জাবর কাটা

খাদিজাতুল কুবরা ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ০১:২১:৫৫পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৩ মন্তব্য

 

আজও মনে পড়ে বাড়ির উঠোনে শুয়ে থাকা কুকুরটাকে, যে স্কুল যাওয়ার পথে আগ বাড়িয়ে দিত ।

 

দাদাজানের নামাজের তাশাহুদ পাঠের বৈঠকের সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ; জড়িয়ে ধরে থাকতো যে বিড়ালটি, ওকে ও আর ভুলতে পারলাম কই?

 

সেবার বন্যায় ঝড়ে আহত পাখিটিকে বাঁচাতে ভাইয়ের প্রানান্ত চেষ্টা ব্যর্থ হওয়া,  ধড়ফড় করে মরে যাওয়া  পাখিটির মুখটা আজও ভুলিনি।

ভাইয়ের যেন ভাই মরেছে,শোকাহত ছেলেটা দিগ্বিদিক ছুটেছে।

 

আহা শৈশব, অপাপবিদ্ধ শৈশব!

সেই কিশোরদের কেউ কেউ  বড় হয়ে প্রাণ নেয় আবরারের, রিফাতের।

বড় অদ্ভুত মনস্তত্ত্ব!

 

পৌঢ়ত্বের দারপ্রান্তে এসে দেখি __

বাড়ির ঘাটার পাঁচগাছিয়া, বৌছি, গোল্লাছুটের দাগ নিশানা মুছে গেছে মন থেকে!

এখন শুধু জাবর কাটা আর স্বর্গ মর্ত্যের মাঝামাঝি ঝুলে থাকা।

 

বুকের ভেতর আস্ত একটা  পোড়ো-বাড়ির অস্তিত্ব টের পাই যার গা থেকে একেকটি করে ইট খসে পড়ে,

দেয়ালে শেওলা-ছাতার দল নতুন নতুন শাখ মেলে।

শুনশান নীরবতা পালন যার নিত্যসূচি।

 

পিরানহার মতো তীক্ষ্ণ আর ধারালো অনুভূতির দাঁতগুলো চেপে ধরে ছিঁড়েখুঁড়ে খায়।

খাঁখাঁ দুপুর একান্তে বিষন্ন ভায়োলিনে সুর তোলে একমনে, সে সুর কেটে কেটে দ্বিখণ্ডিত করে অন্দর-সদর।

 

চামড়ার ভাজে,চোখের খাঁজে জৌলুশ হয়তো হারিয়ে গেছে কিন্তু ইচ্ছে ঘুড়ি এখনো উড়ে পুকুর পাড়ের আকাশে।

 

জীবনের সৌন্দর্য প্রসারিত হাতে নিরন্তর ডাকে।

আসি আসি করে আশা জাগিয়ে ভুলে থাকি নিরালে শহুরে চাকচিক্যের মোহনজালে।

 

বেঁচে থাকার অদমনীয় লোভে লোভাতুর হয়ে ;সকল শোক, তাপ,ও জরা পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছি আরেকটি নতুন ভোরের সোপানে।

 

এই শীতে যদি শীত আসে অগস্ত্র্যযাত্রার রথে।

ক্ষতি কি তাতে, বাবা মার পাশে গুটিশুটি মেরে ঘুমুবো নিশ্চিন্তে।

আস্তিকত্ব তাকিয়ে রয় স্ব প্রশ্ন দৃষ্টিতে __

তার কি জো আছে? কপর্দকহীন আমলনামা হাতে।

ক্ষমা কোরো প্রভু এই গোনাহগারে ;

নসীব কোরো নাজাতে।

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ