
পশ্চিমা সূর্য ডুবে গেলে ঐ দূর হতে ভেসে আসে ধরণীর লালিত সুগন্ধি। ধূলি উড়িয়ে এক ঝাঁক মহিষের দল ঘরে ফেরে।
সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলার গায়ে পশ্চিমা সূর্য ডুবে। অর্জুন গাছে চাঁদ এসে লুকোচুরি খেলে।
পাড়ার দ্বার দিয়ে বয়ে গেছে ছোটখাটো গেরুয়া নদী।
সে নদীতে কত মাছ খেলা করে।
জোনাকি পোকার আলোতে রাতের সন্ধ্যা মাখে উড়ে বেড়ানো রঙিন প্রজাপতি। সে রাতে আকাশের চাঁদকে সাক্ষী রেখে কত অজস্র প্রজাপতির বিয়ে হয়।
প্রিয়তমের গ্রন্থিবন্ধন শেষে অভিসারের চাঁদ ডুবে।
মাটির দেওয়ালে জুড়ে ভোরের আলো ছড়িয়ে আছে। সবুজাভ অরণ্য জুড়ে কেবল ঘন কুয়াশার চাদর।
সে ভোরের কুয়াশা মাড়িয়ে এ পাড়া থেকে ও পাড়ায় ফুল কুড়ানো আর মাটির হাঁড়িতে গরম গরম খেজুরের রসে হেমন্তের শীত সকাল।
অজস্র ফুল ফুটে আছে কাননে কাননে।
এ ফুল আজ দেবতার।
তাই দেবতার পায়ে লুটিবার তরে প্রাণ খুলে হাসছে।
মাঠ জুড়ে ধান ক্ষেতের কুয়াশা ভেজা আলপথ মনে করিয়ে দেয় আমাদের ছেলেবেলা কত সুন্দর ছিলো।
সুন্দর ছিলো পদ্মফুলের উপর ভ্রমরের উড়ে বেড়ানো দৃশ্য। সুন্দর ছিলো দূর্বাঘাসের উপর রাখাল ছেলের গরু চরানো।
গাছের তলায় পড়ে থাকা অজস্র হরিতকি।
আর মিষ্টি সকালে জারুলের ডালে বসে শালিক পাখির কুঞ্জন। এ দুই নিরবে নিভৃতে শব্দের সন্ধানে ছুটে বেড়ায়।
গোয়ালঘর হতে একে একে ধেয়ে আসা গাভীর হাম্বা হাম্বা ডাক। এ ডাক মনে করিয়ে দেয় দুধ দোহন করার কথা। দইয়ের ভার কাঁধে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানো। এসব জানান দেয় আমরা অতীতে খাঁটিত্ব ছিলাম।
আমাদের ছেলেবেলা হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে এসব আর উপভোগ করা হয়নি।
সে স্মৃতি গুলো যেই লিখতে যাই সবকিছু তখন ভুলে যাই। নিয়মমাফিক করে আজকাল কিছুই লিখতে পারিনা। স্মৃতি যে কখনো ভুলে থাকা যায়না।
আজও এ পাড়া ও পাড়ার পাশ দিয়ে হেঁটে চললে ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে।
.
ছবিঃ গুগল।
১৬টি মন্তব্য
তৌহিদ
এ যেন শীতের পুরো চিত্র ফুটে উঠেছে লেখায়। আমরা এসব দিন আর নিজের ইচ্ছেমত অনুভব করতে পারিনা।
ফিরে যেতে চাই আবারও সে সময়ে। চমৎকার লিখেছেন দাদা। শুভকামনা রইল।
প্রদীপ চক্রবর্তী
যথার্থ মতামত।
সাধুবাদ জানাই, দাদা।
ফয়জুল মহী
বেশ চমৎকার ভাবনা । মুগ্ধতা ও ভালো লাগা অপরিসীম ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
অশেষ ধন্যবাদ, দাদা।
মাছুম হাবিবী
শীত আসলে যেন প্রকৃতি অন্যরূপে সাঁজে। আপনার লেখনিতে মা মাটির অমৃত সুধাটা প্রান করতে পারলাম দাদা। ভালো থাকবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
খুবি ভালো লাগলো আপনার মতামত।
সাধুবাদ,দাদা।
বন্যা লিপি
আমরা বড় হয়ে যাই আমাদের মত। প্রতিটি ঋতুর আসা যাওয়ায় আমরা পেছনে ফেলে ফেলে বড় হয়েছি কখন কেমন করে! আজ মনে পড়ে ফেলে আসা ঋতুতে ঋতুতে রয়ে গেছে পিছুটান স্মৃতীরা দলবেঁধে।
যেখানে ছড়িয়ে আছে শৈশব কৈশোরের দামাল বয়সের ছোটাছুটি।
নষ্টালিজক লেখা। অনেক ভালো লাগলো দাদাভাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
একদম ঠিক বলেছেন।
অশেষ ধন্যবাদ,দিদি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ছোটবেলা বড় বেলা সববেলাতেই এমন মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি আমরা মিস করি।
শুভ কামনা রইলো দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
হ্যাঁ,দিদি।
ধন্যবাদ,আপনাকে।
আরজু মুক্তা
পুরা শীতের চিত্র ফুটে উঠেছে।
কোথায় হারালো সোনালি বিকেলগুলো? আমরা শুধু খুঁজি।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সে সোনালি বিকেল আসবে না আর ফিরে।
ধন্যবাদ,দিদি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আহারে ছেলে বেলা! শীতের স্মৃতিগুলো ভোলার নয় গ্রামের। আজো সেইসময় ফিরে যাই। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
প্রদীপ চক্রবর্তী
অশেষ ধন্যবাদ,দিদি
ভালো থাকুন অনেক।
জিসান শা ইকরাম
আমার ছোট বেলার শীতের সকালটা এমনই ছিলো,
লেখা পড়ে ফিরে গেলাম সে সোনালী অতীতে।
এমন লেখার জন্য ধন্যবাদ প্রদীপ।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্
সাধুবাদ,দাদা।