৭১’এর জননী

মনির হোসেন মমি ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩, মঙ্গলবার, ০১:১১:৫৪অপরাহ্ন বিবিধ ৪ মন্তব্য

স্বাধীনের পর হতে মা আমার কারো সাথেই কথা বলেনা ।সারাক্ষন হাতে একটি পুতুল নিয়ে নাড়া চারা করে ।আর মাঝে মাঝে কি যেন বলার চেষ্টা করত।বয়সের ভাড়ে নূয়ে পড়েছে তার মাথাটা।বিছানায় সারা ক্ষন শুয়ে থাকতে থাকতে শরীরের কোথাও কোথাও ক্ষত চিহ্ন হয়েছে।এমন নিথর দেহ যে শরীরে বিষ পিঁপীলিকা কামড় দিলেও শরীরে বোধ পায়না।কিন্তু অবাক হই যখন দেখি নিথর অসার মা আমার দেশ জয়ের কিংবা দেশ মাতৃর কোন শুভ সংবাদ শুনলেই ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে সাধ্যমত আনন্দ ভাব মূখোবয়ে প্রকাশ করে কি যেন বলার চেষ্টা করে।বলতে না পেরে ...........................................................................সূখের অশ্রু নয়নের জলে ভাসে।

আজ তেমনি এক খুশির জোয়ারে মা....যখনই সে জানল ৭১'এর কসাই কাদের মোল্লা রাজাকারের ফের ফাসির রায় হয়েছে।তার মনের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যদি সে কথা বলতে পারত তাহলে সে যে কি করত তা বলা মুসকিল।কিছু ক্ষনের মধ্যে মায়ের চোখে-মূখে কালো অন্ধকারে ছাঁপ স্পট` হয়ে উঠে।মাকে কথার ইশারায় জানাতে চেষ্টা করি ।মা আমার ইশারায় খাটের নীচ থেকে ভাঙ্গা সুটকেসটা বের করতে বলে।আমি সুইটকেসটা এনে মায়ের সামনে রাখি,মা কাঁপা কাঁপা শরীরে বিছানা হতে একটু উঠে সুইটকেসের ভিতরে রাখা লাল রংয়ের একটি শাড়ী বের করেন।রক্তে লাল হয়ে যাওয়া শাড়ীটির কালার এখন ধূসর হয়ে গেছে।এটা তার এক মাত্র মেয়ের শাড়ী।মুক্তি যুদ্ধে তার মেয়ের স্বামী মুক্তি যুদ্ধাকে রাজাকাররা  গুম করে মেয়ের সন্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল পাক বাহিনী ,ব্রাস ফায়ার করে মেয়েকে রক্তাত্ত করে।সেই রক্তে ভেজা শাড়ীটি মা আমার যতনে রেখেছিল যাতে বাংলায় রাজাকার মুক্ত না হওয়া পযন্ত` রক্তের দাগ মুছে না যায়। শাড়ীটি যে ভাবে ছিল ঠিক সেই ভাবে আবার রেখে দিল।হয়তো এ শাড়ীটি সেই দিনেই ধৌত করিবেন যে,এ দেশের শীষ` রাজাকার গোলাম আজম সহ অন্য সব রাজাকারের ফাঁসির রায় কায`কর করা হবে।তাই মনে হয় মা আমার আচলঁ ছিড়ে ফাসির রশির মত তৈরী করে আমাদের বুঝাতে চেষ্টা করেন।

                                                                   মা আমার কন্ঠের সূর হারিয়েছিল পাক-বাহিনীর নিযা`তনে।

এদেশ একদিকে রাজাকার মুক্তের  ডাক অন্য দিকে দেশ গড়ার প্রত্যয়।একদিকে মায়ের সন্মানহানীর বদলা অন্যদিকে দেশ রক্ষার মিথ্যে অভিনয়ের আন্দোলন।দেশ কোন দিকে যায় এখন দেখার সময়।স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিদের অত্যান্ত সাবধানে এগুতে হবে।একটু ভুলে,হয়ে যেতে পারে সব কিছু ভন্ডুল।স্বাধীনতার বিপক্ষের শত্রু আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে।রাজাকার যে শুধু জামাতে তা নয় সরকারী কিংবা বিরোধী অথবা দলবিহীন ভাবেও আছে।সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে নতুবা এ বিচারে শুধু রায় হবে ,কায`করে বাধা আসবে।বাধা আসবে আন্তজাতি`ক ভাবেও।

(কাল্পনীক)

 

 

 

 

 

 

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ