
ভার্জিন বীচের জন্য বিখ্যাত সোনাদিয়া দ্বীপটিকে ঘিরে গড়ে ওঠতে পারে দেশের এক সম্ভাবনায় পর্যটন কেন্দ্র। কক্সবাজার শহরের নিকটবর্তী ছোট্ট এ দ্বীপটি ইতোমধ্যে নজর কেড়েছে পর্যটকদের। এই দ্বীপে পর্যটকদের জন্য কোন সুবিধা গড়ে না ওঠলেও আগ্রহী হাজার হাজার পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ প্রতিবছর সোনাদিয়া দ্বীপে ভ্রমণে যাচ্ছেন। জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ ও অত্যন্ত আকর্ষণীয় এ দ্বীপে শীতকালে হাজার হাজার অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখি আসে। সুদূর সাইবেরিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে উষ্ণতার খোঁজে বেরিয়ে পড়া এই পাখিরা হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আসে কক্সবাজারের সোনাদিয়ায়। এরমধ্যে বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তপ্রায় Spoonbill Sandpiper বা চামচ-ঠুঁটো-বাটান পাখি বা কাদাখোঁচা দেখা যায় সোনাদিয়ায়। দেশের আর কোথাও এই পাখির দেখা মেলে না। সারা বিশ্বে এ প্রজাতির মোট পাখির ১০ শতাংশ রয়েছে সোনাদিয়ায়।
বিশ্বজুড়ে বিপন্ন ‘নর্ডম্যান সবুজ পা’ পাখির দেখা মেলে এখানে। এ দ্বীপটি বাংলাদেশের পাখির ২০তম গুরুত্বপূর্ণ অভয়ারণ্য। লাল কাঁকড়া, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিমও এ দ্বীপে বেশি পরিমাণে দেখা যায়। সাগরঘেরা এ দ্বীপে রয়েছে ১ হাজার ২১৫ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল। এর মধ্যে ৫৬৭ প্রকারের উদ্ভিদ, ১৬২ প্রকারের শামুক, ২১ প্রকারের কাঁকড়া, ১৯ প্রকারের চিংড়ি, ২ প্রকারের লবস্টার, ২০৭ প্রকারের মাছ, ১২ প্রকারের উভচর প্রাণী, ১৯ প্রকারের সরীসৃপ ও ২০৬ প্রকারের পাখি।
আইইউসিএন ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব গত (২০১৫ সাল) বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের পাঁচটি স্থানে পাখি শুমারি করে। শুমারিতে ওই পাঁচ স্থানে ১ লাখ ১২ হাজার পরিযায়ী পাখি পাওয়া গেছে। শুমারিটি করা হয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর, দোমার চর, হাকালুকি হাওর, বাইক্কা বিল ও সোনাদিয়া দ্বীপে। এরমধ্যে সোনাদিয়া দ্বীপে ৯২০টি ছোট ধুলজিরিয়া ও ২৫০টি বড় ধুলজিরিয়া পাখির দেখা মিলেছে। এ ছাড়া এখানে বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন নয়টি চামচ ঠুঁটো বাটানেরও দেখা মিলেছে। দেখা পাওয়া গেছে বিশ্বজুড়ে বিপন্ন ছয়টি নর্ডম্যান সবুজ পা।
এখানে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন গড়ানবনও। এখানকার গড়ানবন পৃথিবী বিখ্যাত বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। প্রজাপতির প্রজননের অভয়ারণ্য সোনাদিয়া। অসংখ্য লাল কাঁকড়ার মিলন মেলাস্থল এই দ্বীপ। রয়েছে দূষণ ও কোলাহলমুক্ত সৈকত। দ্বীপের অভ্যন্তরে রয়েছে গড়ানবন ঘেরা ছোট ছোট নদী। এসব নদীতে ভ্রমণ করতে পর্যটকরা বেশ আনন্দ পায়।
১৭-১৮ জানুয়ারী দুইদিনের সফর শেষে যখন ঢাকায় ফিরি তখন বার বার সোনাদিয়া দ্বীপের স্মৃতি ভেসে আসছিলো। হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করা পরিযায়ী পাখিগুলি দেখলে মনে হয় এই দ্বীপই যেন তাদের নিজস্ব আবাসস্থল। তাই সকল ভ্রমন পিয়াসীদের নিকট আমার আবেদন রইলো যারাই এই দ্বীপ বা কোন হাওর এলাকায় যাবেন তারা যেন পরিযায়ী পাখিদের বন্ধু হয়ে থাকেন। একটা কথা মনে রাখবেন। পাখি ও বন্যপ্রানী বেঁচে থাকলে প্রকৃতি বেঁচে থাকবে। আর প্রকৃতি বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকবে। তাই প্রকৃতির অলংকার এসব বন্যপ্রানী ও উপকূলীয় পাখিদের বিরক্ত না করে তাদের জন্য অভয়াশ্রম গড়ে তুলে নিরাপদ নিশ্চিত করি।
সবাইকে ধন্যবাদ।
২৩টি মন্তব্য
ত্রিস্তান
দারুন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন দাদাভাই। তথ্যবহুল এবং সবশেষে খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কথা দিয়ে শেষ করলেন। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে প্রকারন্তরে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। প্রথম ছবিতে আপনার পেছনে বাম পাশের উনি কি গানম্যান নাকি ক্যামেরা ম্যান হা হা হা 😀
শামীম চৌধুরী
সবাই ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার।
সঞ্জয় মালাকার
উপকূলীয় পাখিদের বিরক্ত না করে তাদের জন্য অভয়াশ্রম গড়ে তুলে নিরাপদ নিশ্চিত করি।
সত্যি বলছেন দাদা আমাদের মতো পাখিদেরও জন্য সুনন্দ আবাস্হাল গড়ে তুলা।
শামীম চৌধুরী
প্রকৃতি বাঁচলে আমরা বাঁচবো দাদাভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পাখি ও বন্যপ্রানী বেঁচে থাকলে প্রকৃতি বেঁচে থাকবে। আর প্রকৃতি বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকবে। তাই প্রকৃতির অলংকার এসব বন্যপ্রানী ও উপকূলীয় পাখিদের বিরক্ত না করে তাদের জন্য অভয়াশ্রম গড়ে তুলে নিরাপদ নিশ্চিত করি। খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা। অসাধারণ একটি পাখি বিষয়ক লেখা পড়লাম। ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো
শামীম চৌধুরী
আরনার জন্যও রইলো শুভ কামনা আপু।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ শামিম ভাই, আমাদের প্রত্যেকেরই পাখি প্রেমি তথা প্রকৃতি প্রেমি হওয়া উচিৎ। আর সেটা করতে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি ষোল আনা। যার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রকৃতি আজ প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠছে………শুভ সকাল।
শামীম চৌধুরী
প্রকৃতির এই বিরূপ আচরন মানব জীবনে অকল্যাণ বয়ে আনবে।
ইকবাল কবীর
ভ্রমন কাহিনী সর্বদাই আমার প্রিয়। তথ্য বহুল লিখা লিখেছেন তবে ছবির সাইজ একটু বড় হলে ভালো হতো। ধন্যবাদ
শামীম চৌধুরী
ভাই, ব্লগে ছবি দেয়াটা আমার জন্য বিব্রতকর। যার জন্য শত ইচ্ছ থাকলেও পোষ্ট দিতে পারি না। এখানে ১০০কেবি এর উপরে ছবি লোড নেয়না। যার জন্য সাইজ করতে গেলে ৫৬-৬৫ কেবি হয়। আমার করার কিছুই নেই।
ছাইরাছ হেলাল
খালি এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করেন,
বরিশালে কি কোন পাখি-অরণ্য নেই?
ইট্টু যাইতাম আপনার সাথে!
শামীম চৌধুরী
বরিশালের মনপুরা হচ্ছে পাখির স্বর্গরাজ্য। চলেন যাই।
ইঞ্জা
সোনাদিয়া দ্বীপ নামটা আগে শুনলেও এর জীব ও বৃক্ষ বৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশদভাবে জানলাম আপনার লেখার মাধ্যমে, যদি আরও কিছু বলতেন যেমন, কক্সবাজার থেকে কিভাবে গেলেন, খরচা কেমন হলো ইত্যাদি জানলে পাঠক উপকৃত হতেন, এরপরেও ধন্যবাদ জানাই আপনার সুন্দর লেখাটির জন্য।
শামীম চৌধুরী
ভাইজান সেটা লিখা যায় ট্যুর প্ল্যান হিসেবে। আমাদের ৪ জনের খরচ হয়েছে জনপ্রতি ৭০০০/- টাকা। এর ভিতর এসি হুন্দাই বাস আসা যাওয়া, এক রাত হোটেল ভাড়া, তিন বেলালখাবার, কক্সবাজার ফিশারীজ ঘাট থেকে সোনাদিয়া দ্বীপ সহ আসে পাশে চরে ঘুরার জন্য স্পীডবোট ভাড়া সহ।
ইঞ্জা
এতটুকু জেনেছি এই অনেক, ধন্যবাদ ভাই।
এস.জেড বাবু
তথ্য সমৃদ্ধ চমৎকার পোষ্ট।
জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকার এবং জনগণকে সচেতন হতে হবে।
তবেই সোনাদিয়া সোনালী সম্পদ হয়ে উঠবে দেশের জন্য।
ভাল লেগেছে ভাইজান।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ বাবু ভাই।
ইসিয়াক
পাখি বিষয়ক লেখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ।
শামীম চৌধুরী
আপনার জন্য রইলো শুভ কামনা।
ফয়জুল মহী
দারুন উপভোগ্য। ভালো লেগেছে ভাই।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ মহী ভাই।
মাহবুবুল আলম
সুন্দর ভ্রমনকাহিনী! শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
শুভেচ্ছা সহ কৃতার্থ।