টেলিফোন  খেলা

 

 

আমারা শৈশবে নানা খেলা খেলেছি। সেই সব খেলা আজ প্রায় বিলীন। সময়ের আবর্তে প্রযুক্তির যুগে সেই সব খেলা বিদায় নিয়েছে। তার জায়গায় দখল নিয়েছে প্রযুক্তি নির্ভর খেলা। তেমনি সেই ২০-২৫ বছর আগে টেলিফোন আমাদের গ্রামের ছেলে মেয়েদের নিকট যেমন ছিল বিস্ময়কর তেমনি কৌতূহলের বিষয়। শুক্রবারের বাংলা ছিনে-মায় সাদা কালো টিভির পর্দায় যখন নায়ক রাজ্জাক বা জসিম কিংবা আলমগিরকে টেলিফোনে কথা বলতে দেখতাম বা কদাচিৎ  কোন পত্রিকার পাতায় টেলিফোন নিয়ে কথা বলা অবস্থার ছবি দেখতাম তা আমাদের পিচ্চিদের নিকট জাদুর বাক্সই মনে হত। চিন্তা করে শেষ হত কেমন করে কথা শোনা যেত। তার পর আস্তে আস্তে পড়া শুনা করে জানতে পারলাম আসলে কি ভাবে কাজ করে এটি।

 গ্রামে আমাদের মাঝে এই টেলিফোন বানানোর একটা সিস্টেম আমরা শিখে ফেলেছিলাম। কেমন করে তা অজানা। দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মত আর কি। আর এই নিয়েই আজকের এই পোস্ট।

 

প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র:

 এই খেলনা টেলিফোন তৈরির জন্য লাগবে---- 

১। হাত তিন চারেক লম্বা তামার বা টিনের তার।  

২। টিনের কৌটা/ এখন কার কন্ডেস মিল্ক এর কৌটা।

অথবা

ম্যাচের খালি খোল ভিতরের টা সহ।

প্রস্তুত প্রণালি:  প্রথমে টিনের কৌটার পেছনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র করে নিতে হবে। এর পর সেই ছিদ্র পথে তারের দুই মাথা দুই কৌটার ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে তারের মাথা পেঁচিয়ে দিতে হবে যেন আর বের হয়ে না আস্তে পারে। তারের মাথা আটকিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে গেল টেলিফোন।

তবে আমরা ম্যাচের খালি খোল দিয়ে বানিয়ে নিতাম এই খেলনা টেলিফোন। ম্যাচের কাভার ও কাঠি রাখার প্লেট দুটি আলাদা করে তার দিয়ে ছিদ্র করে  তারের দুই প্রান্ত দুই কাগজের ( কাভারে ও প্লেটে) ঢুকিয়ে তারের মাথা পেঁচিয়ে দিতাম। তাহলেই তৈরি হত টেলিফোন।

 

যে ভাবে কথা বলতাম: এর পরে ( টিনের কৌটা বা ম্যাচের খোল)  যে কোন একপ্রান্ত নিজের কাছে রেখে অন্য প্রান্ত অন্য বন্ধুর হাতে দিয়ে দুজন দুজনার কাছ হতে দূরে গিয়ে, ছিনামায় দেখা নায়কের মত বা ভিলেনের কাল্পনিক কথাবার্তা বলে বা অভিনয় করতাম।

আসলে যে ভাবে কাজ করে: আমরা সকলেই জানি শব্দ চলাচলের জন্য মাধ্যম প্রয়োজন। শব্দ কোন মাধ্যম(পদার্থ) এর কণার আন্দোলিত হবার ফলে চলাচল করে অর্থাৎ  পদার্থেরমধ্যদিয়েশব্দতরঙ্গপ্রবাহিতহওয়ারসময়পদার্থেরসকলকণাস্পন্দিতহতেথাকেআর শব্দ কঠিন মাধ্যম মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি চলে । তার পর  তরল  মাধ্যমে ।এর পর বায়বীয় মাধ্যমে। তো আমরা যখন মুখের কাছে কৌটা  নিয়ে কথা বলি তখন তারের মাধ্যমে শব্দ অন্য প্রান্তের সঙ্গীর কানে ধরা কৌটায় পৌঁছে।

কিছু তথ্যঃ স্বাভাবিক  অবস্থায়   বাতাসের  মধ্য   দিয়ে   প্রবাহিত    শব্দের   গতিবেগ   ঘণ্টায়    ৭৬৮.     মাইল    তথা    প্রতি   সেকেন্ড     ৩৪৩.মিটারপ্রতি   সেকেন্ডে   ২০  থেকে   ২০,০০০   ডেসিবেল    কম্পাঙ্কের শব্দ  উৎপন্ন  হয়   তা  আমরা   শুনতে   পাইকম্পনের   এই   রেঞ্জকে   বলা  হয়  শ্রাব্যতা  রসীমাএই  রেঞ্জের  বাইরে  উৎপন্ন   শব্দ   আমরা   শুনতে  পাইনাতাপমাত্রা   বাড়লে   শব্দের   বেগ   বৃদ্ধিপায়প্রতি   ডিগ্রি    তাপমাত্রাবৃদ্ধির  জন্য  শব্দের   বেগ   .মিটার/সেকেন্ড   বৃদ্ধিপায়  কঠিন   মাধ্যমে   শব্দের   বেগ   বাতাসের    থেকে   ১৫  গুন   বেশীবায়ু   শুন্য   মাধ্যমে   শব্দের   বেগশূন্যস্বাভাবিক   অবস্থায়   লোহাতে   শব্দের  বেগ   ৫২২১  মিটার/ সেকেন্ড

 

শেষ কথাঃ নিজেদের মধ্যে মজা করতে এই খেলা আমরা খেলতাম ছোটকালে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ