
জীবন মানে কি? জীবনের সজ্ঞা কি? যে জীবন চাওয়া-পাওয়ায় তৃপ্ত নয়, চরমসুখ, পরম আনন্দ যে জীবনে ধরা দেয়নি সে জীবনের কোন মানে হয়? জীবন; তার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে বিভিন্ন ধাপে, যেমন ঋতু পরিবর্তন হয় দু মাস পর পর।
জীবনকে, তার মানেকে খুঁজেছি, দেখেছি তার স্বরূপ, বুঝতে চেয়েছি জীবনের মানে। শৈশবের জীবন, জীবনের চরম সুখের মুহুর্ত। বাঁধা নেই, ধমক নেই, স্বাধীনভাবে জীবনকে উপভোগ করার স্বাধীনতাটুকু রয়েছে। জীবনের একটি মুহুর্তে Aim in life পড়ে মুখে-ঠোঁটে ফেনা তুলে ফেলেছি, বুঝতেই পারিনি আসলে Aim in life কি। বুঝলে হয়তো জীবনের চরম এই উপলব্ধিটুকু হতো না।
রঙ্গিন ভাবনার দুনীয়ায় সব কিছুই রঙ্গিন। ঘর থেকে বের হলে শুধু রঙ্গের ছড়াছড়ি। এতো রঙ্গের মাঝে মা-বাবার বকুনিটুকুই ছিল আসল, নির্ভেজাল। আহাঃ যদি বুঝতাম। বুঝিনি, খুঁজে বেড়িয়েছি পোষ্টারিং আর দেওয়াল লিখনীতে, রাতভর জেগে থেকে রঙ্গিন দেওয়ালের শ্লোগানগুলোতে জীবনের মানে খুঁজেছি। হাদারাম কোথাকার, বলার মতো আমার কেউ ছিল না যার ছিল সে সত্যিই ভাগ্যবান ছিল।
জীবনের দু’চাকার ছোট্ট গাড়িটা বার বার ব্রেক কষেছে-ক্যাৎ, কোৎ শব্দে। সুখ-দুখের স্মৃতির মাঝখানে বিরতি, আবার কু ঝিকঝিক ঝিকঝিক, প্যাও, প্যাও শব্দ। বর্ণচোরা মন, স্থির থাকেনি। এ ডাল থেকে ও ডালে, ও ডাল থেকে এ ডালে, ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ। ছাইচাপা দুখগুলোকে উল্টেপাল্টে দেখেছি, দেখি সুখ পাই কিনা, এ মন্ত্রে। ত্রি-চক্রযানের পাইলট, কখনো ট্যাক্সি ড্রাইভার, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি, কতযে রূপে সাজিয়েছি জীবনটাকে। স্থায়ী হয়নি কোনটাই। গাঁদা ফুলের মালা কতক্ষণই বা সুবাস ছড়ায়। সুবাস ছড়াতে পারিনি। ফুসফাস করে কেন যে সত্য কথাগুলো বের হয়ে আসতো, কে জানে। মুখ থেকে নয়, বুক থেকে। তাইতো, শেষমেষ সাবার চক্ষুশুল। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, বিধিরাম সর্দার।
জীবনকে দেখেছি পথেঘাটে লাঞ্চিত হতে। ময়লা-আবর্জনার স্তুপে খুচিয়ে খুচিয়ে জীবনের এলোমেলো স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণগুলোকে গুছানোর অব্যাহত ব্যার্থ চেষ্টায়রতদের দেখেছি। দু’এক টাকার জন্য ছোটলোক, টোকাইদের বেধড়ক মারধর করে যারা, তারাই আবার হাজার টাকা দিয়ে মাটির শরীরকে সাজায়। ব্রাশের হালকা পরশে রং মাখে সর্বাঙ্গে । এ যেন রং তুলির আবরণে চরিত্রকে ঢাকার চেষ্টা। ব্যর্থ বলবনা, এ জীবনে সেওতো একটা মানে খুঁজে বেড়ায়।
পাইপের ভেতরে হু হু করে কাঁদতে থাকা জিহাদের অতৃপ্ত আত্না, এক ফোঁটা পানির জন্য রাজনের হাহাকার, আশুলিয়া বা সাভারের বাতাসে ভেসে বেড়ানো লাশের গন্ধ, নিমতলির এডিসদগ্ধ বনি আদমদের নিরবে চলে যাওয়া, যানবাহনে ও গাড়িতে পুঁড়ে মরা মানুষগুলোর রক্ত, চামড়া, মাংসের পোড়া গন্ধ, ঈদের পূর্বেই ঈদ বোনাস ও বেতনের দাবীতে অনশনরত বান্দাগুলো জীবনের মানেকে আরো বোল্ড করে দেয়। তৈরী করে এক একটি ইতিহাস।
সৃষ্টিকর্তা জীবন গড়ে, কিন্তু চলে মত্যের দেবতাদের ইশারায়। এরা অদৃশ্য। জনতার ভাগ্যকে দুহাতে পিষে নানা অবয়ব দান করে এরা। এরা জীবনের দৃশ্যপট পরিবর্তন করে, ভাগ্য নির্ধারন করে। এদের ইশারায় তৈরী হয় বড় বড় রাজ প্রাসাদ, সিড়ি থেকে শেষপ্রান্ত পর্যন্ত যেখানে মৃদু রঙ্গিন আলোর হাতছানি। এখানে নিত্য ইতিহাস রচিত হয় যার শুরু আছে কিন্তু শেষ থাকতে নেই। (সমাপ্ত)
১৩টি মন্তব্য
শামীম চৌধুরী
জীবনের মানে কি?
জীবনের সংজ্ঞা কি?
আমি মনে করি জীবনের কোন মানে ও সংজ্ঞা নেই। কারন জীবনটা নিজের। আমি যে ভাবে আমার জীবন চালাবো সেটাই হবে জীবনের সংজ্ঞা। আর আমার সিদ্ধান্ত বা অধ্যবসা যদি গোড়াতেই ভুল হয় তবে জীবনের মানেও উল্টে যাবে।
খুব সুন্দর একটা টপিকস নিয়ে লিখলেন।
আরজু মুক্তা
এখনকার শাসক যে শোষক, তা সুন্দর করে বলেছেন। জীবন কেমন? বৃত্তের মতো। এপারে সুখ ওপারে দুঃখ। তবুও জীবনকে টেনে নিয়ে যাওয়া।
ভালো লিখছেন।
ব্লগ সঞ্চালক
প্রিয় ব্লগার ব্লগের নীতিমালা পড়ুন। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে দুটো পোস্ট দেয়া যাবে না।
শুভ ব্লগিং।
মোঃ খুরশীদ আলম
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। সেই সাথে নিজের ভুল স্বীকার করছি। সামনে আরো সতর্ক থাকব ইনশাআল্লাহ।
সুরাইয়া পারভীন
মত্যের দেবতার ইশারায় চলছে জীবন
এ এক চরম সত্য বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ। মত্যের দেবতারা জনসাধারণের ভাগ্যকে দু পায়ে দলিয়ে ক্ষত বিক্ষত করছে জীবনের মানে। চক্রাকারে বৃত্তাকারে যে কারণেই ঘোরা হোক না কেনো জীবনের মানে বোঝা এতো সহজ নহে।
দারুণ উপস্থাপন
আলমগীর সরকার লিটন
জীবন কে চিনা যায় যখন ক্ষুধা লাগলে পেট ভরেগেলে আর চিনা যায় না
রেজওয়ানা কবির
জীবন যেখানে যখন যেমন এই লাইনটা কিছুদিন আগে আমার ফেসবুকে লিখেছিলাম।আজ আপনার শিরোনাম দেখে মনে পড়ে গেল।মত্যের দেবতার ইশারায় চলছে জীবন,আজ এটাই বাস্তবতা।তবে ছোটবেলার জীবনটাই আমার কাছে বেশী ভালো মনে হয়, কোন বাঁধা,ভয় থাকে না।ভালো বিশ্লেষণ করেছেন।ভালো থাকবেন।
ফয়জুল মহী
আপনার আগের পোষ্টে মন্তব্যের উত্তর পাইনি।
রেজওয়ানা কবির
আমার মন্তব্য ভাইয়া?
সুপর্ণা ফাল্গুনী
জীবন কি? জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া অবিরত যুদ্ধ করে করে। পাওয়া,না পাওয়ার হিসাব মেলাতে মেলাতে জীবন সায়াহ্নে এসে পড়ি। নিমতলী, পেট্রোল বোমা, রাজনের কথা, বেতন বোনাসের দাবিতে অনশন সব এই জীবনের ই অংশ হয়ে গেছে কারো কারো লোভের কোপে পড়ে। বাবা-মায়ের শাসনকে আমরা অত্যাচার মনে করে উল্টো দিকে চলি। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
মোঃ খুরশীদ আলম
পাওয়া না পাওয়ার হিসেব না করাই ভাল বোধ করি। বরং কি দিলাম কতটুকু দিলাম আর শেষ বেলায় নিজের জন্য কি নিয়ে যাচ্ছি সেই হিসেব কষাটাই জ্ঞানীর কাজ বলে মনে হয়। ভাল থাকবেন।
হালিম নজরুল
জীবনের উপলব্ধি একেকজনের কাছে একেক রকম।
মোঃ খুরশীদ আলম
যথার্থ অভিব্যক্তি প্রকাশে ধন্যবাদ জানবেন।