ফুলীঁ নারায়ণগঞ্জ একটি হাসাতালে দু'দিন যাবৎ আছেন।তাকে সে দিনের ঘটনা জিজ্ঞাসা করতে সাংবাদিক, পুলিশ আসছেন কিছুক্ষণ পর পর।অনেক ক্ষণ অপেক্ষার পর এক সাংবাদিকের সাথে ফুলীর কিছু কথোপকথন।

-আপনি এখন কেমন আছেন?

-জি,মোটা মোটি ভালো।

-আচ্ছা যে দিন আপনি বাস স্টপেসে ছিলেন তখন কি আকাশঁ মেঘলা ছিল?

-কোন কথা বলছেন,আমি বুঝি নাই।

-ঠিক আছে,বুঝেননি ঐ যে কিছু লোককে কিছু আইনের লোক হঠাৎ বাস স্টপেসে এসে মাইক্রোতে উঠিয়ে নিলো।

-ও হ্যা,সে দিন বৃষ্টি হচ্ছিল।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল।

-আপনি কি দেখলেন একটু খুলে বলেন।

-আমি তখন স্টেসনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি,আমার পাশেই কিছু বকাটে ছেলে ছিল হঠাৎ কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাস এসে কোমড় থেকে বন্দুক বের করে বলল আমরা আইনের লোক এর পর বকাটে ছেলেগুলোকে উঠিয়ে নিল মাইক্রোতে।

-আপনি ওদের বকাটে বলছেন কেনো?

-কি বলব বলেন?সরকারতো আমাদের মা বোনদের যাতায়াতের কথা চিন্তা করেন না।তাই বাধ্য হয়ে ছেলেদের স্ট্যাসনে দাড়িয়েছিলাম আমি একা আর কোন মেয়ে ছিল না,সেই সুযোগে ছেলেগুলো আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছিল।

-আচ্ছা সবার পড়নে কি আইনের পোষাক ছিল?

-না,তবে কিছু লোক পরিচয় পত্র বের করে দেখায়।

সেই ঘটনার  এক দিন পেরিয়ে যাচ্ছে লোকগুলোর কোন হদিস নেই।প্রশাসনের লোকেরা অস্বীকার করছেন।তবে কারা কিডন্যাপ করল ছেলেগুলোকে। প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব এবং তেমন কোন কার্যক্রমও হাতে নেন নি।ফুলীঁ বেডে শুয়ে চিন্তায় পড়ে গেল শেষে আবার কোন ঝামেলায় পড়বে নাতো!এমন সময় ছোটন তার বেশ কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ফুলীর বেডের কাছে আসেন।একে বারে দাপটের সহিত হাসপাতালে ঢুকেন।ফুলীর শিয়রের পাশে চেয়ারটিতে বসেন।

-কেমন আছো ফুলীঁ?তোমাকে না মানা করলাম  কাজে যেয়ো না গন্ডগল হতে পারে।

-গন্ডগল তো আমাকে নিয়েই হলো।

-কে,তোমাকে কি বলেছে তার নাম বলো।

-নাম বললে কি করবেন, সে দিনের মতন তাকেও কিডন্যাপ করবে নাকি?

ছোটন অবাক হন বলে কি মেয়েটি তাহলে সে দিনের ঘটনাটি ফুলীঁ কি দেখেছিল,সে কি সেখানেই ছিল।

-কি ভাবছেন, আমি.......থাক পড়ে বলব আমি ভাল আছি যান এবার আমাকে একটু বিশ্রাম নিতে দিন ।আপনাদের জন্য ঠিক মত হাসপাতালেও শান্তি পাই না সারাক্ষন কেবল এ আসে ও আসে...জেরা করতেই থাকে।

পর দিন ফুলীঁ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে চিন্তায় পড়ে যান এখন সে কি করবে যে চাকুরীটা ছিল তাও চলে গেল।এখনতো কিছু একটা করতে হবে নতুবা জীবন চলবে কি ভাবে।ভাবনার সাগরে হাবু ডুভু খাচ্ছে ফুলীর মন ঠিক সেই সময় বেশ কিছু গার্মেন্টস ওয়ার্কার তার বাসায় দেখা করতে আসেন তার মধ্যে লোকাল থানার গার্মেন্টস ঐক্য পরিষদের কিছু লোকজনও এসেছে তাদের হাতে পত্রিকা।ফুলীঁ তাদের ঘরে বসিয়ে আপ্যানের জন্য একটি ছেলেকে বাজারে পাঠিয়েছেন চা বিস্কুট আনতে।এক জন আজকের পত্রিকাটি হাতে নিয়ে ফুলীঁকে দেখান।

-এই দেখো পত্রিকার প্রথম পৃষ্টায় তোমার ছবি সহ রিপোর্ট।রিপোর্টে তোমাকে দোষী করেছে,বলেছে তুমি নাকি লাইন চীফ  মজিবুল্লাহ সজীবকে খানকির পোলা বইল্লা প্রথম ধাক্কা দিলে অন্য স্টাফরা ক্ষেপে যায়....তারপর যা হবার তাই হয়।

-মিথ্যে সব ......এখন কি হবে?আর আমি বা কি করব এখন?

-কিছুই হবে না পুলিশ বাদী মামলা হবে সেখানে গাড়ী ভাঙ্গচূড়ের মামলার আসামী করবে।তবে ভয় পেয়ো না আমরা তোমাদের সাথে আছি আর সে জন্যেই তোমার কাছে আসা।তুমি আমাদের দলে থাকবে?

-না,আপা আমি গরীব মানুষ আমার পক্ষে সম্ভব না দলাদলি করা।

-এ দেশে কোন হালায় নেতাগিরির আগে কোটি পতি ছিল,তাছাড়া তুমি তোমার উপর অন্যায় ভাবে মামলার প্রতিবাদ জানাবে...আমাদের অধিকার আমাদের কেউ ইচ্ছে করেই দিবে না, অধিকার আদায় করে নিতে হবে বুঝলে।

-জি,আপা তবে আমাকে ভাবতে দিন, কাল সকালে কথা বলব....জানাব আমি।

-ঠিক আছে আজ তাহলে উঠি,কাল সকালে আশা করি আমাদের অফিসে আসবে।

এরই মধ্যে চা বিস্কুট এসে যায় আপ্যায়ন সেরে ওরা যে যার মতে চলে যায়।ফুলীঁ আবারো চিন্তায় পড়ে.....একি অবস্হা ভাগ্যে কি আছে আল্লাহই জানেন।সে দিনের মতন ফুলীঁ রাতটা কাটাবার বৃথা চেষ্টা করছে।তার কেউ নেই যে এই বিষয়ে আলোচনা করে নিজের মনকে শান্ত করবে।এই মুহুর্তে ছোটন কাছে থাকলে হয়তো একটু হলেও জীবনের নিশ্চয়তা পেত,শান্তি পেত মন।এই শহুরে একমাত্র সেই ছিল আপনজন ...তাই কেনো যেন বার বার ছোটনের কথা মনে পড়ছে।.....গরীবের মন এক মাত্র আল্লাহ ই বুঝেন তাইতো সহসাই ছোটন হাতে একটি পত্রিকা নিয়ে হাজির।ছোটনকে দেখে ফুলীঁ একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়।

-কে এই লাইন চীফ?

-ফ্যাক্টরীর পাশেই থাকেন,......হঠাৎ আপনি এখানে?

-কেনো,আসতে নেই বুঝি।

-না মানে.......।ফুলীঁর চোখঁ ততক্ষণে জলে ভরে যায়।আবেগ আর ভয়ে ফুলীর মুখ দিয়ে চেষ্টা করেও কোন শব্দ বের করতে পারছে না এ যেন অতি সুখে কাতর অতি দুঃখে পাথর হয়ে নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়া।এই প্রথম ছোটন ফুলীঁর ভয়ার্ত আবেগী মনকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।ফুলীঁ যেন ফিরে পেল তার হারিয়ে যাওয়া মনোবল।জগতের সকল সুখ ছোটনের বুকে মাঝে কান পেতে অনুভব করছে।

-কিচ্ছু হবে না পাগলী,সব ঠিক হয়ে যাবে।

ছোটন ফুলীঁকে শান্তনা দিয়ে প্রস্হান নেয়।রাত তখন নয়টা ফুলীঁ বিছানায় বালিশেঁ উপুর হয়ে শুয়ে পড়ল  ক্লান্ত অসুস্হ দেহের চোখের পাতায় কখন যে নিদ্রাদেবী এসে হানা দিল সে টের পায়নি হঠাৎ লোকের চেচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়,দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল আটটা।দরজায় বিকট আকারে কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেয়ে সে দরজা খুলে চেয়ে দেখে পুরুষ পুলিশের সাথে কয়েক জন মহিলা পুলিশ তার দরজার সামনে দাড়ানো।দরজা খোলার সাথে সাথে ফুলীঁকে মহিলা পুলিশ হাত কড়া পড়িয়ে দেয়।

-কি ব্যাপার আমাকে হাতকড়া পড়ালেন কেনো?

-গত রাতে আপনার ফ্যাক্টরীর লাইন চীফ মজিবুল্লাহ সজীব খুন হন।সেই অপরাধে সন্দেহ ভাজন হিসাবে আপনাকে আপাতত এ্যরেষ্ট করা হল।

চলবে....

ছবি:সংগ্রহ

ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীঁরা ০৮

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ