ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীঁরা০৪

অনেক খোজাঁ খুজির পর আমান সাহেব খুজেঁ পেল ছোটনকে ।এক সন্ধ্যায় একটি অপরিচিত স্হানে কেরাম বোড খেলার আড্ডায়।ধুমছে একটার পর একটা সিগারেট জ্বালাচ্ছে আর খেলায় মগ্ন।আমান সাহেব এসেছে বলে এক দূত ছোটনকে জানায় ছোটন দূতকে বসতে বলে। ছোটন ভেংচি কাটে আমান সাহেবকে উদ্দ্যেশ্য করে।

-সালা শুয়োরের বাচ্চা আবার কোন ভেজালঁ নিয়ে এলো কে জানে।

আমান সাহেবের সাথে একটি ব্রিফকেটস এবং আরো দুজন বডিগার্ড।ছোটনের সাথে কথা চলছে কথার ফাকে আমান সাহেব একটি ঠিকানা যুক্ত কাগজ ছোটনের হাতে দেয়।ব্রিফককেটসটা খুলে টাকার বান্ডিলগুলো দেখান।

-এখানে পুরো পাচ লক্ষ টাকা আছে বাকী পাচ লাখ কাজের শেষে।দেহ ব্যাবসায়ী ঐ পাড়া উৎচ্ছেদ করতে হবে এক সপ্তাহের মধ্যে।

পাড়ার ঠিকানা দেখে চমকে উঠে ছোটন এবং টাকাগুলো সে ফিরিয়ে দেয়।আমান সাহেবের মনে রাগ হয়।

-কি ব্যাপার...তুমি কাজটি করবে না?

-না..এ কাজ আমি করতে পারব না তাছাড়া কি এমন সমস্যা হলো যে এত বছরের পুরনো পাড়ার বসতিদের উৎচ্ছেদ করতে হবে?

-ঐ পাড়ার কারনে এলাকার ছেলেরা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

-ও তাই...তয় তার পাশে যে ওপেন কাউন্টারের টিকিট কাটার মতন ফেন্সি বিক্রি করছে তাতে ছেলেরা খারাপ হয় না?তাছাড়া উৎচ্ছেদের পর ঐসব দেহ ব্যাবসায়ী মেয়েরা কোথায় যাবে?কোন ব্যাবস্হা কি আছে?

-জাহান্নামে যাক...সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।

-বাহ!চমৎকার মিষ্টার আমান সাহেব ওরফে নির্বাচিত প্রতিনিধি এম,পি'র পি,এস আনু সাহেব...যেখানে তাদের বেচে থাকার সহযোগিতা করার কথা তার বদলে ওদের পেটে লাথি মারছেন,ওদের ভোট কি আপনার এম পি সাহেব পায়নি?তাছাড়া আপনি কি নিশ্চিত ওদের ওখান থেকে উৎচ্ছেদ করলে ওরা ঐ দেহ ব্যাবসা ছেড়ে দিবে?কখনই না,ওরা তখন আশ্রয়ের খোজেঁ বাড়ী বাড়ী ঢুকে পড়বে তখন পাড়ার ছেলেদের আর ঐ পাড়ায় যেতে হবে না,নিজ পাড়ায় হাতের কাছেই এ সব পাবে সহজেই।আসল কারন কি সেটা বলেন।আর আপনি না বললেও আমি জানি।এম পি সাহেব এ পাড়ায় প্রভাব বিস্তার করবেন সে জন্য অপজিসন পার্টির অর্থের উৎসহকে বিচ্ছিন্ন করবে,তাই না?......যান আপনার এম পিকে গিয়ে বলুন ছোটন এ কাজ করবে না।

পি এস আমান সাহেব আর কোন কথা বলে টাকার ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাবে ঠিক তখনই ছোটন ডাক দিয়ে তার মনের কথা বলে দেয়।

-আর একটি কথা পি,এস সাহেব,ঐ পাড়ায় আমার কিছু প্রিয় মানুষ থাকে জোর করে কিছু করতে চাইলে আমার হাত উঠবে।

এরই মধ্যে বেশ কয়েক দিন চলে যায় ফুলীঁর কাজ কর্ম ভাল ভাবেই চলছে।বেশ ফুর ফুরে মেজাজ আর সাজঁগোজের মাত্রা বেড়ে যায়।সে এখন খুব খুশি এবং স্বাধীন।ফুলীঁ অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ওভার লক মেসিনের অপারেটর হয়ে যায়।মাস শেষে ভাল বেতন তুলে।নিজ খরচ মিটিয়ে সে এখন গ্রামের বাড়ীতেও বেশ কিছু টাকা প্রতি মাসেই পাঠায়।তার ছোট ভাই এবং বোন এখন রীতিমত স্কুলে লেখা পড়া করতে পারছে ।ফুলীঁর আনন্দের সীমা নেই।কিন্তু যখনই নিজ জীবনের অতীত মনে পড়ে তখন মন গুমড়ে কাদেঁ।সে দিনও সে কাদঁছে এমন সময় এ পাড়ার সর্দানী খালার কর্কস শব্দ শুনতে পায় চোখের পানি মুছে ঘর থেকে বাহিরে পা বাড়ায় তা দেখে খালা ফুলীঁর কাছে এগিয়ে এসে হাতে একটি কাগজ।

-ফুলীঁ একটু পড়ে শুনাতো আমারে কি লিখেছে এতে।

ফুলীঁ কাগজটা হাতে নেয় পঞ্চম শ্রেনী পাশ বলে কিছুক্ষন সময় নিয়ে কাগজটিতে কি লিখা আছে তা বনর্না করে।

-খালা এটা মনে হয় উকিলের কোর্টের কাগজ এখানে লিখছে যদি পনের দিনের মধ্যে আমরা এ যায়গা হতে সরে না যাই তবে আইনের লোক এসে সব ভেঙ্গে ফেলবে।এখানে নাকি বহুতল বিল্ডিং করবে এবং এলাকার পরিবেশ দুষিত মুক্ত করবে।

খালা সহ আরো যারা বসবাস করে তারা সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।সবার মন খারাপ এবং চিন্তায় পড়ে যায় এখন কি হবে।এরই মধ্যে ছোটন রাজা ভিতরে ঢুকে তখন বেলা ৩টা।ছোটনকে দেখে সবাই একটু সাহস পায়।খালা এগিয়ে যায় ছোটনের কাছে ।ছোটনের হাতে কোর্টের কাগজটি ধরিয়ে দেয়।ছোটন সবাইকে বুঝিয়ে আশস্ত করে।

-শোন খালা ভয়ের কিছু নেই,.সালার এম পির কাজ।খান ভাইকে.....খান ভাইয়ের অর্থের উৎসহকে শেষ করতে এ কাজটি হাতে নিয়েছে আর এম পি সালায় বহুত খারাপ ও যে ভাবে পারে এ কজ করবেই।শোন খালা একটা বূদ্ধি আছে তোমরা সবাই রাস্তায় বেড়িয়ে পড়।পরদিন পেপার পত্রিকায় নিউজ হবে তাতে রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাদের নজরে আসবে তার পর দেখব অবস্হা বুঝে ব্যাবস্হা নেব।

ছোটনের কথা অনুযায়ী কাজ শুরু করে দেয় এখানে প্রায় এক দেড় হাজার পতিতা এবং বসতি দোকান পাটের কর্মচারী সহ প্রায় হাজার দু'এক লোক রাস্তায় নেমে পড়ে বাসস্হানের তাগিদে।সবাই এম পি বাড়ীর অভিমুখে রওয়ানা দেয়।আগে তাদের বসবাস করার নিদিষ্ট স্হান দিয়ে তাদের বর্তমান বসবাসের স্হানটি উচ্ছেদ করতে হবে এ রকম একটি লিখিত কাগজ জমা দেয় এম পির বরাবর।পতিতাদের হঠাৎ এমন কর্মসূচীতে এম পি চিন্তায় পড়ে যায়।কে তাদের লিড দিচ্ছে....খান!খানেতো দেশে নেই তাহলে আর কে আছে যে এদের সহযোগিতা করছে।মাথায় ছোটন নামের দুরন্ত সাহসী বুদ্ধিমান চিন্তাটি আসে।তাহলে ছোটন এদের পাশে।কিন্তু ছোটনকে কি ভাবে আটকানো যায়,কি ভাবে নিজ দলে আনা যায় সেই চিন্তায় মগ্ন এমপি সাহেব।আবার ভাবে ছোটনের হাততো অনেক লন্বা।ছোটন পরিবহন ক্ষেত্র হতে স্বররাষ্ট্র মন্ত্রিকে মোটা অংকের টাকা দেয় প্রতি মাসে।তাছাড়া ছোটনের এলাকার যত ইন্ড্রাট্রিজ আছে সব যায়গা থেকেই সে মানথি পায়, তার আছে বিশাল তরুনদের নেটওয়ার্ক।তাকে নিজ দলে আনতে একটু সময় লাগবে।তবে এসে যাবে যেহেতু এই এলাকার এম পি আমি.......।

ফুলীঁ পরদিন গার্মেন্টসে কাজ করছে।মাথা নিচু করে ওভার লক মেশিনে পেন্ট সেলাই করছে।খুব দ্রুত কাজটি শেষ করতে হবে নতুবা মালিকের শিপমেন্ট ক্যানসেল হয়ে অনেক টাকার ক্ষতি হবে।দিন চলে যায় রাতেরও দ্বি প্রহর ফুলীঁ সহ অন্যান্য যারা আছে কাউকেই কর্তৃপক্ষ ছাড়েনি গেইটে তালা লাগিয়ে এক টানা কাজ করায়।সময় মত শুধু খাবার দেয় তার মানও তেমন একটা ভাল না।ঐ দিকে খালা চিন্তায় পড়ে যায় আবার ছোটন মাঝ রাতে এসে খোজঁ করে যায় ফুলীঁ কাজ থেকে এসেছে কি না।আবার পরদিন ছোটন খোজঁ করে যখন দেখে রাত পেড়িয়ে দুপুর গড়িয়ে গেল ফুলীঁর কোন আসার নাম নেই তখন সে সরাসরি গার্মেন্টসে চলে যায়।ভিতরে ঢুকেই ছোটনের মাথায় রাগ এসে যায় সে দেখতে পায় অন্য এক মেয়েকে ফ্লোর সুপারভাইজার মা বাবা তুলে গালাগালি করছে এক সময় সুপারভইজার মেয়েটির উপর হাত তুলেতে যাবে আর কই যায় সুপারভাইজার, ছোটন তার কলারে ধরে টেনে হিচরে ফাকা যায়গায় নিয়ে আসে উত্তম-মধ্যম কিছু ছবক দেয়।

-লেখা পড়া করেছেন?

-জি মেট্ট্রিক পাশ।

-তাহলে মা বাবা তুলে গালাগালি কেনো দিচ্ছেন?

-ভাই আপনি হয়তো জানেননা এটাই গার্মেন্টসের কাজের ভাষা।গালাগালি না করল ওরা কাজ করে না।আপনি যদি কিছুক্ষন থাকেন বুঝতে পারবেন।

-না,কোন গালাগালি চলবে না।ওরা আপনার মতই মানুষ ওদের ভালবাসতে শিখুন দেখবেন আপনাকেও সম্মান করে কাজ করবে।

লোকটিকে ছেড়ে ফুলীঁর দিকে ছোটন তাকায় সে আনমনে মাথা নিচু করে কাজ করছে।ছোটন সেখান থেকে চলে আসে।গেইট দিয়ে বাহির হবার সময় ছোটনকে কিছু সিভিল সাদাপোষাকদারী পুলিশ এ্যারেষ্ট করে পুলিশ ভ্যানে তুলে ততক্ষনে ফুলীঁর ফ্লোরে খবর যায় ছোটন রাজাকে পুলিশ এ্যারেষ্ট করে নিয়ে যাচ্ছে আর সবার মত ফুলীঁও জানালায় দাড়িয়ে ছোটনের গ্রেফতারের দৃশ্যটি দেখে।

চলবে...

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ

Thumbnails managed by ThumbPress