
বাঙালি চিরকালই খাদ্যরসিক।
আর রসিক বলে খাবারের তালিকায় নানা আয়োজন।
.
আসুন জেনে নেই চুঙ্গাপুড়া বা চুঙ্গা পিঠা কেন ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং কিভাবে তা তৈরি করা হয়।
চুঙ্গাপুড়া বা চুঙ্গা পিঠা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পিঠা।
চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল (বিরইন ধানের চাল) দিয়ে তৈরি এই খাবারটি সিলেটের একটি নিজস্ব এবং গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে সুপরিচিত।
প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তিতে পিঠেপুলির সাথে বাঁশ পুড়িয়ে চুঙ্গা পিঠা বানানো হয়ে থাকে।
চুঙ্গাপুড়ার উৎপত্তিস্থল সিলেটে। এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনপদে এ ঐতিহ্য দেখতে পাওয়া যায়।
পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে বাজারে মাছের মেলা বসে।
সেসব মেলা থেকে মাছ কিনে অথবা হাওর-নদী হতে বড় বড় মাছ (রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর) ধরে নিয়ে এসে হালকা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া সিলেট অঞ্চলের একটি অন্যতম ঐতিহ্য ছিল।
এক সময় সিলেটের পাহাড়ি আদিবাসীরা বাঁশ কেটে চুঙ্গা বানিয়ে এর ভেতর ভেজা চাল ভরে তৈরি করত এক ধরনের খাবার। ধীরে ধীরে এ খাবার পাহাড়িদের কাছ থেকে সিলেটবাসীদের কাছে চলে আসে।
সময়ের পরিক্রমায় চুঙ্গা দিয়ে তৈরি করা এই খাবার এখন চুঙ্গাপুড়া নামে বহুল পরিচিত।
রন্ধন প্রণালী ,
চুঙ্গাপুড়া বা চুঙ্গাপিঠা বানানোর জন্য ঢলুবাঁশ অবশ্যই প্রয়োজন। ঢলুবাঁশে এক প্রকার তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশের ভিতরে বিন্নি চাউল ধোয়ে কলাগাছের পাতা প্যাঁচালো ভাবে ঢুকিয়ে তার মধ্যে বিন্নি চাল ভরতে হয়। তারপর খড় (নেরা বা খের) দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে এই চুঙাপুড়া পিঠা তৈরি করা হয়। ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভিতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়।
ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো জায়গায় চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, সাথে দুধ, চিনি,নারিকেল,ও চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়।
পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়।
পরিবেশনা,
গোলাকার আকৃতির ঐতিহ্যবাহী এই পিঠা দুধের মালাই, খেজুরের গুড় ও দুধের সর দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মাছ, যেমন- রুই-কাতলা, বোয়াল, চিতল, পাবদা, কই, মাগুর মাছ হালকা মসলায় ভেজে তৈরি মাছ ভাজি দিয়ে চুঙ্গা পিঠা খাওয়া হয়।
পিঠেপুলির সাথে গ্রামবাংলায় এ ঐতিহ্যবাহী খাবার আজও দেখতে পাওয়া যায়।
.
ছবিঃ সংগৃহীত।
১৭টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম আমি খেয়েছি। স্বাদ ভালোই। আমার বোনজামাই সিলেটে দীর্ঘ সময় চাকরীর সুবাদে, তাই যাওয়া আসায় আপু বানিয়েছিল। বানানো বেশ কঠিনই লেগেছে আমার কাছে।
সুন্দর একটি বিষয় জানা গেল। শুভ কামনা রইলো🥰🥰
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্!
হ্যাঁ, দিদি বানাতে একটু কঠিন লাগে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকবেন অনেক।
রেজওয়ানা কবির
বাহ! এই প্রথম নতুন এক পিঠা সম্পর্কে জানলাম, সুযোগ পেলে টেস্ট করব একদিন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
হ্যাঁ,নিশ্চয় টেস্ট করবেন।
খুবি সুস্বাদু ও ঐতিহ্যবাহী খাবার।
ধন্যবাদ আপনাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এটা সম্পর্কে জানা আছে বিস্তারিত কিন্তু খাওয়া হয়নি কখনো। আপনার কাছ থেকে এর বিস্তারিত জেনে খাবার জন্য মনটা ব্যাকুল হলো। আশা করি কোন একসময়ে তৈরি করে খাওয়াবেন 😋😋😋। একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো। শুভ পৌষ সংক্রান্তি
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনার নিমন্ত্রণ রইলো, দিদি।
শুভ পৌষসংক্রান্তির শুভেচ্ছা।
আরজু মুক্তা
দাদা, ব্লগারদের একদিন দাওয়াত দিন প্লিজ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
হ্যাঁ,দিদি।
সবার নিমন্ত্রণ রইলো।
সকলে আসলে অনেক অনেক আনন্দিত হবো।
কামাল উদ্দিন
একেবারেই আনকমন, খাওয়া তো দূরের কথা নামও শুনিনি কখনো, ধন্যবাদ ভাইজান।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনার নিমন্ত্রণ রইলো, দাদা।
সিলেট আসলে জানাবেন।
কামাল উদ্দিন
মাত্র কয়েকদিন আগে সিলেট থেকে এলাম দাদা, তবে ব্যস্ততা ছিলো অনেক।
তৌহিদ
আপনাদের ওখানেও এই পিঠা হয়! আমি ভাবতাম পাহাড়িরাই শুধু খায় এই পিঠা। আদ্যোপান্ত বিস্তারিত জেনে ভালো লাগলো দাদা।
শুভকামনা জানবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ,দাদা।
সিলেট আসলে জানাবেন।
তৌহিদ
অবশ্যই দাদা।
মনির হোসেন মমি
খেয়েছি একবার খুবই মজা ভিন্ন রকম স্বাদ। চমৎকার পোষ্ট।গল্প কবিতার বাহিরে এমন পোষ্টকে সাধুবাদ জানাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্!
আপনাকেও সাধুবাদ জানাই, দাদা।
ভালো থাকবেন।
স্বপ্ন গোধূলি
পিঠাটা এই প্রথম দেখলাম আর নামটাও আজকে জানলাম। মনে হচ্ছে খেতে ভালো লাগবে।