খুলতে নিচে এলে হুট করেই বললাম,

‘মোনা তোমার সাথে একটা সিরিয়াস কথা আছে। তোমাকে কেন জানি আমার অনেক ভালো লাগে। মনে হয় ভালোবেসে ফেলেছি’।

কথাগুলো বলার সময় আমার গলার স্বর কেঁপে কেঁপে উঠলো। মোনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এক চিলতে হাসি ফুটে আছে এবং লজ্জায় তার মুখ অবনত হয়ে রয়েছে। তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করার জন্য বেরিয়ে পড়লাম।

আমি কি দিনের শেষ ভুলটি করলাম?

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ