চায়না ভ্রমণ (৩য় পর্ব)

ইঞ্জা ৩ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ০১:০০:৫৬অপরাহ্ন ভ্রমণ ২২ মন্তব্য

 

 

 

 

আমি, ইস্টেফেন হাঁটছি, পুরা এলাকা জুড়ে বড় বড় হাইরাইজ বিল্ডিং এবং মিডেলে অনেক বড় ওয়াকওয়ে, এতো বড় যে এইখানে ফুটবল, ক্রিকেট খেলতে পারবে, মাঝে মাঝে ছোট ছোট ফুলের, ফলের, সিগারেটের, অর্নামেন্টসের পসরা সাজানো দোকান যা ঠেলে নিয়েও যাওয়া যায়, প্রচুর মানুষ হাঁটছে এদিক ওদিক, বড় বিল্ডিং গুলোর অনেক গুলোতে কেএফসি, পিজ্জা হাট, ম্যাকডোনাল্ডাস, বার্গার কিং সহ বিভিন্ন খাবারের রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেট ইত্যাদি আছে কিন্তু মানুষের আওয়াজ শব্দ খুবই কম, হটাত হয়ত হাসির শব্দ, নাহয় কেউ কাউকে ডাকছে এমনই জায়গা, একদম শান্ত পরিবেশ।
আমরা মনে হয় পনের মিনিটের মতো হেটে একটা বিল্ডিংয়ের সামনে আসার পর এক চায়নিজ মেয়ে এগিয়ে এলো আমাদের সামনে, ইস্টেফেন পরিচয় করিয়ে দিলো আমার সাথে, এ হলো সিন্ডি আর সিন্ডিকে বললো, এ হলো নাভী (নবী বলতে পারেনা)।

সিন্ডি এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিলে আমি হ্যান্ডসেইক করে বললাম হাই সিন্ডি।
সিন্ডি হেসে দিয়ে বললো, হাই নাভী কেমন আছো?
জবাবে বললাম, একজন সুন্দরী মেয়ের সামনে এসে ভালো না থাকার কথা নয়।
ইস্টেফেন্ট কপট রাগ দেখিয়ে বললো, তুমি ওর সাথে ফ্লার্ট করোনা, সে আমার।
আমি বললাম, তাহলে সে আমার বোন, কি বলো সিন্ডি?
সিন্ডি হেসে বললো, অবশ্যই, এখন চলো তোমরা, নিশ্চয় খিদে লেগেছে?
ইস্টেফেন আমাদের অপেক্ষায় রেখে উপরে চলে গেলো, একটু পর ফিরে এসে আমাদের নিয়ে গেল।
উপরে গিয়ে আমাদেরকে নির্ধারিত টেবিলে নিয়ে গিয়ে বসালো, কিছুক্ষণের মধ্যে ওয়েট্রেস এসে আমাদের মেনু দিয়ে গেল, আমি নিলাম টেন্ডারলয়ন স্টেইক, ওরা দুজনে নিলো টি-বোন স্টেইক, আমি বলে দিলাম 60% প্রসেস করার জন্য।
ইস্টেফেন জিজ্ঞেস করলো রেডওয়াইন চলবে কিনা, আমি হাঁ বললে এস্টেফেন ওর্ডার করে দিলো।
স্টেইক এবং ওয়াইন এলে আমরা তিনজনই খাওয়ার সাথে সাথে ড্রিংক, গল্প করছি, বিশেষ করে ফ্যামিলি, বাংলাদেশ, চায়না এইসব নিয়ে কথাবার্তা।

ইস্টেফেনকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের দেশে তো কমিউনিস্ট শাসন, এই যে এতো বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান, বড় বড় বিল্ডিং, ফ্লাট, এইসব কি সরকারের?
জবাবে ইস্টেফেন বললো, তাদের সরকার এখন অনেক ফ্লেক্সিবল, জায়গা সম্পত্তি সব ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয় সরকার, শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে সরকার বিভিন্ন সুবিধাদি দেয়, ট্যাক্স রেয়াত দেয়, শিল্প প্রতিষ্ঠানে কোন বড় সমস্যা হলে তখনই সরকার সেই প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসিয়ে সমস্যার সমাধান করে।
বুঝলাম কেন এই দেশ এতো উন্নতি করেছে এবং করছে।
খাবার শেষে এলো ফ্রুট টি, কাঁচের জারে কমলা, মুসাম্বি, আঙ্গুর, চেরি সহ আরো কয়েকটি ফল দেওয়া আছে জারে, ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে দেওয়া হয়েছে জারে, সিন্ডি সবার কাপে কাপে পরিবেশন করছে, আমরা পান করছি, চা নয় যেন ফলের নির্যাস পান করছি, অসাধারণ তাদের এই চা, চায়নিজরা বিভিন্ন ধরণের চা খায়, জিংশেং চা, বিভিন্ন ঔষধি পাতার চা, জেসমিন চা, গ্রীণ টি সহ অনেক অনেক ধরণের চা।

চা শেষে ইস্টেফেন বিল মিটিয়ে দিলে আমরা বেরিয়ে এলাম রেস্টুরেন্ট থেকে, এগুলাম সামনের দিকে গল্প করতে করতে, সিন্ডি জানালো তার কথা, সে স্থানীয় এক ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজিতে মাস্টারস পড়ছে, ইদানীংকার ছেলে মেয়েরা ইংরেজি পড়ার প্রতি বেশি আগ্রহ নিচ্ছে, তাই সিন্ডি ভবিষ্যতে ইংরেজি পড়াবে ছাত্রদের, মানে ইংরেজির শিক্ষক হতে চাই সে, পড়া শেষ করে ওরা দুজন বিয়ে করবে আগামীতে।
সিন্ডি বললো, নাভী তুমি ইংরেজিতে বেশ দক্ষ।
আমি ধন্যবাদ জানালাম।
আমরা হাটতে হাটতে কখন যেন আমার হোটেলের সামনে এলাম বুঝতেই পারিনি, আমি অবাক হলাম এতো সুন্দর মার্কেট প্লেসের পাশে নিজের হোটেলকে পেয়ে, আমার মনের অবস্থা বুঝে ইস্টেফেন বললো, You have the best hotel in town.
হোটেলের প্রবেশ মুখে ওরা আমার থেকে বিদায় নিলো, ইস্টেফেন বললো সকাল নয়টাই সে আমাকে পিক করতে আসবে।

চলবে।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ