চিঠি- ফাগুনের নামে

সাবিনা ইয়াসমিন ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০২:৪৩:৪৯পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩১ মন্তব্য

ফাগুন,

ভালোবাসা নিও। কেন জানি আজ হঠাৎ করে তোমায় লিখতে ইচ্ছে করছে। চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে তোমার সুন্দর হাসিমুখ। ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে ঐ ছড়িয়ে যাওয়া হাসিগুলো।

আচ্ছা বলোতো, কতদিন আগে তোমায় দেখেছিলাম ? আমি মনে করতে পারছি না। কি করবো বলো? যেদিন প্রথম দেখা হলো, সেদিন থেকেই সময়টা যেন থমকে গিয়েছিলো। তারপর কেমন করে পার হয়ে গেলো অজস্র মুহূর্ত ! সময়ের অংকে আমি ভিষণ কাঁচা, অতো গুনতে পারিনা, তাই হিসেব নিকেশ করা বাদ দিয়েছি। কি হবে এত গুনে? হিসেব রেখে কেই-বা কবে ভালোবাসে!!

তারপর কেমন আছো প্রিয়? কেমন যাচ্ছে দিনগুলো আজ-কাল? নিজের যত্ন নিচ্ছতো ঠিকমতো? আর আমাদের স্বপ্ন-গাছ টা? ওটাতে কি নতুন কোনো ফুল ফুটেছে? আমি ফুল ফোটাতে পারছিলাম না বলে তুমি রাগ করে নিয়ে গেলে, কত কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। কিন্তু জোর-বিশ্বাস আছে, তুমি তাতে ফুল ফোটাবেই। ভালোবাসার বিনিময়ে সবইতো তোমায় দিয়ে দিয়েছি। শুধু বিশ্বাস টা ছাড়া।

বিশ্বাস! অল্প শব্দে কত বিশালতা বহন করে তাইনা! আমার খুব অদ্ভুত লাগে এই শব্দটায়। যখন এটা স্থির থাকে তখন স্বরণে আসে না, যখন স্বরণে আসে তখন অস্থির মনে এর ভিত্তি খুঁজে নিতে হয়!! আমরা আমাদের ভালোবাসার সাথে এই বিশ্বাসের আদান-প্রদান করলে ভালো হতো। কেন যে করলাম না প্রায়ই ভাবি। ভাবতে ভাবতেই আনমনা মন থেকে বিশ্বাস টা ফুড়ুৎ করে উড়ে যায়। আকাশ-বাতাস, বাস্তব-কল্পনা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ঘুরতে থাকে। আমি বিশ্বাসকে বশে আনি, আর বিশ্বাস খুঁজতে থাকে তোমাকে... এবার যদি বশে আনতে পারি তাহলে শক্ত শেকলে বেধে রাখবো। এত জ্বালাতন আর ভাল্লাগে না।

জাদু, কাল বিকেলে কোকিলের ডাক শুনেছি। নির্জন দুপুরের বিরহী ডাক নয়, উল্লাসিত কুহুতান! যেন কোন আগমনী বার্তা দিচ্ছিলো! অনেক অপেক্ষার পর যেমন খুশির খবর আসে, তেমনি আনন্দের আর উচ্ছ্বাসের সুর ছিলো সেই ডাকে। প্রথমে অবাক, তারপর বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে শুনেছিলাম।

প্রিয়, শীত প্রায় শেষ হয়ে এলো। বসন্ত এসে গেছে প্রকৃতির দ্বার-প্রান্তে। চারিদিকে বসন্তের সাজ-সরঞ্জাম উপচে পরছে! প্রেমিক যুগলেরা ফেব্রুয়ারী মাসের চৌদ্দ তারিখে ভ্যালেন্টাইন ডে পালণ করে। এর আগে নাকি সাতদিনে সাতটা উৎসব থাকে। সাত তারিখ থেকে শুরু করে চৌদ্দ তারিখে গিয়ে শেষ হয়। এই সাতদিনে একে অপরকে সাত রকমের উপহার দেয়। আবেদন, ফুল, চকলেট, টেডিবিয়ার, আশ্রয়, সমর্পণ আর শপথ। এরপর সারাজীবনের জন্যে এই উপহার সিস্টেম চালু হয়ে যায়। ব্যাপার টা দারুণ না?

ফাগুন, তুমি কবে আসবে? আমি এবার তোমার কাছে ভ্যালেন্টাইন ডে চাই। জনম জনম ধরে আমরা প্রেম করছি, অথচ আমাদের একটাও ভ্যালেন্টাইনের স্মৃতি নেই, ভাবতে পারো?

গ্রীষ্মের আগুন-পোড়া দৃষ্টিতে
শুভ্রতার ছাই-ঘর্ষনে
এ চোখে খেলেছে আষাঢ়-শ্রাবণ,
প্রতিক্ষার আখিতে ঝরেছে বর্ষা
প্লাবিত হয়েছে হৃদয়ের উপকুল ;

শরতের বিকেল কিনেছি
উদাসীনতার দামে,
হেমন্তের ভীরু হাওয়ায়
লেখা চিঠি গুলো উড়িয়েছি বেনামে..

শীত চেয়েছে সারাবেলা
নিরবিচ্ছিন্ন উষ্ণতা,
বুক-চাঁদরে আচ্ছন্ন হয়ে অনিদ্রা এলো
নিবিষ্ট-নিবিড়তায়।

বিনা ফাগুনে বসন্তের আকাশ
হলো এক সাদাকালো ক্যানভাস,
বণ্যেরা ভুলেছে সবুজের উৎস-রুপ,

প্রিয় ফাগুন,
তুমি এসো বিশুদ্ধ রঙের প্রতিচ্ছবি হয়ে,
ফাগুনের আগুনে স্রোতস্বিনী হবো।

ভালো থেকো জাদু, মনে রেখো। আসছে বসন্তে নাহয় তাড়াতাড়ি এসো...

--- তোমারই নদী ---

0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ