আমি, ইস্টেফেন হাঁটছি, পুরা এলাকা জুড়ে বড় বড় হাইরাইজ বিল্ডিং এবং মিডেলে অনেক বড় ওয়াকওয়ে, এতো বড় যে এইখানে ফুটবল, ক্রিকেট খেলতে পারবে, মাঝে মাঝে ছোট ছোট ফুলের, ফলের, সিগারেটের, অর্নামেন্টসের পসরা সাজানো দোকান যা ঠেলে নিয়েও যাওয়া যায়, প্রচুর মানুষ হাঁটছে এদিক ওদিক, বড় বিল্ডিং গুলোর অনেক গুলোতে কেএফসি, পিজ্জা হাট, ম্যাকডোনাল্ডাস, বার্গার কিং সহ বিভিন্ন খাবারের রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেট ইত্যাদি আছে কিন্তু মানুষের আওয়াজ শব্দ খুবই কম, হটাত হয়ত হাসির শব্দ, নাহয় কেউ কাউকে ডাকছে এমনই জায়গা, একদম শান্ত পরিবেশ।
আমরা মনে হয় পনের মিনিটের মতো হেটে একটা বিল্ডিংয়ের সামনে আসার পর এক চায়নিজ মেয়ে এগিয়ে এলো আমাদের সামনে, ইস্টেফেন পরিচয় করিয়ে দিলো আমার সাথে, এ হলো সিন্ডি আর সিন্ডিকে বললো, এ হলো নাভী (নবী বলতে পারেনা)।
সিন্ডি এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিলে আমি হ্যান্ডসেইক করে বললাম হাই সিন্ডি।
সিন্ডি হেসে দিয়ে বললো, হাই নাভী কেমন আছো?
জবাবে বললাম, একজন সুন্দরী মেয়ের সামনে এসে ভালো না থাকার কথা নয়।
ইস্টেফেন্ট কপট রাগ দেখিয়ে বললো, তুমি ওর সাথে ফ্লার্ট করোনা, সে আমার।
আমি বললাম, তাহলে সে আমার বোন, কি বলো সিন্ডি?
সিন্ডি হেসে বললো, অবশ্যই, এখন চলো তোমরা, নিশ্চয় খিদে লেগেছে?
ইস্টেফেন আমাদের অপেক্ষায় রেখে উপরে চলে গেলো, একটু পর ফিরে এসে আমাদের নিয়ে গেল।
উপরে গিয়ে আমাদেরকে নির্ধারিত টেবিলে নিয়ে গিয়ে বসালো, কিছুক্ষণের মধ্যে ওয়েট্রেস এসে আমাদের মেনু দিয়ে গেল, আমি নিলাম টেন্ডারলয়ন স্টেইক, ওরা দুজনে নিলো টি-বোন স্টেইক, আমি বলে দিলাম 60% প্রসেস করার জন্য।
ইস্টেফেন জিজ্ঞেস করলো রেডওয়াইন চলবে কিনা, আমি হাঁ বললে এস্টেফেন ওর্ডার করে দিলো।
স্টেইক এবং ওয়াইন এলে আমরা তিনজনই খাওয়ার সাথে সাথে ড্রিংক, গল্প করছি, বিশেষ করে ফ্যামিলি, বাংলাদেশ, চায়না এইসব নিয়ে কথাবার্তা।
ইস্টেফেনকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের দেশে তো কমিউনিস্ট শাসন, এই যে এতো বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান, বড় বড় বিল্ডিং, ফ্লাট, এইসব কি সরকারের?
জবাবে ইস্টেফেন বললো, তাদের সরকার এখন অনেক ফ্লেক্সিবল, জায়গা সম্পত্তি সব ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয় সরকার, শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে সরকার বিভিন্ন সুবিধাদি দেয়, ট্যাক্স রেয়াত দেয়, শিল্প প্রতিষ্ঠানে কোন বড় সমস্যা হলে তখনই সরকার সেই প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসিয়ে সমস্যার সমাধান করে।
বুঝলাম কেন এই দেশ এতো উন্নতি করেছে এবং করছে।
খাবার শেষে এলো ফ্রুট টি, কাঁচের জারে কমলা, মুসাম্বি, আঙ্গুর, চেরি সহ আরো কয়েকটি ফল দেওয়া আছে জারে, ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে দেওয়া হয়েছে জারে, সিন্ডি সবার কাপে কাপে পরিবেশন করছে, আমরা পান করছি, চা নয় যেন ফলের নির্যাস পান করছি, অসাধারণ তাদের এই চা, চায়নিজরা বিভিন্ন ধরণের চা খায়, জিংশেং চা, বিভিন্ন ঔষধি পাতার চা, জেসমিন চা, গ্রীণ টি সহ অনেক অনেক ধরণের চা।
চা শেষে ইস্টেফেন বিল মিটিয়ে দিলে আমরা বেরিয়ে এলাম রেস্টুরেন্ট থেকে, এগুলাম সামনের দিকে গল্প করতে করতে, সিন্ডি জানালো তার কথা, সে স্থানীয় এক ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজিতে মাস্টারস পড়ছে, ইদানীংকার ছেলে মেয়েরা ইংরেজি পড়ার প্রতি বেশি আগ্রহ নিচ্ছে, তাই সিন্ডি ভবিষ্যতে ইংরেজি পড়াবে ছাত্রদের, মানে ইংরেজির শিক্ষক হতে চাই সে, পড়া শেষ করে ওরা দুজন বিয়ে করবে আগামীতে।
সিন্ডি বললো, নাভী তুমি ইংরেজিতে বেশ দক্ষ।
আমি ধন্যবাদ জানালাম।
আমরা হাটতে হাটতে কখন যেন আমার হোটেলের সামনে এলাম বুঝতেই পারিনি, আমি অবাক হলাম এতো সুন্দর মার্কেট প্লেসের পাশে নিজের হোটেলকে পেয়ে, আমার মনের অবস্থা বুঝে ইস্টেফেন বললো, You have the best hotel in town.
হোটেলের প্রবেশ মুখে ওরা আমার থেকে বিদায় নিলো, ইস্টেফেন বললো সকাল নয়টাই সে আমাকে পিক করতে আসবে।
চলবে।
২২টি মন্তব্য
মায়াবতী
ভাইয়া দারূণ * আমার চাইনিজ দের খাবার টাবার বেশ ভাল লাগে , আমার নাক বোঁচা হবার কারণে ছোট বেলায় ভাই বোন রা আমাকে চাইনিজ বলতো, আজকাল মনে হয় আমার পিছলি জিন্দেগীতে হয়তো চায়নিজ কোনো ইতিহাস আছে * পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, প্রথম প্রথম অথেনটিক চায়নিজখাবার আমার পছন্দ ছিলোনা, কিন্তু প্রতিবছর চার পাঁচ বার যাওয়া আসা, পরে চাকরির সুবাধে ওখানে থাকা, সব মিলিয়ে ওখানকার খাবার এখন আমার পছন্দের ৩য় নাম্বারে আছে, আমার পছন্দ যথাক্রমে দেশি, ইটালিয়ান এরপর চায়নিজ।
আপনার চেহেরার কথা শুনে হাসবো নাকি কাঁদবো বলুন, কারণ আমাকেও যে প্রায় মানুষ চায়নিজ বলে। :D)
ছাইরাছ হেলাল
এমন চা সম্বন্ধে এই প্রথম জানলাম,
এখানে হলে এগুলোই খেতাম সারাক্ষণ।
এত্ত দেরি করে দিলে হবে না ভাই।
ইঞ্জা
ভাই আমি তো খুব কম সংখ্যক চার কথা বললাম, আমার দেখা মতে এদের চা খাওয়ার আইটেম প্রচুর আর খায়ও প্রচুর।
রেজওয়ান
অসাধারণ ভাবে এগুচ্ছে ভাই, ছবিটা অনেক সুন্দর হয়েছে😍
ইঞ্জা
ধন্যবাদ রেজওয়ান, তুমিও লেখো মালেশিয়ান লাইফস্টাইল নিয়ে, বেশ ভালো হবে।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া আমি জাপানে ছিলাম পাঁচ বছর। চায়নিজদের সাথে বেশ মিল দেখছি! কতো রকমের যে চা, বাবারে!
খুব দারুণ হচ্ছে কিন্তু পর্বগুলো। তাড়াতাড়ি চাই পরের পর্ব।
ইঞ্জা
আপু, এরা চা হিসাবে যা খায় তা খুবই স্বাস্থ্যকর।
আপু আমি লেখার সময় আজকাল খুব কমই পাই, দোয়া রাখবেন, হয়ত কাল দেবো।
রিমি রুম্মান
আহা , নিউইয়র্কে আমার প্রতিবেশী সকলেই চায়নিজ। বেশ অমায়িক সকলে। লেখাটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমি সিন্ডিকে চিনি, বহুকাল ধরে চিনি।
ইঞ্জা
আপু আপনি ঠিকই বলেছেন, এরা খুবই অমায়িক, এরা যখন বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় তখন সত্যিকার বন্ধু হওয়ার জন্যই, ধন্যবাদ আপু। 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
দারুন চলুক -{@
ইঞ্জা
(3
জিসান শা ইকরাম
ভাইসাব ভ্রমন কাহিনী চলুক, মজা পাচ্ছি খুবই,
অনেক কিছু জানছি
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ ভাইজান।
তৌহিদ ইসলাম
আপনার ভ্রমণকাহিনী লেখা পড়ে মনে হয় চোখের সামনেই সব ঘটছে। অসম্ভব ভালো লাগে ভাই। আরো পর্ব চাই।
ইঞ্জা
খুব খুশি হলাম ভাই, আশা করি আগামীকাল পাবেন। 🙂
তৌহিদ ইসলাম
৪র্থ পর্ব পড়লাম ভাই, শুভকামনা রইলো।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ প্রিয়জন
মোঃ মজিবর রহমান
ভালো লাগলো ইঞ্জা ভাই।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই (3
মোঃ মজিবর রহমান
-{@
ইঞ্জা
(y) -{@