চিঠি পর্ব— ১

জি.মাওলা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩, শুক্রবার, ১২:৩১:২৬পূর্বাহ্ন রম্য ৯ মন্তব্য

ছেঁড়া ডাইরির পাতা হতে .....................2

চিঠি পর্ব--- ১

প্রিয় সোহেল,
আমার ভালবাসা নিও। তুমি চলে যাওয়ার পর হতেই আমার মনটা বড় খারাপ হয়ে গেছে। আমি বলে বুঝাতে পারবনা কি প্রকার কষ্ট হচ্ছে। আমি এখন রাত ১১.২৫ মিনিটে চিঠি লিখছি। এত দেরিতে লিখার কারণ দোকানের ভাইয়া , ফুপু, দাদী, ও মৌসুমি আমার পালিয়ে যাওয়ার গল্প শুনছিল। তারা অবশ্যই আমার জন্য দোয়া করেছে। সোহেল তুমি এখন আমার স্বামী আর আমি তোমার বউ ঠিক তাইনা। আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। এখানে আমি সবার কাছে খুব মুখরোচক খবর হয়ে গিয়েছি। থাক ওসব কথা, তুমি আমার চিন্তা করবেনা। আমি তোমার আমানত , আর আমি তোমাকে কখন কোন খারাপ পথে নিয়ে যাবনা। মানে আমি তোমার আমানতের খেয়ানতের করবোনা। তুমি বড় আম্মাকে বলবে আমাদের যদি আলাদা করবে তবে আমরা কেন পালিয়ে গিয়েছিলাম। দুজন দুজনের কাছে থাকতে চাই বলেই তো দূরে যেতে চাইনা। আমি এখন আর বনি নাই। এখন থেকে মিসেস বনি রেজা।( শব্দটা কেটে দেওয়া, ভাল করে কাটেনি তাই বুঝা যায়)। ঠিক আছেতো । আর আমি কোন দিন তোমাকে ভুলে যাবনা বা ছেড়ে যাবনা। আমি তোমাকে আমার শরীরের মধ্যে বহমান রক্তের মত ভাল বাসি। আমার ভালবাসা শুধু তোমার জন্য। আমার শত্রুর সাথে কেমন ভাবে মিশো। সোহেল সব কিছু আমি মেনে নিতে পারব কিন্তু কেউ তোমাকে আমার কাছ হতে কেড়ে নিতে চাইবে আমি তা আমি মেনে নিবনা কোনদিন। আমার ভালবাসা নিও আবার। আশা করছি ভাল আছ। চিঠির উত্তর দিবে অবশ্যয় । বেশি বেশি চিঠি দিবে। হাতের লিখা খুব খারাপ মাফ করে দিও।
ইতি
I LOVE YOU তোমার বউ
পরের পৃষ্ঠা
বি: দ্রঃ এখানে আবার আসবে। আর যেদিন আসবে সেদিন যেন আব্বু না আসে।মানে আসছে কি না যেনে আসবে। আর একটা কথা তোমার চুমু আমি গলা ছাড়াও সারা শরীরে এঁকে নিয়েছি। আর তুমি আমার চুমু তোমার নরম ঠোঁটে এঁকে নিও। ........................................................................।। (লজ্জা লাগছে লিখতে) তোমার ঠোঁট গুলি খসখসে................................................। আমার ভালবাসার এই নিয়মগুলি তোমার খারাপ লাগে তাই না। ভাল থেকো । আর তোমার শরীরের প্রতি খেয়াল রেখ।
I LOVE YOU
C/O: যা আগে লিখে দিয়েছিলাম তাই দিবে
C/O: সাইদা খাতুন।
চিঠিতে যা ছিল টা হুবা হুব তুলে ধরলাম।
খামের ঠিকানা:
প্রেরক,
মিসেসঃবনি রেজা মচমইল প্রাপক মমতাজ মহল( ছাত্রাবাস)
শীরইল মঠ-পুকুর
C/O: মোঃ সোহেল রেজা( নতুন)
হোল্ডিং – ৮৭
ওয়ার্ড -২৭
রাজশাহী-৬১০০
বিলি তারিখে অর্থাৎ ছিলের তারিখ- ০৭-০৪-০২

পেছনের ঘটনা:
২০০২ সালের ঘটনা, আমি তখন শী-রইল স্কুলের পেছনে( পূর্ব দিকে) মমতাজ মহল থাকি। এ সময় আমাদের মমতাজ মহল ছাত্রাবাসে উঠেছিল আমার এই স্কুল বন্ধু সোহেল। ওর মুখেই শোনা ওর পালানোর ঘটনা।
সোহেল রাজশাহীর তানোর থানার মচমইল গ্রামের.................. ( নামটা মনে পড়ছে না) চেয়ারম্যান ছেলে । ওঁদের গ্রামের রাজশাহীতে বসবাস রত পরিবহণ ব্যবসায়ী ............ ( নামটা মনে পড়ছে না) মেয়ে বনির সঙ্গে ওর পরিচয় হয় এক ঈদে। ওরা রাজশাহীতে সেটেল্ড। ঈদের সময় বেশ কয়েক দিন কথা ও আড্ডায় ওকে ভাল লেগে যায় সোহেলের। এর পর বন্ধুদের পরামর্শে বনিকে একটা আবেগময় চিঠি লিখে ফেলে সোহেল। এর পর ওঁদের বাড়ির এক পিচ্চিকে লজেন্স ঘুষ দিয়ে চিঠি পৌঁছে বনির হাতে। বনির হা।
ওঁদের প্রেমের নৌকা পাড়ি দেয় আটলান্টিক মহাসাগর।
বনি তখন রাজশাহী পিএন স্কুলে ১০ম শ্রেণীতে আর সোহেল আমার সঙ্গে রাজশাহী সিটি কলেজে ১২ ক্লাসে।
তো রাজশাহীতে এসে দুজনে স্কুল ও কলেজ পালিয়ে পদ্মার পাঁড়, সিমলা বা কখনো পার্কে ওঁদের ডেটিং চলছিল বেশ।
এর মধ্যে বনির এক আত্মীয়ের চোখে ধরা খেয়ে বনির বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ।
ফলাফল চুরি করে দেখা করা এবং আবেগ ওঁদের ঠেলে দেয় বাড়ি হতে পলায়ন।
বাড়ি হতে পলায়ন ও কাজির কাছে গিয়ে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে। নিখোঁজ ওরা মাস খানেক। অবশেষে সোহেলের নিয়ে যাওয়া টাকা শেষ ঘুরে যে যার আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয়।
কারো পরিবার মেনে না নেওয়া। বনি বন্দী ওঁদের বাড়ি। আর সে সময় আমার ছাত্রাবাসের ছাদ হতে বনিকে দেখতে আমার ছাত্রাবাসে সোহেলর আগমন। মমতাজ মহল( ছাত্রাবাস) হতে উত্তর দিকে রাস্তা পার হয়ে ছোট একটি ডোবা( এখন বাড়ি হয়ে গেছে, গেল বার মাস ২ আগে গিয়ে দেখি) পার হয়েই বনিদের একতলা বাড়ি। ওরা এক ভাই এক বোন। ভাইটি ওর ছোট, পড়তো শী-রইল স্কুলে ক্লাস ৮য়ে। দেখতাম আমাদের ৪ তলার ছাদ হতে সোহেল চাতক পাখির মত চেয়ে আছে বনিদের বাড়ির দিকে। সোহেলের অবস্থান বনিদের ভাই ব্রাদার জানতে পেরে মেসে এসে ওকে বেশ শাসিয়ে গেল একদিন। পরে ৩-৪ দিন পরে শুনি বনিকে গ্রামের বাড়িতে ওর দাদীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোহেলও মেস হতে বিদায়। আর কয়েক দিন পরে এই চিঠি। যা এখনো আমার কাছে আমার ট্রাংকে রয়ে গেছে। ঐ ঘটনার পর ওকে আর দেখিনি। শালা বনিকে নিয়ে এখনো সংসার করছে কি না জানি না। আর ওঁদের ঘটনাটা বেশ আলোড়ন তুলেছিল শী-রইল পাড়ায়। আজ মনে হল মহাফেজ খানার এই রকম কিছু গোপন বিষয় তুলে ধরি সকলের কাছে।

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ