গোড়ায় গলদ হয় যেন অবসান

মনির হোসেন মমি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ০৯:৫৬:১৩অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৭ মন্তব্য

সেই দিন মাদ্রাসা এবং স্কুল পড়ুয়া এক নতুন প্রজন্মকে জিজ্ঞাস করলাম-

আচ্ছা, তোমরা কী জানো একুশ মানে কী ? তখন তারা জবাবে শুধু বলেছিলো -ঐতো শহীদ মিনারে ফুল দিতে যেতে হবে।
শুধু কী তাই? এর ইতিহাস জানো?  আর কেনই বা ফুল দিতে যাবে শহীদ মিনারে? জবাবে বলেছিলো-সবায় যায়তো তাই আমরাও যাই।

শুধু এ টুকুই জানো ?

জ্বী,
আচ্ছা আর কিছু কী জানো ?
কী?
তোমরা কী কখনো পড়েছো ?

"থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে
দেখবো এবার জগৎটাকে"

পড়েছো কী কভু?

"আমরা শক্তি আমরা বল
আমরা ছাত্রদল"।

পড়েছো  বা শুনেছো কী সেই উত্তাল দিনের আহবানের কথা?

"দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!
দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ"।

পড়েছো কী?

ভোর হোলো
দোর খোলো
খুকুমণি ওঠ রে!
ঐ ডাকে
জুঁই-শাখে
ফুল-খুকী ছোট রে!

কখনো কী তোমাদের গুরুজন শুনিয়েছে?

আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।

কখনো কী পরিচিত হয়েছিলে আত্মার সাথে?

দাদ খানি চাল, মুসুরির ডাল,চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়,”
” ছিঁড়ে দেবে চুল।

কখনো কী শুনেছো দিন বদলের কথা?

আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা।
আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি
তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।

কখনো কী মায়ের আদরে শিক্ষকের শিক্ষায় শুনেছো এমন কবিতা?

খোকন খোকন ডাক পাড়ি
খোন মোদের কার
বাড়ি ??
আয় রে খোকন ঘরে আয়
দুধ মাখা ভাত কাকে খায়।

কিংবা

বাক বাক্ কুম পায়রা
মাথায় দিয়ে টায়রা
বউ সাজবে কাল কি"
চড়বে সোনার পালকি।

অথবা

হাসতে নাকি জানেনা কেউ
কে বলেছে ভাই?
এই শোন না কত হাসির
খবর বলে যাই।
খোকন হাসে ফোঁকলা দাঁতে
চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে
কাজল বিলে শাপলা হাসে
হাসে সবুজ ঘাস।

অথবা

বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?

কখনো শুনেছিলে বিশ্ব ইতিহাসে অন্য কোথাও ভাষার জন্য দিয়েছিলো কেউ প্রান।কখনো কী শুনিয়েছিলো কেউ এমন ধরদী গান?

ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়
ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে পায়ে
কইতো যাহা আমার দাদায়, কইছে তাহা আমার বাবায়
এখন কও দেহি ভাই মোর মুখে কি অন্য কথা শোভা পায়
সইমু না আর সইমু না, অন্য কথা কইমু না
যায় যদি ভাই দিমু সাধের জান,
এই জানের বদল রাখুম রে ভাই, বাব-দাদার জবানের মান
যে শুইনাছে আমার দেশের গাঁওগেরামের গান
নানান রঙয়ের নানান রসে, ভইরাছে তার প্রাণ
যপ-কীর্তন, ভাসান-জারি, গাজীর গীত আর কবি সারি
আমার এই বাংলাদেশের বয়াতিরা নাইচা নাইচা কেমন গায়
তারি তালে তালে হৈ ঢোল করতাল বাজে ঐ
বাশি কাশি খঞ্জনি সানাই, আহা বাশি কাশি খঞ্জনি সানাই
এখন কও দেখি ভাই এমন শোভা কোথায় গেলে দেখতে পাই!

উপরের সবগুলোতে ওদের অনেকটা না বোধক উত্তর আসলেও নীচের এই কমন একটি কবিতা/গানের কথা জিজ্ঞাসা করাতে ওরা যেন স্বস্তি ফিরে পেল।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।

-শুনেছি-জানিতো!
-এর মহত্ব বুঝো?
-না!!!

তাহলে আর  কী বলব।

ওদের এই অজানা বা সীমিত জ্ঞানের জন্য আসলে দায়ী কারা? আমরা শুধু ওদের শহীদ মিনারে একদিন ফুল দিয়ে আসার কথাই বুঝিয়েছি,বুঝাইনি কখনো এর অন্তনিহীত ভাবার্থের রক্তঝরা ইতিহসের কথা।হয়তো সেভাবে ওরা হয়তো জানে না এই ভাষা আন্দোোলনের বিজয় দিয়েই শুরু হয়েছিলো ১৯৭১ এ দেশ স্বাধীনতার যুদ্ধ যারর জন্য্ আজো আমরা পুরো একটি দেশ পেলাম,পেলাম  একট লাল সবুজের পতাকা।
তাহলে ওদের দোষ দিয়ে আর লাভ কী! মুল দায়ীতো আমরা যারা অভিভাবক শিক্ষক তারা।

আসুন আমরা আমাদের ঘর হতেই শুরু করি স্বদেশ প্রেমের যত ইতি কথা দিয়ে যেমনি করে আমাদের মা-বাবা, দাদা-দাদী নানা-নারীরা ঘুম পাড়ানীর ছড়া কবিতা বলে ঘুমকে  চোখের পাতায় এনে দিতো।তেমনি করে ওদের মগজে ঢুকিয়ে দেই-একুশ মানে কী? একুশ এর রক্ত ঝরা আত্মত্যাগের সেই বীরত্বের কথা।

সকল ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্ভ্র শ্রদ্ধা।

ছবি ও কবিতাগুলো কালেক্টটেড

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ