চতুর্থ গল্প (চিঠি)

এস.জেড বাবু ১৫ নভেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ০৭:৪৬:৫২অপরাহ্ন চিঠি ২০ মন্তব্য

প্রিয়তমা,
প্রিয়তমা বলেই ফেলি। কারণ আপন হিসেবে যতটা মন খুলে কথা বলতে পারবো- অন্য কোন কিছু দিয়ে শুরু করলে হয়তো ততটা বলা হবে না।

যাক, জানিনা আমাকে পাঠানো তোমার ছবিটা “ফটোশপ” ঘুরে এসেছে কি না। এমন দুধে আলতা রং আর তুলিতে আঁকা চোখ মানুষের হয় জানা ছিলো না। তোমার প্রেমে পড়তে সময় লাগলেও তোমার চোখের গল্পে আপ্লুত আপাতত।

যদি ছবির মানুষটার নব্বই শতাংশ আমি আমার দৃষ্টির সীমানায় পাই কখনো, তবে ভেবে নিবো আমার চতুর্থ প্রেমে পড়াটা সার্থক ছিলো।

হ্যাঁ, তুমি আমার চতুর্থ গল্প। আর এই চিঠি সে গল্পের সূচনা।

সরি - তুমি করেই বলে যাচ্ছি। সেই যে বললাম, আপন ভেবেই পিছনের তিনটি উপন্যাসের সারাংশ তোমায় বলবো।

প্রথম গল্পটা হাই স্কুল পাশ করেনি। জীবনে প্রথম ভালোবাসি লিখা চিরকুট যার গণিত বইয়ের তৃতীয় পৃষ্ঠায় গুঁজে দিয়েছিলাম, তাঁকে ফেলে অনাকাঙ্খিত ভাবে আমি কলেজের দুয়ারে অন্তরীণ হই।
ইচ্ছে হচ্ছিল, ফেল করার জন্য আবার আমার এস.এস.সি র খাতাগুলি রি-এক্সামিন করাই। সে সুযোগ ছিলো না বলে আমার শহরের কলেজ আর ওর গ্রামের স্কুলের দুরত্বটা মনের মধ্যেও এসে গিয়েছিলো।
এই কুলে আমি আর ঐ কুলে সে-

দ্বিতীয় গল্পের শুরুটা ভার্সিটিতে। ভর্তির দিনেই অফিস কক্ষ থেকে বেড়ুতে গিয়ে যে মেয়েটির সাথে এক্সিডেন্টলী ধাক্কা খাই, সেখানে সেই ধাক্কায় পথে আছড়ে না পড়লেও প্রেমে পড়েছিলাম কলমী লতার গড়নের মেয়েটার। চোখ মেরে মিস্টি করে হেসে হাই বলেছিলাম। সরি বলিনি।
এক সপ্তাহ পরে যে ক্লাশের বেঞ্চে আমি ছাত্র, সে ক্লাশের টিচার্স টেবিলে সেই চিকন গড়নের মেয়েটি মেডাম।
কলি হওয়ার আগে খুঁড়িতেই ঝড়ে পড়ে দ্বিতীয় স্বপ্ন।
পরের সাড়ে তিন বছরের প্রতিটি দেখায় আমার দৃষ্টি আমার সেন্ডেলের ছিড়াফাড়া খুঁজে দেখতো।

শেষ দেখায় ইউরূপে স্পন্সরের কাগজে ক্লাস টিচারের স্বাক্ষরটা নিতে গিয়ে সেই নিজের জুতার দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম- মিস ইউ মেডাম-

আমার বিমানের সাথেই উড়াল দিয়েছিলো সে মিস করার ইচ্ছে।

অতঃপর পাশ্চাত্যের নিয়ন আলোয় বাসন্তী সন্ধ্যায় কফি হাউসের টেবিলগুলিতে চোখ ধাঁধানো সব অপরূপ রূপের মাঝে ইচ্ছে হারিয়ে যায় রংয়ের অতলে। সম বয়সী থেকে নিচে নামতে নামতে অবশেষে পনের বছরের একজন পেয়েছিলাম সিঙ্গেল- অবশ্য ওর লাইনেও ওয়েটিং লিস্টের তিন নম্বরে আমি ছিলাম।
হয়ে যেতো প্রতি সেটারডে তে একবার দেখা। পনেরতম বার্থ-ডে তে প্রথম সেদিন ওর বাড়ির অতিথি হলাম।
বাস ভবনের দেয়াল জুড়ে যেসব ছবি শোভা পাচ্ছিলো তা দেখে আঁতকে উঠে কলিজা। পশ্চিমের সেই অনবদ্য সুন্দরী মেয়েটা ইহুদী ছিলো-

সেদিন চিৎকার করিয়া কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনাই চিৎকার।

সেদিন সত্যি কস্ট পাই-
মনে হতে থাকে পিছনের দু’দুটি গল্প।

খুব মিস করি চৌদ্দ হাজার মাইল দুরে আমার প্রিয়তম “মা” কে।

কল ধরেই তিনি বলেছিলেন বাবা তোকে কল করতাম আমিই। কেমন আছিস বাবু ?
কেমন আছি সে কথা বলতে যাবো এমনিতেই ছোট বোনটা মায়ের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে,
ভাইয়ারে .... তোর জন্য বৌ দেখতে গিয়েছিলাম-
কি যে সুন্দর-
তোর মেসেঞ্জারে দিচ্ছি - দেখে নিস-

আর শোন- আমার কিন্তু এই শত্রু ভাবিটা চাই-ই-চাই ।
শত্রু হলে কেমনে হবে ? সময়ের অভাবে জানা হয় নাই।

সেদিন মায়ের সাথে আর আমার হেরে যাওয়ার তৃতীয় গল্পটা বলা হয়নি।

কল রেখে ইমুতে তোমায় দেখি-
ভালো লেগে যায়- কাজল টানা চোখ-
ভালো লেগে যায় আমার সংস্কৃতির ঢং -

তারচে বেশি ভয় লাগে- ভালো লাগার ভয়।

আচ্ছা !
কতদিন থাকবে গো তুমি ?

তুমি কি আমার মায়ের কাছে বলা চতুর্থ গল্পের পাখি হবে ?

অপেক্ষায় থাকবে যতদিন ফিরতি ফ্লাইট না ধরি !?

ইতি
তোমার সম্ভাব্য হবু

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ