
নয়না তখনও জানে না ওর বর কী কাজ করে ,কতো টাকা রোজগার করে? নয়নাকে কখনো বলেনি বা নয়নাও কখনো জানতে চায়নি। নয়নাকে তখন হাত খরচ বাবদ দশ টাকা, না এটা ঠিক হাত খরচ নয় কলেজে যাওয়ার জন্য দিতো টাকাটা। নয়নার কলেজে যেতে চারটাকা লাগতো আর আসতেও চারটাকা। নয়নার হাতে থাকতো দুই টাকা। চারদিন পর ঐ টাকা দিয়ে আরেকদিন যাওয়া আসা করতো।
নয়নার বর নিজে কখনো দিতো না টাকাটা। সে তার মা’কে বলে যেতো টাকা দিতে। ওর মা’ই দিতো টাকাটা তবে তা কখনো নয়নার হাতে দিতো না। যদি উনি টাকা দিতে নয়নার ঘরে আসতেন তবে দরজা থেকে ঘরে ফেলে দিতেন।আবার নয়না উনার রুমে গেলে উনার ঘর থেকে বাইরে ফেলে দিতেন। নয়না টাকাটা কুড়িয়ে নিয়ে কলেজে যেতো। এমনি করে দিনের পর দিন কাটতে থাকলো।
একটু একটু করে নয়নার শ্বশুরও কেমন বদলে যেতে লাগলেন। টুকিটাকি সংসারের ব্যাপারে নয়নাকে বলতে শুরু করলেন। এটা করো ওটা করো। একেই সাইন্সের ছাত্রী নয়না তার উপর প্রাইভেট নেই, বরের অবহেলা, শাশুড়ির কথা না বললেই চলে। নিজে পড়েই ভালো রেজাল্ট করতে হবে। নয়না প্রায় দিশেহারা। প্রচণ্ড ডিপ্রেশনে একদিন তো শ্বশুরকে বলেই বসলো ‘আমি পারবো না এতো চাপ নিতে।’ বুঝে নিন সেদিন কতো কথা শুনতে হয়েছিল? শুধু নয়নাকে একা নয় গুষ্টি শুদ্ধ সবাইকে কথা শুনতে হয়েছিল। এভাবেই চললো। তবুও চললো, থেমে গেলো না কিছুই।
একদিন নয়না কলেজ থেকে আসছে। রাস্তায় ওর বরের সাথে দেখা হলো। কিন্তু ওর মুখ কালো করে চলে গেলো একটাও কথা বললো না। নয়নার বন্ধুরা নয়নাকে বললো কী হয়েছে? ভাই আপনার সাথে কথা বললো না কেনো? নয়না ওদের বুঝানোর চেষ্টা করলো কিছুই হয়নি। সে নিজেও জানে না কেনো এমন করলো? প্রচণ্ড ভয় আর সাথে টেনশনও হচ্ছিলো নয়নার। বাড়ি ফিরে দেখে নয়নার শাশুড়ির মুখ কালো। পরে নয়না পাশের বাড়ি থেকে জানতে পারলো তার বর নাকি কবে একটা পাঞ্জাবি গা থেকে খুলে রেখেছিলেন। নয়নাকে বলেও নি ধুতে হবে। পাঞ্জাবিটা আনলার কাপড়ের নিচে যাওয়ার কারণে দেখেনি। (বিয়ের পর থেকে নয়না ওর বরের জামা কাপড় ধুয়ে দিতো) পাঞ্জাবিটা না ধোয়ার জন্য সেদিন মা, বাবা, ছেলে সবাই মিলে আচ্ছা করে কথা শুনিয়ে দিলো। একা অসহায় নয়নার চুপচাপ শুনলো শুধু। আর মনে মনে বললো এ কোথায় রেখে গেলে আমাকে তোমরা। এ সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করলো। মা বাবাকে কিচ্ছু বললো না মুখ ফুটে। কিন্তু নয়নার মা ঠিকই সব বুঝতে পেরেছিলেন। নয়না ওর শ্বশুর বাড়িতে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলো না। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো নয়নার। নয়না প্রতি বৃহস্পতিবার কলেজ শেষ করে বাড়ি যেতো। শুক্রবার থেকে শনিবারে সকালে এসে কলেজ করতো। এভাবেই প্রায় এক প্রকার যুদ্ধ করেই পড়ালেখা করছিলো..
২৩টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
অনন্য লিখনী । শুভেচ্ছা সতত ।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সবসময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
জীবন যুদ্ধে নয়নাদের এভাবে একাই লড়াই করতে হয়। ধন্যবাদ আপু। শুভ কামনা রইলো
সুরাইয়া পারভীন
একদম সঠিক বলেছেন দিদি
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
এতো এক কঠিন যুদ্ধের কথা আমরা জানছি ক্রমান্বয়ে।
সুরাইয়া পারভীন
সবে তো শুরু
আরো অনেক রয়েছে বাকী
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সবসময়
ইসিয়াক
নয়নার জীবন যুদ্ধ সুন্দর ফুটে উঠছে আপনার লেখায়।
শুভকামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সবসময়
সুপায়ন বড়ুয়া
নয়নার যুদ্ধ জয়-ই কামনা করি।
ধারাবাহিক ভালোই হচ্ছে।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময় দাদা
সাবিনা ইয়াসমিন
মেয়েটার জন্য জন্যে কষ্ট হচ্ছে। নয়নাদের শুরুটা হয়তো এভাবেই হয়। পর্ব গুলো পড়ছি, সবটা জেনে লিখবো।
শুভ কামনা 🌹🌹
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সবসময়
সঞ্জয় মালাকার
নয়নার যুদ্ধ জয়-ই কামনা করি।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দিদিভাই
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
সব যুদ্ধে বোধহয় জয় অসম্ভব
তবুও দেখা যাক নয়না জয়লাভ করে কী না।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সবসময়
নুরহোসেন
বইমেলায় আপনার কোন বই বেরিয়েছে কি?
সুরাইয়া পারভীন
জ্বী ভাইয়া। আমার প্রথম উপন্যাস- শেষ বিকেলের রোদ্দুর। পড়ার আমন্ত্রণ রইল। সাথে দোয়া ও করেন।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
রেহানা বীথি
নয়নার জন্য শুভকামনা।
ভালো লিখছেন।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সবসময়
আরজু মুক্তা
জীবনটাই যুদ্ধ। এভাবেই এগোতে হয়।
সুরাইয়া পারভীন
হুম ঠিক বলেছেন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
কামাল উদ্দিন
নয়না এই যুদ্ধের বিজয়ীর বেশে ফিরুক সেই কামনায় আপনার গল্পের সাথেই আছি আপু।
সুরাইয়া পারভীন
দেখা যাক কী হয়?
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
কামাল উদ্দিন
হুমম, শুভ কামনা